জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে ? জীবাশ্ম জ্বালানি কিভাবে তৈরি হয়
জীবাশ্ম কি বা জীবাশ্ম কাকে বলে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি কি বা জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হবে। (What is Fossil Fuel in Bangla)
এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি কিভাবে তৈরি হয়, জ্বালানির প্রকারভেদ, জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের উপায় এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।

জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে ? (What is Fossil Fuel in Bengali)
বহু প্রাচীনকালের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর মৃতদেহের যে ধ্বংসাবশেষ মাটির নিচে পাওয়া যায় তাকে জীবাশ্ম বলে।
শত শত মিলিয়ন বছর আগের প্রাণী এবং উদ্ভিদদেহের ধ্বংসাবশেষ জীবাশ্ম রূপে পাওয়া গেছে। কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম যেগুলো আমরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি সেগুলো জীবাশ্ম রূপে মাটির নিচ থেকে পাওয়া যায়।
তাই কয়লা, প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।
শত শত মিলিয়ন বছর আগে এ পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন সময় ছিল যখন এ পৃথিবীজুড়ে ছিল ঘন বনজঙ্গল, নিচু জলাভূমি আর সমুদ্র যেখানে ছিল জলজ উদ্ভিদ, ফাইটোপ্লাংকটন (পানিতে বসবাসকারী এক ধরনের শৈবাল), জুওপ্লাংকটন (পানিতে বসবাসকারী এক ধরনের ছোট প্রাণী)।
বিভিন্ন সময় বড় বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এই ধরনের উদ্ভিদ, প্রাণী মাটিচাপা পড়ে যায়। সময়ের বিবর্তনে তার উপর আরও মাটি পড়ে। ধীরে ধীরে এগুলো মাটির গভীর থেকে গভীরে চলে যেতে থাকে।
ফলে এর উপর চাপ ও তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বায়ুর অনুপস্থিতিতে এগুলোর ক্ষয় ও রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
শত শত মিলিয়ন বছর ধরে তাপ, চাপ আর রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে বড় বড় উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যন্ত সকল ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির সৃষ্টি হয়েছে।
বড় বড় উদ্ভিদ থেকে কয়লা আর ফাইটোপ্লাংকটন, জুওপ্লাংকটন ও মৃত প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে পেট্রোলিয়ামের সৃষ্টি হয়েছে।
এ পরিবর্তন অব্যাহত থাকায় পেট্রোলিয়াম আরও পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস সৃষ্টি হয়। তাই কোথাও কোথাও পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস এক সাথেই থাকে।
যেমন: বাংলাদেশের হরিপুর গ্যাসক্ষেত্রে প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে পেট্রোলিয়ামও পাওয়া গেছে। এই জীবাশ্ম জ্বালানির মূল উৎস জীবদেহ, তাই এ সকল জ্বালানির মূল উপাদান কার্বন ও কার্বনের যৌগ।
সহজভাবে জীবাশ্ম জ্বালানির সংজ্ঞা,
জীবাশ্ম জ্বালানি কি ?
বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে জীবদেহ ভূ-অভ্যন্তরে চাপা পড়ে বিলিয়ন বিলিয়ন বছরের তাপমাত্রা ও চাপের পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তিত হয়ে যে জ্বালানিতে পরিণত হয় তাকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।
তাহলে জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে এ বিষয়ে আশা করি আপনারা ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
জীবাশ্ম জ্বালানি কিভাবে তৈরি হয় ?
এ পৃথিবীর বয়স প্রায় 4.54 বিলিয়ন বছর। আজকে পৃথিবীকে আমরা যেমন দেখছি, অনেক অনেক বছর আগে পৃথিবীর রূপ কিন্তু এমন ছিল না।
আজ থেকে 500 বা 600 মিলিয়ন বছর আগে এই পৃথিবী ছিল ঘন বনজঙ্গল, নিচু জলাভূমি আর সাগর – মহাসাগরে পরিপূর্ণ।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত মৃত প্রাণী, উদ্ভিদ, শৈবাল – ছত্রাক নিচু এলাকাগুলোতে জমা হয়েছিল। তার উপর পড়তে থাকল পলির আস্তরণ।
এভাবে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে এ সকল উদ্ভিদ আর প্রাণীর দেহাবশেষের উপর হাজার হাজার ফুট মাটি, বিভিন্ন শিলার আস্তরণ হয়ে গেল।
উচ্চচাপ, উচ্চ তাপমাত্রা, মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে বিভিন্ন ভৌত আর রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে কয়লা, পেট্রোলিয়াম আর প্রকৃতিক গ্যাস সৃষ্টি হলো। এদেরকে বলে জীবাশ্ম জ্বালানি।
কয়লার মূল উপাদান কার্বন। আর পেট্রোলিয়ামের মূল উপাদান শুধু কার্বন ও হাইড্রোজেনের দ্বারা সৃষ্ট যৌগ হাইড্রোকার্বন। হাইড্রোকার্বন হলো জৈব যৌগ।
অ্যালকোহল, অ্যালডিহাইড, কিটোন, কার্বক্সিলিক এসিডসহ আরও যে সকল জৈব যৌগ আছে তারা মূলত হাইড্রোকার্বন থেকেই সৃষ্ট।
জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে এবং জীবাশ্ম জ্বালানি কিভাবে তৈরি হয় এসব বিষয়ে আমরা উপরে জানতে পারলাম। এখন চলুন জীবাশ্ম জ্বালানির উৎস এবং জীবাশ্ম জ্বালানি কোনগুলো এসবের বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাংলাদেশে প্রাকৃতিক জ্বালানির উৎস
আমাদের ব্যবহৃত প্রাকৃতিক জ্বালানি কোনগুলো? আমাদের ব্যবহৃত প্রাকৃতিক জ্বালানির অন্যতম হলো প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও পেট্রোলিয়াম।
এছাড়া রান্নার কাজে ব্যবহৃত কাঠের খড়ি, গাছের পাতা পাটকাঠি, ধানের গুঁড়া ও খড় বা গোবর দিয়ে তৈরি লাকড়ি, এগুলোকেও প্রাকৃতিক জ্বালানি হিসেবে গণ্য করা যায়।
জীবাশ্ম জ্বালানির উদাহরণ
- প্রাকৃতিক গ্যাস
- পেট্রোলিয়াম
- কয়লা
এখন আমাদের বহুল ব্যবহৃত গ্যাস, কয়লা ও পেট্রোলিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রাকৃতিক গ্যাস:
আমরা বাসায় গ্যাসের চুলায় বা সিএনজি (CNG) পাম্প স্টেশন থেকে গাড়িতে যে গ্যাস নিই তাতে আসলে কী গ্যাস থাকে?
এসব ক্ষেত্রেই থাকে প্রাকৃতিক গ্যাস যা মূলত মিথেন (CH₄) গ্যাস। তবে সামান্য পরিমাণে অন্যান্য পদার্থ যেমন – ইথেন, প্রোপেন ও বিউটেন থাকে।
এছাড়া এতে অতি সামান্য পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোজেন, আর্গন ও হিলিয়াম থাকে।
পেট্রোলিয়াম:
পেট্রোলিয়াম হলো খনিজ তেল অর্থাৎ খনিতে পাওয়া যায় যেসব তরল জ্বালানি পদার্থ, তারাই হলো পেট্রোলিয়াম। সাধারণত প্রাকৃতিক গ্যাসের সাথে খনিতে পেট্রোলিয়ামও থাকে।
প্রোপেন ও বিউটেন স্বাভাবিক চাপ ও তাপমাত্রায় (২৫° সেলসিয়াস) গ্যাসীয় হলেও উচ্চ চাপে তরল অবস্থায় থাকে বলে এরাও পেট্রোলিয়ামের অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া গ্যাসোলিন, কেরোসিন, ডিজেল এসবই পেট্রোলিয়াম।
এখন প্রশ্ন হলো,
কীভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম তৈরি হয়?
প্রাকৃতিক গ্যাস কীভাবে তৈরি হয় তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত আছে। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত অনুযায়ী প্রাকৃতিক গ্যাস তৈরি হয় মৃত গাছপালা ও প্রাণীদেহ থেকে।
হাজার হাজার বছর আগে মরে যাওয়া গাছপালা ও প্রাণীর পচা দেহাবশেষ কাদা ও পানির সাথে ভূগর্ভে জমা হয়। সময়ের সাথে এরা বিভিন্ন রকম শিলা স্তরে ঢাকা পড়ে।
শিলা স্তরের চাপে পচা দেহাবশেষ ঘনীভূত হয় এবং প্রচণ্ড চাপে ও তাপে দেহবশেষে বিদ্যমান জৈব পদার্থ প্রাকৃতিক গ্যাসে ও পেট্রোলিয়ামে পরিণত হয়। প্রকৃতিতে এভাবে উৎপন্ন গ্যাসের খনিকে আমরা গ্যাসকূপ বলি।
কয়লা:
কয়লা হলো কালো বা বাদামি কালো রঙের একধরনের পাললিক শিলা। এতে বিদ্যমান মূল উপাদান হলো কার্বন।
তবে স্থানভেদে এতে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণে হাইড্রোজেন (H), সালফার (S) , অক্সিজেন (O₂) ও নাইট্রোজেন (N₂) থাকে।
কয়লা একটি দাহ্য পদার্থ, তাই জ্বালানি হিসেবে এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস ও খনিজ তেলের মতো কয়লা একটি জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuel) হলেও এর গঠনপ্রক্রিয়া আলাদা।
প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বছর আগে জলাভূমিতে জন্মানো প্রচুর ফার্ন, শৈবাল, গুল্ম ও অন্যান্য গাছপালা মরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে কয়লা তৈরি হয়েছে। গাছপালায় বিদ্যমান জৈব পদার্থে থাকা কার্বন প্রথমে জলাভূমির তলদেশে জমা হয়।
এভাবে জমাকৃত কার্বনের স্তর আস্তে আস্তে পলি বা কাদার নিচে চাপা পড়ে যায় এবং বাতাসের সংস্পর্শ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন হয়ে যায়। এমতাবস্থায় কার্বনের স্তর আবার ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পানিযুক্ত, স্পঞ্জের মতো ছিদ্রযুক্ত জৈব পদার্থে পরিণত হয় যাকে বলা হয় পিট (Peat)।
পিট অনেকটা হিউমাসের মতো পদার্থ। পরবর্তীতে উচ্চ চাপে ও তাপে এই পিট পরিবর্তিত হয়ে কার্বন সমৃদ্ধ কয়লায় পরিণত হয়।
কয়লা তিন রকমের হয়। যথা –
- অ্যানথ্রাসাইট
- বিটুমিনাস ও
- লিগনাইট।
অ্যানথ্রাসাইট হলো সবচেয়ে পুরানো ও শক্ত কয়লা, যা প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন বছর আগে তৈরি এবং এতে শতকরা প্রায় ৯৫ ভাগ কার্বন থাকে।
বিটুমিনাস কয়লা প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বছরের পুরানো এবং এতে শতকরা ৫০-৮০ ভাগ কার্বন থাকে।
লিগনাইট কয়লা ১৫০ মিলিয়ন বছরের পুরানো আর এতে সর্বোচ্চ শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত কার্বন থাকে।
প্রাকৃতিক জ্বালানি সংরক্ষণে নবায়নযোগ্য শক্তি
আলোচিত প্রাকৃতিক জ্বালানির সবগুলোই একসময় নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। তাই এগুলোর ব্যবহার কমানো ও সংরক্ষণের জন্য আমরা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়াতে পারি।
সৌরশক্তি, বায়ুপ্রবাহ, পানির স্রোত ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে আমরা প্রাকৃতিক জ্বালানির উপর চাপ কমাতে পারি এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শক্তি সংরক্ষণ করতে পারি।
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ালে কোন গ্যাস উৎপন্ন হয় ?
জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ালে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) গ্যাস উৎপন্ন হয়।
আমাদের শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলটিতে জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে, জীবাশ্ম জ্বালানি কিভাবে সৃষ্টি হয়, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং উদাহরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি আপনারা জীবাশ্ম জ্বালানি কি অথবা জীবাশ্ম জ্বালানি বলতে কী বোঝায় এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি পড়ে জানতে পেরেছেন।
আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন আর কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।
I enjoy what you guys are usually up too. Such clever
work and coverage! Keep up the excellent works guys I’ve you guys to blogroll.
Hi there, I enjoy reading through your article.
I wanted to write a little comment to support you.
সুন্দর পোস্ট
good writing. thanks