তাকওয়া কি বা তাকওয়া কাকে বলে ? তাকওয়া অর্থ কি

তাকওয়া কি বা তাকওয়া কাকে বলে? তাকওয়া অর্থ কি? তাকওয়ার গুরুত্ব এবং নৈতিক জীবনে তাকওয়ার প্রভাব এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।

তাকওয়া কি
তাকওয়া বলতে কী বোঝায় ?

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক তাকওয়া কী বা তাকওয়া কাকে বলে?

তাকওয়া কি বা তাকওয়া কাকে বলে ?

তাকওয়া শব্দের অর্থ হলো ভয় করা, নিজেকে রক্ষা করা, বিরত থাকা, বেচে থাকা।

ব্যবহারিক অর্থে তাকওয়া বলতে খোদাভীতি, আত্মশুদ্ধি, পরহেজগারি ইত্যাদিকে বোঝায়। যাবতীয় পাপকাজ বা কুপ্রবৃত্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করাই হলো তাকওয়া।

ইসলামি পরিভাষায়,

মহান আল্লাহ তায়ালার ভয়ে সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার এবং পাপকাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয়।

অর্থাৎ তাকওয়া মানে হলো সকল ধরনের পাপকাজ থেকে নিজেকে রক্ষা করা, কুপ্রবৃত্তি থেকে বেচে থাকা এবং আল্লাহকে ভয় করে কুরআন এবং সুন্নাহ মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা।

যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে চলেন তাকে মুত্তাকি বলা হয়।

উপরে তাকওয়া কি বা কাকে বলে এর সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে। নিচে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জেনেনিন।

মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার অর্থ হলো অত্যন্ত ব্যাপক। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা এবং পালনকর্তা। তিনি হলেন মহাপরাক্রমশালী এবং শাস্তিদাতা।

এ বিশ্বজগতে যা কিছু আছে বা ঘটছে তার সবকিছুই তিনি জানেন, শোনেন এবং দেখেন।

আমরা যে জায়গাতেই ভালো এবং মন্দ যে কোন কাজ-কর্ম করি না কেন, মহান আল্লাহ তায়ালা সবই দেখেন। এমনকি যদি কেউ সমুদ্রের তলদেশে কোন মন্দ কাজ করে থাকে তাও তিনি দেখেন।

তিনি হলেন কঠিন বিচার দিনের মালিক। হাশরের দিনে তিনি প্রত্যেকের কাছে দুনিয়ার জীবনে করে যাওয়া কাজকর্মের হিসাব নেবেন। ভালো কাজের জন্য তিনি পরম শান্তির স্থান জান্নাত দান করবেন এবং মন্দ কাজের জন্য তিনি রেখেছেন চরম শাস্তির স্থান জাহান্নাম।

আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার অর্থ হলো আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজের সকল প্রকার কাজকর্মের জবাবদিহি করার ভয়।

আল্লাহ তায়ালার জবাবদিহিতার ভয়ে মানুষ সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। আল্লাহ ভিতির কারণে সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার, অশ্লীল কথা-কাজ ও চিন্তাভাবনা থেকে বিরত থাকতে হয়।

আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করলে, আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদে বিশ্বাস করলে এবং তার প্রতি দৃঢ় ইমান আনলে এসব পাপ কাজ থেকে বিরত থাকা যায়।

আর যেহেতু আল্লাহ তায়ালার ভয়ে যাবতীয় অন্যায়, অত্যাচার ও পাপকাজ থেকে বিরত থাকাকে তাকওয়া বলা হয় এবং তাকওয়া অবলম্বনকারীদের মুত্তাকি বলা হয়, তাই মুত্তাকিগণ আখিরাতে পরম শান্তির স্থান জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সামনে দণ্ডায়মান হওয়ার ভয় করবে ও কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকবে, তার স্থান হবে জান্নাত।” (সূরা আন-নাযিআত, আয়াত ৪০-৪১)

তাহলে তাকওয়া কি অথবা তাকওয়া কাকে বলে এবং তাকওয়া শব্দের অর্থ কি এ বিষয়ে উপরে আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন। এখন চলুন তাকওয়া অর্জনের গুরুত্ব জেনে নিই।

তাকওয়ার গুরুত্ব

তাকওয়া একটি মহৎ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। মানবজীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাকওয়া মানুষকে ইহকালীন ও পরকালীন উভয় জীবনকেই সম্মান – মর্যাদা ও সফলতা দান করে।

ইসলামি জীবন দর্শনে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান ব্যক্তি হলেন মুত্তাকিগণ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সম্মানিত সেই ব্যক্তি যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়াবান।” (সূরা আল – হুজুরাত, আয়াত ১৩)

আল্লাহ তায়ালার নিকট তাকওয়ার মূল্য অত্যধিক। ধন – সম্পদ, শক্তি ক্ষমতা, গাড়ি – বাড়ি থাকলেই মানুষ আল্লাহ তায়ালার নিকট মর্যাদা লাভ করতে পারে না।

বরং যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করতে পারেন সেই আল্লাহ তায়ালার নিকট বেশি মর্যাদাবান। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে ভালোবাসেন।

আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন।” ( সুরা আত্ তাওবা, আয়াত ৪) 

পার্থিব জীবনে মুত্তাকিগণ আল্লাহ তায়ালার বহু নিয়ামত লাভ করে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তাকওয়াবানদের সর্বদা সাহায্য করেন। বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করেন ও বরকতময় রিযিক দান করেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে কেউ আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস থেকে রিযিক দান করবেন।” (সূরা আত্ – তালাক, আয়াত ২-৩) পরকালেও তাকওয়াবানদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার।

আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিন মুত্তাকিদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন এবং মহাসফলতা দান করবেন।

আল – কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মুমিনগণ! যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর (আল্লাহকে ভয় কর) তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায় অন্যায় পার্থক্য করার শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় মঙ্গলময়।” (সূরা আল – আনফাল, আয়াত ২৯)

আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “নিশ্চয়ই মুত্তাকিগণের জন্য রয়েছে সফলতা।” (সূরা আন্ – নাবা, আয়াত ৩১)

প্রকৃতপক্ষে তাকওয়া মানব চরিত্রের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ স্বভাব। এর মাধ্যমে মানুষ সম্মান, মর্যাদা ও সফলতা লাভ করে।

নৈতিক জীবনে তাকওয়ার প্রভাব

নৈতিক জীবন গঠনে ও নীতি – নৈতিকতা রক্ষায় তাকওয়ার প্রভাব অনস্বীকার্য।

তাকওয়া সকল সৎগুণের মূল। ইসলামি নৈতিকতার মূল ভিত্তি হলো তাকওয়া।

তাকওয়া মানুষকে মানবিক ও নৈতিক গুণাবলিতে উদ্বুদ্ধ করে। হারাম বর্জন করতে এবং হালাল গ্রহণ করতে প্রেরণা যোগায়। মুত্তাকি ব্যক্তি সদাসর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করেন।

আল্লাহ তায়ালা সবকিছু দেখেন, শোনেন, জানেন এ বিশ্বাস পোষণ করেন। ফলে তিনি কোনোরূপ অন্যায় ও অনৈতিক কাজ করতে পারেন না। কোনোরূপ অশ্লীল ও অশালীন কথা, কাজ ও চিন্তাভাবনা করতে পারেন না।

কেননা তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, পাপ যত গোপনেই করা হোক না কেন, আল্লাহ তায়ালা তা দেখেন ও জানেন। কোনোভাবেই আল্লাহ তায়ালাকে ফাকি দেওয়া সম্ভব নয়।

ফলে তাকওয়াবান ব্যক্তি সকল কাজেই নীতি – নৈতিকতা অবলম্বন করেন এবং অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা পরিহার করেন।

তাকওয়া মানুষের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে এবং সচ্চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলে। সকল সৎ ও সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত করে। ফলে মুত্তাকিগণ সৎ ও সুন্দর গুণ অনুশীলনে অনুপ্রাণিত হন।

অন্যদিকে যার মধ্যে তাকওয়া নেই সে নিষ্ঠাবান ও সৎকর্মশীল হতে পারে না। সে নানা অন্যায় অত্যাচারে লিপ্ত থাকে।

নৈতিক ও মানবিক আদর্শের পরোয়া করে না। ফলে তার দ্বারা সমাজে অনৈতিকতা ও অপরাধের প্রসার ঘটে।

বস্তুত তাকওয়া হলো মহৎ চারিত্রিক গুণ। নৈতিক চরিত্র গঠনে এর কোনো বিকল্প নেই। আমরা সকলেই তাকওয়াবান হওয়ার চেষ্টা করব।

তাহলে তাকওয়া অর্থ কি / তাকওয়া কি বা তাকওয়া কাকে বলে এ বিষয় নিয়ে আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হলো।

আর্টিকেলটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর যেকোন বিষয়ে জানার থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন।

অবশ্যই পড়ুন –

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *