কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার | কিডনি রোগ কেন হয়?

আজকে আমরা  কিডনি কি? কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেব

বৃক্ক বা কিডনি মানুষের প্রধান রেচন অঙ্গ। রক্তে প্রোটিন বিপাকে সৃষ্ট নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ যেমন- ইউরিয়া, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া, ক্রিয়েটিনিন ইত্যাদি ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহ থেকে অসমোরেগুলেশন অপসারণ করে বৃক্ক রক্তকে বিশুদ্ধ রাখে।  এগুলো বর্জ্য পদার্থ যদি আমাদের দেহ থেকে অপসারণ না হয় তাহলে কিডনি রোগ হয় বা লক্ষণ দেখা দেয়। আমরা যদি কিডনি রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ, প্রতিকার,চিকিৎসা সম্পর্কে না জানি, তাহলে আমাদের প্রাণঘাতী হতে পারে।

বাংলাদেশে প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় কিডনি রোগের অবস্থান চতুর্থ। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ৪০-৮০ লক্ষ লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত এবং প্রতিবছর ৩০-৪০ হাজার লোক এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। নতুন করে ৮-১০ লক্ষ লোক এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

কিডনি কি বা কাকে বলে?

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি। যে অঙ্গ শরীরে  ছাঁকনির কাজ করে এবং বিপাক ক্রিয়ার পর শরীরে বজ্র টক্সিক পদার্থকে রক্ত থেকে ছেঁকে মল-মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয় তাকে কিডনি বলে।

মানবদেহের উদরগহবরের পিছনের অংশে, মেরুদন্ডের দুদিকে বক্ষপিঞ্জরের নিচে পিঠ সংলগ্ন অবস্থায় দুটি কিডনি বা বৃক্ষ অবস্থান করে।প্রতিটি কিডনি সিম বিচির মত দেখেতে। পরিণত বয়সে ১টি কিডনি ১১-১৩ সে মি লম্বা, ৫-৬ সে মি চওড়া এবং ৩ সে মি পুরু হয়। একটি কিডনির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম। তবে বাম কিডনিটি ডান কিডনি অপেক্ষা একটু বড় ও কিছুটা ওপরে থাকে। প্রতিটি কিডনি প্রায় ১২ লক্ষ নেফ্রন দিয়ে তৈরি। নেফ্রন হলো কিডনির কার্যকরী ও গাঠনিক একক। কোনো কারণে এই নেফ্রনগুলো নষ্ট হয়ে গেলে কিডনি দ্রুত অকেজো হয়ে যায়। কিডনি রোগে সাধারণত একসাথে দুটি কিডনি আক্রান্ত হয়।

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

আমাদের দেহে প্রতিনিয়ত অসংখ্য জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া কিডনি রোগ এমনই মারাত্মক রোগ যা কোনো প্রকার লক্ষণ বা উপসর্গ ছাড়া খুব ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে। তাই একে নীরব ঘাতক বলে অভিহিত করা হয়। কখনো কখনো রোগী কোনো উপসর্গ বুঝে ওঠার পূর্বেই তার কিডনির শতকরা ৫০ ভাগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

কিডনি বা বৃক্ক রোগের লক্ষণ:

১. প্রস্রাবের পরিবর্তন

কিডনি রোগের একটি বড় লক্ষণ হলো প্রাস্রাব বেশি হয় বা কম হয়।বিশেষত রাতে এই সমস্যাটি বাড়ে। প্রসাবের সময় জ্বালা পরা করা। মাঝে মাঝে প্রস্রাবের বেগ অনুভব হলেও প্রস্রাব হয় না।

২. ফোলা ভাব

মুখ ও চোখের কোল যদি হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ওঠে, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। কারণ, কিডনির সমস্যা বা অসুখকের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।

৩. খিঁচুনি ভাব

যদি দেখেন আপনার হাত, পা বা পিঠের পেশিতে ঘন ঘন অস্বাভাবিক টান বা খিঁচুনি ধরছে, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। কিডনির সমস্যা বা অসুখকের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে।

৪. ত্বক শুষ্ক

ত্বক শুষ্ক হলে, অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। কিডনির সমস্যা বা অসুখকের ক্ষেত্রেও এমনটা হতে পারে। কারণ, কিডনি আমাদের শরীরের ক্ষতিকর পদার্থগুলো শরীর থেকে ছেঁকে বের করে দেয়। তাই কিডনি বিকল হয়ে পড়লে শরীরে এই ক্ষতিকর পদার্থগুলো জমে গিয়ে আমাদের ত্বককে শুষ্ক ও রুক্ষ করে দেয়।

৫. ব্যাথা ভাব

পিঠের দিকে, কোমরের একটু উপরে যদি ঘন ঘন ব্যথা অনুভব করেন তাহলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। তলপেটেও ব্যাথা হয়।

৬. ঘুমের ব্যাঘাত

কিডনির সমস্যায় ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। কিডনি ঠিক মতো কাজ না করলে রক্ত ভালভাবে পরিশ্রুত হতে পারে না। তাই ঘুমের ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৭. রক্তচাপ

রক্তচাপের দ্রুত ওঠাপড়া, অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠা, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট হওয়ার পেছনেও লুকিয়ে থাকতে পারে কিডনির সমস্যা।

৮. প্রসাবের সাথে রক্ত আসা

যদি দেখেন প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত বের হচ্ছে, তাহলে অবশ্যই সতর্ক হওয়া জরুরি। কিডনি ঠিকভাবে কাজ না করলে অনেক ক্ষেত্রে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত চলে আসতে পায়।

৯. মনোযোগ দিতে অসুবিধা হওয়া

লোহিত রক্তকণিকা কমে যাওয়ার কারণে মস্তিস্কে অক্সিজেন পরিবহন কমে যায়। এতে কাজে মনোযোগ দিতে অসুবিধা হয়।

১০. সবসময় শীত বোধ হওয়া

কিডনি রোগ হলে গরম আবহাওয়ার মধ্যেও শীত শীত অনুভব হয়। আর কিডনিতে সংক্রমণ হলে জ্বরও আসতে পারে।

১১. ত্বকে র‍্যাশ হওয়া

কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়লে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়তে থাকে। এটি ত্বকে চুলকানি এবং র‍্যাশ তৈরি করতে পারে।

১২. বমি বা বমি বমি ভাব

রক্তে বর্জ্যনীয় পদার্থ বেড়ে যাওয়ায় কিডনির রোগে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার সমস্যা হতে পারে।

১৩. সারাক্ষণ জ্বর জ্বর ভাব অথবা কাপুনি দিয়ে ঘন ঘন জ্বর।

১৪. ছোটো ছোটো শ্বাস:

কিডনি রোগে ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। এ ছাড়া কিডনি রোগে শরীরে রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এসব কারণে শ্বাসের সমস্যা হয়, তাই অনেকে ছোট ছোট করে শ্বাস নেন।

১৫. পেছনে ব্যথা

কিছু কিছু কিডনি রোগে শরীরে ব্যথা হয়। পিঠের পাশে নিচের দিকে ব্যথা হয়। এটিও কিডনি রোগের একটি অন্যতম লক্ষণ।

১৬. বিনা কারণে হেঁচকি।

১৭. শরীর দূর্বল অনুভব হওয়া।

১৮. ডায়াবেটিস

ডায়াবিটিস ও উচ্চ রক্তচাপ  এগুলো হলো বৃক্ক বা কিডনি  নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ।

উপরোক্ত লক্ষণ গুলো হলো কিডনি রোগের লক্ষণ। কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির এইসব লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক কিডনি রোগের প্রতিকার গুলো। কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

কিডনি রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার - কিডনি রোগ কেন হয়

ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিস কিডনি বিকলের প্রধান কারণ।

কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়গুলো জানা থাকলে আমরা সুন্দর ও সুস্থ জীবন যাপন করতে পারি।

. ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখা (HBAIC ৭ (সাত) এর নিচে)

২. উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে (১৩০/৮০এর নিচে)।

৩. ধূমপান পরিহার করুন।

. ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ ঠেকাতে প্রথমত চাই রক্তে শর্করা ও রক্তচাপের সুনিয়ন্ত্রণ। এটা না করতে পারলে কেবল খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে কিডনি ভালো রাখা যাবে না।

. যেসব কিডনি রোগীর শরীরে পানি আসে বা ফুলে যায়, তাদের ক্ষেত্রে দৈনিক পানির পরিমাণ চিকিৎসক মেপে দিতে পারেন। নয়তো পানি নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। তবে সেই সঙ্গে কমাতে হবে সোডিয়াম বা রান্নার লবণের পরিমাণও। এটি রক্তচাপ যেমন বাড়ায়, তেমনি পানি জমতেও সাহায্য করে।

. অসুস্থ কিডনি অনেক সময় রক্ত থেকে পটাশিয়াম নিষ্কাশন ঠিকমতো করতে পারে না। এতে রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে রক্তে ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা করা হলে বিষয়টা ধরা পড়ে। যাদের এই প্রবণতা আছে তারা উচ্চ পটাশিয়ামযুক্ত ফলমূল এড়িয়ে চলাই ভালো। বেশি পটাশিয়াম আছে কলা, কমলা, ডাব, তরমুজ, টমেটো, কিশমিশ, অ্যাভোকেডো ইত্যাদি ফলে।

. পটাশিয়াম মুক্ত খাবার যেগুলো তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কম এমন ফল যেমন আপেল, আঙুর, আনারস, স্ট্রবেরি ইত্যাদি খেতে বাধা নেই।

. কিডনি সমস্যায় অনেক সময় ফসফরাস বা ফসফেটের পরিমাণও যায় বেড়ে। ভুট্টার তৈরি খাবার, কোলা-জাতীয় পানীয়, কিছু বাদামে ফসফেটের পরিমাণ বেশি। তবে চিকিৎসক চাইলে ফসফেট বাইন্ডার ওষুধের মাধ্যমে ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

. কিডনি রোগীদের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’র অভাব দেখা দেয়, রক্তস্বল্পতা হয়। তাই ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

১০. শারিরীক ব্যায়াম করা।

১১. ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।

১২. রক্তে লবণের মাত্রা কম বা বেশি হলে উচ্চরক্ত চাপ বা নিম্ন রক্তচাপ দেখা দেয়ঃ নিম্নচাপ দেখা দিলে মাথা ঘুরতে থাকবে তখন বুঝতে হবে রক্তে লবণের ঘাটতি রয়েছে। লবণপানি বা লবণ মিশ্রিত সরবত পান করলে অল্প সময়ের মধ্যে রক্তের চাপ স্বাভাবিক হয়ে আসে।

১৩. উচ্চরক্তচাপ দেখা দিলে ঘাঁড়ে ব্যথা অনুভব হয় এবং শরীরে অস্থিরতা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতির উদ্ভব হলে কিছুদিন লবণ বর্জন করলে উচ্চরক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে আসবে। রক্তে PH (Power of hydrogen ) এর মাত্রা ৭.৪ এর উপরে অথবা নিচে গেলে দেহে অশুভ বার্তা বয়ে আনে।

১৪. একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন ২ থেকে ৩ লিটার পানির প্রয়োজন। পিপাসাবোধ হওয়ার পূর্বেই নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে পানিপান করতে হবে। একবারে বেশি করে পানিপান করলে অন্ত্রের ভিতর দিয়ে রক্তে পৌঁছে রক্তকে প্রয়োজনের অধিক পাতলা করে ফেলে এবং অতিরিক্ত পানিকে কিডনী অধিক পরিশ্রমের দ্বারা ইউরিন ব্লাডারে পাঠিয়ে দেয়।

এছাড়া খাদ্যের মাধ্যমে অতিরিক্ত লবণটাকেও পানির সঙ্গে প্রসাবের থলিতে পাঠিয়ে দেবে এবং রক্তে লবণের প্রয়োজনীয় মাত্রা ঠিক রাখবে।

১৫. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে জীবন যাপন করবেন।

১৬. সহবাসের আগে ও পরে প্রসাব করে নিবেন।

১৮. গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর অভাবে শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, গ্রহণ করতে পারে না। আর্শ্চাযের বিষয়, কিডনি খাদ্যের মধ্যেকার ভিটামিন ডি সক্রিয় করে ক্যালসিয়াম গৃহীত হওয়ার পরিবেশ তৈরি করে হাঁড়ের গঠন সংরক্ষণে ভূমকা রাখে।

১৯. কিডনি শরীরের প্রয়োজনীয় অনেকগুলি হরমোন নিঃসরণ করে যার মধ্যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি হরমোন হাঁড়ের মজ্জা থেকে রক্তের লাল কনিকা উৎপাদন করতে সাহায্য করে। রক্তে এই লাল কনিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ শরীরের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন রক্তের লাল কণিকার মাধ্যমেই সমস্ত কোষে কোষে পৌঁছে যায়।

২০. কিডনির প্রধান কাজের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বর্পূণ, এটি সব সময় সতর্ক থাকে। যখনই রক্তে লাল কণিকার সংখ্যা কমে যায় সাথে সাথে ঐ বিশেষ হরমোন উৎপাদন করতে থাকে যতক্ষণ না হাড়ের মজ্জা থেকে উৎপাদিত লাল কণিকার ঘাটতি পূরণ হয়। শরীর পরিচালনার জন্য কিডনী সব সময় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাই কিডনীর সুস্থতা,কর্মক্ষমতা দক্ষতা শরীরের জন্যে কতটা প্রয়োজনীয় তা সহজেই অনুমেয়।

২১. প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খাওয়া।প্রোটিন জাতিয় খাবার বেশি খেলে প্রসাবে অম্লতা বৃদ্ধি পায়।

২২. চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত এন্টিবায়োটিক ও তীব্র ব্যথার ওষুধ সেবন না করা. শিশুদের গলাব্যথা, জ্বর ও ত্বকে খোসপাঁচড়ার দ্রুত সঠিক চিকিৎসা করা উচিত. উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে (১৩০/৮০এর নিচে)।

২৩. চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকুন।

রোগীর খাবার (যেসব খেলে আমরা কিডনির রোগ গুলোর প্রতিকার ও প্রতিরোধ করতে পারি):

শরীরের সুস্থতায় কিডনির ভালো থাকা খুব জরুরি। কিডনি প্রতিদিন প্রায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে শরীরকে সুস্থ রাখে। কিডনি  হাড় মজবুতকরনে কিডনির ভূমিকা রয়েছে। কিডনির স্বাস্থ্য সুন্দর ও স্বাভাবিক রাখতে এই খাবারগুলোর অবদান অপরিসীম।

প্রাণঘাতি রোগের একটি হলো কিডনি রোগ। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে এই রোগে। একটু সতর্কতা ও রুটিন অনুযায়ী খাবার খেলে এর হাত থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভাব। আর যারা ইতমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের জন্যও আছে কিছু নিয়ম।

১. যেসব খাবার খাবে

সবজিঃ লাউ, চিচিঙ্গা, লাউ, করলা, বিচি ছাড়া শশা, সজনা, ডাটা শাক, লাল শাক, কাচু শাক, জিংগা, পেপে হেলেঞ্চা শাক ইত্যাদি।

২. প্রানিজ আমিষ: মাছ, মাংশ, দুধ, ডিম ইত্যাদি সীমিত পরিমানে খাবে।

. কম পটাশিয়াম যুক্ত ফল: আপেল, পেয়ারা, পাকা পেপে, নাসা পাতি ইত্যাদি।

. যেসব সবজি খাবে না…

ফুল কপি, বাঁধা কপি, পালং শাক, কচু, মূলা, পুইশাক, ঢড়স, গাজর, কাঠালের বিচি, শীমের বিচি, মূলাশাক ইত্যাদি।

. পেঁপে

৬. কমলা: প্রস্রাবের এসিডিটি কমতে সাহায্য করার শক্তিশালী ক্ষমতা থাকে কমলার রসে। প্রস্রাবে সাইট্রেটের মাত্রা বৃদ্ধি করার মাধ্যমে কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি কমে।

৮. ডাব, আঙ্গুর, কলা তো একে বারেই খাবেনা, কেননা, এতে পটাশিয়ামের পরিমান বেশি। কিডনি রোগীদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়তে থাকে।

এছাড়া রোগীর খাদ্য তালিকায় প্রোটিন রাখতে হবে রোগের উপর মাত্রার উপর ভিত্তি করে। যেমনঃ রোগীর রক্তের ক্রিয়েটিনিন, শরীরের ওজন, ডায়ালাইসিস করেন কিনা, করলেও সপ্তাহে কয়টা করেন তার উপর নির্বর করে প্রোটিনের মাত্রা নির্ধারন করতে হবে।

.‌ কিডনি রোগ শনাক্ত হওয়ার পর প্রতিকেজি দৈহিক ওজনের জন্য প্রোটিনের প্রয়োজন ০.৫-০.৮ গ্রাম। এবং গুরুত্বর রোগীর জন্য ০.৫ গ্রাম।

১০. ক্যাপসিকাম: কিডনি সুস্থ রাখতে ক্যাপসিকাম হতে পারে প্রথম পছন্দ। সালাদ কিংবা যেকোন রান্নাকে সুস্বাদু করতে এর জুড়ি নেই। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, ফলিক এসিড এবং ফাইবার বা আঁশ। এছাড়াও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লাইকোপিন, যা কিনা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।

১১. বাঁধাকপি ও ফুলকপি: বাঁধাকপি ও ফুলকপিকে বলা যায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-এর খনি। এরা শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলস এর বিরুদ্ধে কাজ করে কিডনিকে শক্তিশালী করে। পাশাপাশি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধেও এরা কাজ করে। দামে সস্তা হলেও এগুলোতে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি-৬ ও ফলিক এসিড। ফুলকপির একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে, এটি শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত উপাদান দূর করতে সহায়তা করে।

১২. রসুন: রসুনের গুণের কথা আমাদের সবারই জানা। এটি কিডনি প্রদাহ উপশম করার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিডনি রোগীদের জন্য রসুন বেশ উপকারী।

১৩. পেঁয়াজ: পেঁয়াজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ফ্লাভোনয়েড। এটি রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কিডনিরোগজনিত উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ক্যান্সার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা রয়েছে।

১৪. আপেল: বলা হয়ে থাকে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে ডাক্তার থেকে দূরে থাকা যায়। নিয়মিত আপেল খাওয়ার অভ্যাস করলে তা কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তে কোলেস্টেরল কমাতে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও এর ভূমিকা অনন্য।

১৪. ডিমের সাদা অংশ: অনেকেই সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ডিমকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু ডিমের সাদা অংশে যে প্রোটিন রয়েছে তা কিডনির জন্য খুবই দরকারি।

১৫. মাছ: মাছকে বলা হয়ে থাকে নিরাপদ প্রোটিনের উৎস। দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাংসের চেয়ে মাছের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি মাছে রয়েছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড। এটি কিডনি, হার্ট ও লিভারের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। এছাড়া কোলেস্টেরল কমাতেও এর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।

১৬. অলিভ ওয়েল: যেসব দেশে রান্নায় অলিভ ওয়েল বা জলপাই তেল ব্যবহার করা হয় সেসব দেশে কিডনি রোগ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদির হার তুলনামূলকভাবে কম হয়। অলিভ ওয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পলিফেনল, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে চমৎকার কাজ করে। রান্নায় অথবা সালাদে অলিভ ওয়েল যোগ করলে বাড়তি স্বাদ ও পুষ্টির যোগান বাড়ে।

১৭. নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। বেশিরভাগ শাকসবজিতে ভিটামিন সি, কে, ফাইবার ও ফলিক এসিড থাকে

১৮.শসা: শসায় রয়েছে ৯৬ শতাংশ জল। গবেষণা বলছে, নিয়মিত শসা খেলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা কমে এবং তা কিডনির পক্ষে যথেষ্ট উপকারী। ক্ষুদ্র পাথর দূর করতেও শসা কার্যকর।

১৯. চালতা : এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ লবণ রয়েছে, যা কিডনি ভালো রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য বের করে কিডনি পরিষ্কার করে। একে প্রাকৃতিক ক্লিনজার বলা হয়ে থাকে।

২০. আদা: কিডনি ভালো রাখতে আদার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আদা রক্ত চলাচল বাড়িয়ে কিডনি সচল রাখতে সাহায্য করে। ফলে কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। নিয়মিত আদা চা পান করলে বা কাঁচা আদা খেলে কিডনি সুস্থ থাকে।

