পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে ? পদার্থবিজ্ঞানের জনক কে
পদার্থবিজ্ঞান কি বা পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে (What is Physics) এবং পদার্থবিজ্ঞানের জনক কে এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।

পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে ? (What is Physics)
পদার্থবিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটা শাখা এবং বলা যেতে পারে এটা হচ্ছে প্রাচীনতম শাখা।
তার কারণ অন্য বিজ্ঞানগুলো দানা বাঁধার অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা পদার্থবিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ শাখা জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা করতে শুরু করেছিলেন।
পদার্থবিজ্ঞানকে একদিকে যেমন প্রাচীনতম শাখা, ঠিক সেভাবে বলা যেতে পারে এটা সবচেয়ে মৌলিক (fundamental) শাখা।
এর ওপর ভিত্তি করে রসায়ন দাঁড়িয়েছে, রসায়নের ওপর ভিত্তি করে জীববিজ্ঞান দাঁড়িয়েছে, আবার জীববিজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে অন্য অনেক বিষয় দাঁড়িয়ে আছে।
সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি বিজ্ঞানের যে শাখা পদার্থ আর শক্তি এবং এ দুইয়ের মাঝে যে অন্তঃক্রিয়া (interaction) তাকে বোঝার চেষ্টা করে সেটা হচ্ছে পদার্থবিজ্ঞান।
পদার্থ বলতে শুধু আমাদের চারপাশের দৃশ্যমান পদার্থ নয়, পদার্থ যা দিয়ে গঠিত হয়েছে, অর্থাৎ অণু – পরমাণু থেকে শুরু করে ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন, কোয়ার্ক বা স্ট্রিং পর্যন্ত হতে পারে।
আবার শক্তি বলতে আমাদের পরিচিত স্থিতিশক্তি, গতিশক্তি, মাধ্যাকর্ষণ বা বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় শক্তি ছাড়াও সবল কিংবা দুর্বল নিউক্লিয়ার শক্তিও হতে পারে!
তাহলে পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে অথবা পদার্থবিজ্ঞানের সংজ্ঞা আপনারা উপরে জানতে পেরেছেন।
পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর (Scope of Physics)
পদার্থবিজ্ঞান যেহেতু বিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখা এবং সবচেয়ে মৌলিক শাখা, শুধু তাই নয় বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা কোনো না কোনোভাবে এই শাখাকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর অনেক বড়।
শুধু তাই নয়, পদার্থবিজ্ঞানের নানা সূত্রকে ব্যবহার করে নানা ধরনের প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে, সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করি।
বর্তমান সভ্যতার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান হচ্ছে ইলেকট্রনিকসের এবং এই প্রযুক্তিটি গড়ে ওঠার পেছনেও সবচেয়ে বড় অবদান পদার্থবিজ্ঞানের।
দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ছাড়াও যুদ্ধের তাণ্ডবলীলা থেকে শুরু করে মহাকাশ অভিযান – এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই পদার্থবিজ্ঞানের ব্যবহার রয়েছে।
শুধু তাই নয়, জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা এবং পদার্থবিজ্ঞানকে একত্র করে নিয়মিতভাবে নতুন নতুন শাখা গড়ে উঠেছে। যেমন:
- Astronomy ও পদার্থবিজ্ঞান মিলে Astrophysics তৈরি হয়েছে
- জৈব প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করার জন্য জীববিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে Biophysics
- রসায়ন শাখার সাথে পদার্থবিজ্ঞান শাখার সম্মিলনে জন্ম নিয়েছে Chemical Physics
- ভূ – তত্ত্বে ব্যবহার করার জন্যপদার্থবিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে Geophysics এবং
- চিকিৎসাবিজ্ঞানে পদার্থবিজ্ঞান ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে Medical Physics ইত্যাদি।
কাজেই পদার্থবিজ্ঞানের পরিসর সুবিশাল এবং অনেক গভীর।
পঠন – পাঠনের সুবিধার জন্য আমরা পদার্থবিজ্ঞানকে দুটি মূল অংশে ভাগ করতে পারি।
সেগুলো হচ্ছে:
- ভৌত বা ক্লাসিকাল পদার্থবিজ্ঞান
- আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান
ভৌত বা ক্লাসিক্যাল পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে ?
এর মাঝে রয়েছে বলবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান, তাপ এবং তাপগতি বিজ্ঞান, বিদ্যুৎ ও চৌম্বক বিজ্ঞান এবং আলোক বিজ্ঞান।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে ?
কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং আপেক্ষিক তত্ত্ব ব্যবহার করে যে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান গড়ে উঠেছে , সেগুলো হচ্ছে আণবিক ও পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান, নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞান, কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান এবং পার্টিকেল ফিজিকস।
পদার্থবিজ্ঞান এক দিনে গড়ে ওঠেনি, শত শত বছরে গড়ে উঠেছে। পদার্থবিজ্ঞানীরা তাঁদের চারপাশের রহস্যময় জগৎকে দেখে প্রথমে কোনো একটা সূত্র দিয়ে সেটা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সেই সূত্রকে কখনো গ্রহণ করা হয়েছে, কখনো পরিবর্তন করা হয়েছে, আবার কখনো পরিত্যাগ করা হয়েছে।
এভাবে আমরা পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের বৃহত্তম আকার পর্যন্ত ব্যাখ্যা করতে শিখেছি।
এই শেখাটা হয়তো এখনো পূর্ণাঙ্গ নয় – বিজ্ঞানীরা সেটাকে পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, যেন কোনো একদিন অত্যন্ত অল্প কিছু সূত্র দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের সবকিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়ে যাবে।
আমরা আগেই বলেছি, পদার্থবিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখাকে ব্যবহার করে পৃথিবীতে নানা ধরনের প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে।
এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা আমাদের জীবনকে সহজ এবং অর্থপূর্ণ গবে করে তুলেছি, আবার কখনো কখনো ভয়ংকর কিছু প্রযুক্তি বের করে শুধু নিজের জীবন নয়, পৃথিবীর অস্তিত্বও বিপন্ন করে তুলেছি।
অনেক সময় অকারণে অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তি গড়ে তুলে পৃথিবীর সম্পদ নষ্ট করার সাথে সাথে আমাদের পরিবেশকে দূষিত করে ফেলছি।
কাজেই প্রযুক্তি মানেই কিন্তু ভালো নয়, পৃথিবীতে ভালো প্রযুক্তি যেরকম আছে ঠিক সেরকম খারাপ প্রযুক্তিও আছে । কোনটি ভালো এবং কোনটি খারাপ প্রযুক্তি সেটা কিন্তু আমাদের নিজেদের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে বুঝতে হবে।
পদার্থবিজ্ঞানের জনক কে?
পদার্থবিজ্ঞানের জনক নিউটন।
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক কে?
আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের জনক গ্যালিলিও।
আমরা কেন পদার্থবিজ্ঞান পড়ব ?
বর্তমান সভ্যতা বিকাশে পদার্থবিজ্ঞানের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তাই পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কে আমাদের বেশি পড়া বা জানা দরকার।
নিচে পদার্থবিজ্ঞান পাঠের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো –
- পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণা প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোকে ভালোভাবে বুঝতে এবং ব্যাখ্যা করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় তার প্রয়োগ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। উনিশ শতকের শেষার্ধে ইলেকট্রনের আবিষ্কারই ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের উদ্ভাবন ঘটিয়েছে, যা বস্তুবিজ্ঞান ও কোষ – জীববিদ্যায় বিপ্লব এনেছে।
- একদিকে পদার্থবিজ্ঞানে যেমন তত্ত্ব সৃষ্টি ও গণিতের প্রয়োগ আছে, অপরদিকে এতে ব্যবহারিক উন্নয়নও রয়েছে। রাসায়নিক বিজ্ঞান, ভূ – তত্ত্ব বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, আবহাওয়াবিজ্ঞান ইত্যাদি সম্পর্কে মৌলিক ব্যাখ্যা ও ধারণা গঠনে পদার্থবিজ্ঞান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আমরা যে প্রাকৃতিক জগতে বাস করি, তা কতগুলো নির্দিষ্ট নিয়ম যেমন নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র, শক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি ইত্যাদি মেনে চলে।
- এই পৃথিবীতে বিভিন্ন গবেষণা ও অনুসন্ধান চালায় পদার্থবিজ্ঞান। টেলিভিশন কী করে কাজ করে, মোবাইল ফোন কীভাবে কাজ করে, রকেট কী করে মহাশূন্যে উড়ে যায়, কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে চারপাশে ঘোরে, সাবমেরিন কীভাবে পানিতে ডুবে থাকে, ইন্টারনেট দিয়ে কীভাবে মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে আসা যায় ইত্যাদি বুঝতে হলে আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক সূত্রগুলো জানতে হবে।
- পদার্থবিজ্ঞান পাঠে আমরা নতুন ধারণা লাভ করতে পারি। কী করে চিন্তা করতে হয়, কারণ দর্শাতে হয়, যুক্তি দিতে হয়, কীভাবে যুক্তিবিজ্ঞান ও এর নিকট আত্মীয় গণিতকে কাজে লাগাতে হয় পদার্থবিজ্ঞান তা আমাদের শিখিয়ে থাকে। এটি আমাদের কল্পনাকে উদ্দীপ্ত করে এবং চিন্তাশক্তির বিকাশ ঘটায়।
- পদার্থবিজ্ঞান পাঠের মাধ্যমে আমাদের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারি। কী করে সঠিক পদ্ধতিগত পর্যবেক্ষণ করতে হয়, পদার্থবিজ্ঞান পাঠে তা আমরা জানতে পারি।
ওপরের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, পদার্থবিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি ?
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব
- বীজগণিতের সূত্র সমূহ
- গণিতের জনক কে ?
তাহলে পদার্থবিজ্ঞান কি অথবা পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন।