তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা । কবিতা
আজকের আর্টিকেলে আমরা তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা কবিতাটি এবং কবিতার প্রেক্ষাপট, মূলভাব এসব বিষয়ে জানব।

প্রথমে নিচে শামসুর রাহমান রচিত কবিতাটি উল্লেখ করা হয়েছে।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
শামসুর রাহমান
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল,
সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মতো চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটাল যত্রতত্র।
তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে বলে বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতা-মাতার লাশের উপর।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন?
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে থুথুড়ে এক বুড়ো
উদাস দাওয়ায় বসে আছেন তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লাবাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে
নড়বড়ে খুঁটি ধরে দগ্ধ ঘরের।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে, সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী বলে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে,
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো
সেই তেজি তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে –
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা কবিতার প্রেক্ষাপট কী এবং কবিতাটির মূলভাব
“তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা” কবিতাটি কবি শামসুর রাহমানের শ্রেষ্ঠ কবিতা নামক কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতাটি কবির বন্দী শিবির থেকে নামক কাব্যের অন্তর্ভুক্ত।
স্বধীনতা মানুষের একটি জন্মগত অধিকার। কিন্তু আমাদের দেশের মানুষকে এই স্বাধীনতার অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘকাল ধরে পাকিস্তানিদের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয়েছে। বাঙালি জাতি অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলে লাভ করেছে স্বাধীনতা।
আমাদের দেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ১৯৭১ সালে মহান মূক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। এই যুদ্ধ চলাকালে বাঙালিদের নির্মম ভাবে হত্যা করে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দেয় পাকিস্তানি সেনারা।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আমাদের দেশের ছাত্রাবাস গুলোতে আক্রমণ করে সেখানে থাকা ছাত্রদের হত্যা করে। তারা শহরের বুকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হত্যাকার্য চালায়, পুরিয়ে দেয় গ্রাম এবং শহর।
আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে সকিনা বিবির মত গ্রামীণ নারীকে সহায় সম্বল বিসর্জন দিতে হয়েছে, স্বামীহারা হয়েছে হরিদাসী, নবজাতক তার বাবা মাকে হারিয়েছে।
কুকুরের মত পশুও আর্তনাদ করে এরকম ঘৃণ্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগ করে কৃষক, শ্রমিক, জেলে, রিকশাওয়ালা প্রভৃতি মানুষরা।
সেইসঙ্গে নবীন দের রক্তে প্রাণের স্পন্দন ও আশার সঞ্চার থাকতে দেখে কবি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দৃঢ়তার সাথে উচ্চারণ করেন যে, যে স্বাধীনতার জন্য এতো আত্মত্যাগ সেই স্বাধীনতাকে বাঙালি একদিন ছিনিয়ে আনবেই। স্বাধীনতাকে আসতেই হবে।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে হে স্বাধীনতা কবিতা আবৃত্তি
অবশ্যই পড়ুন –