২১: এই মুহূর্তে বাংলাদেশে কিডনিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত লোকের সংখ্যা কোটির উপর ছাড়িয়ে গেছে। সঙ্গত কারণগুলি মধ্যে প্রধান এবং একমাত্র কারণ ভেজাল খাদ্যসামগ্রী, ক্যামিক্যাল মিশ্রিত ফলমূল, মাছ এবং রাসায়নিক খাদ্য দ্বারা মোটাতাজা করা মাংস। এছাড়া অজ্ঞতা, অসচেনতা এবং ভালোমানের খাদ্যদ্রবের দুষ্প্রাপ্যতা।

২২. গবেষণায় দেখা গেছে, শোধিত শ্বেতসার, (চিনি বা ময়দা) অধিক পরিমান মাছ, মাংস কিডনির জন্য ক্ষতিকর, যদি না খাবারের মধ্যে একটা বড় অংশ প্রায় এক তৃতীয়াংশ ফল, শাকসবজি এবং দুধ না থাকে। নানা রকম রঙিনফল এবং সবজি দ্বারা কিডনি সুস্থ রাখা যায়। আর এভাবেই কিডনি সমস্যার সমাধান করা যায়।

২৩. লেবুর রসঃ লেবুতে যে এসিড উপাদান আছে তা কিডনিতে জমা হওয়া পাথর ভাঙ্গতে বেশ কার্যকর। লেবুতে যে সাইট্রাস উপাদান আছে তা কিডনিতে থাকা ক্রিস্টালদের পরস্পরের জোড়া লাগতে বাধা দেয়।

২৪. কিডনি সমস্যায় অনেক সময় ফসফরাস বা ফসফেটের পরিমাণও যায় বেড়ে। ভুট্টার তৈরি খাবার, কোলা-জাতীয় পানীয়, কিছু বাদামে ফসফেটের পরিমাণ বেশি। তবে চিকিৎসক চাইলে ফসফেট বাইন্ডার ওষুধের মাধ্যমে ফসফরাস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।

২৫. কিডনি রোগীদের ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘ডি’র অভাব দেখা দেয়, রক্তস্বল্পতা হয়। তাই ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।

ঘরোয়া উপায়ে কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়ঃ

  • পরিষ্কার জলে ধুয়ে নিতে হবে একআঁটি ধনেপাতা। কুচি কুচি করে কেটে পাত্রে রাখতে হবে ধনেপাতা। পাত্রে কিছুটা পরিষ্কার জল নিয়ে ১০ মিনিট ফোটাতে হবে। ঠাণ্ডা হলে ছেঁকে পরিষ্কার বোতলে রাখতে হবে। ফ্রিজে রেখে দেওয়া যেতে পারে ওই বোতল।
  • প্রতিদিন একগ্লাস করে ধনেপাতার জুস খেলেই হাতেনাতে মিলবে ফল। কিডনির মধ্যে জমে থাকা লবন এবং বিষাক্ত পদার্থ প্রস্রাবের মাধ্যমে বেরিয়ে যাবে।

একআঁটি ধনেপাতায় রয়েছে ১১% ফাইবার, ৪% প্রোটিন, ১% ক্যালরি, ১% কার্বোহাইড্রেট, ১% ফ্যাট। ম্যাঙ্গানিজ ২১%, পটাসিয়াম ১৫%, কপার ১১%, আয়রন ১০%, ক্যালসিয়াম ৭%। এতে রয়েছে ৩৮৮% ভিটামিন k, ১৩৫% ভিটামিন A, ৪৫% ভিটামিন C, ১৬% ফলেট।

ধনেপাতায় হাজার গুণ। এগজিমা সারায়, বমিভাব কমায়, পেটের গণ্ডগোল কমায়, আলসার সারায়, সতেজ হয় শ্বাস-প্রশ্বাস, হজমে সাহায্য করে, ব্লাড প্রেশার কমায়, অ্যানিমিয়া কমায়, ডায়াবেটিসে প্রচুর উপকার মেলে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। কনজাংটিভাইটিস থেকে চোখকে রক্ষা করে ধনেপাতা। স্মল পক্স প্রতিরোধ করে ধনেপাতা।

  • তুলসী পাতার গুণাগুণ হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খান।
  • তুলসী পাতার রস বা চা প্রতিদিন একগ্লাস করে পান করলে আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা কমে যায়। আর যদি কিডনিতে পাথর জমে তাহলে তুলসী পাতার রস টানা ৬ মাস পান করলে সেই পাথর গলে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।

তুলসী পানি

  • উপকরণ : দুই কাপ পানি ও কয়েকটি পাতা।
  • প্রস্তুত প্রণালী : একটি পাত্রে দুই কাপ পানি নিন। এর সঙ্গে কয়েকটি তুলসিপাতা সিদ্ধ করুন। ফুটে উঠলে নামিয়ে পান করতে পারেন। এই মিশ্রণটি গলা ব্যথা ও খুসখুসে কাশি কমিয়ে আপনাকে আরাম দেবে।

তুলসী-চা

  • উপকরণ : ১০-১৫টি তুলসীপাতা, গুড়, পানি ও লেবুর রস।
  • প্রস্তুত প্রণালী : প্রথমে গুড় ও তুলসীপাতা বেটে নিন। এর মধ্যে দেড় কাপ পানি ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলায় বসান। মিশ্রণটি ফুটে উঠলে নামিয়ে ফেলুন। এই চা পান করলে আপনার শরীর উষ্ণ থাকবে।

ভেষজ তুলসী-চা

  • উপকরণ : এক টুকরো আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, তুলসীপাতা, দারুচিনি, এলাচ পরিমাণ মতো।
  • প্রস্তুত প্রণালী : পরিমাণমতো পানিতে উপরের উপকরণগুলো মিশিয়ে জ্বাল দিন।১০ মিনিট পর নামিয়ে ছেকে পান করতে পারেন।

তুলসী পাতা রক্তের সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল দুটোই কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে খুব সহজেই আপনি ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

ক্যানসার প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা খুবই উপকারী।

বেশির ভাগ দেশে তুলসীকে মানসিক চাপমুক্ত করার একটি অসাধারণ ঔষধি হিসেবে ধরা হয়। তুলসীর ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এ উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তুলসী শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়।

বেশির ভাগ দেশে তুলসীকে মানসিক চাপমুক্ত করার একটি অসাধারণ ঔষধি হিসেবে ধরা হয়।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আশা করি আপনারা কিডনি রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

যেসব কারণে কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন

  1. প্রস্রাব আটকে রাখা।
  2. পর্যাপ্ত পানি পান না করা।
  3. ডায়াবেটিস থাকা।
  4. উচ্চ রক্তচাপ থাকলে।
  5. বারবার মূত্রনালির সংক্রমণ।
  6. কিডনিতে প্রদাহ হলে।
  7. জন্মগত সমস্যা থাকলে।
  8. বিভিন্ন ধরনের ওষুধের বা কেমিক্যালের পার্শপ্রতিক্রিয়া হলে।
  9. অতিরিক্ত কায়িক শ্রম।
  10. বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া।
  11. লবণ বেশি খাওয়া।
  12. কোমল পানীয় খাওয়া।
  13. ব্যাথা নাশক ঔষধ খাওয়া।
  14. ধূমপানের আসক্তি।
  15. ঘুম কম হওয়া।
  16. সারাদিন বসে থাকা। কোনো শ্রম না করা।
  17. চিকিৎসা দেরি করা।

এই রোগের আরেকটি বড় কারন হলো ই.কোলাই নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া।

একটি কিডনি রোগ – কিডনিতে পাথর

কিডনিতে পাথর:

কিডনিতে পাথর সবারই হতে পারে, মেয়ে থেকে পুরুষের পাথর হওয়াত আশক্ষা বেশি। অতিরিক্ত অজন,কিডনির সংক্রমণ, কম পানি পান করা ইত্যাদি কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।

প্রাথমিকভাবে কিডনিতে পাথর  হলে তেমন সমস্যা ধরা পড়ে না। সমস্যা হয় যখন পাথর প্রস্রাব নালিতে আসে এবং প্রস্রাবে বাধা দেয়। উপসর্গ হিসেবে কোমরের পিছনে ব্যথা হবে। অনেকের প্রস্রাবের সাথে রক্ত বের হয়। অনেক সময় কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। বৃক্কের পাথরের চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের আকার এবং অবস্থানের উপর। সাধারণত অধিক পানি গ্রহণ এবং ঔষধ সেবনে পাথর অপসারণ করা যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে ইউরেটারোস্কোপিক কিংবা আল্ট্রাসনিক লিথট্রিপসি অথবা কিডনির অস্ত্রোপচার করে পাথর অপসারণ করা যায়।

8.3 বৃক্ক বিকল, ডায়ালাইসিস ও প্রতিস্থাপন নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে পাথর ইত্যাদি কারণে কিডনি ধীরে ধীরে বিকল হয়ে যায়। আকস্মিক কিডনি অকেজো বা বিকল হওয়ার কারণগুলো হলো কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মারাত্মক ডায়রিয়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।

ডায়ালাইসিস (Dialysis)

কিডনি বিকল হলে মূত্রের পরিমাণ কমে যাবে। রক্তে ক্রিয়োটিনিন বৃদ্ধি পাবে। তখন রক্তের বর্জ্য দ্রব্যাদি অপসারণের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর পর রোগীকে ডায়ালাইসিস করা হয়।

বৃদ্ধ সম্পূর্ণ অকেজো বা বিকল হওয়ার পর বৈজ্ঞানিক উপায়ে রক্ত পরিশোধিত করার নাম ডায়ালাইসিস। সাধারণত ডায়ালাইসিস মেশিনের’ সাহায্যে রক্ত পরিশোধিত করা হয়। এ মেশিনের ডায়ালাইসিস

টিউবটির এক প্রান্ত রোগীর হাতের কব্জির ধমনির সাথে এবং অন্য প্রান্ত ঐ হাতের কব্জির শিরার সাথে সংযোজন করা হয়। ধমনি থেকে রক্ত ডায়ালাইসিস টিউবের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করানো হয়। এর প্রাচীর আংশিক বৈষম্যভেদ্য হওয়ায় ইউরিয়া, ইউরিক এসিড এবং অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসে। পরিশোধিত রক্ত রোগীর দেহের শিরার মধ্য দিয়ে দেহের ভিতর পুনরায় প্রবেশ করে। এখানে উল্লেখ্য, ডায়ালাইসিস টিউবটি এমন একটি তরলের মধ্যে ডুবানো থাকে, যার গঠন রক্তের প্লাজমা অনুরূপ হয়। এভাবে ডায়ালাইসিস মেশিনের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ (ইউরিয় এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ) বাইরে নিষ্কাশিত হয়। তবে এটি একটি ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

প্রতিস্থাপন

যখন কোনো ব্যক্তির কিডনি বিকল বা অকেজো হয়ে পড়ে তখন কোনো সুস্থ ব্যক্তির কিডনি তার দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়, তাকে কিডনি সংযোজন বলে। কিডনি সংযোজন দুভাবে করা যায়: কোনো নিকট আত্মীয়ের কিডনি অথবা কোনো মৃত ব্যক্তির কিডনি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যায়। নিকট আত্মীয় বলতে বাবা, মা, ভাইবোন, মামা, খালাকে বোঝায়। মৃত ব্যক্তি বলতে ‘ব্রেন ডেড’ মানুষকে বোঝায়, যাঁর আর কখনোই জ্ঞান ফিরবে না কিন্তু তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কৃত্রিমভাবে জীবিত রাখা হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো মরণোত্তর বৃক্ক দানের মাধ্যমে একজন কিডনি বিকল রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভবপর হতে পারে। মরণোত্তর সুস্থ কিডনি দানে মানবজাতির উপকার করা যায়।

মূত্রানালি সুস্থ রাখার উপায়:

  1. শিশুদের টনসিল ও খোসপাচড়া থেকে সাবধান হওয়া।
  2. ডায়াবেটিকস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখা ।
  3. ডায়রিয়া ও রক্তক্ষরণ ইত্যাদির দ্রুত চিকিৎসা করা উচিত।
  4. ধূমপান বর্জন করা ।
  5. ব্যথা নিরাময়কারী ঔষধ সেবন থেকে বিরত থাকা।
  6. পরিমাণ মতো পানি পান করা উচিত।
  7. নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করা ।

অবশ্যই পড়ুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *