পাবদা মাছ চাষ পদ্ধতি: জেনেনিন কিভাবে পাবদা চাষ করবেন
পাবদা মাছ (Ompok pabda) চাষ পদ্ধতি:

পাবদা মাছের (Ompok pabda) পরিচিতি:
বিল, হাওর, নদী, পুকুর এবং দিঘিতে পাবদা পাওয়া যায়। পাবদা মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু । এ কারণে এদের চাহিদা ও বাজার মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি ।
পাবদা মাছ ১৫-৩০ সেমি লম্বা হয়ে থাকে । দেহ চ্যাপ্টা ও সামনের দিকের চেয়ে পেছনের দিক ক্রমাগত সরু । এ মাছের মুখ বেশ বড় ও বাঁকানো নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে বড়। মুখের সামনের দিকে দুই জোড়া লম্বা গোঁফ আছে। পৃষ্ঠ পাখনা ছোট । পায়ু পাখনা বেশ লম্বা ও লেজ দুই ভাগে বিভক্ত ।
দেহের রং সাধারণত উপরিভাগে ধূসর রূপালি ও পেটের দিক সাদা। ঘাড়ের কাছে কানকোর পিছনে কালো ফোঁটা আছে। শিরদাঁড়া রেখার উপরিভাগে হলুদাভ ডোরা দেখতে পাওয়া যায়।
পাবদা মাছ মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে । জুন-জুলাই মাসে সর্বোচ্চ প্রজনন সম্পন্ন হয় ।
পাবদা মাছ চাষ পদ্ধতি
কিভাবে পাবদা মাছ চাষ করতে হয় এই বিষয়ে নিচে বিস্তারিত জেনেনিন।
১. পাবদা মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি
সাধারণত ১৫-২০ শতাংশের পুকুর যেখানে ৭-৮ মাস পানি থাকে এমন পুকুরে এ মাছ দুইবার চাষ করা যায়।পাবদা মাছের জন্য পুকুরের পানির গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো ।
২. পাবদা মাছের পুকুর প্রস্তুতি :
পুকুরের পাড় মেরামত ও জলজ আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকা উচিত নয় । থাকলে তা ছেঁটে দিতে হবে যেন পুকুরে পাতা ও ছায়া না পড়ে। পুকুরে রাক্ষুসে ও অপ্রয়োজনীয় মাছ থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর পুকুরে শতাংশ প্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে । চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে প্রতি শতাংশে ৬-৮ কেজি হারে গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে।
৩. পাবদা মাছের পোনা মজুদ:
সার প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর ৩-৫ গ্রাম ওজনের পোনা শতক প্রতি ২৫০ টি হারে মজুদ করা যেতে পারে। সকালে বা বিকালে বা দিনের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পুকুরে পোনা ছাড়া উচিত। পোনা আনার সাথে সাথে সেগুলো সরাসরি পুকুরে ছাড়া উচিত নয়।পোনা ছাড়ার পূর্বে ১০ লিটার পানি ও ১ চামচ পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট অথবা ১০০ গ্রাম লবণ মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করতে হবে। এরপর তাতে ১ থেকে ২ মিনিট গোসল করিয়ে পোনা জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
৪. পাবদা মাছেরখাদ্য প্রয়োগ
পাবদা মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির উপাদান ও মিশ্রণ হার:
খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি:
২-৩ টি ডুবন্ত ট্রেতে করে প্রতিদিন দেহ ওজনের শতকরা ৫-৬ ভাগ হারে দৈনিক ২ বার (সকালে ও বিকালে) প্রয়োগ করতে হবে।
খাদ্য উপাদান = মিশ্রণ হার%
ফিশমিল=৩০
মিট ও বোন মিল = ১০
সরিষার খৈল=১৫
সয়াবিন খৈল=২০
চালের কুঁড়া=২০
আটা=৪
ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ=১
৫. সার প্রয়োগ
সম্পূরক খাদ্যের পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হওয়ার জন্য ৭-১৫ দিন পর পর শতক প্রতি ৪-৫ কেজি হারে পচা গোবর রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে গুলিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে ।সার প্রয়োগের ৪ দিন পর পানির রং সবুজ বা বাদামি হলেই পুকুরে পোনা মজুত করতে হবে। যদি সম্ভব হয় পোনা ছাড়ার সময় থেকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পুকুরে হালকা পানির প্রবাহ রাখতে হবে।
৬. পাবদামাছ ব্যবস্থাপনা
মাছ নিয়মিত খাবার খায় কিনা তা লক্ষ রাখতে হবে। ট্রেতে খাবার দেওয়ার আগে পূর্ববর্তী দিনের খাবার সম্পূর্ণ খেয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যে পরিমাণ খাদ্য থেকে যাবে তার সমপরিমাণ খাদ্য কম সরবরাহ করতে হবে। প্রতি মাসে ২ বার জাল টেনে দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে । সপ্তাহে একবার পুকুরে হররা টানতে হবে। পুকুরে পানি কমে গেলে বাইরে থেকে পানি সরবরাহ করতে হবে। পানির স্বচ্ছতা (সেক্কিডিস্ক গভীরতা) ২৫ সেমি মধ্যে থাকলে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে ।
৭. পাবদা মাছ আহরণ
পাবদা মাছ ৭-৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে । এই আকারের পাবদা মাছ বেড় জাল দিয়ে আহরণ করতে হয়।
পাবদা মাছের ইংরেজি নাম কি ?
পাবদা মাছের ইংরেজি নাম Ompok pabda।
পাবদা মাছ চাষের গুরুত্ব:
- বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং মূল্য অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি। তাই এদের চাষের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি সম্ভব ।
- এদের দেহে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও মাইক্রোনিউট্রেন্ট বিদ্যমান থাকে
- খেতে খুবই সুস্বাদু ।
- চাষ পদ্ধতি সহজ ।
- কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা যায় । ফলে সহজে পোনা পাওয়া সম্ভব ।
- বার্ষিক পুকুর ছাড়াও মৌসুমি পুকুর ও অন্যান্য অগভীর জলাশয়েও চাষ করা যায় ।
- দ্রুত বর্ধনশীল, ৫-৬ মাসেই বিপণনযোগ্য হয় ।
মাছ চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, কাজের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সামাজিক উন্নয়নে মাছ চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে মাছ চাষের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো ।
রপ্তানি আয় বৃদ্ধি :
মাছ বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে । দেশে রপ্তানি আয়ের ২.৪৬% আসে মৎস্য খাত হতে । মাছ চাষ বৃদ্ধি করে এ আয় আরও বাড়ানো সম্ভব ।
আরও জানুনঃ
- মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জেনেনিন
- জেনেনিন কিভাবে করবেন বিভিন্ন জাতের বেগুন চাষ
- কিভাবে আলু চাষ করলে লাভবান হওয়া যাবে?
- মিষ্টিকুমড়া ও চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি
- জেনেনিন গম চাষ পদ্ধতি
- ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানুন