উচ্চ রক্তচাপ কি ? (What Is High Blood Pressure)
উচ্চ রক্তচাপ কি বা উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে, উচ্চ রক্তচাপের কারণ এবং উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি? এসব বিষয়ে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো।

আপনি যদি “ব্লাড প্রেসার কি বা ব্লাড প্রেসার কাকে বলে” এ বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিতে চাইছেন তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।
রক্তচাপ কি বা রক্তচাপ কাকে বলে ? (What Is Blood Pressure)
রক্ত চাপ হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ডে থেকে রক্ত ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহকালে ধমনি প্রাচীরে যে পার্শ্বচাপ সৃষ্টি হয়, তাকে রক্তচাপ বলে।
তাই রক্তচাপ বলতে সাধারণভাবে ধমনির রক্তচাপকেই বুঝায়।
রক্তচাপ হৃৎপিন্ডের কার্যকারিতা, ধমনির প্রাচীরের স্থিতিস্থাপকতা এবং রক্তের ঘনত্ব ও পরিমাণের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আমরা জানি, হৃৎপিণ্ড একটি পাম্পের মতো কাজ করে থাকে। ফলে সারা দেহে সবসময় রক্ত সঞ্চালন পদ্ধতি চলতে থাকে।
যখন হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হয় তখন হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত ধমনির মাধ্যমে সারা দেহে পরিবাহিত হয়। এসময় ধমনিগুলোর গাত্রে রক্তচাপের মাত্রা সর্বাধিক থাকে। তাই এই চাপকে সিস্টোলিক চাপ বলে।
আবার যখন হৃৎপিণ্ড প্রসারিত হয় তখন সারা দেহ থেকে রক্ত হৃৎপিণ্ডে ফিরে আসে। এসময় সৃষ্ট চাপকে ডায়াস্টোলিক চাপ বলা হয়।
সিস্টোল অবস্থায় ধমনিতে যে চাপ থাকে, তাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ এবং ডায়াস্টোল অবস্থায় যে চাপ থাকে, তাকে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বলে।
স্বাভাবিক এবং সুস্থ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সিস্টোলিক রক্তচাপ পারদ স্তম্ভের ১১০-১৪০ মিলিমিটার (mm Hg) এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ পারদ স্তম্ভের ৬০-৯০ মিলিমিটার (mm Hg)।
স্বাভাবিক রক্তচাপকে ১২০/৮০ মিলিমিটার (mm Hg) এভাবে প্রকাশ করা হয়। স্ফিগমোম্যানোমিটার নামক যন্ত্রের সাহায্যে রক্তচাপ নির্ণয় করা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ কি বা উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে ? (What Is High Blood Pressure)
উচ্চ রক্তচাপকে ডাক্তারি ভাষায় হাইপারটেনশন বলে। তাই জেনে নিন উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন কি?
শরীর ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি বয়সের জন্য নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করতে থাকে, তবে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন বলে।
রক্তের চাপ যদি কম থাকে তা হলে তাকে নিম্ন রক্তচাপ চলে।
হৃৎপিণ্ডের সংকোচন ও প্রসারণের ফলে হৃৎপিণ্ড থেকে ধমনির মাধ্যমে রক্ত প্রবাহকালে ধমনি গাত্রে কোনো ব্যক্তির সিস্টোলিক রক্তচাপ যদি সব সময় ১৬০ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি এবং ডায়াস্টোলিক সব সময় ৯৫ মিলিমিটার পারদস্তম্ভ বা তার বেশি থাকে, তবে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে বলা যায়।
উত্তেজনা, চিন্তা, বিষণ্ণতা, নিদ্রাহীনতা বা অন্য কোনো কারণে যদি রক্তচাপ সাময়িকভাবে নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করে, তবে তাকে হাইপারটেনশন বলা যাবে না এবং এ অবস্থায় কোনো ওষুধেরও প্রয়োজন হয় না।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন এর কারণ
হাইপারটেনশন হওয়ার প্রকৃত কারণ আজও জানা যায়নি। তবে অতিরিক্ত শারীরিক ওজন , মেদবহুল শরীর, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, অপর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রম, ডায়াবেটিস, অস্থিরচিত্ত ও মানসিক চাপগ্রস্ত, রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি।
হাইপারটেনশন রোগীদের যেসব জটিলতা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে রয়েছে স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, হৃদপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক ও ফেইলিউর, বৃক্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত প্রভৃতি।
নিম্ন রক্তচাপ উচ্চ রক্তচাপের মতো মারাত্মক নয়।
তবে রক্তচাপ যথেষ্ট কমে গেলে নানা রকম অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় কি ?
রক্তচাপ প্রতিরোধ করার জন্য কিংবা প্রতিকার হিসেবে নিম্নলিখিত সতর্কতামূলক উপায়গুলো পালনের মাধ্যমে উপকার পাওয়া যায়।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায় গুলো কি কি?
- ডায়াবেটিস যদি থাকে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা।
- দেহের ওজন বৃদ্ধি না করা।
- চর্বিযুক্তখাদ্য বর্জন করা । যেমন ঘি, মাখন, গরু ও খাসির মাংস, চিংড়ি যতটা সম্ভব বর্জন করা।
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করা ।
- পরিমাণেরঅতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
- মদ্যপানএবং ধূমপান থেকে বিরত থাকা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- দৈনিক ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
- মানসিকচাপমুক্ত ও দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করা।
- খাবারেরসাথে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা।
- চিকিৎসকের পরামর্শ মতো জীবন পরিচালনা করা।
উপরে উল্লেখিত উপায় গুলোর মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধ বা কমানো সম্ভব।
সর্বশেষ
আশা করি “উচ্চ রক্তচাপ কি বা উচ্চ রক্তচাপ কাকে বলে” (What is high blood pressure in Bengali) এর সঠিক উত্তর জেনে নিতে পেরেছেন।
আর অনেকেই এ বিষয়ে জানতে চান যে, একজন সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ কত?
তাহলে এর উত্তর হলো একজন সুস্থ মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার।
অর্থাৎ রক্তচাপ ১২০ মিলিমিটারের উপরে হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার বলা হয় এবং ৮০ মিলিমিটারের নিচে হলে নিম্ন রক্তচাপ বা লো ব্লাড প্রেসার বলা হয়।
আর্টিকেলটি যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।