ইসলাম কাকে বলে ? (ইসলামের পরিচয়)

ইসলাম কি?

ইসলাম আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো আনুগত্য করা, আত্মসমর্পণ করা, শান্তির পথে চলা ইত্যাদি। ব্যবহারিক অর্থে আল্লাহ তায়ালা ও রাসুল (স.) এর আনুগত্য করাকে ইসলাম বলে।

ইসলাম কাকে বলে?

শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার প্রতি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর নিকট পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা, বিনা দ্বিধায় তাঁর যাবতীয় আদেশ নিষেধের আনুগত্য করা এবং তাঁর দেওয়া বিধান ও হযরত মুহাম্মদ (স.) এর দেখানো পথ অনুসারে জীবনযাপন করাকে ইসলাম বলা হয়।

ইসলাম কাকে বলে
ইসলামের পরিচয়।

একটি হাদিসে মহানবি (স.) সুন্দরভাবে ইসলামের মূল পরিচয় তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ইসলাম হলো “তুমি এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। আর মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল, সালাত আদায় করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা পালন করবে এবং সামর্থ্য থাকলে বাইতুল্লাহর হজ আদায় করবে।” (বুখারি ও মুসলিম)

আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে বহু আদেশ নিষেধ, বিধি বিধান প্রেরণ করেছেন। এসব আদেশ নিষেধ শরিয়ত হিসেবে প্রদান করেছেন। শরিয়তের সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ রূপ হলো ইসলাম।

এটি হলো মানবজাতির জন্য নির্দেশিত সর্বশেষ ও সর্বোত্তম জীবন বিধান। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলেন,

“নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট ইসলামই একমাত্র মনোনীত ধর্ম বা জীবনব্যবস্থা।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৯)

সুতরাং ইসলাম হলো আল্লাহ তায়ালার নিকট গ্রহণযোগ্য ধর্ম। আর যিনি ইসলাম অনুসারে জীবন পরিচালনা করেন তাকে বলা হয় মুসলিম বা মুসলমান। ইসলামের ভূমিকা ইসলাম হলো আল্লাহ তায়ালার প্রবর্তিত ধর্ম বা জীবন বিধান। এটি মানবজাতির জন্য আল্লাহ তায়ালার একটি বিশেষ নিয়ামত। এটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা।

মানবজীবনের সকল বিষয় ও সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধানের দিকনির্দেশনা এতে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম, আর তোমাদের উপর আমার নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবনব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম।” (সূরা আল মায়িদা, আয়াত ৩)

মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজকর্মের যথাযথ দিকনির্দেশনা ইসলামে বিদ্যমান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক , সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সকল বিষয়ই ইসলামে যথাযথভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বা পরকালের অবস্থার বর্ণনাও ইসলামে রয়েছে । সুতরাং সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামের বিকল্প নেই।

ইসলাম শব্দটি সিলমুন মূলধাতু হতে নির্গত, সিলমুন অর্থ শান্তি। ইসলাম মানুষকে শান্তির পথে পরিচালনা করে। ইসলামি বিধি বিধান মেনে চললে মানুষ দুনিয়া ও আখিরাতে পরিপূর্ণ শান্তিময় জীবন লাভ করতে পারে। এ জন্য ইসলামকে শান্তির ধর্ম বলা হয়।

ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম। এটি কোনো কাল, অঞ্চল বা জাতির জন্য সীমাবদ্ধ নয়। অন্যান্য ধর্মের নামকরণ সে সব ধর্মের প্রবর্তক, প্রচারক, অনুসারী কিংবা জাতির নামে করা হয়েছে

কিন্তু ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম হওয়ার কারণে এর নামকরণ কারও নামে করা হয়নি। বরং মহান আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে শান্তির পথে জীবন পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে এর নামকরণ করা হয়েছে ইসলাম।

ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব

ইসলাম শিক্ষা হলো ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। কোনো কিছু বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথমে সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে হয় । যেমন সাঁতার কাটতে হলে প্রথমে সাঁতার কী, কীভাবে সাঁতার কাটতে হয় ইত্যাদি শিখতে হয়।

গাড়ি চালাতে হলে গাড়ি ও গাড়ি চালনা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। ঠিক তেমনি ইসলাম অনুযায়ী জীবন পরিচালনার জন্য ইসলাম সম্পর্কে প্রথমে জ্ঞান অর্জন করতে হয়। আর এর প্রধান মাধ্যম হলো ইসলাম শিক্ষা।

ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও আনুগত্য শিখতে পারি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরা, উঠাবসা কীভাবে করতে হবে তা জানতে পারি। সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া, ক্ষমা, বিনয়, নম্রতা ইত্যাদি গুণের অনুশীলন করতে পারি। লোভ, হিংসা, মিথ্যাচার, অহংকার, পরনিন্দা ইত্যাদি খারাপ অভ্যাস পরিহার করে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে পারি। সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব, সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, সহনশীলতা, পারস্পরিক সহযোগিতা, সহানুভূতি ইত্যাদির মাধ্যমে সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানার্জন করতে পারি।

পরকালীন জীবনে জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির উপায় জানতে পারি। এককথায় ইসলাম শিক্ষার মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের শান্তি ও সফলতা লাভের দিকনির্দেশনা অর্জন করতে পারি।

অবশ্যই পড়ুন –

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *