কিভাবে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায় ?

কিভাবে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায়? ভালো রেজাল্ট করতে হলে দিনে কত ঘন্টা পড়লে ভালো হয় এবং কিভাবে পড়লে সব থেকে ভালো হয়? পরীক্ষায় A+ পাওয়ার উপায় অথবা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার উপায়গুলো কী কী? এসব বিষয়ের উপর আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা আলোচনা করতে চলেছি।

যারা পড়াশোনা করে তাদের সবাই পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে চায়। কিন্তু প্রত্যেকেই পরীক্ষায় একেবারে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারে না। যারা সঠিক নিয়ম অনুসারে সারা বছর পড়াশোনা করে থাকে তারা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারে। তাছাড়া অনেকে ভালো ফলাফল অর্জন করতে ব্যার্থ হয়।

তাই যেকোন পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার সেরা ১২ টি উপায় সম্পর্কে এই আর্টিকেলে আমরা জানবো। 12 Best Ways to Make a Good Result in the Examination.

কিভাবে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায়
পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার সেরা উপায়।

ছাত্রজীবনের (student life) একটা বড় অংশ পড়ে থাকে পড়াশোনায়। যদিও অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে ভালোবাসে, অন্যদিকে কেউ কেউ পড়াশোনা একেবারেই পছন্দ করে না।

তবে অভিভাবক, শিক্ষক থেকে শুরু করে সবাই চায় তাদের সন্তান যেন পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করে। যারা টপ স্টুডেন্ট তারা দিনের বেশির ভাগ সময় কাটায় পড়াশোনার পেছনে।

তবে সব শিক্ষার্থীর পক্ষে তা সম্ভব নয়। ক্লাস টপাররা কিভাবে পড়াশোনা করে সে বিষয়েও নিচে আপনি জানতে পারবেন। তারা মূলত নিচের নিয়ম গুলো অনুযায়ী পড়াশোনা করে থাকে যার কারণে তাদের স্থান প্রথমের দিকে থাকে।

নতুন ক্লাস নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে, কিন্তু পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার জন্য আপনার প্রথম যে জিনিসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হল মনযোগ বা অধ্যাবসায়।

একজন শিক্ষার্থী যত বেশি কৌতূহলী, সে তার পড়াশোনায় তত বেশি আগ্রহী। অতএব, আপনি যদি আপনার ফলাফল উন্নত করতে চান তবে নিয়মিত অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কিভাবে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায় ?

একটানা পড়ে ভালো ফলাফল পাওয়া সবসময় সম্ভব নয়। আসলে মানুষের মেধা ও অনুশীলনের উপর নির্ভর করে ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।

এছাড়াও, আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে কিভাবে ভালো রেজাল্ট করা যায় সে সম্পর্কে কিছু সহায়ক টিপস রয়েছে।

তাহলে চলুন জেনে নিই কিভাবে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যাবে?

১. প্রতিদিন পড়াশোনার অভ্যাস তৈরি করতে হবে

দিনে 24 ঘন্টার মধ্যে 7 থেকে 8 ঘন্টা অধ্যয়ন করা একেবারে প্রয়োজনীয়।

পড়াশোনা করাটা একটা অভ্যাসের মতোই, নিয়মিত পড়ার অভ্যাস তৈরি করলে ধীরে ধীরে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তৈরি করা সম্ভব। প্রথমে ঘড়ি নিয়ে এক ঘন্টা পড়ুন এবং পড়ার মাঝে অবশ্যই বিরতি নিন।

অন্যথায়, একঘেয়েমি চলে আসে। এইভাবে, আপনার সুবিধা অনুযায়ী পরবর্তীতে পড়ার সময় এক ঘন্টা বাড়িয়ে দিন। এবং নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য ধ্যান একটি খুব দরকারী উপায়।

এতে আপনার পড়াশোনায় মনোযোগ বাড়বে।

আপনি যদি এই 7 ঘন্টা থেকে 8 ঘন্টা অধ্যয়নের সময়কে দিন এবং রাতে ভাগ করতে পারেন তবে আপনার পড়াশোনা করার সময় আপনি বিরক্ত বোধ করবেন না।

২. নিজেই নিজের নোট তৈরি করুন

এখন অনলাইন ক্লাসের কারণে ক্লাসে বসে শিক্ষকদের নোট নেওয়ার বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই চলে গেছে। কিন্তু, চলমান নোট ভালো ফলাফল পেতে অনেক সাহায্য করে।

সুতরাং, যতটা সম্ভব লিখিত নোট তৈরি করুন এবং তারপর সেখান থেকে পড়া মনে রাখার চেষ্টা করুন।

আপনি আপনার স্কুল – কলেজের ক্লাসে বসে নোট তৈরি করতে পারেন। এমনকি ইন্টারনেটের সাহায্যে এখন খুব সহজেই যেকোনো বিষয়ের জন্য নোট তৈরি করা সম্ভব।

তাছাড়া পরীক্ষার আগে এই চলমান নোট গুলো পড়লে পুরাতন পড়া গুলোর রিভিশনের কাজ খুব সহজেই হয়ে যাবে।

নোট তৈরি করে আপনি অজান্তেই আপনার পড়াশোনাকে কিছুটা সহজ করে তুলতে পারেন।

৩. পড়াশোনায় অডিও ভিজুয়াল মাধ্যমের সহায়তা নিন

এখন ইন্টারনেট কি ও প্রযুক্তির যুগে পড়াশোনা অনেক মজার হয়ে উঠেছে। বর্তমান সময়ে মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে এমন কোন জিনিস নেই যা গুগলে সার্চ করলে পাওয়া যাবে না।

তাই আপনি যদি পড়াশোনার কোনো বিষয়ে আটকে যান, তাহলে আপনি সহজেই ইউটিউব, বিভিন্ন ই-লার্নিং অ্যাপ (e-learning application) বা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সেটি সার্চ করার মাধ্যমে খুঁজে পেতে পারেন।

আর বিজ্ঞান বলছে যে, অডিও-ভিজ্যুয়াল মিডিয়ার সাহায্যে মানুষ পড়াশোনা অনেক বেশি মনে রাখতে পারে। তাই পড়াশোনায় ভালো ফল পেতে ইন্টারনেট খুবই সহায়ক।

৪. পড়াশোনার একটি রুটিন তৈরি করুন

স্কুল, কলেজ, চাকরির পরীক্ষা বা যেকোনো পড়াশোনায় নানা ধরনের বিষয় রয়েছে। তাই সেই সব বিষয় ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে হলে আমাদের একটি ভালো রুটিন দরকার।

রুটিনের সাহায্যে আপনি সঠিকভাবে বরাদ্দ করতে পারেন কখন এবং কত সময় করে প্রতিটি বিষয় অধ্যয়ন করতে হবে।

এতে আপনি সমস্ত বিষয়ে আপনার মন এবং সময় ব্যয় করতে পারেন এবং প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়তে পারেন।

৫. সারাদিনে আট ঘন্টা ঘুমাতে হবে

আপনার যেমন দিনে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করা উচিত, তেমনি আপনার দিনে অন্তত ৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম দরকার।

আমাদের দৈনিক আট ঘন্টা করে ঘুম মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ বিশ্রামের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমরা যখন ঘুমাই, তখন আমাদের মাথা ঠিকঠাক কাজ করে, আমাদের মন ভালো থাকে এবং আমাদের মন পড়াশোনায় নিবদ্ধ থাকে যাতে আমরা সঠিকভাবে সকল তথ্য মনে রাখতে পারি।

মনে রাখবেন, পড়াশোনার সময় আমাদের মস্তিষ্ক অনেক চাপের মধ্যে থাকে। তাই পড়ার পর সেই পড়া গুলো মনে রাখার জন্য মাথা পরিষ্কার ও ঠাণ্ডা রাখতে হবে।

এজন্য পড়াশোনার পাশাপাশি সঠিক বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন।

৬. ভালো প্রাইভেট টিউশনে ভর্তি হতে হবে

আপনার পড়াশোনার জন্য একজন ভাল প্রাইভেট টিউটরের ভূমিকা অপরিহার্য।

ভালো ফলাফল পেতে হলে একজন ভালো পরামর্শদাতা বা গাইড প্রয়োজন।

আপনার বাড়ির হোম টিউটর বা গৃহশিক্ষক একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি যিনি বছরের পর বছর ধরে আপনার মতো অনেক ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা দিয়েছেন।

ফলস্বরূপ, আপনার পড়াশোনা নিয়ে যদি আপনার কোন সন্দেহ থাকে তবে আপনার প্রাইভেট টিউটর আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

একজন আদর্শ প্রাইভেট টিউটরের লক্ষ্য হলো আপনার পড়াশোনার সময় আপনাকে ভালভাবে গাইড করা। যাতে, আপনি ভালভাবে পড়াশোনা করতে পারেন এবং দুর্দান্ত ফলাফল পেতে পারেন।

৭. নিজেই সকল বিষয়েয় সাপ্তাহিক এবং মাসিক পরীক্ষা দেওয়ার অভ্যাস করা

এখন সবাই কৌশলগতভাবে পড়াশোনা করতে অভ্যস্ত। অর্থাৎ আপনাকে মাসের একটি নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে যেকোনো বিষয়ের নির্দিষ্ট অধ্যায় শেষ করতে হবে।

পড়ার পর নিজেই একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করুন এবং সেই প্রশ্নপত্রের উত্তর যথাযথ সময় নির্ধারণ করে নিজেই খাতায় লিখুন এবং নিজের পরীক্ষা নিন।

এতে আপনার আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে, তেমনি আপনার পড়া কতটা ভালো হয়েছে সে বিষয়ে আপনি ভালো ধারণা পাবেন।

প্রয়োজনে আপনার বাবা-মা বা হোম টিউটরকে এই সাপ্তাহিক এবং মাসিক মূল্যায়ন পরীক্ষা নিতে বলুন।

৮. পড়াশোনার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে

পড়াশোনার প্রতি আপনার আগ্রহও অনেকটা আপনার বাড়ির পরিবেশের উপর নির্ভর করে।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘরে পড়াশোনা করতে ভালো লাগে, তাই পড়াশোনার সময় আপনার অধ্যয়নের জায়গা পরিষ্কার রাখুন।

ঘরে যাতে পর্যাপ্ত আলো – বাতাস থাকে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

বই, নোটবুক, কলম, পেন্সিল এবং পানির বোতল হাতের কাছেই রাখুন, যাতে পড়তে বসার পর আবার উঠতে না হয়। কারণ একটানা বসে থাকলে পড়াশোনায় মন আটকে যায়।

৯. গ্রুপ স্টাডিতে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করুন

আপনি যখন পড়াশোনা করেন, তখন আপনি যে কোনও বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট ধারণা পেয়ে থাকেন।

আবার, অন্যদিকে, যখন আপনার অন্যান্য বন্ধুরা একই পাঠ্য বা বিষয় পড়ে, তাদের ধারণা ভিন্ন হতে পারে।

তাই সপ্তাহে অন্তত একবার বা মাসে দুইবার গ্রুপ স্টাডি (group study) করার চেষ্টা করুন।

গ্রুপ স্টাডিতে আপনি একে অপরের সাথে নোট বিনিময় করতে পারেন বা নিজেদের মধ্যে কোনো অধ্যয়ন নিয়ে আলোচনা করতে পারেন।

এছাড়া যদি গ্রুপ স্টাডি করা সম্ভব না হয়, তাহলে আপনি একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ (Whatsapp group) তৈরি করতে পারেন এবং সেখানে পড়াশোনার বিষয় গুলো আপনার সহপাঠীদের সাথে আলোচনা এবং বিনিময় করতে পারেন।

১০. নিজের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস রাখতে হবে

দেখুন, যতটা সম্ভব পড়াশুনা করার চেষ্টা করুন। সর্বদা মনে রাখবেন, আপনি যদি একশত ভাগ মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করেন তবে অবশ্যই আপনি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে পারবেন।

তাই নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং নার্ভাস না হয়ে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করুন।

তারপর বাকিটা আপনার ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিন।

১১. শিক্ষক – শিক্ষিকাদের সহায়তা নিন

আমাদের শিক্ষকরা ভালোভাবে পড়াশোনা করানোর জন্য সবসময় প্রস্তুত আছেন।

সুতরাং, যখনই আপনি কোনও বিষয়ে আটকে যান তখন আপনার শিক্ষক বা পরামর্শদাতার নিকট থেকে সেই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে শিখে নিতে পারেন।

তারা যতদূর সম্ভব আপনাকে সাহায্য করবে।

১২. প্রতিদিন কিছু টপিক খাতায় লিখুন

আসলে লেখাপড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো হাতে লিখালিখি করা।

আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা বলেন, পড়ার পাশাপাশি লেখার অভ্যাস করলে দ্রুত পড়া মুখস্থ করা যায় এবং দীর্ঘ সময় মনে রাখা যায়। তাই পড়ার পাশাপাশি লেখার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

এতে আপনার লেখার গতি যেমন বাড়বে, পরীক্ষায় লেখার অভ্যাসও তৈরি হবে।

সর্বশেষ

প্রতিটি ব্যক্তির লেখাপড়া করার সময় এবং ধরন আলাদা হতে পারে।

যাইহোক, নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করুন এবং প্রতিদিন একই সময়ে পড়তে বসুন। ফলে পড়াশোনা আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে এবং আপনি যদি সঠিকভাবে পড়াশোনা করেন তবে পরীক্ষার ফলাফল অবশ্যই ভালো হবে।

তবে কেউ যদি পরীক্ষায় শীর্ষে উঠতে চায় বা রেজাল্টে প্রথম সারির দিকে থাকতে চায় তাহলে তার পড়াশোনার প্রতি প্রচুর একাগ্রতা ও ভালোবাসা দরকার।

সুতরাং, আপনার মেধা এবং ইচ্ছা অনুযায়ী পড়াশোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা উচিত। আজকে কিভাবে পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায়” এই বিষয়ক আমাদের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ।

কিভাবে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা যায়? আশা করি আপনি এটি খুব পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছেন।

যদি এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনার মন পড়াশোনা সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ওঠে, তাহলে অবশ্যই কমেন্ট এর মাধ্যমে আমাদের জানিয়ে দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *