ফজরের নামাজ কয় রাকাত? নিয়ম ও সময়

মানসিক শান্তি’ই বড় শান্তি!
-আর সেই মানসিক শান্তি শুধুমাত্র ‘নামাজের মাধ্যমেই পাওয়া যায়।
মুসলমানগন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে থাকে।যেমন ফজর, যোহর, আসর, মাগরিব ও এশা।
আজকের আর্টিকেলে জানবো ফজরের নামাজ কিভাবে আদায় করতে হয় এবং সময়।
ফজরের নামাজ (আরবি: صلاة الفجر) সালাতুল ফাজ্’র।ফজরের সালাতের কথা সূরা নূরের ৫৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
ফজর নামাযের বিবরণঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, মুনাফেকদের পক্ষে ফজর ও ইশা অপেক্ষা কোন কঠিন নামাজ নেই। যদি তারা জানত তার মধ্যে কি আছে তাহলে তারা তা আদায় করার জন্য আসত, যদিও তাদের আসতে হত হামাগুড়ি দিয়ে। (বুখারী ও মুসলিম)হযরত উমারাহ ইবনে রুআইবাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি মহানবী (সঃ)-কে বলতে শুনেছি, এমন কোন ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে না, যে পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে নামাজ আদায় করেছে। অর্থাৎ ফজর ও আসর।
(মুসলিম)
ফজরের নামাযে গাফিলতিকারীঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ)-এর নিকট এক ব্যক্তির ব্যাপারে বলা হল, সে সারা রাত্রি নিদ্রায় যায়। এমনকি সকাল হল, কিন্তু নামাযের জন্য জাগ্রত হল না। এটি শুনে মহানবী (সঃ) বললেন, সে এমন ব্যক্তি যার কানে অথবা তিনি বলেছেন, যার দুই কানে শয়তান প্রস্রাব করে দিয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
নামাযের জন্য ঘুম হতে জাগানোর ফযীলতঃ
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, মহান আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি অনুগ্রহ করেন যে ব্যক্তি রাতে উঠে নামায আদায় করে এবং আপন স্ত্রীকেও জাগিয়ে দেয় এবং সেও নামায আদায় করে। আর যদি সে ঘুম হতে উঠতে অস্বীকার করে, তাহলে তার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। এভাবে আল্লাহ অনুগ্রহ করেন সে স্ত্রীর প্রতি যে রাতে উঠে নামাজ আদায় করে এবং আপন স্বামীকে জাগিয়ে দেয় এবং সেও নামাজ আদায় করে । আর যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তাহলে য়ার মুখমণ্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। (আবু দাউদ ও নাসায়ী)
আদায় করার ফযীলত:
- ফজরের নামাজের ১১টি ফজিলত
১. নবী (ﷺ) বলেছেনঃ ”মুনাফিকদের জন্য ফজর ও ‘ইশার নামাজ অপেক্ষা অধিক ভারী নামাজ আর নেই। এ দুই নামাজের কী ফযীলত, তা যদি তারা জানতো, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো। রসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে, মুয়াজ্জিনকে ইক্বামাত দিতে বলি এবং কাউকে লোকদের ইমামত করতে বলি, আর আমি নিজে একটি আগুনের মশাল নিয়ে গিয়ে অতঃপর যারা নামাজে আসেনি, তাদের উপর আগুন ধরিয়ে দেই”।(সহিহ বুখারী, ৬৫৭)
২.রাসূল (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করে, সে ব্যক্তি ঐ দিন আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়।অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ তালা ঐ ব্যক্তির দায়িত্ব নেন।(সহিহ মুসলিম,তিরমিজি–২১৮৪)
৩.রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ” যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে,আল্লাহর ফেরেশতাগন আল্লাহর কাছে ঐ ব্যক্তিকে ভালো মানুষ হিসেবে সাক্ষী দিবে।
(বুখারী-মুসলিম)
৪. রাসূল (ﷺ) বলেছেন,”যে ব্যক্তি ফজর নামাজসালাত জামাতের সাথে আদায় করে,আল্লাহতালা তার আমলে দাঁড়িয়ে সারারাত নফল নামাজ আদায়ের সওয়াব দিয়ে দেন!
(সহিহ মুসলিম-১০৯৬)
৫. রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ” যে ব্যক্তি ভোরে হেঁটে হেঁটে ফজরের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করবে,আল্লাহতালা কিয়ামতের দিন তার জন্য পরিপূর্ণ আলো দান করবেন।(আবু দাউদ ৪৯৪)
৬.যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতের সবচেয়ে বড় নিয়ামত দান করবেন।অথাৎ সে আল্লাহর দিদার লাভ করবে, এবং জান্নাতি ঐ ব্যক্তি আল্লাহকে পূর্নিমার রাতের আকাশের চাঁদের মত দেখবে।(বুখারী-৫৭৩)
৭.যে নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করবে,সে কখোনোই জাহান্নামে প্রবেশ করবেনা।
(সহিহ মুসলিম ৬৩৪)
৮.ফজরের নামাজ আদায়কারী,রাসূল (ﷺ) এর বরকতের দোয়া লাভ করবেন।(সুনানে আবু দাউদ,মুসনাদে আহমাদ)
৯.ফজরের দু রাকাত সুন্নত নামাজ, দুনিয়া ও তার মাঝে যা কিছু আছে তারচেয়ে উত্তম।(জামে তিরমিজি – ৪১৬)
১০. ফজরের নামাজ আদায়ের ফলে ব্যক্তির মন ফুরফুরে,প্রফুল্ল হয়ে যায়।
(সহিহ বুখারী, সহিহ মুসলিম)।
১১.হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত রাসূলে করীম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করল সে যেন সম্পূর্ণ রাত নামায আদায় করল। (মুসলিম)
ফজর নামাযের ওয়াক্ত:
রাতের শেষে পূর্বাকাশে উপরে-নীচে একটি লম্বা সাদা রেখা প্রকাশ পায়। এ রেখা দেখা যাওয়ার সময়কে সুবহে কাযেব বলে। সাদা রেখা বিলীন হয়ে পুনরায় অন্ধকার প্রকাশ পায়। এর অল্পক্ষণ পর আকাশে উত্তর দক্ষিণে বিস্তৃতি সাদা রং দেখা দেয়। এ সাদা রং প্রকাশের সময় থেকে সুবহে ছাদেক শুরু হয়। সুবহে ছাদেক হলে বুঝতে হবে ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে এবং সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত ফজরের ওয়াক্ত থাকবে। পূর্বাকাশে সূর্যের সামান্য কিনারা দেখা দিলে ফজরের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়।
ফজরের নামায বিলম্ব করে আদায় করা মুস্তাহাবঃ
হযরত রাফি ইবনে খাদীজ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, হযরত নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, তোমরা ফজরের নামায শুভ্র ফর্সা প্রভাতে আদায় করো। কেননা, এতে সওয়াব বেশী রয়েছে। (তিরমিয়ী শরীফ) ফজরের নামায একটু বিলম্বে আদায় করলে মুসল্লীর সমাগম বেশী হবে। তবে বর্তমান যুগেও যদি মানুষ ফজরের নামায জামাআতের সাথে আদায় করার জন্য প্রথম ওয়াক্তেই প্রস্তুত হয়ে থাকে এবং জামাআত বিলম্বে করলে অসুবিধা হয় তাহলে প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করে নেয়াই উত্তম। যেমন : রমযান মাসে সকলেই সেহরী খেয়ে নামাযের অপেক্ষায় থাকে এবং এ সময় বিলম্ব করলে হয়তো কেউ ঘুমিয়ে যাবে এবং মুসল্লির সংখ্যা কমে যাবে। তাই এ অবস্থায় ফজরের নামায প্রথম ওয়াক্তে আদায় করাই উত্তম।
ফজরের নামাজ কয় রাকাত?
ফজরের নামায মোট ৪ রাকআত।
২ রাকআত সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ।
২ রাকআত ফরয ।
ফজরের দুই রাকআত সুন্নত নামাযের ফযীলতঃ
ফজর নামাযের দুই রাকআত সুন্নাতের ফযীলত সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, হযরত নবী করীম (সঃ) নফল নামাযসমূহের মধ্যে কোন নামাযের প্রতিই এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন না, যত না বেশী লক্ষ্য রাখতেন ফজরের দুই রাকআত সুন্নতের প্রতি । (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আয়েশা (রাঃ) আরও বলেন, হযরত রাসূলে আকরাম (সঃ) ইরশাদ করেছেন, ফজরের (ফরযের) পূর্বে দুই রাকআত নামায দুনিয়া ও তার সমস্ত জিনিস অপেক্ষা উত্তম। (মুসলিম)
- ফজরের দুই রাকআত সুন্নতের নিয়তঃ-
نويت أن أصلي لله تعالى ركعتي صلوة الفجر سنة رسول
الله تعالى متوجها إلى جهة الكعبة الشريفـة الله أكبر .
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকআতাই সলাতিল ফাজরি ছুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার ।
বাংলা নিয়ত ঃ আমি কেবলামুখী হইয়া আল্লাহর জন্য ফজরের দুই রাকয়াত সুন্নাত নামায আদায় করিতেছি, আল্লাহু আকবার।
ফজরের দুই রাকআত সুন্নত আদায় করার নিয়ম প্রথম রাকআত আদায় করার নিয়মঃ
প্রথমে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে সিজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি রেখে নিন জায়নামাযের দোয়া পাঠ করবে। তারপর নামাযের নিয়ত করবে। আরবীতে নিয়ত করা ভাল তবে তা জরুরী নয়। বাংলায় নিয়ত করলেও হবে এবং এতে নামাযের সওয়াব কম হবে না। নিয়ত করা অর্থাৎ মনে মনে এ সংকল্প করবে যে, “আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ফজরের দুই রাকআত সুন্নত নামায আদায় করার জন্য নিয়ত করলাম।“ অতঃপর উভয় হাতের পেট জ্বিবলার দিক করে পুরুষেরা কান পর্যন্ত এবং নারীরা কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাবে। হাত এমন ভাবে উঠাবে যাতে পুরুষের ক্ষেত্রে হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলি কানের লতি বরাবর থাকে এবং অঙ্গুলির মাথা কানের উপরে থাকে; কিন্তু মাথার উপরে নয়। আর নারীদের ক্ষেত্রে হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুলি কাঁধ বরাবর এবং আঙ্গুলের মাথা কাঁধের উপরে থাকে, কিন্তু কানের উপরে যাতে না উঠে।
হাত উঠানোর পর নিঃশব্দে“ আল্লাহু আকবার “(তাকবীরে তাহরীমা) বলে পুরুষেরা নাভির নীচে এবং নারীরা সিনার উপরে ডান হাতের কবজি বাম হাতের কবজির উপর স্থাপন করবে পুরুষেরা ডান হাতের বৃদ্ধা ও তরুনী আঙ্গুল দিয়ে বাম হাতের কবজিকে শক্ত করে ধরবে।
“তাকবীরে তাহরীমা“ বলে হাত বাঁধার পর প্রথমে সানা, অতঃপর “আউযুবিল্লাহ বা বিসমিল্লাহ“ চুপে চুপে পাঠ করবে। তারপর নিঃশব্দে সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে চুপে চুপে“ আমীন “বলবে। তারপর যে কোন একটি সূরা বা কুরআনের যে কোন জায়গা হতে ছোট হলে কমপক্ষে তিন আয়াত, আর বড় হলে কমপক্ষে এক আয়াত পাঠ করবে। তারপর নিঃশব্দে “আল্লাহু আকবার“ বলে রুকু করবে। রুকুতে দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটুকে শক্ত করে ধরবে এবং হাতকে তীরের মত সোজা রাখবে। এ সময় মাথা, পিঠ ও নিতম্ব এক বরাবর রাখবে এবং পিঠকে কুঁজো ও মাথাকে নীচু করবে না। নারীরা তাদের রুকু করার নিয়ম অনুযায়ী রুকু করবে। অতঃপর রুকুতে নিঃশব্দে তিন, পাঁচ অথবা সাতবার (বিজোড়) রুকুর তাসবীহ ধীরস্থিরভাবে পাঠ করবে। অতঃপর নিঃশব্দে“ সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ “বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে যাতে পিঠ ও মাথা সোজা হয়ে যায়। হাত নীচের নিকে ছেড়ে সোজা রাখবে। অতঃপর চুপে চুপে“ রাব্বানা লাকাল হামদ“ বলবে। তারপর নিঃশব্দে“ আল্লাহ আকবার “বলে সিজদায় যাবে। সিজদায় গিয়ে দুই হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে দুই কানের লতি বরাবর রাখবে তারপর মাটিতে প্রথমে নাক অতঃপর কপাল রাখবে। মাথা, পিঠ ও নিতম্ব সম্পূর্ণ সোজা রাখবে, পিঠকে কুঁজো করবে না। অতঃপর সিজদায় গিয়ে নিঃশব্দে তিন, পাঁচ অথবা সাতবার“ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা“ পাঠ করবে। তারপর নিঃশব্দে“ আল্লাহু আকবার“ বলে স্থির হয়ে বসবে যাতে মাথা ও পিঠ সোজা থাকে। সিজদা হতে মাথা উঠানোর সময় মাটি থেকে প্রথমে কপাল তারপর নাক উঠাবে। অতঃপর পুনরায় নিঃশব্দে আল্লাহ আকবার বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে এবং পূর্বের ন্যায় সিজদায় নিঃশব্দে তিন, পাঁচ বা সাতবার সিজদার তানবীহ পাঠ করবে। তারপর নিঃশব্দে আল্লাহ আকবার বলে সিজনা হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এক রাকআত নামায পূর্ণ হল।
দ্বিতীয় রাকআত আদায় করার নিয়ম প্রথম রাত শেষ হওয়ার পর নিঃশব্দে “আল্লাহ আকবার“ বলে নিজ হতে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। সিজদা হতে উঠার সময় মাটি হতে প্রথমে কপাল, তারপর নাক, তারপর হাত উঠাবে। হাত হাটুর উপর ভর দিয়ে সোজা হয়ে পাড়াবে। দুহাত মাটিতে ভর দিয়ে দাঁড়াবে না, তবে কোন সমস্যা থাকলে মাটিতে হাত নিয়ে দাঁড়াতে পারবে। দাঁড়িয়ে পূর্বের মত পুরুষেরা নাভির নীচে এবং নারীরা বুকের উপর হাত বাঁধবে। অতঃপর দাঁড়ানো অবস্থায় সুরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য একটি সূরা বা কুরআনের প্রথম রাকআতে যে কিরাত বা সুরা পাঠ করা হয়েছে তার পরবর্তী যে কোন স্থান হতে বড় হলে কমপক্ষে এক আয়াত, আর ছোট হলে কমপক্ষে আয়াত পাঠ করবে। তারপর পূর্বের মত নিঃশব্দে“ আল্লাহ আকবার “বলে রুকু করবে এবং রুকুতে তিন, পাঁচ বা সাতবার তাসবীহ পাঠ করবে। তারপর পূর্বের মত নিঃশব্দে“ সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ“ বলে রুকু হতে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। তারপর নীরবে“ রাব্বানা লাকাল হামদ “বলবে। তারপর প্রথম রাকআতের মত দুই সিজদা করবে। দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসবে। সোজা হয়ে বসা ওয়াজিব।উভয় সিজদাতে পূর্বের মত তিন, পাঁচ বা সাতবার সিজদার তাসবীহ পাঠ করবে। দ্বিতীয় রাকআতে দুই সিজদার পর নিঃশব্দে “আল্লাহ আকবার“ বলে সিজদাহ হতে উঠে বসবে। বসার নিয়ম হচ্ছে- ডান পায়ের পাতাকে খাড়া রেখে বাম পায়ের উপর বসবে। বসাবস্থায় দুই হাতের পাতা দুই উরুর উপর জানু বরাবর স্থাপন করবে এবং আঙ্গুলসমূহ একটু ফাকা রাখাবে। নারীরা তাদের বসার নিয়ম অনুযায়ী বসবে। পুরুষদের মত বসবে না। বসা অবস্থায় যথাক্রমে নিঃশব্দে “আত্তাহিয়াতু,দরুদ শরিফ ও দোয়া মাসুরা” পাঠ করে প্রথমে ডানে, পরে বামে নীরবে “আস্সালামু আলাইকুম “ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম ফিরাবে। ফজরের দুই রাকজাত সুন্নাত নামায আদায় পূর্ণ হল।
ফজরের দুই রাকআত ফরযের নিয়তঃ
نويت أن أصلى الله تعالى ركعتي صلوة الفجر فرض الله تعالى متوجها إلى جهة الكعبة الشريفـة الله اكبر
উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উপল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতাই সলাতিল ফাজরি ফারদুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা নিয়ত : আমি বেকলামুখী হইয়া আল্লাহর জন্য ফজরের দুই রাকয়াত ফরজ নামায আদায়ের নিয়ত করিতেছি। আল্লাহু আকবার।
জামাআতের সাথে ইমামের পিছনে নামায আদায় করা হলে নিয়ত করার সময় ফারদুল্লাহি তাআলা এর পর বলতে হবে “ইকতাদাইতু বিহা-যাল ইমাম”। অতঃপর বাকী অংশ বলবে।
ফজরের দুই রাকাআত ফরজ আদায় করার নিয়মঃ
ফজরের দুই রাকআত ফরয নামায একাকী আদায় করলে দুই রাকআত সুন্নাত নামায যে নিয়মে আদায় করা হয়েছিল সে নিয়মেই আদায় করতে হবে। কিরাআত উচ্চস্বরে অথবা নিঃশব্দেও পাঠ করা যাবে। ইকামত দেয়া জরুরী নয়। ইকামত ইচ্ছে করলে দেয়া যাবে, আবার না দিলেও কোন ক্ষতি নেই।
আর জামাআতের সাথে আদায় করার সময় নিম্নলিখিত নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে :
ফজরের দুই রাকআত ফরয নামায জামাআতের সাথে আদায় করার ক্ষেত্রে মুক্তাদিদেরকে নামাযের নিয়তসহ ইমামের ইক্তিদা করার নিয়ত করতে হবে, কিন্তু ইমামের ইমামতির নিয়ত করা জরুরী নয়। নিয়্যত করার পর ইমামের” তাকবীর তাহরীমা” বলার পর মুক্তাদিরাও দু’কান পর্যন্ত দু’হাত উঠায়ে” তাকবীর তাহরীমা “অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নাভীর উপর হাত বাঁধবে।
তারপর মুক্তাদিরা চুপে চুপে সানা পাঠ করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে। মুক্তাদিরা ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা কিংবা অন্য কোন সূরা কিরাআত পাঠ করবে না। ইমামের কিরাআত মনযোগ সহকারে শ্রবণ করবে। মুক্তাদিরা ইমামের তাকবীর বলার পর পর সমস্ত তাকবীর (অর্থাৎ আল্লাহু আকবার) যথাস্থানে বলবে। ইমাম যখন “সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ” বলবে তখন মুক্তাদিরা সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় “রাব্বানা লাকাল হাম্দ“ বলবে। মুক্তাদিরা রুকু সিজদায় নিঃশব্দে তাসবীহ পাঠ করবে। আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসূরাও নিঃশব্দে পাঠ করবে। কিন্তু কোন সূরা কিরাআত পাঠ করবে না। অন্যান্য সব কাজে মুক্তাদিরা ইমামের যথাযথ অনুসরণ করবে।
একাকী ফরযের নিয়ত করার পর জামাআত শুরু হলে করণীয়:
মসজিদ কিংবা অন্য কোথাও একাকী ফজরের দুই রাকআত ফরয নামাযের নিয়ত করার পর নিকটে কয়েকজন মিলে যদি জামাআত দাঁড়ায় এমতাবস্থায় আপনি যদি দ্বিতীয় রাকআতের সিজদা না করে থাকেন তাহলে নামাযে যে অবস্থায় থাকবেন সে অবস্থায়ই ডান দিকে এক সালাম দিয়ে নামায ভংগ করে জামাআতে শরীক হয়ে যাবেন। আর যদি দ্বিতীয় রাকআতের সিজদা করে থাকেন তাহলে ঐ নামায একাকীই পূর্ণ করবেন। এ অবস্থায় জামাআতে শরীক হবেন না ।
(বেহেশতী জেওর)
ফজরের ফরয নামায একাকী আদায় করার সময় সূরা কিরাআত উচ্চ স্বরেও পাঠ করা যায় এবং অনুচ্চ স্বরেও পাঠ করা যায় ।
নামাযের শেষ বৈঠকে না বসে দাঁড়িয়ে গেলে করণীয়ঃ
কেউ যদি ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত বা ফরয নামাযের দ্বিতীয় রাকআতে(শেষ বৈঠকে) তাশাহহুদ পাঠ করা পরিমাণ সময় বসার পর ভুলক্রমে তৃতীয় রাকআতের জন্য সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যায় তাহলে স্মরণ হওয়া মাত্র বসে যাবে, যদিও সূরা কিরাআত পাঠ করে থাকে বা রুকুও করে থাকে। বসে ডান দিকে সালাম ফিরায়ে সাহু সিজদা করবে। তারপর আবার আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করে উভয় দিকে সালাম ফিরায়ে নামায শেষ করবে। আর যদি তৃতীয় রাকআতের সিজদা করে থাকে তাহলে তৃতীয় রাকআত শেষে বসে যাবে এবং সাহ সিজদা আদায়সহ নামায শেষ করবে। চতুর্থ রাকআত আদায় করবে না।(ফতোয়ায়ে আলমগীরী)
উল্লেখিত অবস্থায় যদি ফজরের দুই রাকআত ফরয নামাযের নিয়ত করা হয়ে থাকে তাহলে দুই রাকআত ফরয আদায় হয়ে যাবে, আর এক রাকআত বাতিল হবে। আর যদি ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত নামাযের নিয়ত করা হয়ে থাকে তাহলেও দুই রাকআত সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে এবং এক রাকআত বাতিল হবে। চতুর্থ রাকআত আদায় না করার কারণ হলো, ফজরের দুই রাকআত ফরযের পর কোন নফল নামায নেই এবং দুই রাকআত ফরযের পূর্বেও দুই রাকআত সুন্নাত ব্যতীত আর কোন সুন্নাত বা নফল নামায নেই ।
যদি ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত বা দুই রাকআত ফরয নামাযে এমন হয় যে, দ্বিতীয় রাকআতে (শেষ বৈঠকে) “তাশাহহুদ “পাঠ করা পরিমাণ সময় না বলেই ভুলক্রমে তৃতীয় রাকআতের জন্য দাঁড়াতে উদ্যত হয় তাহলে বসার নিকটবর্তী থাকাকালীন অবস্থায় তা স্মরণ হলে বসে যাবে এবং “আত্তাহিয়্যাতু, দরূদ শরীফ এবং দোয়া মাসূরা” পাঠ করে সালাম ফিরাবে। এ অবস্থায় সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। আর যদি সম্পূর্ণ দাঁড়িয়ে যাবার পর স্মরণ হয়, কিংবা সূরা “ফাতিহা” পাঠ করার পর, এমনকি তৃতীয় রাকআতের রুকু করার পরও যদি স্মরণ হয় তবুও বসে যেতে হবে। এ অবস্থায় সাহু সিজদার সাথে নামায পূর্ণ করবে, এতে নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর যদি তৃতীয় রাকআতের সিজদা করার পর স্মরণ হয় তাহলে এ নামায বাতিল হয়ে যাবে। পুনরায় নামায আদায় করতে হবে।
ফজরের সময়ে কোন নফল নামায আদায় করা মাকরূহঃ
সুবহে সাদেকের পর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের দুই রাকআত সুন্নাত ও দুই রাকআত ফরয নামায ব্যতীত অন্য কোন নফল নামায আদায় করা মাকরূহ(ফতোয়ায়ে আলমগীরী) তবে কাযা নামায, জানাযার নামায, তিলাওয়াতে সিজদা, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া দরুদ, যিকির করা ইত্যাদি জায়েয আছে। এছাড়া কেউ যদি ফজরের দুই রাকমাত সুন্নত আদায় না করেই জামাআতের সাথে ফরয আদায় করে থাকে এবং সূর্যোদয়ের পর ছুট যাওয়া সুন্নত আদায় করতে পারবে না বলে আশংকা করে তাহলে তা আদায় করে নিতে পারবে। তবে সূর্যোদয়ের পর আদায় করাই উত্তম।
সূর্যোদয়ের সময় নামায আদায় করা নিষিদ্ধঃ
কোন ব্যক্তির যদি ফজর নামায এক রাকআত আদায় করার পর সূর্যোদয় হয়। তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। নামাযের কাযা অবশ্যই আদায় করতে হবে। কারণ সূর্যোদয়ের সময় সর্বপ্রকার নামায আদায় করা নিষিদ্ধ (আহসানুল ফাতাওয়া).
ফজরের নামাযকে আসরের নামাযের মত মনে করা যাবে না। কারণ সূর্যাস্তের সময় ঐ দিনের আসরের নামায জায়েয।
ফজরের সময় জাগ্রত হতে না পারলে করণীয়ঃ
ফযরের সময়ে জাগ্রত হতে না পারলে যখন ঘুম হতে জাগ্রত হবে এবং নামাযের কথা স্মরণ হবে তখন বিলম্ব না করে নামায আদায় করে নিবে। তবে জাগ্রত হবার পরও যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিছানা হতে না উঠে তাহলে এ নামায কাযা হবে।
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, যদি কেউ কোন নামায আদায় করতে ভুলে যায় কিংবা নামায আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, তার প্রতিকার হল যখনই স্মরণ হবে তখনই তা আদায় করে নেয়া। অপর এক বর্ণনায় এ কথাগুলো অতিরিক্ত আছে যে, এ ছাড়া তার অন্য কোন প্রতিকার নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
হযরত আবু কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (সঃ) ইরশাদ করেছেন, নিদ্রায় কোন ত্রুটি নেই, ত্রুটি হল জাগরণে। সুতরাং যখন তোমাদের কেউ কোন নামায আদায় করতে ভুলে যায় অথবা তা আদায় না করে ঘুমিয়ে পড়ে, তাহলে যখনই স্মরণ হবে তখনই নামায আদায় করে নিবে । কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, নামায কায়েম কর আমার স্মরণে। (মুসলিম)
ফজরের নামায কাযা হলে কিভাবে আদায় করবেঃ
ফজরের ফরযসহ সুন্নত নামায কাযা হলে এবং সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার পূর্বেই যদি কাযা আদায় করা হয় তাহলে সুন্নাত সহ কাযা আদায় করবে।
September 2022এর সময়সূচি
তারিখ: ফরজ:
০১-০৯-২০২২ ৪:২৪ am
০২-০৯-২০২২ ৪:২৪ am
০৩-০৯-২০২২ ৪:২৪ am
০৪-০৯-২০২২ ৪:২৪ am
০৫-০৯-২০২২ ৪:২৪ am
০৬-০৯-২০২২ ৪:২৭ am
০৭-০১-২০২২ ৪:২৭ am
০৮-০৯-২০২২ ৪:২৭ am
০৯-০৯-২০২২ ৪:২৭ am
১০-০৯-২০২২ ৪:২৭ am
১১-০৯-২০২২ ৪:২৭ am
১২-০৯-২০২২ ৪:২৯ am
১৩-০৯-২০২২ ৪:২৯ am
১৪-০৯-২০২২ ৪:২৯ am
১৫-০৯-২০২২ ৪:২৯ am
১৬-০৯-২০২২ ৪:২৯ am
১৭-০৯-২০২২ ৪:২৯ am
১৮-০৯-২০২২ ৪:৩২ am
১৯-০৯-২০২২ ৪:৩২ am
২০-০৯-২০২২ ৪:৩২ am
২২-০৯-২০২২ ৪:৩২ am
২১-০৯-২০২২ ৪:৩২ am
২৩-০৯-২০২২ ৪:৩২ am
২৪-০৯-২০২২ ৪:৩৪ am
২৫-০৯-২০২২ ৪ ৪:৩৪ am
২৬-০৯-২০২২ ৪: ৩৪ am
২৭-০৯-২০২২ ৪:৩৪ am
২৮-০৯-২০২২ ৪:৩৪ am
২৯-০৯-২০২২ ৪:৩৪ am
৩০-০৯-২০২২ ৪ঃ৩৬ am