খাদ্য কাকে বলে ? খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি

খাদ্য কি বা খাদ্য কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? খাদ্য ও পুষ্টি কাকে বলে এবং খাদ্য উপাদান কাকে বলে এসব বিষয়ে যদি আপনি জানতে চাচ্ছেন, তাহলে এই আর্টিকেলে খাদ্য সম্পর্কিত সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

খাদ্য ব্যতীত আমরা বাঁচতে পারি না। দেহের বৃদ্ধি ও বিকাশ, দেহের টিস্যুগুলোর ক্ষতি পূরণ, শক্তি উৎপাদন প্রভৃতি কাজের জন্য নিয়মিত বিশেষ কয়েক ধরনের খাদ্যের প্রয়োজন হয়।

আমাদের স্বাস্থ্য বহুলাংশে নির্ভর করে, যে খাদ্য আমরা খাই তার গুণগতমানের ওপর। খাদ্য আমাদের চেহারায়, কাজকর্মে, আচরণে ও জীবনের মানের ভিন্নতা ঘটাতে পারে।

শ্বসন ক্রিয়ার সময় খাদ্যস্থ রাসায়নিক শক্তি তাপ ও গতি শক্তিরূপে মুক্ত হয়ে জীবদেহের জৈবিক ক্রিয়াগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রতিটি জীব তার পরিবেশ থেকে প্রয়োজনমতো এবং পরিমাণমতো খাদ্য গ্রহণ করে।

প্রতিটি খাদ্যই জটিল রাসায়নিক যৌগ। এই জটিল খাদ্যগুলো বিভিন্ন উৎসেচকের সাহায্যে সরল খাদ্যে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে পরিপাক বলে।

পরিপাককৃত খাদ্য শোষিত হয়ে দেহকোষের প্রোটোপ্লাজমে সংযোজিত হয়- যাকে আত্তীকরণ বলে। পরিপাকের পর অপাচ্য খাদ্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় দেহ থেকে নির্গত হয়ে যায়।

সুষম খাদ্য কাকে বলে এবং সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও এই আর্টিকেলে আপনারা জানতে পারবেন। আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক, খাদ্যের সংজ্ঞা কি?

খাদ্য কাকে বলে ?

খাদ্য কাকে বলে

পুষ্টিবিজ্ঞান অনুসারে আমরা যা খাই তার সবই খাদ্য নয়। তাহলে খাদ্য কী?

সেই সব আহার্য বস্তুকে খাদ্য বলা যাবে, যা পুষ্টির দ্বারা জীবদেহে বৃদ্ধি, শক্তি উৎপাদন, রোগ প্রতিরোধ তথা পুষ্টি, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করে।

তাহলে খাদ্য দেহের পুষ্টি সাধন করে।

পুষ্টি কি?

পুষ্টি হলো – পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু আহরণ করে খাদ্যবস্তুকে পরিপাক ও শোষণ করা এবং আত্তীকরণ দ্বারা দেহের শক্তির চাহিদা পূরণ, রোগ প্রতিরোধ, বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করা।

পুষ্টির ইংরেজি শব্দ Nutrition। অপরদিকে খাদ্যের যেসব জৈব অথবা অজৈব উপাদান জীবের জীবনীশক্তির যোগান দেয়, তাদের পরিপোষক বা নিউট্রিয়েন্টস (Nutrients) বলে।

যেমন – গ্লুকোজ, খনিজ লবণ, ভিটামিন ইত্যাদি।

পরিপোষকের পরিপাকের প্রয়োজন হয় না। প্রাণীরা খাদ্যের মাধ্যমে পরিপোষক গ্রহণ করে।

আরও সহজভাবে খাদ্যের সংজ্ঞা কি বা খাদ্য বলতে কি বোঝায়?

সহজভাবে, খাদ্য কাকে বলে?

আমাদের চলাফেরা, খেলাধূলা ইত্যাদি সব কাজের জন্য শক্তি প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আমরা খাদ্য থেকে পাই।

যেসব বস্তু খাওয়ার পর দেহে শোষিত হয়ে বিভিন্ন কার্য সম্পাদন করে তাকে খাদ্য বলে।

এই কাজগুলো হচ্ছে দেহের ক্ষয় পূরণ, দেহের পুষ্টি সাধন, দেহে রোগ প্রতিরোধক শক্তি উৎপাদন এবং কর্মশক্তি ও তাপ উৎপাদন।

খাদ্যের কাজ কি ?

খাদ্যের কাজ প্রধানত তিনটি।

  1. খাদ্য দেহের গঠন, বৃদ্ধিসাধন, ক্ষয়পূরণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করে।
  2. খাদ্য দেহে তাপ উৎপাদন করে, কর্মশক্তি প্রদান করে।
  3. খাদ্য রোগ প্রতিরোধ করে, দেহকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম রাখে।

খাদ্য উপাদান কাকে বলে ?

খাদ্য অনেকগুলো রাসায়নিক বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত। এই রাসায়নিক বস্তু গুলোকে খাদ্য উপাদান বলে।

এর উপাদান গুলোর মধ্যে পুষ্টি থাকে, তাই খাদ্য উপাদানকে পুষ্টি উপাদানও বলা হয়।

খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি ?

খাদ্যে ছয়টি উপাদান থাকে , যথা : শর্করা , আমিষ , স্নেহ , ভিটামিন , খনিজ লবণ এবং পানি ।

  • এগুলোর মধ্যে শর্করা , আমিষ ও স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাট দেহ পরিপোষক খাদ্য , যারা দেহের পুষ্টি , বৃদ্ধি ও শক্তি উৎপাদনে সহায়ক।
  • খাদ্যের স্নেহ ও শর্করাকে বলা হয় শক্তি উৎপাদক খাদ্য এবং আমিষযুক্ত খাদ্যকে বলা হয় দেহ গঠনের খাদ্য।
  • ভিটামিন , খনিজ লবণ ও পানি দেহ সংরক্ষক খাদ্য উপাদান , যারা দেহের রোগ প্রতিরোধে সহায়তাকারী।

1. আমিষ (Protein)

অ্যামাইনো এসিডের পলিমারকে আমিষ বলে। অ্যামাইনো এসিডের পলিমারকে আমিষ বলে আমিষ বা প্রোটিন – জাতীয় খাদ্য কার্বন , হাইড্রোজেন , অক্সিজেন এবং নাইট্রোজেন দিয়ে গঠিত ।

আমিষে শতকরা 16 ভাগ নাইট্রোজেন থাকে । আমিষে সামান্য পরিমাণে সালফার , ফসফরাস এবং আয়রনও থকে । নাইট্রোজেন এবং শেষোক্ত উপাদানগুলোর উপস্থিতির কারণে আমিষের গুরুত্ব শর্করা ও স্নেহ পদার্থ থেকে আলাদা।

শুধু আমিষজাতীয় খাদ্যই শরীরে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে বলে পুষ্টিবিজ্ঞানে আমিষকে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়

আমিষের উৎস – আমরা আগেই জেনেছি মাছ , মাংস , ডিম , দুধ , ডাল , শিমের বীচি , শুঁটকি মাছ , চিনাবাদাম ইত্যাদি থেকে আমরা আমিষ পাই ।

উৎস অনুযায়ী আমিষ দুই ধরনের :

  1. প্রাণিজ আমিষ এবং
  2. উদ্ভিজ্জ আমিষ ।

2. শর্করা (Carbohydrates)

পলিহাইড্রোক্সি অ্যালডিহাইড , কিটোন বা এদের পলিমারকে শকরা বলে ।

শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট ( Carbohydrate ) শর্করাজাতীয় খাদ্য শরীরে কাজ করার শক্তি যোগায় ।

শর্করার মৌলিক উপাদান কার্বন , হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন । উদ্ভিদের মূল , কাণ্ড , পাতা , ফুল , ফল ও বীজে শর্করা বিভিন্নরূপে জমা থাকে ।

ফলের রসে গ্লুকোজ , দুধে ল্যাকটোজ , গম , আলু , চাল ইত্যাদিতে শ্বেতসার ( স্টার্চ ) ইত্যাদি শর্করাজাতীয় খাদ্যের বিভিন্ন রূপ ।

3. স্নেহজাতীয় খাদ্য (Fats)

স্নেহজাতীয় খাদ্য ( Fats ) বা চর্বি একটি প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান । কার্বন , হাইড্রোজেন , অক্সিজেন দিয়ে তৈরি এই উপাদানটির মুখ্য কাজ হলো তাপ উৎপাদন করা ।

এই উপাদানটি পাকস্থলীতে অনেকক্ষণ থাকে , তাই তখন ক্ষুধা পায় না । দেহের ত্বকের নিচে চর্বি জমা থাকে । তাছাড়া বিভিন্ন অঙ্গ যেমন : যকৃৎ , মস্তিষ্ক , মাংস পেশিতেও চর্বি জমা থাকে ।

দেহের এ সঞ্চিত চর্বি উপবাসের সময় কাজে লাগে । শর্করা ও আমিষের তুলনায় চর্বিতে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ক্যালরি থাকে ( ক্যালরি হলো প্রাণিদেহে শক্তি মাপার একটি একক ) ।

খাবার তেল বা ঘি দিয়ে রান্না করা খাবার বেশ সুস্বাদু হয় , সঙ্গে এর পুষ্টিমানও বেড়ে যায়।

4. খাদ্যপ্রাণ বা ভিটামিন (Vitamins)

স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনের পরিমাণ খুব সামান্য হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম ।

দেহের বৃদ্ধির জন্য ও সুস্থ থাকার জন্য ভিটামিন অত্যাবশ্যক । সুষম খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপাদান থাকে বলে সুষম খাদ্য থেকে প্রচুর ভিটামিন পাওয়া যায় ।

তবে নিয়মিত ভিটামিনবিহীন খাবার খেলে কিছুদিনের মধ্যে দেহে ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা দেখা দেয় ।

পরবর্তীকালে তা মারাত্মক আকারে স্থায়ীভাবে দেহের ক্ষতিসাধন করে , এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

5. খনিজ লবণ (Mineral salts)

দেহকোষ ও দেহের তরল অংশের জন্য খনিজ লবণ অত্যাবশ্যকীয় উপাদান । মানুষের শরীরে ক্যালসিয়াম , লৌহ , সালফার , দস্তা , সোডিয়াম , পটাশিয়াম , আয়োডিন ইত্যাদি থাকে ।

এ উপাদানগুলো কখনো মৌলিক উপাদানরূপে মানবদেহে অবস্থান করে না , এগুলো খাদ্য ও মানবদেহে বিভিন্ন পরিমাণে অন্য পদার্থের সাথে মিলিত হয়ে নানা জৈব এবং অজৈব যৌগের লবণ তৈরি করে ।

খনিজ লবণ দেহ গঠন ও দেহের অভ্যন্তরীণ কাজ নিয়ন্ত্রণ করে । হাড় , দাঁত , পেশি , এনজাইম এবং হরমোন গঠনের জন্য খনিজ লবণ একটি অপরিহার্য উপাদান ।

স্নায়ুর উদ্দীপনা , পেশি সংকোচন , দেহকোষে পানির সাম্যতা বজায় রাখা , অম্ল ও ক্ষারের সমতাবিধান , এসব কাজে খনিজ লবণের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে ।

6. পানি (Water)

পানির অপর নাম জীবন । জীবনরক্ষার কাজে অক্সিজেনের পরেই পানির স্থান ।

দেহের পুষ্টির কাজে পানি অপরিহার্য । দেহের গঠন ও অভ্যন্তরীণ কাজ পানি ছাড়া চলতে পারে না ।

মানবদেহে পানির কাজগুলোকে তিন ভাগ করা যায় , দেহ গঠন , দেহের অভ্যন্তরীণ কার্য নিয়ন্ত্রণ এবং দেহ থেকে দূষিত পদার্থ নির্গমন ।

সুষম খাদ্য কাকে বলে ?

যে খাদ্যে সব কয়টি পুষ্টি উপাদান পরিমাণমত বিদ্যমান থাকে তাকে সুষম খাদ্য বলে।

সুষম খাদ্যের বৈশিষ্ট্য

একজন মানুষের বিপাকের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি উপাদানের সামর্থ্য থাকতে হবে ।

  • শর্করা , আমিষ এবং চর্বি নির্দিষ্ট অনুপাতে পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে ।
  • খাদ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও রাফেজ বা সেলুলোজ ( ফাইবার ) সরবরাহের জন্য সুষম খাদ্য তালিকায় ফল ও টাটকা শাকসবজি থাকতে হবে ।
  • খাদ্যে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি ও খনিজ লবণ থাকতে হবে ।
  • সুষম খাদ্য অবশ্যই সহজপাচ্য হতে হবে ।

তাহলে বন্ধুরা, খাদ্য কাকে বলে এবং খাদ্যের উপাদান কয়টি ও কি কি? এই বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আশা করে আপনারা সবকিছু জানতে পেরেছেন।

যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ার শেয়ার করে ভুলবেন না।

You Might Also Like:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *