মিষ্টিকুমড়া ও চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি

আজকে আমারা জানব মিষ্টিকুমড়া ও চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি।

কুমড়া চাষ:

মিস্টি কুমড়া এবং চাল কুমড়া চাষ পদ্ধতি
কুমড়া চাষ পদ্ধতি।

কুমড়া অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি সবজি । এ জাতীয় সবজির কিছু গ্রীষ্মকালীন ও কিছু শীতকালীন জাত আছে যা বাংলাদেশে জন্মায় আবার কিছু জাত আছে সারা বছরই সংরক্ষণ করে সবজির চাহিদা পূরণ করা যায় কুমড়া জাতীয় সবজির মধ্যে মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া ও লাউ প্রধান। আমরা এখন মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া ও লাউ সবজিগুলো সম্পর্কে জানব ।

মিষ্টিকুমড়ার উপকারিতা

মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ থাকে। এর ফল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায়ই খাওয়া যায়। তবে এর প্রধান ব্যবহার পাকা অবস্থায়। কুমড়ার পাতা, কচি ডগা ও বিচি খাওয়া যায়। মিষ্টিকুমড়া সচরাচর বৈশাখী, বর্ষাতি ও মাঘী এ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত ।

মিষ্টিকুমড়ার উপকারিতা

  1. খাদ্য হজমে সাহায্য করে
  2. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
  3. ওজন কমায়
  4. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
  5. রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে
  6. চোখের যত্নে
  7. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  8. বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না
  9. . ‘হৃদ্‌যন্ত্র’ ভালো রাখতে

মিষ্টি কুমড়ার বিচির উপকারিতা: এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। কিছু কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে এর ভূমিকা অপরিসীম। প্রোস্টেড এবং বস্নাডারের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে (১০০ গ্রামে) প্রোটিন আছে ২৯.৮৪ গ্রাম, যা আমরা এক টুকরো (১০০ গ্রাম) মুরগীর মাংসে পেয়ে থাকি। অর্থাৎ উৎকৃষ্ট মানের এবং যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন পেতে কম খরচে এটি একটি সহজলভ্য খাবার।

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

চাষের সময়:

বৈশাখী কুমড়ার বীজ মাঘ মাস, বর্ষাতি কুমড়ার বীজ বৈশাখ এবং মাঘী কুমড়ার বীজ শ্রাবণ মাসে বপন করতে হয় ।

মাদা তৈরি ও সার প্রয়োগ: মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

মাদার জন্য সাধারণত ৩-৪ মিটার দূরত্বে ৮০-১০০ ঘন সেমি আকারের গর্ত তৈরি করতে হবে । প্রতি গর্তে গোবর বা কমপোস্ট ৫ কেজি, ইউরিয়া ১৩০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমওপি ১৫০ গ্রাম, জিপসাম ৯০ গ্রাম ও দস্তা সার ৫ গ্রাম দিতে হবে। ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার বীজ বোনার ৮-১০ দিন আগে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া দুইভাগে বীজ বোনার ১০ দিন পর প্রথমবার ও ৩৫ দিন পর দ্বিতীয়বার উপরি প্রয়োগ করতে হবে । মাদার চারপাশে অগভীর একটি নালা কেটে সার নালার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে ।

চারা উৎপাদন:

  1.  পলিব্যাগে চারা উৎপাদন
  2. পলিব্যাগে মিষ্টি কুমড়ার চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে ৩X৪ ইঞ্চি (৮X১০(সে.মি) আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা হয়।
  3. অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের জন্য ছিদ্রযুক্ত পলিব্যাগে ব্যবহার করতে হবে।

পলিব্যাগে বীজ বপন: 

  1. প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। মাটিতে বীজ গজানোর জন্য “জো” নিশ্চিত করে (মাটিতে “জো” না থাকলে পানি দিয়ে “জো” করে নিতে হবে) তা পলিব্যাগে ভরতে হবে।
  2.  অতঃপর প্রতি ব্যাগে দুইটি করে বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে।

বীজের পরিমাণ

মিষ্টি কুমড়া চাষের জন্য শতাংশ প্রতি ২.৫ গ্রাম পরিমাণ বীজের প্রয়োজন হয়।

বীজ বপন:

মাদা তৈরি হতে ১০-১২ দিন পর প্রতি মাদায় ২-৩ টি বীজ মাদার মাঝখানে রোপণ করতে হবে।

আগাছা থাকলে তা পরিষ্কার করে চারা গাছের গোড়ায় কিছুটা মাটি তুলে দিতে হবে। মাঝে মাঝে নিড়ানি । দিয়ে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে। গোড়ার কাছাকাছি কিছু খড় ১৫-২০ দিন পর বিছিয়ে দিতে হবে। ফল ধরা শুরু করলে ফলের নিচেও খড় বিছিয়ে দিতে হবে। বৈশাখী কুমড়া মাটিতে হয়, অন্যান্য কুমড়ার জন্য মাচার ব্যবস্থা করতে হয়। গাছের লতাপাতা বেশি হলে কিছু লতাপাতা ছেঁটে দিতে হবে।

পোকা ও রোগ দমন:

কুমড়া জাতীয় গাছের বিভিন্ন পোকার মধ্যে লাল পোকা, কাঁটালে পোকা এবং ফলের মাছি উল্লেখযোগ্য । এ পোকা দমনের জন্য সেভিন ডায়াজিনন প্রয়োগ করা যেতে পারে। আর এ জাতীয় সবজির রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিও, ডাউনি মিলডিও ও এনথ্রাকনোজ প্রধান। দুই সপ্তাহ পর পর ডায়াথেন এম ৪৫ প্রয়োগ করতে হবে ।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন:

মিষ্টিকুমড়া কচি অবস্থা থেকে শুরু করে পরিপূর্ণ পাকা অবস্থায় খাওয়া যায় তাই কচি অবস্থা থেকেই ফসল সংগ্রহ শুরু হয় । কুমড়া বেশ পাকিয়ে সংগ্রহ করলে অনেকদিন ঘরে রাখা যায়। শতক প্রতি ফলন ৮০-১০০ কেজি হতে পারে ।

চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি

 

চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি

চালকুমড়ার ভুমিকা :

গ্রামবাংলায় ঘরের চালে এ সবজি গাছ উঠানো হয় বলে এটি চাল কুমড়া নামে পরিচিত। তবে জমিতে মাচায় ফলন বেশি হয় কচি ফল (জালি) তরকারি হিসাবে এবং পরিপক্ব ফল মোরব্বা ও হালুয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয় ।

চাল কুমড়ার জাত:

বাংলাদেশে কুমড়ার কোনো অনুমোদিত জাত নেই । তবে বারি কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি চালকুমড়া-১ নামের জাতটি বাংলাদেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যায়।

মাটি:

দোআঁশ মাটিতে এটি চাষ করা হয়। তবে উপযুক্ত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাদা মাটি ছাড়া যে কোনো মাটিতে চাষ করা যায় ।

চাষের সময় :

ফেব্রুয়ারি-মে।

মাদা তৈরি: চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি

জমি ভালোভাবে চাষ করে মই দিয়ে ঢেলা ভেঙে সমান করতে হবে । জমিতে মাদার উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি, প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পর পর মাদা তৈরি করতে হবে। এরূপ পাশাপাশি দুইটি মাদার মাঝখানে ৬০সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে । পারিবারিক বাগানে চাল কুমড়ার চাষ করতে হলে মাদায় বোনার পর চারা গজালে তা মাচা, ঘরের চাল কিংবা কোনো বৃক্ষের উপর তুলে দেওয়া হয় ।

মাদায় সার প্রয়োগ প্রতি মাদায় গোবর ১০ কেজি, টিএসপি ২০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম দিতে হবে ।

মাদায় গর্ত তৈরি:

মিষ্টিকুমড়া চাষের নিয়মের অনুরূপ ।মাদার গর্তে বীজবপন

প্রতি মাদায় সারিতে ৪-৫ টি বীজ বপন করতে হবে। ৫-৭ দিনের মধ্যেই বীজগুলো গজাবে । চারা গজানোর কয়েকদিন পর প্রতি মাদায় ২-৩ টি সবল গাছ রাখতে হবে।

পরিচর্যা:

মাদা শুকিয়ে গেলে সেচ দিতে হবে । বর্ষার পানি জমলে তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে । গাছের বৃদ্ধির জন্য মাচা দিতে হবে । মাদার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে । গাছের গোড়ায় মাটি উঠিয়ে দিতে হবে ।

বালাই ব্যবস্থাপনা:

ফলের মাছি পোকা, রেড পামকিন বিটল, ইপিল্যাকনা বিটল, লাল মাকড় প্রভৃতি পোকা ফলের ক্ষতি করে থাকে । কীটনাশক প্রয়োগ করে এসব পোকা দমন করা যায় । এছাড়া পাউডারি মিলডিও পাতার উপরে সাদা পাউডার এবং ডাউনি মিলডিউ পাতার নিচে ধূসর বেগুনি রং প্রভৃতি রোগ পাতার ক্ষতি করে গাছকে দুর্বল করে ফেলে । ছত্রাক নাশক বা বোর্দো মিক্সার প্রয়োগ করে এসব রোগ থেকে রেহাই পাওয়া যায় ।

মিষ্টিকুমড়া চাষ পদ্ধতি এবং চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আশা করি আজকের আর্টিকেলে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *