দোয়া কুনুত আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

দোয়া কুনুত :

কুনুত শব্দের বাংলা অর্থ হচ্ছে আনুগত্য করা

দোয়া কুনুত এশার নামাজের পর ওয়াজিব বিতরের নামাজে পড়তে হয়। অর্থাৎ দোয়া কুনুত বিতর নামাজে পাঠ করা ওয়াজিব।এ দোয়ার মধ্যে রয়েছে আল্লাহ কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবেদন।

দোয়া কুনুত আরবি
দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ।

দোয়া কুনুত আরবি

اَللَّمُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

দোয়া কুনুত বাংলা উচ্চারণ:

আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্‌তাঈ’নুকা, ওয়া নাস্‌তাগ্‌ফিরুকা, ওয়া নু’’মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ’, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, – ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা – আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্‌ফারি মুলহিক্ব।

দোয়া কুনুত অর্থ:

হে আল্লাহ! আমরা তোমারই সাহায্য চাই। তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল তোমারই দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা তোমারই দাসত্ব করি, তোমারই জন্য নামায পড়ি এবং তোমাকেই সিজদাহ করি। আমরা তোমারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা তোমারই রহমত আশা করি এবং তোমার আযাবকে ভয় করি। আর তোমার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।

 

দোয়া কুনুত ইংরেজি অর্থ :

O Allah! We implore You for help and beg forgiveness of You and believe in You and rely on You and extol You and we are thankful to You and are not ungrateful to You and we alienate and forsake those who disobey You. O Allah! You alone do we worship and for You do we pray and prostrate and we betake to please You and present ourselves for the service in Your cause and we hope for Your mercy and fear Your chastisement. Undoubtedly, Your torment is going to overtake infidels O Allah!

বিতর নামাজে দোয়া কুনুত পাঠ করতে ভুলে গেলে করণীয় :

তৃতীয় রাকআতে দোয়া কুনূত পড়তে ভুলে গিয়ে কখনো রুকুতে চলে গেলে এবং রুকুতে গিয়ে স্মরণ হলে তখন আর দোয়াকুনুত পাঠ করবে না এবং রুকু থেকে উঠবেও না এবং রুকু করে নামায শেষে সাহু সেজদা দিলেই চলবে। কিন্তু রুকু থেকে ওঠে দাঁড়িয়ে দোয়া কুনূত পড়লে, তাতেও নামায হয়ে যাবে কিন্তু এরূপ করা ঠিক নয় এবং এ অবস্থাতেও সাহু সেজদা দেয়া ওয়াজিব হবে।

ভুলক্রমে প্রথম অথবা দ্বিতীয় রাক’আতে দোয়া কুনুত পাঠ করলে তা দোয়া কুনূত হিসেবে বিবেচিত হবে না, তৃতীয় রাক’আতে আবার পাঠ করতে হবে এবং সাহু সেজদাও করতে হবে।

 

বিতর নামাজে দোয়া কুনুত না পারলে করণীয় কি?

কেউ দোয়া কুনুত পড়তে না জানলে তা শিক্ষা করার চেষ্টা করবে এবং না শেখা পর্যন্ত নিম্নের দোয়া পাঠ করবে-

 ربنا اتنا في الدنيا حسنة وفي الآخرة حسنة وقنا عذاب النار .

উচ্চারণঃ– রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিন আযাবান্নার।

অথবা তিনবার (আল্লাহুম্মাগফির) اللهم اغفرلي অথবা তিনবার يارب(ইয়া রাব্বি) পাঠ করবে এবং এতেই তার নামায আদায় হয়ে যাবে। তবে দোয়া কুনূত শিখতে  হবে ।

বিতরে নামাজে দোয়া কুনুতের উদ্দেশ্য হলো দোয়া করা। এটি হলো ওয়াজিব। আর এই ক্ষেত্রে আপনি যদি দোয়া সম্পর্কিত অন্য যেকোনো দোয়া পড়ে বিতরের নামাজ পড়েন, তাহলে ইনশাল্লাহ আপনার ওয়াজিব পালন হয়ে যাবে। তবে এই ক্ষেত্রে আপনার উচিত, যত দ্রুত সম্ভব দোয়া কুনুত শিখে ফেলা।

দোয়া কুনুত কখন পড়বেন?

দু’রাক’আত পড়ে প্রথম বৈঠকের পর দাঁড়িয়ে যাবে এবং সূরা ফাতেহা ও পর একটি সূরা পাঠ করে “আল্লাহু আকবার” বলে কান পর্যন্ত (মহিলাদের কাঁধ ন্তি) হাত তুলে পুনঃ হাত বাঁধবে। অতঃপর দোআ কুনুত পাঠ করে রুকূ করবে।

বেতের নামাযের তিন রাক’আতের প্রত্যেক রাক’আতেই সূরা ফাতেহার সাতেথ অন্য সূরা মিলিয়ে পাঠ করা ওয়াজিব।

দোয়া কুনুত মহান আল্লাহ পাক এর প্রেরিত রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিতর নামাজে পড়তেন । সেই মোতাবেক আমরা আল্লাহ পাক এর প্রেরিত রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত হিসাবে পড়ে থাকি ।

আবু দাউদ এবং আহমদ বিন হাম্বল এর বর্ণনা থেকে জানা যায় হাসান ইবনে আলী (রাঃ) এই দোয়াটি মুহাম্মাদের (সাঃ) কাছ থেকে শিখেছিলেন । দাউদ (রঃ) আরও বলেছেন যখন মুসলমানদের উপর কোন বিপদ-আপদ এবং বিপর্যয় আসতো তখন মহা নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দোয়া কুনুত পড়তেন । – মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা (৬৯৬৫)

 

দোয়া কুনুত কত প্রকার?

দোয়া কুনুত দুই প্রকার। এগুলো হলো – কুনুতে রাতেবা এবং অন্যটি হলো কুনুতে নাজেলা

 

দোয়া কুনুতে রাতেবা:

اَللّهُمَّ اهدنىْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِىْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِىْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِىْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلَا يُقْضى عَلَيْك وَإِنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ

দোয়া কুনুত রাতেবা উচ্চারণ

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মাহদিনী ফীমান হাদায়তা ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফায়তা, ওয়াতা ওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লায়তা, ওয়াবা-রিক লী ফীমা- আ-‘ত্বায়তা, ওয়াক্বিনী শাররা মা- ক্বযায়তা, ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়ালা- ইউক্বযা- ‘আলায়কা, ওয়া ইন্নাহূ লা- ইয়াযিল্লু মাওঁ ওয়ালায়তা, তাবা-রাক্তা রব্বানা- ওয়াতা‘আ-লায়তা।

দোয়া কুনুত রাতেবা বাংলা অনুবাদ

অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি আমাকে হিদায়াত দান করে সে সব মানুষের সঙ্গে যাদের তুমি হিদায়াত দান করেছ (নবী রসূলগণ); তুমি আমাকে দুনিয়ার বিপদাপদ থেকে হিফাযাত করো ওসব লোকের সঙ্গে যাদেরকে তুমি হিফাযাত করেছ; যাদের তুমি অভিভাবক হয়েছো, তাদের মাঝে আমারও অভিভাবক হও; তুমি আমাকে যা দান করেছ (জীবন, জ্ঞান সম্পদ, ধন, নেক আমাল) এতে বারাকাত দান করো; আর আমাকে তুমি রক্ষা করো ওসব অনিষ্ট হতে যা আমার তাকদীরে লিখা হয়ে গেছে; নিশ্চয় তুমি যা চাও তাই আদেশ করো; তোমাকে কেউ আদেশ করতে পারে না; তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে কেউ অপমানিত করতে পারে না; হে আমার রব! তুমি বারাকাতে পরিপূর্ণ। তুমি খুব উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন।

 

দোয়া কুনুতে নাজেলা

যুদ্ধ, শত্রুর আক্রমণ প্রভৃতি বিপদের সময় অথবা কারুর জন্য বিশেষ কল্যাণ কামনায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে বিশেষভাবে এই দোয়া পাঠ করতে হয়। কুনূতে নাযেলা ফজর সালাতে অথবা সব ওয়াক্তে ফরজ সালাতের শেষ রাকাতে রুকুর পরে দাঁড়িয়ে রব্বানা লাকাল হামদ’ বলার পরে দুই হাত উঠিয়ে সরবে পড়তে হয়।

দোয়া কুনুত নাজেলা আরবি

اللهم اغفر لنا وللمؤمنين والمؤمنات والمسلمين والمسلمات، وألف بين قلوبهم وأصلح ذات بينهم ، وانصرهم على عدوك وعدوهم، اللهم العن لك ويقاتلون أولياءك، اللهم الكفرة الذين يصدون عن سبيلك ويكذبون الف بين كلمتهم وزلزل أقدامهم وأنزل بهم بأسك الذي لا ت ه عن القوم المجرمين

দোয়া কুনুত নাজেলা উচ্চারণ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফির লানা ওয়া লিল মু’মিনীনা ওয়াল মু’মিনাতি ওয়াল মুসলিমীনা ওয়াল মুসলিমাতি, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম, ওয়া। আছলিহ যা-তা বায়নিহিম, ওয়ানছুরহুম আলা ‘আদুউবিকা ওয়া ‘আদুউবিহিম। আল্লা-হুম্মালআনিল কাফারাতাল্লাযীনা ইয়াছুদূনা ‘আন সাবীলিকা ওয়া ইয়ুকাযিবুনা রুসুলাকা ওয়া ইয়ুক্কা-তিনা আউলিয়া-আকা। আল্লা-হুম্মা খা-লিফ বায়না কালিমা তিহিম ওয়া ঝলঝিল আক্বদা-মাহুম ওয়া আনঝিল বিহিম বাসাকাল্লাযী লা তার উদুহু ‘আনিল কাউমিল মুজরিমিন।

দোয়া কুনুত নাজেলা বাংলা অনুবাদ

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এবং সকল মুমিন-মুসলিম নর নারীকে ক্ষমা করুন, আপনি তাদের অন্তর সমূহে মহব্বত পয়দা করে দিন ও তাদের মধ্যকার বিবাদ মীমাংসা করে দিন; আপনি তাদেরকে আপনার ও তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন; হে আল্লাহ! আপনি কাফেরদের উপরে লা’নত করুন; যারা আপনার রাস্তা বন্ধ করে, আপনার প্রেরিত রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে ও আপনার বন্ধুদের সাথে লড়াই করে; হে আল্লাহ, আপনি তাদের দলের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করে দিন ও তাদের পদ সমূহ টলিয়ে দিন এবং আপনি তাদের মধ্যে আপনার প্রতিশােধকে নামিয়ে দিন, যা পাপাচারী সম্প্রদায় থেকে আপনি ফিরিয়ে নেন না।

দোয়া কুনুত এর গুরুত্ব ও ফজিলত:

 

দোয়া কুনুতে, আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে আশীর্বাদ, নির্দেশনা এবং শক্তি চাই।

অতীতে যখনই মুসলমানদের কোনো সমস্যা বা দুর্যোগ বা বিপর্যয় আসত তখনই নবী কারীম (সঃ) দোয়া কুনুত পাঠ করতেন। তিনি বিতর, ফজরের সময় এবং কখনও কখনও সারা বছর অন্যান্য নামাজের সময় এটি পাঠ করতেন।

 

আবু দাউদ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে যে,

মুহাম্মাদ (সা.) কাছ থেকে হাসান ইবনে আলী রাঃ এই দোয়াটি শিখেছিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন,

‘আমি একরাতে নবী (সঃ) -এর কাছে ছিলাম। তিনি শয্যাত্যাগ করলেন এবং দুই রাকাত নামায পড়লেন। এরপর উঠে বিতর পড়লেন। প্রথম রাকাতে ফাতিহার পর সূরা আ’লা পাঠ করলেন। এরপর রুকু ও সিজদা করলেন। দ্বিতীয় রাকাতে ফাতিহা ও কাফিরূন পাঠ করলেন এবং রুকু-সিজদা করলেন। তৃতীয় রাকাতে ফাতিহা ও ইখলাস পাঠ করলেন। এরপর রুকুর আগে কুনূত পড়লেন।’

عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : بت عند النبي صلى الله عليه وسلم، فقام من الليل فصلى ركعتين، ثم قام فأوتر فقرأء بفاتحة الكتاب وسبح اسم ربك الأعلى ثم ركع وسجد ثم قام فقرأ يفاتحة الكتاب وقل يا أيها الكافرون ثم ركع وسجد وقام فقرأ بفاتحة الكتاب و قل هو الله أحد ثم قنت ودعا قبل الركوع.

অবশ্যই পড়ুন-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *