অযুর দোয়া, নিয়ম, নিয়ত এবং অজু ভঙ্গের কারণ

অযু করার নিয়ম, অযুর দোয়া, অযুর নিয়ত এবং অযুর ফরজ, সুন্নত এবং মুস্তাহাব গুলো কি কি এবং অযু ভঙ্গের কারণ গুলো সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।

অযুর দোয়া- অজু করার নিয়ম
অজু করার নিয়ম

বিধান অনুযায়ী হাত, পা, মুখ প্রভৃতি অঙ্গ ধৌত করার -নাম অযূ । শরীরকে পবিত্র করার জন্য অযূ করার বিধান । নামায পড়ার পূর্বে ও কুরআন শরীফ পড়ার পূর্বে অযূ করা প্রত্যেকের জন্য ফরয।

অযু কি?

ওযু হলো আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো নির্দিষ্ট চারটি অঙ্গ পানি দিয়ে ধৌত করা। ওযু সঠিক না হলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। তাই সঠিক নিয়মে ওযু করতে হবে।

এতে মন ফুরফুরে থাকে। প্রশান্তি আসে। সকল কাজে মন বসে, সফলতা লাভ করা যায়। তাই কোন পবিত্র কাজ করার আগে ওযু করু

অযু করার নিয়ম | অযুর দোয়া

প্রথমে ছতর ঢেকে উচ্চস্থানে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে অযূর নিয়ত করতে হবে। তৎপরে নিম্নের দোয়া পড়ে ওযু আরম্ভ করতে হবে।

 

অজু করার নিয়ম:

প্রথমে ছতর ঢেকে উচ্চস্থানে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে অযূর নিয়ত করতে হবে। তৎপরে নিম্নের দোয়া পড়ে ওযু আরম্ভ করতে হবে।

অযুর দোয়া

অজুর আগে দোয়া হলো- বিসমিল্লাহ বলে অজু শুরু করা।

অজুর মাঝে যে দোয়া পড়া সুন্নত:

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي ، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي ، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফিরলি জাম্বি ওয়া ওয়াসসি’লি ফি দারি, ওয়া বারিকলি ফি রিজকি। 

অর্থ : হে আল্লাহ, আমার গুনাগ ক্ষমা করে দিন। আমার ঘর-বাড়িতে প্রশস্ততা দান করুন। আমার রিজিকে বরকত-প্রাচুর্য দিন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৯৯০৮; কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৫০৮০; মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৭২৭৩; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৯৩৯১)

অজুর শেষে কী দোয়া পড়া হবে:

 أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ ، سُبْحانَكَ اللَّهُمَّ وبِحَمْدِكَ ، أشْهَدُ أنْ لا إلهَ إِلاَّ أنْتَ ، أسْتَغْفِرُكَ وأتُوبُ إِلَيْكَ

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু। আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন। সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আন-লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়াতুবু ইলাইকা।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন। মহা পবিত্র আপনি হে আল্লাহ্! আপনার প্রশংসার সাথে আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আমি আপনার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার দিকেই ফিরে যাচ্ছি (অর্থাৎ তাওবা করছি)।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৪; তিরমিজি, হাদিস : ৫৫)।

 

অজু শেষে যে দোয়া পড়বেন

হাদিস শরিফে আছে যে, অজু শেষে কালেমায়ে শাহাদাত পড়বে। এটা পড়লে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে, সেটা দিয়ে সে প্রবেশ করতে পারবে।

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

 

উচ্চারণ : আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।

অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন। (সুনানে নাসায়ি কুবরা, হাদিস : ৯৯১২; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৯; সুনানে দারেমি, হাদিস : ৭১৬; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৪; কানজুল উম্মাল, হাদিস : ২৬০৭৪)

অযুর নিয়ত |অযুর দোয়া

অযুর নিয়ত

نويت أن أتوضاء لرفع الحدث واستباحة للقلي
وتقربا إلى الله تعالى

অজুর নিয়ত বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আতাওযযাআ লিরাফইল হাদাছে ওয়াস্তেবাহতীল লিছ ছালাতে ওয়া তাকারুবান ইলাল্লাহি তাআলা ।

অযুর নিয়ত বাংলা অর্থঃ নাপাকী দূর করার জন্য ও শুদ্ধভাবে নামায পড়ার জন্য এবং আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য আমি অযূ করার নিয়্যত করলাম।

অযু করার নিয়ম | অযুর দোয়া

  • প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করে। তৎপর হাতে পানি নিয়ে মুখে দিয়ে তিনবার কুলি করতে হবে।
  • কুলি করার পূর্বে মেসওয়াক অথবা অঙ্গুলি দ্বারা মুখ ও দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।
  • ডান হাত দ্বারা তিনবার নাকের মধ্যে পানি দিয়ে ও বাম হাত দ্বারা নাক ঝেড়ে ফেলতে হবে।
  • পুনরায় ডান হাত দ্বারা তিনবার পানি উঠিয়ে মুখমণ্ডল ধৌত করতে হবে।
  • তারপর নতুন পানি হাতে নিয়ে অঙ্গুলি হাতের তালু দ্বারা সমস্ত মাথা ও ঘাড় মোসেহ করতে হবে।
  • তারপর প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা টাথনু গিরা পর্যন্ত ধুয়ে নিতে হবে।

নিম্নলিখিত কারণে অযু করা ওয়াজিব

  1. কুরআন শরীফ স্পর্শ করার জন্য,
  2. হাদিস শরীফ পাঠ অথবা স্পর্শ করার জন্য,
  3. কুরআন শরীফের কোন আয়াত লিখার জন্য,
  4. কা’বা শরীফ তাওয়াফ করার জন্য,
  5. জানাজার নামায পড়ার জন্য,
  6. কবর জিয়ারত করার জন্য,
  7. ওয়ায-নছিহত করার জন্য

নিম্নলিখিত কারণসমূহের জন্য অযু করা সুন্নত

  1. মসজিদে প্রবেশ করার জন্য,
  2. আলেমগণের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য,
  3. মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়ার জন্য,
  4. স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পূর্বে,
  5. কোন জানোয়ার জবেহ করার জন্য,
  6. নিদ্রা যাবার পূর্বে

অজুর ফরজ কয়টি এবং কি কি?

অযুর ফরজ ৪টি। যেমন:

  1. কপালের উপরিভাগের চুল উঠবার স্থান হতে থুতনীর নিচ এবং এক কানের লতি হতে অপর কানের লতি পর্যন্ত সমস্ত মুখম ধৌত করা ।
  2. উভয় হস্তের কনুই পর্যন্ত ধৌত করা।
  3. দুই পা গিরা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করা।
  4. মাথার এক চতুর্থাংশ মোসেহ করা।

অযুর সুন্নত কয়টি ও কি কি?

অজুর মধ্যে ১৪টি কাজ করা সুন্নত। যেমনঃ

  1. অযূ আরম্ভ করার সময়ে বিছমিল্লাহ বলে আরম্ভ করা এবং অযূর দোয়া পাঠ করা,
  2. দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধৌত করা,
  3. মেছওয়াক করা; মেছওয়াকের অভাবে ডান হাতের শাহাদত অঙ্গুলি দ্বারা দাঁত ঘর্ষণ করা,
  4. গড়গড়া সহ তিনবার কুলি করা, রোযার দিনে গড়গড়া ছাড়া কুলি করতে হবে।
  5. উভয় হাতের আঙ্গুলসমূহ খিলাল করা,
  6. তিনবার নাকের ভিতর পানি দেয়া,
  7. দাঁড়ি খিলাল করা, ৮। প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধৌত করা,
  8. সমুদয় মাথা একবার মোসেহ করা।
  9. দুই কান মোসেহ করা,
  10. অযূর নিয়ত করা,
  11. তরতির মত অর্থাৎ ক্রমধ্য রক্ষা করে অযূ করা এবং,
  12. এক অঙ্গ ভিজা থাকতেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা ।

অযুর মধ্যে ২৫টি কাজ মুস্তাহাব:

  1. ডান দিক হতে অযূ আরম্ভ করা,
  2. ঘাড় মোসেহ করা,
  3. পশ্চিমমুখী বসে অযূ করা।
  4. সুস্থ শরীরে অযূ করতে অন্যের সাহায্য না নেয়া,
  5. ওয়াক্তের পূর্বে অযূ করা,
  6. অযূ করার সময়ে কথা না বলা,
  7. উচ্চস্থানে বসে অযূ করা।
  8. অযূর প্রত্যেক স্থান ধোয়ার সময়ে বিছমিল্লাহ পাঠ করা,
  9. পা ধোয়ার সময়ে বাম হাত দ্বারা উভয় পা মর্দন করা,
  10. অযূর পাত্র মৃত্তিকা নির্মিত হওয়া,
  11. সময়ের পূর্বেই অযূ করার পানি ঠিক করে রাখা,
  12. নাকে পানি দিয়ে বাম হাত দ্বারা কি ঝেড়ে ফেলা,
  13. ধীরে ধীরে অযূ করা,
  14. পাক স্থানে বসে অযু করা,
  15. রৌদ্রের তাপে উত্তপ্ত পানি দ্বারা অযূ না করা,
  16. অযূরসহজ নূরানী নামায শিক্ষা করা,
  17. অযুর শেষে শেষে দরূদ শরীফ পড়া,
  18. অযূ থাকতে অযূ ইন্না আনজালনা ছুরা পড়া,
  19. অযূর শেষে অযূর অবশিষ্ট পানি পশ্চিম মুখে দাঁড়িয়ে পান করা,
  20. যে রুমাল বা গামছা দ্বারা এস্তেঞ্জার মুছা হয়, তার দ্বারা অযূর স্থান না মুছা,
  21. অযূর স্থান ধৌত করা পানি। পরিধান করা বস্ত্রে লাগতে না দেয়া,
  22. কনিষ্ঠ অঙ্গুলি দ্বারা কারে ভিতর মোসেহ করা,
  23. অযূতে ধোয়ার স্থানগুলো ভালোভাবে শরীয়তের বিধান অপেক্ষা কিছু বেশি স্থানসহ ধৌত করা এবং,
  24. পানির পাত্র ছোট হলে ডান পার্শ্বে আর বড় হলে বাম পার্শ্বে রেখে অযূ করা।

অযুতে ৬টি কাজ মাকরূহ

  1. অযু করার সময়ে মুখমণ্ডলে পানি জোরে নিক্ষেপ করলে এবং ঐ পানির ছিটা শরীরে লাগলে,
  2. নাপাক স্থানে বসে অযূ করলে,
  3. বিনা ওজরে বাম হাত দ্বারা কুলি করলে ও ডান হাত দ্বারা নাক ঝাড়ল।
  4. অযুর সময়ে সাংসারিক কথা বললে এবং
  5. ছতর খুলে অযু করলে
  6. তিনবারের বেশি ধৌত করলে।

অযু ভঙ্গের কারণ কয়টি এবং অজু ভঙ্গের কারণ গুলো কি কি?

  1. মলদ্বার দিয়ে মল, কৃমি, রক্ত, পূজ, পোকা বা বায়ু বের হলে।
  2. প্রস্রাবের দ্বার দিয়ে প্রস্রাব, রক্ত, পূজ, বীর্য, মযী, অদি ইত্যাদি। বের হলে ।
  3. ক্ষতস্থান হতে রক্ত বা পূঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে । ৪ । শরীরে সূঁচ বা কাঁটা বিদ্ধ হলে বা কোথাও কেটে গেলে যদি রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে যায় ।
  4. দাঁতের গোড়া হতে রক্ত বের হলে তা থু থু পরিমাণ হলে ।
  5. মুখ ভরে বমি করলে ।
  6. চিৎ অথবা কাৎ হয়ে কোন বস্তুতে হেলান দিয়ে নিদ্রা গেলে ।
  7. উন্মাদ অথবা অচেতন হলে ।
  8.  নামাযের মধ্যে খিল খিল করে হাসলে ।
  9. স্ত্রী-পুরুষের লিঙ্গে লিঙ্গে স্পর্শ করালে ।

অযুর কোন স্থান যদি বিন্দুমাত্র শুকনা থেকে যায়, তবে অযু সিদ্ধ হবে না। আর অযূ সিদ্ধ না হলে নামায ও সিদ্ধ হবে না। সুতরাং অযুর স্থান যাতে শুষ্ক থেকে না যায়, সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।

অবশ্যই পড়ুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *