ডায়াবেটিস কমানোর উপায়: 10 Ways to Prevent Diabetes
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় (How to Prevent Diabetes)

ডায়াবেটিস কি ? (What is Diabetes)
অগ্ন্যাশয়ের ভিতর আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস নামক এক ধরনের গ্রন্থি আছে, এই গ্রন্থি থেকে ইনসুলিন (Insulin) নিঃসৃত হয়। ইনসুলিন হলো এক ধরনের হরমোন, যা দেহের শর্করা পরিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
অগ্ন্যাশয়ে যদি প্রয়োজনমতো ইনসুলিন তৈরি না হয় তবে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থায়ীভাবে বেড়ে যায়, প্রস্রাবের সাথে গ্লুকোজ নির্গত হয়। এ অবস্থাকে বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস মেলিটাস (ডায়াবেটিস) বলে।
ডায়াবেটিস প্রধানত দুই ধরনের,
- টাইপ-1
- টাইপ-2
টাইপ-1 এ আক্রান্ত রোগীর দেহে একেবারেই ইনসুলিন তৈরি হয় না। তাই নিয়মিতভাবে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন নিতে হয়।
অন্যদিকে টাইপ-2 রোগীর দেহে আংশিকভাবে ইনসুলিন তৈরি হয়। এক্ষেত্রে ঔষধ, অগ্ন্যাশয় কোষকে শরীরের জন্য পরিমিত ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে।
তবে টাইপ-2 ডায়াবেটিসেও কোনো না কোনো পর্যায়ে ইনসুলিনের স্থায়ী ঘাটতি হয়ে যেতে পারে কিংবা বিভিন্ন অসুখ বা চিকিৎসাপদ্ধতির অংশ হিসেবে সেই সব ঔষধ বন্ধ রাখতে হতে পারে, তখন ইনসুলিন ছাড়া উপায় থাকে না। এ রোগটি সাধারণত বংশগতি এবং পরিবেশের প্রভাবে হয়ে থাকে। এটি সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগ নয়।
রক্ত ও প্রস্রাবে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাণের চেয়ে বেড়ে গেলে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো হলো ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া, অধিক পিপাসা লাগা, ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া, পর্যাপ্ত খাবার খাওয়া সত্ত্বেও দেহের ওজন কমতে থাকা, দুর্বল বোধ করা, চোখে কম দেখা, চামড়া খসখসে ও রুক্ষ হয়ে যাওয়া, ক্ষতস্থান সহজে না শুকানো ইত্যাদি।
পুর্বে ধারণা করা হতো কেবল বয়স্কদের এ রোগটি হয়। এ ধারণাটি সঠিক নয়। ছোট বড় সব বয়সে এ রোগ হতে পারে। তবে যারা কায়িক পরিশ্রম করেন না, দিনের বেশির ভাগ সময় বসে কাজ করেন অথবা অলস জীবন যাপন করেন, তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
তাছাড়া স্থূলকায় ব্যক্তিদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যেহেতু এ রোগ বংশগত, তাই কোনো ব্যক্তির বাবা, মা, দাদা, দাদির এ রোগ থাকলে তার এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা খুবই বেশি। বংশগতভাবে অনেক শিশুর দেহে ইনসুলিন উৎপাদন কম হয়, ফলে শিশুটি ইনসুলিন ঘাটতিজনিত অসুস্থতায় ভুগতে থাকে।
ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ণয়ের মাধ্যমে এ রোগ নির্ণয় করা যায়। চিকিৎসা করে ডায়াবেটিস রোগ একেবারে নিরাময় করা যায় না, কিন্তু এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডাক্তারদের মতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি D মেনে চলা অত্যাবশ্যক।
এগুলো হলো: Discipline, Diet ও Dose!
- শৃঙ্খলা (Discipline): একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য তার সুশৃঙ্খল জীবনব্যবস্থা মহৌষধস্বরূপ । এছাড়া নিয়মিত এবং ডাক্তারের পরামর্শমতো পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, রোগীর দেহের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও বিশেষভাবে পায়ের যত্ন নেওয়া, নিয়মিত প্রস্রাব পরীক্ষা করা এবং দৈহিক কোনো জটিলতা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া।
- খাদ্য নিয়ন্ত্রণ (Diet): ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হলো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা, মিষ্টিজাতীয় খাবার পরিহার করা ও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত এবং সময়মতো খাদ্য গ্রহণ করা। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারের মেনু অনুসরণ করলে সুফল পাওয়া যায়। তবে যার ডায়াবেটিস নেই, তার মিষ্টি খাওয়া বা না খাওয়ার সাথে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক নেই।
- ঔষধ সেবন (Dose): ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করা উচিত নয়। ডাক্তার রোগীর শারীরিক অবস্থা বুঝে ঔষধ খাওয়া বা ইনসুলিন নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হবে। ঠিকমতো চিকিৎসা না করা হলে রোগীর রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে বা বেড়ে যায়। উভয় ক্ষেত্রেই রোগী বেহুঁশ হয়ে পড়তে পারে। এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় (Prevent Diabetes)
ডায়াবেটিস রোগ চিরতরে নিরাময় করা যায় না। তবে সঠিক নিয়ম মেনে জীবন যাপন করলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিচের কাজগুলো করা প্রয়োজন।
দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
দেহের ওজন বেশি থাকলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ওজন কিছুটা কমিয়ে আনা অবশ্যই প্রয়োজন। তাই দেহের ওজন কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করে কিছু পরিমাণ ওজন কমানো যেতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ডায়াবেটিস রোগীর বিছানা থাকার লোক নয়। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করার জন্য শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে। এজন্য প্রতিদিন সকালে physical exercise করা যেতে পারে শারীরিক পরিশ্রম করার জন্য প্রতিদিন 30 থেকে 40 মিনিট হাঁটতে পারেন।
আর আপনি যদি হাঁটতে পছন্দ না করে থাকেন, তাহলে সাঁতার কাটতে পারেন এবং সাইকেল চালাতে পারেন।
চিনি ও শর্করা জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে
ডায়াবেটিস control রাখার জন্য চিনি ও শর্করা জাতীয় খাবার পরিহার করা অত্যাবশ্যক।
তাই যতটা পারেন এ জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া বাদ দিন।
এছাড়াও ডায়াবেটিস কমানোর জন্য বা ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য যে বিষয়গুলো আপনার মেনে চলা প্রয়োজন সেগুলো হলো:
খাদ্যাভ্যাস
- শর্করা জাতীয় খাদ্য কম পরিমাণে খেতে হবে। আমরা সাধারণত খুব বেশি পরিমাণে খেয়ে থাকি। ভাতে শর্করা বা গ্লুকোজ বেশি পরিমাণে থাকে তাই ভাত কম করে খাওয়া উচিত।
- পরিমিত পানি পান করতে হবে।
- লাল চালের ভাত লাল, লাল আটার রুটি খাওয়া খুবই উপকারী।
- বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত। এসব খাদ্যে ভিটামিন বিদ্যমান থাকে।
- চর্বি জাতীয় খাদ্য কম পরিমাণে খেতে হবে। এজন্য গরুর মাংসের পরিবর্তে মাছ খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও চর্বি থাকে না যেমন, মুরগির মাংস খেতে হবে।
- ঘি, দই, মাখন এর পরিবর্তে দুধ খেতে পারেন।
- ফাইবার বা আঁশ যুক্ত খাবার খেতে হবে।
সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবন যাপন করতে হবে
যেমন,
- সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া।
- প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং পরিমিত পরিমাণে খাদ্য খেতে হবে।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।
ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল বা কিভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস আছে কিনা?
- Random blood sugar এ ১১ মি. মো / লি. এর বেশি হলে ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নিতে হবে।
- Fasting blood sugar এ ৭ মি. মো / লি. এর বেশি হলে ধরে নিতে হবে ডায়াবেটিস আছে।
- সকালে খালি পেটে ৫.৬ মি. মো / লি. এর কম থাকলে ডায়াবেটিস নেই।
- ৫.৬ থেকে ৬.৯ মি. মো / লি. এর মধ্যে থাকলে প্রিডায়াবেটিস হিসেবে ধরে নিতে হবে।
সর্বশেষ
ডায়াবেটিস কমানোর উপায় গুলো সঠিকভাবে মেনে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তাছাড়া আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সব কাজ করতে হবে।
যেহেতু এই রোগটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য নয়, তাই এটি সারাজীবন আপনার সাথে বসবাস করবে। আপনি যদি সঠিক উপায়ে জীবন পরিচালনা করেন তাহলে ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
- ভিনেগার কি
- Rh factor কি
- চোখ ভালো রাখার উপায়
- ফেসবুক পেজ জনপ্রিয় করার উপায়
- অ্যাপ তৈরি করে কিভাবে আয় করা যায়
আপনি যদি ডায়াবেটিস এর বিষয়ে আরো ভালো ভাবে সবকিছু জানতে চান তাহলে ইউটিউবে গিয়ে সার্চ করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন।