ফরাসি বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয় ?
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানব ফরাসি বিপ্লব কি এবং ফরাসি বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয়?
ফরাসি বিপ্লব (The France Revolution)
ফরাসি বিপ্লব বিশ্বের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলোর অন্যতম। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী নিয়ে ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে সংঘটিত এ বিপ্লব পুরনো সমাজ এবং শাসনব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে এক নতুন যুগের সূচনা করে।
এ বিপ্লবের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে ফ্রান্সে স্বৈরাচারী ফরাসি বিপ্লবের ওপর আঁকা একটি ছবি বুরবো রাজবংশ এবং রাজতন্ত্রের প্রতীক বাস্তিল দুর্গের পতন হয়।
মূলত ফরাসি বিপ্লব ছিল ঘুনে ধরা ইউরোপীয় সমাজব্যবস্থার চূড়ান্ত পরিণতি। এ জন্য ফরাসি রাজনীতিবিদ আঁতোয়া বারনাড (Antoine Barnave) মন্তব্য করেছেন, ফরাসি বিপ্লব ইউরোপীয় বিপ্লবেরই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।

ফরাসি বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয় ?
ফরাসি বিপ্লব সংঘটিত হয় ১৭৮৯ সালে ।
১৭৮৯ সালের ১৪ জুলাই বাস্তিল দুর্গ আক্রমণ ও দখলের মাধ্যমে জনগণের বিপ্লবী অভ্যুত্থান জয়যুক্ত হয় এবং আজও এই তারিখটি বিশ্বব্যাপি ফরাসি বিপ্লবের দিন হিসেবে পালিত হয়।
প্রাক-বিপ্লব ফ্রান্সের সামাজিক অবস্থা (Social Conditions of Pre-Revolution France):
মধ্যযুগের সামন্তসমাজে যেরকম স্তরবিন্যাস ছিল, আধুনিক যুগের প্রাক্কালে বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সে সেরকমই সামাজিক স্তরবিন্যাস লক্ষ করা যায়।
এ সময় সমাজ ছিল ব্যাপক অর্থে দু’ভাগে বিভক্ত ১.অধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি এবং ২.অধিকারহারাশ্রেণি।
অধিকারপ্রাপ্ত শ্রেণি আবার দু’ভাগে বিভক্ত ছিল:
১.অভিজাতশ্রেণি এবং
২.যাজকশ্রেণি ।
যাজকরা ছিলেন প্রথম বা First Estate, অভিজাতরা ছিলেন দ্বিতীয় বা Second Estate আর তৃতীয় স্তরে ছিলেন Third Estate বা অধিকারহারা শ্রেণি।
শহুরে উচ্চ মধ্যবিত্ত বা বুর্জোয়া এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি, শহরের সাধারণ মানুষ, ভাসমান জনতা (সাকুলেৎ বা সর্বহারা ভবঘুরে), ধনী কৃষক, ক্ষেতমজুর, বর্গাদার ছিল Third Estate-এর অন্তর্ভুক্ত।
(জেনে রাখো: বিপ্লবের সময় খাদ্যদ্রব্যের দাম খুব বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু সে অনুপাতে শ্রমিকদের মজুরি বাড়েনি। ফলে সাকুলে বা ভাসমান শ্রেণির লোকজন ভিক্ষা করতে শুরু করে। এরা এসময় দাঙ্গা বাধাতো। এদের হাঙ্গামার ভয়ে অভিজাত ও অন্যান্য শ্রেণি ভীত থাকতো। এরা অভাবের তাড়নায় বেশি রাগি ও ধ্বংসমুখী শ্রেণিতে পরিণত হয়েছিল।)
ফার্স্ট এস্টেট বা যাজক সম্প্রদায় (First Estate or Clergy):
ফ্রান্সে গির্জা ও এর যাজক সম্প্রদায় রাজ্যের মধ্যে অপর রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। পূর্বেই বলা হয়েছে। ১৫৬১ সালের Contract of Poissy অনুযায়ী যাজকরা তাদের ভূ-সম্পত্তির জন্য সরকারকে নিয়মিত কর দিতে বাধ্য ছিলেন না। তারা স্বেচ্ছাকর দিত এবং এ করের হার তারাই নির্ধারণ করতেন। গির্জার অধীনস্থ কর্মচারী ও সম্পদের ব্যাপারে রাজা কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। তারা ছিল স্বায়ত্তশাসিত।
বিপ্লবের প্রাক্কালে ফরাসি গির্জার মালিকানায় ছিল রাষ্ট্রের সম্পত্তির শতকরা ২০ ভাগ । এ সম্পত্তিতে গির্জা কৃষকদের উৎপন্ন ফসলের এক-দশমাংশ ‘টাইদ’ বা ধর্মকর হিসেবে আদায় করত। তাছাড়া তারা জন্মের সময় নামকরণ কর ও মৃত্যু নিবন্ধন কর আদায় করতে পারত ।
ভূ-সম্পত্তির আয়ের জন্য গির্জাকে কোনো কর দিতে হতো না, বরং যাজকরা অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন। এসব কারণে ফরাসি যাজক সম্প্রদায় বিত্তশালী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। ফরাসি অর্থমন্ত্রী নেকারের মতে, গির্জার বার্ষিক আয় ছিল ১৩ কোটি লিভর ।
ফ্রান্সে বিপ্লবের পূর্বে খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটলে গির্জা তার উৎপন্ন ফসল উচ্চমূল্যে বিক্রয় করে প্রভূত অর্থের মালিক হয় । যাজকরা ছিলেন বৃত্তি বা পেশাজীবী। তাত্ত্বিক অর্থে এরা কোনো সম্প্রদায়ে ছিলেন না; কেননা কেউ জন্মসূত্রে যাজক হতো না। তবুও ফরাসি আইনে তাদের সম্প্রদায় হিসেবে গণ্য করে ভোটাধিকার দেওয়া হয় ।
ফ্রান্সে ১৭৮৯ সালে বিশপের সংখ্যা ছিল ১৩৯ জন। দেশে মোট যাজকের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার । যাজকদের মধ্যেও ছিল দুটো শ্রেণি— শহুরে অভিজাত যাজক এবং গ্রামীণ পাদরি। ফ্রান্সে ‘ল অব প্রাইমোজেনিচার’ (Law of Primogeniture) অনুযায়ী জ্যেষ্ঠপুত্র সম্পত্তির উত্তরাধিকারী ছিল। অন্যান্য পুত্র তাদের ভরণপোষণের জন্য অনেক সময় গির্জার বিশপ হিসেবে নিয়োগ পেত।
দেশের সর্বোচ্চ যাজক ছিলো বিশপরা। এরা ছিল সাদা পোশাকধারী এবং অভিজাত সম্প্রদায় হতে আগত। ফলে ঊর্ধ্বতন যাজকরা অভিজাতদের মতোই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত।
নিচুস্তরের যাজকরা (যেমন- ক্যুর) ছিলেন কালো পোশাকধারী। এরা ছিলেন দরিদ্র ও নিষ্ঠাবান। এরা অধিকারহীন জনতা অর্থাৎ তৃতীয় সম্প্রদায়ের (Third Estate) মতোই আর্থিক দুরবস্থায় দিনাতিপাত করতেন। ফলে উচ্চপদস্থ যাজকদের এরা ঘৃণা করতেন। এ কারণেই নিচুস্তরের যাজক সম্প্রদায় বিপ্লবে যোগ দেয় ।
সেকেন্ড এস্টেট বা অভিজাত সম্প্রদায় (Second Estate or Nobility):
ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সে অভিজাতদের মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার অর্থাৎ দেশের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ ঐতিহাসিক ‘নরম্যান হ্যামপসন (Norman Hampson) তার Social History of the French Revolution গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, এ সকল অভিজাত দাবি করতেন যে, মধ্যযুগে যেসকল ফ্রাঙ্কিশ বিজেতা ফ্রান্স অধিকার করেছিলেন তারা তাদেরই বংশধর, সুতরাং তারা বিশেষ সুবিধা ভোগ করার অধিকারী।
রাজা নিজেও এ বিজেতাদের উত্তরসূরি বিধায় তিনি তার বিশেষ অধিকার ভোগ করতেন। অভিজাতরা বংশানুক্রমে তাদের এ অধিকারগুলো সযত্নে সংরক্ষণ করতেন। এরা শুধু বংশ মর্যাদার জোরে উচ্চপদগুলোতে নিয়োগ পেতেন।
অভিজাতদের মধ্যে যারা সামন্তপ্রভু (Lord) তারা ফ্রান্সের মোট জমির ২০ ভাগ অধিকার করলেও ভূ-কর দিতেন না। তাছাড়া, আইন অনুযায়ী অন্যান্য কর আদায়েও (যেমন- Capitation) তারা শিথিলতা প্রদর্শন করতেন। এরা আলস্য, ভোগবিলাসে দিন পার করতেন। তাছাড়া রাজার সভাসদ হিসেবে এরা প্রায়ই রাজকীয় উপঢৌকন, পুরস্কার, বিভিন্ন ভাতা ও পেনশন লাভ করতেন।
তখনকার ফরাসি অভিজাতদের মধ্যেও ৩টি স্তর লক্ষ করা যায় – ১. বনেদি পরিবারের অভিজাত; ২. গ্রামীণ অভিজাত এবং ৩. চাকরিজীবী অভিজাত।
বনেদি অভিজাতদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন রাজার সভাসদ, সেনাপতি, বিচার বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজদূত, উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মকর্তা প্রমুখ। এরা ছিলেন রাজার সহকারী শাসকশ্রেণির লোক। এদের বলা হতো দরবারি অভিজাত বা Court Nobility এজন্য এরা খুবই গর্বিত ছিলেন। এরা প্রধানত ভার্সাই নগরীতে বাস করতেন এবং বহু দাস-দাসী ও অনুচর রাখতে পারতেন। এদের সংখ্যা ছিল প্রায় চার হাজার।
গ্রামীণ অভিজাতরা গ্রামে তাদের জমিদারিতে বাস করতেন এবং প্রাদেশিক সভায় প্রভাব প্রতিপত্তি খাটাতেন। এদের সাথে কৃষক সম্প্রদায়ের সরাসরি শোষণের সম্পর্ক ছিল। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অনুপাতে আয় বৃদ্ধি না পাওয়ায় এবং কায়িক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শ্রমের মাধ্যমে উপার্জনের বিকল্প উপায় অন্বেষণে অনীহা থাকায় এ গ্রামীণ অভিজাতরা ক্রমেই দরিদ্র হয়ে পড়েন।
আঠারো শতকে এ শ্রেণিটি তাদের আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের ওপর নিদারুণ অত্যাচার উৎপীড়ন চালায়। এ জন্য কৃষক সম্প্রদায় গ্রামীণ অভিজাতদের ওপর খুবই ক্ষুব্ধ ছিল।
তৃতীয় শ্রেণির অভিজাতরা ছিলেন মূলত চাকরিজীবী। ধনী বুর্জোয়াদের একাংশ সামাজিক মর্যাদা ও ক্ষমতা লাভের জন্য পার্লামেন্টের বিচারকের পদ বা প্রদেশে ইনটেনডেন্টের পদ বংশানুক্রমিকভাবে কিনে নিতেন। ফলে পদমর্যাদার জোরে এঁরা অভিজাত বলে গণ্য হতেন। এদেরকে বলা হতো পোশাকি অভিজাত।
আঠারো শতকে ফ্রান্সের অভিজাতরা সেখানকার কৃষি জমির তিন ভাগের এক অংশের মালিক ছিলেন। এরা আদালত গঠন, জরিমানা আদায়, যেকোনে৷ একচেটিয়া ব্যবসা, গম পেষাই ও মদ-চোলাই কারখানা রাখা, জনগণকে রেগার খাটানো ইত্যাদি অধিকার ভোগ করতে পারতেন। মর্যাদার প্রতীক হিসেবে এরা সর্বদা তরবারি বহন করতেন এবং নিজের নামের পূর্বে লর্ড বা ব্যারন বা মার্কুইস উপাধি ব্যবহার করতেন।
ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিক মন্তেস্কু অভিজাতদের পরিচয় দিতে গিয়ে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, “যারা রাজার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারে, মন্ত্রীর সাথে বাক্যালাপ করতে পারে, যাদের বংশমর্যাদা এবং ঋণ ও পেনশন আছে, তাদেরই অভিজাত বলে ।”
থার্ড এস্টেট বা অধিকারহারা শ্রেণি (Third Estate or Proletariats):
যাজক ও অভিজাত সম্প্রদায় ছাড়া আর সবাই ছিল তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের জনসংখ্যা ছিল আড়াই কোটি।এর শতকরা ৯৬ ভাগই ছিল তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।ধনী বুর্জোয়া থেকে চালচুলোহীন ভবঘুরে – সবাই ছিলেন এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
এরা ছিলেন ব্যাংকের মালিক, শিল্পোৎপাদক, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, চিকিৎসৱ শিক্ষক, শিল্পী, গ্রন্থকার, সাংবাদিক, কৃষক প্রমুখ। তৃতীয় শ্রেণি রাষ্ট্রের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল অথচ এরাই ছিল রাষ্ট্রের স্তম্ভ। এদের শ্রম-ঘামেই গড়ে উঠেছিল ফরাসি অর্থনীতি তথা ফরাসি সাম্রাজ্য।
তৃতীয় শ্রেণির মধ্যে নেতৃস্থানীয় ছিল বুর্জোয়ারা। এরাই মূলত ফরাসি বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়। Burg শব্দটি থেকে Burge এবং এর থেকে আধুনিক Bourgeois বা বুর্জোয়া কথাটির উদ্ভব। মধ্যযুগে Burg বা নগরের উপকণ্ঠে যারা বাস ক তাদের Burgess বলা হতো।
ফলে শব্দার্থগতভাবে বুর্জোয়া বলতেপ শহরবাসী ধনী বণিক, কারিগর, দোকানদার, চাকুরে বুদ্ধিজীবী সবাইকে বোঝায়। বুর্জোয়াদের আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেও সামাজিক ও বংশ মর্যাদা ছিল না। জর্জ রুডে এর মতে, ধনী বুর্জোয়ারাই অভিজাতদের বংশমর্যাদা ও বিশেষ অধিকারগুলোকে আক্রমণ করে ।
বুর্জোয়াদের একাংশ চাকুরে, আইনজীবী, চিকিৎসক অধ্যাপক ইত্যাদি পেশাজীবী ছিল। এদের অনেককে ‘পাতি বুর্জোয়া বলা হতো। এরা ছিল উচ্চশিক্ষিত ও দার্শনিক চিন্তাধারায় উদ্দীপ্ত। এরাই ছিল সমাজের সবচেয়ে অসন্তুষ্ট শ্রেণি।
কেননা, চিন্তা-মনন-যোগ্যতায় শ্রেষ্ঠ হলেও এদের উচ্চ শ্রেণিতে প্রবেশের দরজা ছিল বন্ধ। এ হতাশা থেকেই তারা পুরাতনতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক Hampson-এর মতে, “বুর্জোয়াশ্রেণির সব শাখাই অভিজাতদের সমালোচনা করত। তারা অভিজাতশ্রেণির সমান মর্যাদা ও অধিকার লাভের ইচ্ছা পোষণ করত।”
তৃতীয় শ্রেণির বৃহৎ অংশ ছিল কৃষক সম্প্রদায়। কৃষকদের মধ্যে ছিল দুটো শ্রেণি। প্রথম শ্রেণিটি হলো স্বাধীন কৃষক। ফ্রান্সে প্রতি ৪ জনের একজন ছিল স্বাধীন কৃষক) এরা নিজস্ব জমিতে চাষ করত। দেশের মোট কৃষিজমির এক তৃতীয়াংশের মালিক ছিল এরা।
কিন্তু পরিবারপ্রতি জমির পরিমাণ এত কম ছিল যে রাজাকে দেয় ভূমি কর, লবণ কর, তামাক ও মদের ওপর আবগারি কর, মাথাপিছু উৎপাদন কর, সম্পত্তি কর, গির্জাকে প্রদেয় টাইদ এসব কর পরিশোধের পর তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য কিছুই থাকত না।
তৃতীয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত অপর কৃষকরা ছিল বর্গাচাষি, প্রান্তিক চাষি, ক্ষেতমজুর ও ভূমিদাস। প্রতি ২০ জন চাষির ১ জন ছিল ভূমিদাস। এসব চাষি বিভিন্ন করভারে জর্জরিত ছিল। মার্কসবাদী ঐতিহাসিক লাব্রুজ বলেন, “আঠারো শতকের ফরাসি কৃষকরা ছিল সর্বাপেক্ষা শোষিত।” ফ্রান্সে তৃতীয় শ্রেণিতে অপর একদল মানুষ ছিল যারা ভবঘুরে বা ভাসমান শ্রমিক।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে গ্রাম থেকে এসব লোক ছিন্নমূল হিসেবে শহরে জড়ো হয়। এদের বলা হয় সাঁকুলেৎ। এদের মধ্যে ছিল গরিব কারিগর ও ছোট দোকানদার। এরা ছিল জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। এরা মাঝে মাঝে বয়কট ও দাঙ্গা করত । এজন্য অভিজাত ও ধনী বুর্জোয়ারা সাঁকুলেৎদের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকত ।
প্রাক-বিপ্লব ফ্রান্সের রাজনৈতিক অবস্থা (The Political Conditions of Pre-Revolution France):
বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সের রাজনৈতিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। সতেরো শতকের ফরাসি রাজনীতিবিদ বিশেল্যু ও মাজারিন এবং ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই ফরাসি রাজতন্ত্রকে একটি স্বৈরতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন। ১৬১৪ সালের পর থেকে বিপ্লব পর্যন্ত প্রায় ১৭৫ বছর যাবৎ ফ্রান্সে কোনো পার্লামেন্ট আহ্বান করা হয়নি। এর ফলে রাজাই ছিলেন দেশের একমাত্র আইনপ্রণেতা ও সর্বেসর্বা। জনগণের কাছ থেকে আদায়কৃত রাজস্বের সবটুকুই রাজা নিজের প্রাপ্য বলে মনে করতেন।
স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্রের শাসন (Rule of Dictatorial Monarchy):
এ সময় ফ্রান্সে স্বেচ্ছাচারী রাজতন্ত্র প্রচলিত ছিল। ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতা প্রাপ্তি নীতির (Divine Power) ওপর নির্ভর করে লুই রাজতন্ত্রকে সর্বময় ক্ষমতার আধারে পরিণত করেন। এ ক্ষমতা বোঝাবার জন্য তিনি মন্তব্য করেন, “I am the state” অর্থাৎ আমিই রাষ্ট্র ।
ষোড়শ লুই তার আত্মজীবনীতে বিষয়টি আরও বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন এভাবে, রাজারা হচ্ছেন সর্বময় প্রভু, যেমন প্রজাদের সব কিছুর ওপর কর্তৃত্ব করার সকল প্রাকৃতিক অধিকার তার রয়েছে। (Kings are absolute masters and as such have a natural right to despose of everything belonging to their subjects) এ স্বৈরাচারী ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার জন্য রাজারা জাতীয় সভার অধিবেশন আহ্বান করেননি। এমনকি ফ্রান্সের বুরবোঁ শাসকরা তৎকালীন ইউরোপীয় রাজন্যবর্গের অনুসৃত Enlightened Despotism-কেও অস্বীকার করেন। যার ফল হয় মারাত্মক। আইনগতভাবে রাজা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হলেও বাস্তবক্ষেত্রে রাজার ক্ষমতা নিরঙ্কুশ ছিল না।
সামন্ত-অভিজাত ও যাজক সম্প্রদায় রাজার পক্ষ থেকে সরকারি ক্ষমতা হস্তগত করে বংশমর্যাদার জোরে দেশ শাসনের সুবিধা ভোগ করত। এর ফলে শাসনক্ষেত্রে অনাচার দেখা দেয়। হ্যামপসন এর মতে, “শাসন ব্যবস্থায় অভিজাত শ্রেণির প্রভাব অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।” এ সময় জনগণের রাজতন্ত্র সম্পর্কে সমালোচনা করার কোনো অধিকারও ছিলনা।
পঞ্চদশ লুই মতামত প্রকাশের অধিকার রুদ্ধ করেছিলেন এই বলে, “A king is accountable for his conduct only to God.” কেউ রাজ্য শাসন সম্পর্কে সমালোচনা করলে তাকে ‘লেত্রি দ্য কেশে ‘(Lettres de cachet) নামক পরোয়ানা জারির মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস্তিল দুর্গে আটকে রাখা হতো।
গির্জার অবাঞ্ছিত স্বাধীনতা (Unacceptable Freedom of the Church):
১৫৬১ সালের পইসির চুক্তি অনুসারে রাজা গির্জার অভ্যন্তরীণ পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে পারতেন না। এমনকি গির্জার ভূ-সম্পত্তির ওপর রাজা কোনো কর ধার্য করতে পারতেন না। এর ফলে ফ্রান্সের গির্জা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থায় পরিণত হয় । যাজকরা এতটা প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন যে, ক্ষেত্রবিশেষে রাজার কর্মকর্তারা তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েন। এর রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ফরাসি রাজতন্ত্রের জন্য শুভ ছিল না।
অযোগ্য শাসকের আবির্ভাব (Appearance of Incapable Rulers):
চতুর্দশ লুইয়ের পর ফ্রান্সে বুরবো বংশের অযোগ্য শাসকের আবির্ভাব ঘটে। পঞ্চদশ লুই ছিলেন বিলাসী, অলস, ইন্দ্রিয়পরায়ণ ও ব্যক্তিত্বহীন রাজা। তিনি ছিলেন উপপত্নী মাদাম দ্য পম্পদ্যুয়ার দ্বারা প্রভাবিত এবং সুন্দরী, অহংকারী পত্নী, অস্ট্রিয়ার রাজকুমারী মেরী এ্যান্টয়নেটের দ্বারা পরিচালিত। এর ফলে তার সদিচ্ছাপরায়ণতা কোনো কাজে আসেনি। বুরবো রাজাদের এরূপ অযোগ্যতা, আলস্য, ইন্দ্রিয়পরায়ণতা ও ব্যক্তিত্বহীনতার ফলে শাসনকার্যের সকল ক্ষমতা দুর্নীতিগ্রস্ত অভিজাতদের কুক্ষিগত হয়।
অভিজাতদের দৌরাত্ম্য (Roguery of Aristocracy):
ফ্রান্সের প্রদেশগুলোতে রাজার কোনো নির্দেশ অভিজাতদের সম্মতি ছাড়া কার্যকর করা যেত না। ফ্রান্সের ১২টি পার্লামেন্টের বিচারকরা ছিলেন অভিজাত শ্রেণির। এর ফলে অভিজাত শ্রেণির বিরুদ্ধে রাজার কোনো আইন কার্যকর করা যায়নি । পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে প্যারিসের পার্লামেন্ট ছিল সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী। এ পার্লামেন্টের অভিজাত বিচারপতিরা এতটাই শক্তিশালী ছিলেন যে, মন্ত্রী টুর্গোর প্রস্তাবিত মৌলিক সংস্কার ব্যবস্থাগুলোকে কার্যকর করা যায়নি। এ জন্য ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন (David Thomson) বলেন, “ফরাসি রাজতন্ত্র ছিল আসলে অভিজাত বা সামন্তরাজতন্ত্র। ” কার্ডিনাল রিশেল্যুর সময়কাল থেকে স্থানীয় শাসনের ভার যেসব ‘ইনটেনডেট’ বা রাজকীয় প্রতিনিধির হাতে ন্যস্ত করা হয় তারা স্থানীয় অভিজাতদের দৌরাত্ম্যে শাসন কার্যকর করতে পারেননি। এমনকি কোনো কোনো শহর এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। এরূপ অবস্থায় দেশে ঐক্যের অভাব দেখা দেয়।
বিচার ব্যবস্থায় শৃঙ্খলার অভাব (Indiscipline in Judiciary):
বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সে বিচারব্যবস্থাও ছিল বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। সর্বত্র একই আইন প্রচলিত ছিল না। বিপ্লবের অব্যবহিত পূর্বে -দেশের বিভিন্ন স্থানে তিন শতাধিক ভিন্ন ভিন্ন আইন প্রচলিত ছিল । দেশে সামন্ত-আদালত, গির্জার আদালত ও রাজকীয় আদালত— এ তিন ধরনের আদালত প্রচলিত ছিল। অনেক ক্ষেত্রে এ আদালতগুলোর মধ্যে বিরোধ দেখা দিত। শাসনতান্ত্রিকভাবে রাজা যদিও বিচার বিভাগের প্রধান ছিলেন, কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্নরকম। এর ফলে বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করে। জনজীবন হয়ে পড়ে দুর্বিষহ ।
মুদ্রা ও কর ব্যবস্থায় অসমতা (Dissimilarity in Taxation & Coinage System):
দেশের সর্বত্র একই ধরনের মুদ্রা ব্যবস্থা, ওজনপ্রণালি ও কর ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এক প্রদেশ থেকে পণ্য অন্য প্রদেশে বহন করতে হলে শুল্ক প্রদান করতে হতো। ফ্রান্সের বিপ্লবপূর্ব রাজস্বনীতি ও কর ব্যবস্থাও ছিল ত্রুটিপূর্ণ। যাদের রাজস্ব প্রদানের ক্ষমতা ছিল (যেমন— অভিজাত সম্প্রদায়) তারা কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। অপরদিকে, কৃষক ও বুর্জোয়াশ্রেণি ছিল করভারে জর্জরিত। এ জন্য একদিকে রাজা সবসময় অর্থকষ্টে ভুগতেন, অপরদিকে সম্পদশালী অভিজাতরা দুর্বিনীত হয়ে ওঠে।
অদূরদর্শী পররাষ্ট্রনীতি (Imprudent Foreign Policy):
ফরাসি রাজাদের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতাও স্মরণযোগ্য। পঞ্চদশ লুইয়ের শাসনকালে ফ্রান্স অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকার যুদ্ধে (১৭৪০–১৭৪৮) আট বছর এবং সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধে (১৭৫৬-১৭৬৩) সাত বছর লিপ্ত থেকে অগণিত লোকক্ষয় ও সম্পদহানির শিকার হয়। ইতিহাসবিদ বার্নস এবং রালফ এ প্রসঙ্গে বলেন, “France was now crippled almost beyond hope of recovery.” উল্লেখিত দুটো যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে কানাডা ও ভারত থেকে ফরাসিরা বহিষ্কৃত হয়। সমুদ্রপথেও ফ্রান্স তার প্রাধান্য হারায়।
এ দুটো যুদ্ধে পরাজয় ফরাসি রাজতন্ত্রের মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করে। এরপরও ষোড়শ লুই নিবৃত্ত না হয়ে ফ্রান্সকে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলেন। ফলে রাজা তীব্র অর্থসংকটে পতিত হন। এ অর্থকষ্ট হতে মুক্তিলাভের শেষ উপায় হিসেবে ষোড়শ লুই স্টেটস জেনারেলের সভার আহ্বান করলে রাজতন্ত্রের দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। বুর্জোয়া শ্রেণি এর সুযোগ গ্রহণ করে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড শুরু করে। অধিকারহারা জনতা এ বিপ্লবে যোগ দিলে শেষ পর্যন্ত রাজতন্ত্রের পতন ঘটে।
প্রাক-বিপ্লব ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থা (The Economic Conditions of Pre-Revolution France):
ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। সরকার ছিল ঋণভারে জর্জরিত। অসম কর ব্যবস্থা, সরকারের অমিতব্যয়িতা, শস্যদানি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি কারণে দেশটির অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড একেবারে ভেঙে পড়ে ছিল।
এ সময় ফ্রান্সে তিন ধরনের প্রত্যক্ষ কর প্রচলিত ছিল- সম্পত্তি কর বা টাইল (Taille), উৎপাদন কর বা ক্যাপিটেশন (Capitation) এবং আয়কর বা ভিংটিয়েম (Vingtieme)) আরও কিছু শুল্ক ছিল, যেমন- লবণ শুল্ক (Gabelle), আবগারি শুল্ক (Excise) | এছাড়া ভূমিদাসদের ওপর সামন্তপ্রভুরা কিছু কর আরোপ করত, যেমন—
ফসলের ভাগ বা শামপার্ট (Champart), বাৎসরিক খাজনা বা সেন্স বা সঁস (Cens), ভোগ্যপণ্যের ওপর কর (Aide) ইত্যাদি। গির্জাকে লোকের দিতে হতো ধর্মকর (Tithe), জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু নিবন্ধন কর।
ফ্রান্সের জনসংখ্যার দশ ভাগের এক ভাগ ছিল যাজক ও পাঁচ ভাগের এক ভাগ ছিল অভিজাত সম্প্রদায়।এরা দেশের জাতীয় সম্পদের শতকরা ৪০ ভাগের মালিক ছিল। কিন্তু যাজক ও অভিজাতরা কোনো টাইদ (Tithe) দিতেন না। পইসির চুক্তির (Contract of Porssy) ফলে রাজা
যাজকদের ওপর সরাসরি কোনো কর বসাতে পারতেন না। আবার, অভিজাতরা নানাভাবে ক্যাপিটেশন ও ভিংটিয়েম এড়িয়ে যেতেন। কর ধার্য করার ক্ষেত্রেও তিন ধরনের অনিয়ম হতো যেমন – ক) বিশেষ অধিকার, খ) যাদের দেয়ার ক্ষমতা আছে তাদের কম হারে কর এবং গ) কর অব্যাহতি প্রদান ।
ইনটেনডেন্ট নামক রাজস্ব কর্মচারীরা ছিল অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। এসব কারণে সরকারের তিনটিভকরের বোঝা গিয়ে পড়ত তৃতীয় শ্রেণির ঘাড়ে। উপরে উল্লেখিত প্রত্যক্ষ কর ও পরোক্ষ শুল্ক পরিশোধ করার পর তৃতীয় শ্রেণি, বিশেষত কৃষকশ্রেণির হাতে আর বিশেষ কিছুই থাকত না। অপরদিকে, যাজক ও অভিজাতশ্রেণি বিলাসী জীবনযাপন করতেন ।
ফ্রান্সের অর্থনীতির অপর কালো দিকটি ছিল সরকারি অপব্যয় ও রাজপরিবারের সীমাহীন অমিতব্যয়িতা। এর সাথে যুক্ত হয় ফরাসি রাজার খামখেয়ালিপনায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া। গুডউইনের মতে, ভার্সাই রাজসভায় কর্মচারী সংখ্যা ছিল ১৮ হাজার। এর মধ্যে ১৬হাজার কর্মচারী ছিল শুধু রাজপ্রাসাদে কর্মরত। রানির খাস চাকরের সংখ্যা ছিল ৫০০। রানি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভোজসভার আয়োজন করতেন। তিনি তার পোশাকের জন্য অকাতরে অর্থ ব্যয় করতেন। রাজপরিবারের এরূপ অমিতব্যয়িতার জন্য ফরাসি সরকার ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ে।
এছাড়া যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকার প্রচুর ঋণ গ্রহণ করে। শুধু আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ফরাসি সরকারের মন্ত্রী ১০০ কোটি লিভর ঋণ করেন ।অর্থনৈতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৭৮৮ সালে ফরাসি সরকারের গৃহীত জাতীয় ঋণের মোট পরিমাণ ছিল ২৫০ কোটি লিভর। এর সাথে সরকারের অপরাপর খরচ যুক্ত হয়ে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬,৩০,০০০,০০০ লিভর।
উক্ত বছর সরকারের ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য দরকার হয় ৩,১৮,০০০,০০০ লিভর। এ বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধের কোনো উপায় না পেয়ে রাজা ষোড়শ লুই স্টেটস জেনারেল বা জাতীয় সভার আহ্বান করতে বাধ্য হন। ফ্রান্সের বুরবো সরকারের এ অর্থনৈতিক সংকটের জন্য তাদের গৃহীত আর্থিক নীতিই দায়ী ছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, France was a vast museum of economic errors. আবার গুডউইনের মতে, ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে অর্থনৈতিক সমস্যার মূলকথা ছিল অমিতব্যয়িতা বন্ধ করার ব্যাপারে সরকারের অক্ষমতা ।
১৭৭০ সালের পর ফ্রান্সের কৃষি ও শিল্পদ্রব্যের উৎপাদনে মন্দা দেখা দেয়। পরপর ফসলহানির জন্য খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। এক হিসেবে দেখা যায়, ১৭৭৪ সালে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ৬০% বৃদ্ধি পায় কিন্তু শ্রমিকের মজুরি ২২%-এর বেশি বাড়েনি। এর ফলে খাদ্যের জন্য দাঙ্গা (Bread Riot) শুরু হয়।
ঐতিহাসিক রুডে বলেন, “১৭৭৫-১৭৭৮ সময়কালে ফ্রান্সের প্যারিস, লিও ইত্যাদি শহরে রুটির দাঙ্গা চলে।” এদিকে গ্রামের নিরন্ন মানুষেরা দলে দলে খাদ্যের সন্ধানে শহরমুখী হলে তীব্র সংকটের সূত্রপাত হয়। ঋণভারে জর্জরিত ফরাসি সরকার তা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়নি।
উপরে আলোচনায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিপ্লবপূর্ব ফ্রান্সে এক ভয়ংকর সামাজিক বৈষম্য বিরাজ করছিল। কর ব্যবস্থার ত্রুটি, শস্যহানি, মুদ্রা ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কারণে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ঘটে এবং খাদ্যশস্যের মূল্য বেড়ে যায়। দলে দলে লোক খাদ্যের সন্ধানে গ্রাম থেকে শহরে জড়ো হতে থাকে। সেই সাথে দার্শনিকদের লেখনী মানুষকে অধিকার সচেতন করে তোলে ।
তারা জরাজীর্ণ পুরাকালের (Old Regime) পরিবর্তন কামনা করতে থাকে। ফ্রান্সের শহরগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে।১৭৮৮-৮৯ সালে এ বিক্ষোভ পাঁচগুণ বেড়ে যায়। এসব বিক্ষোভ বিদ্রোহ নির্মমভাবে দমন করা হয়।
ঋণভারে জর্জরিত ফরাসি সরকার অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে না পারায় স্টেটস জেনারেল অধিবেশন আহ্বান করতে বাধ্য হয়। ফলে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশিত হয়ে পড়ে। বুর্জোয়াশ্রেণি এর সুযোগ নিয়ে তৃতীয় শ্রেণিকে ব্যবহার করে বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ড শুরু করে।
- সম্পত্তি কর- Taille
- উৎপাদন কর- Capitation
- আয়কর Vingtieme
- লবণ কর- Gabelle
- আবগারি শুল্ক -Excise
- ধর্ম কর- Tithe)
ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল ও প্রভাব (Result and Effects of French Revolution):
ফরাসি বিপ্লব বিশ্বের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা । এ বিপ্লবের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। একমাত্র রুশ বিপ্লব (বলশেভিক বিপ্লব, ১৯১৭) ছাড়া ইতিহাসে আর কোনো ঘটনা ফরাসি বিপ্লবের মতো এতো পরিবর্তন আনতে পারেনি। ১৭৮৯ সালে সংঘটিত এ বিপ্লব ফ্রান্সের সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, ধর্মব্যবস্থাকে আমূল বদলে দেয়।
সামন্ততন্ত্রের পতন (Fall of Feudalism):
ফরাসি বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ছিল জরাজীর্ণ পুরনো ব্যবস্থার (Old Regime) পতন। এজন্য বিপ্লবের পরপরই ১৭৮৯ সালের ১৩ আগস্ট সামন্ততন্ত্রের উচ্ছেদ করা হয়। সকল প্রকার সামন্তকর ও বিধি, ম্যানর ব্যবস্থা, টাইদ (ধর্মকর) ইত্যাদি বাতিল করা হয় এবং সামন্তদের ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের মধ্যে বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়।
অভিজাত ও যাজকদের সকল প্রকার বিশেষ অধিকার বাতিল করা হয়। এর ফলে মধ্যযুগ থেকে চলে আসা সমাজ ব্যবস্থার যে অসাম্য তার অবসান ঘটে। ঐতিহাসিক কোব্বানের মতে, ‘ফ্রান্সের আঠারো শতক ছিল আধুনিক যুগের সূতিকাগার।’ ফ্রান্সের সমাজব্যবস্থার এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ঢেউ ক্রমে ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের উদ্ভব (Rise of Constitutional Monarchy):
ফরাসি বিপ্লব তাৎক্ষণিকভাবে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র চালু করে। পরবর্তীতে বিপ্লবীদের চাপে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রেরও অবসান ঘটে। ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারিতে তৎকালীন ফ্রান্সের রাজা ষোড়শ লুইয়ের শিরশ্ছেদ করা হয় এবং ফ্রান্সকে একটি প্রজাতন্ত্র বলে ঘোষণা করা হয় ।
বুর্জোয়া কৃষকশ্রেণির উদ্ভব (Rise of Bourgeois Farmers):
ফরাসি বিপ্লবের ফলে সামন্তপ্রথার বিলোপ হয়। অভিজাতদের ভূমি কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়। এর ফলে এক শ্রেণির স্বাধীন বুর্জোয়া কৃষকশ্রেণির উদ্ভব ঘটে। এরা ভাগচাষি, বর্গাচাষি, ভূমিহীন ক্ষেতমজুরদের সাথে তাদের ভূমির স্বত্ব ভাগ করেনি । এই স্বাধীন বুর্জোয়া কৃষকশ্রেণি একটি রক্ষণশীল বুর্জোয়া শ্রেণিতে পরিণত হয়। তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্যে বিপ্লবের চেতনাকে বাধাগ্রস্ত করে। তারাই পরবর্তীতে নেপোলিয়নের কনস্যুলেট বা সাম্রাজ্যের প্রধান সহায়ক শ্রেণিতে পরিণত হয়।
সর্বহারা শ্রেণির সাথে প্রতারণা (Cheating the Proletariats):
ফরাসি বিপ্লবের ভার সবচেয়ে বেশি বহন করে যে শ্রেণিটি, তারা হলো সাঁকুলেৎ বা সর্বহারা শ্রেণি। বিপ্লবের সবপক্ষই এদের ব্যবহার করে, কিন্তু লক্ষ্যে পৌছার পর এদের পরিত্যাগ করে। এদের ব্যবহার করেই বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটানো হয়। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন হার বেঁধে দেওয়া ছাড়া এদের আর কোনো উপকার করা হয়নি। এমনকি ফরাসি সংবিধান এদের ভোটাধিকার পর্যন্ত দেয়নি। একসময় জ্যাকোবিনরা গণভোটের ব্যবস্থা করে এদের ভোটাধিকার দেয়। কিন্তু জিরন্ডিস্টদের সময় এবং রোবসপিয়ারের পতনের পর তাদের এ অধিকার রদ করা হয়।
ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ আলফ্রেড কোবানের (Alfred Cobban) মতে, ‘সাঁকুলেৎদের সাথে বুর্জোয়াদের আঁতাত ছিল আকস্মিক ও অস্থায়ী।’ প্রকৃতপক্ষে, ফরাসি বিপ্লব ছিল বুর্জোয়া বিপ্লব। বিপ্লবীদের পতন ঘটিয়ে, অভিজাত যাজকদের ক্ষমতা উচ্ছেদ করে এবং সাকুলেৎদের দমন করে এই বুর্জোয়া শক্তিই ফ্রান্সের আধুনিক যুগের ভাগ্য নিয়ন্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
গণতান্ত্রিক শাসনের দিকে যাত্রা (Step towards Democracy):
ফরাসি বিপ্লবের ফলে বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের অবসান হয়। এর মধ্য দিয়ে ফ্রান্সে গণতান্ত্রিক শাসনের সূত্রপাত ঘটে। নেপোলিয়ন বংশানুক্রমিক শাসন চালুর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। বুরবো রাজবংশের পুনরুত্থান প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয় । এর কারণ হলো বিপ্লব মানুষের চেতনা এমনভাবে বদলে দেয় যে, সেখান থেকে ফ্রান্সের পশ্চাদপসরণ সম্ভব ছিল না।
মৌলিক ও মানবিক অধিকারের স্বীকৃতি (Declaration of Fundamental Human Rights):
ফরাসি বিপ্লবের ফলে নাগরিক অধিকার, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার এবং সর্বজনীন মানবাধিকারগুলো স্বীকৃতি লাভ করে। রাষ্ট্র পরিচালনায় জনগণের ইচ্ছার প্রাধান্য দেয়া শুরু হয় এবং ভূমি দাসত্ব উঠে যায় ।
সংস্কৃতির পরিবর্তন (Change of Culture):
ফরাসি বিপ্লব সামাজিক আচার-আচরণের পাশাপাশি পোশাক-আশাকেও পরিবর্তন আনে। পুরুষেরা ‘ব্রিচেস’ পরা ছেড়ে দিয়ে ট্রাউজার ও কোট পরা শুরু করে। মহিলারা সামন্তযুগের মতো ফোলানো পোশাক ছেড়ে আঁটসাট ছোট স্কার্ট পরিধান করা শুরু করে । সামন্তযুগের মতো পরস্পরকে “মশিয়ে’ সম্বোধন না করে ‘সিটিজেন’ সম্বোধন করা শুরু হয়। লোকে বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে তিন রঙা পোশাক ও লাল টুপি ব্যবহার করা শুরু করে ।
গির্জাতন্ত্রের অবসান
ফরাসি বিপ্লব গির্জাতন্ত্রের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করে মুক্তচিন্তার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞানে গতিশীলতা আসে। তৎকালীন ফরাসি সমাজের দুর্নীতির প্রতীক গির্জার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ও রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। এতে সহস্র বছরের সজ্জিত ধর্মান্ধতা, হীনমন্যতা ও অসহিষ্ণুতা দূরীভূত হয়।
অন্যান্য ফলাফল (Other Results):
ফরাসি বিপ্লবের ফলে জাতীয়তাবাদী চেতনার উদ্ভব হয়। জাতি দীর্ঘজীবী হোক— বিপ্লবীদের জাতীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত এ শ্লোগান দেশপ্রেম জাগ্রত করে। তাছাড়া এ বিপ্লবের ফলে দ্রব্যাদি পরিমাপের পুরানো পদ্ধতির পরিবর্তে দশমিক পদ্ধতি বা মেট্রিক পদ্ধতি চালু হয়। কোড নেপোলিয়ন চালু হলে রেজিস্ট্রি বিবাহ, বিবাহ-বিচ্ছেদ ও সম্পত্তিতে সন্তানের সমানাধিকার স্বীকৃতি লাভ করে।
ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্স সামরিক শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠে। এর ফলে ফ্রান্স ইউরোপীয় রাজনীতিতে একক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। আর এই শক্তিকে রুখতে ইউরোপীয় শক্তিগুলো ফার্স্ট কোয়ালিশন (First Coalition) গঠন করতে বাধ্য হয়।
ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব (Influence of the French Revolution):
ফরাসি বিপ্লব ইউরোপীয় রাজনীতিতে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। এ বিপ্লবের ফলাফল ইউরোপের অন্য দেশগুলোর জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি করলেও ঐসব দেশের শাসকগোষ্ঠী শঙ্কিত হয়ে ওঠে। প্রথম দিকে ফরাসি বিপ্লব ব্রিটেনে সার্বজনীনভাবে অভিনন্দিত হয় ইংল্যান্ডের দুইদল এটিকে তাদের ১৬৮৮ সালের গৌরবময় বিপ্লবের সাথে তুলনা করে ।
কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও কোলরিজ এটিকে স্বাধীনতা ও সুখের এক নতুন যুগের সূচনা বলে আখ্যায়িত করেন। ইংল্যান্ডে শাসনতান্ত্রিক সংস্কারের দাবিতে ফ্রেন্ডস অব দ্য পিপল, রিভ্যুলিউশন সোসাইটি, লন্ডন কারেসপন্ডিং সোসাইটি ইত্যাদি সমিতি গড়ে ওঠে। বেলজিয়াম ও জার্মানিতেও বিপ্লবের প্রসার ঘটলে ইংল্যান্ড শঙ্কিত হয়।
বিপ্লবকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডের হুইগ দলে ভাঙন ধরে। ১৭৯২ সালে ফ্রান্সের বিপ্লবী সরকার ঘোষণা করে, যে সমস্ত জাতি স্বাধীনতার জন্য বিদ্রোহ করবে ফ্রান্স তাদের সাহায্য করবে। এ ঘোষণার পর ইংল্যান্ডের ইউলিয়াম পীট মন্ত্রিসভা তাদের সকল প্রকার উদারনীতি পরিত্যাগ করে দমননীতি প্রয়োগ করে।
বিপ্লবের বিস্তার রোধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পীট ১৭৯৪ সালে হেবিয়াস কর্পাস আইন স্থগিত করেন। পীটের এইসব প্রতিক্রিয়াশীল কর্মকাণ্ড জনগণের স্বাধীনতা বিপন্ন করে। তবে বিপ্লবের আশঙ্কা অতিরিক্তভাবে প্রচার করার ফলে সমগ্র দেশ বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
ইউরোপের অপরাপর রাষ্ট্রসমূহেও জনগণের মধ্যে ফরাসি বিপ্লব প্রবল অভিঘাত সৃষ্টি করে। এর ফলে এসব দেশে রাজতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সুযোগে নেপোলিয়নের উত্থান ঘটে নেপোলিয়ন বিপ্লবের আদর্শকে ধারণ করে একে একে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো দখল করে সেখানকার শাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন করেন ।
ফরাসি বিপ্লবের ফলে ইউরোপীয় জনসাধারণ সামন্তশাসন ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের কবল থেকে মুক্ত হয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার লাভ করে ।
ফরাসি বিপ্লবের ফলে জাতীয়তাবাদ ও সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা বিকশিত হয়। ফলে ইউরোপের দেশে দেশে আধুনিক প্রজাতন্ত্র কিংবা নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার হয়। এর ফলে জার্মান রাষ্ট্রসমূহ এবং ইতালির রাষ্ট্রসমূহ ঐক্যবদ্ধ হয়।
ফরাসি বিপ্লব সম্পর্কে সাধারণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন
ফরাসি বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয়?
উত্তর : ফরাসি বিপ্লব ১৭৮৯ সালে সংগঠিত হয়।
১.বিপ্লবের প্রাকালে ফ্রান্সের সমাজ কয়টি ভাগে বিভক্ত ছিল?
ক.২
খ.৩
গ.৪
ঘ.৫
২.১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে কতটি জাতীয় আদালত গঠন করা ?
ক.২
খ.৩
গ.৪
ঘ.৫
৩.’Social Contract’ গ্রন্থটির লেখক কে?
ক. রুশো
খ. ভলতেয়ার
গ. দিদারো
ঘ. মন্তেস্কু
৪. ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণের প্রবক্তা কে?
ক. মন্তেস্কু
খ. ভলতেয়ার
গ. রুশো
ঘ. ফিদেরো
৫. ফিজিওক্যাটদের প্রবক্তা ছিলেন কে?
ক. এডাম স্মিথ
খ. মন্তেস্কু
গ. ভলতেয়ার
ঘ. রুশো
৬. কে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন?
ক. মন্তেস্কু
খ. ফিদেরো
গ. রিশেল্য
ঘ. ম্যাজারিন
৭. কত সালে ফ্রান্সে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের শাসন শুরু হয়?
ক. ১৭৯০
খ. ১৭৯১
গ.১৯৭২
ঘ. ১৭৯৩
৮. টেনিস কোর্ট শপথ কোন বিষয়টির সাথে জড়িত?
ক. রুশ বিপ্লব
খ. ফরাসি বিপ্লব
গ. শিল্পবিপ্লব
ঘ. কৃষি বিপ্লব
৯. রফিক জ্যাকোবিনদের শাসনামলে মানুষ হত্যার একটি অত্যাধুনিক যন্ত্রের কথা জানতে পারল। রফিক কোন যন্ত্রের নাম জানতে পারলেন?
ক. গিলোটিন
খ. রোহসপিয়ার
গ. তরবারি
ঘ. হেমলগ
১০. “তোমরা আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদেরকে একটি শিক্ষিত জাতি দিব”— উক্তিটি কার?
ক. নেপোলিয়নের
গ. ষোড়শ লুইয়ের
খ. মন্তেস্ফুর
ঘ. রুশোর
১১. নেপোলিয়ন কত সালে ফ্রান্সের শাসনভার গ্রহণ করেন? ঘ. ১৮০০
ক. ১৭৯৭
খ. ১৭৯৮
গ. ১৭৯৯
ঘ.১৮০০
১২. নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের জন্য কোনটিকে দায়ী করেছেন?
ক. সামাজিক শ্রেণিবিভাগকে
খ. সামাজিক অহমিকাকে
গ. সামাজিক দাঙ্গাকে
ঘ. সামাজিক সংহতির অভাবকে
বহুপদী সমাপ্তিসূচক প্রশ্ন
১৩.১৭৭০ সালের পর ফ্রান্সে মন্দা দেখা দেয়-
i. কৃষি উৎপাদনে
¡¡. শিল্প উৎপাদনে
iii. রপ্তানি বাণিজ্যে
নিচের কোনটি সঠিক
ক. i ও ¡¡
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
১৪. ফরাসি অভিজাতদের উচ্চতর গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল-
¡.রাজার সভাসদ
¡¡.সেনাপতি
iii. রাজদূত
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ¡¡
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
১৫. ভলতেয়ার তার লেখার মাধ্যমে আঘাত করেন ফ্রান্সের-
i. গির্জাকে
ii. যাজক সম্প্রদায়কে
iii. যাজকের রাজনীতিকে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক.¡ও¡¡
খ. i ও iii
গ. iiও iii
ঘ. i, ii ও iii
১৬. ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে প্রণীত সংবিধানের ত্রুটি হলো-
i. ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বেশি প্রয়োগ
ii. দরিদ্র শ্রেণিকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা,
iii. এর কার্যকাল ছিল মাত্র দুই বছর
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. i ও iii
গ. ii ও ¡¡¡
ঘ.i,iiও ¡¡¡
১৭. ফরাসি বিপ্লবের ফলাফল হলো—
¡. বুরবো রাজতন্ত্রের পতন
ii. বাস্তিল দুর্গের পতন
iii. সমাজতন্ত্রের পতন
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ.¡ও¡¡¡
গ. ii ও iii
ঘ. i ও iii
১৮. ফরাসি বিপ্লবের ফলে বাতিল করা হয়-
i. সামন্তকর
ii. ম্যানর ব্যবস্থা
iii. টাইদ
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ¡¡
খ. i ও iii
গ. ii ও ¡¡¡
ঘ. i, ii ও ¡¡¡
অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্ন
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ১৯ ও ২০ নং প্রশ্নের উত্তর দাও
ধরাইল গ্রামের চেয়ারম্যানের বিলাসিতা এবং বিভিন্ন প্রকার করারোপ করার ফলে গ্রামের অর্থনৈতিক অবস্থা সংকটে পড়ে। ফলে একটি বিপ্লব দেখা দেয়।
১৯. উদ্দীপকে কোন বিপ্লব পূর্ব অবস্থার কথা বলা হয়েছে?
ক. ফরাসি
খ.রুশ
গ.শিল্প
ঘ.কৃষি
২০. উদ্দীপকে উল্লেখিত বিপ্লবের ফলে-
i. বুরবো রাজবংশের পতন ঘটে
ii. বাস্তিল দুর্গের পতন ঘটে
iii.শিল্পের উন্নতি
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ¡¡
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ২১ ও ২২ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
মনে করা হয়, জনাব ক তার দেশের মুক্তির বিপ্লবের মূল কারিগর তিনি তার লেখার মাধ্যমে দেশের মানুষের মনে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জাগ্রত করতে সক্ষম হলেন।
২১. ফরাসি বিপ্লবের কোন মনীষীর সাথে জনাব ক-এর মিল রয়েছে?
ক. ভলতেয়ারের
খ.রুশোর
গ. মন্তেস্কুর
ঘ. এডাম স্মিথের
২২. এই ধরনের একজন মনীষী-
¡.দেশের রাজাকে চ্যালেঞ্জ করেন
ii. মানুষের বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের কথা বলেন
iii. স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়াবার প্রেরণা যোগান
নিচের কোনটি সঠিক
ক. i ও ¡¡
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
২৩. ফরাসি বিপ্লব কত সালে সংঘটিত হয়?
ক. ১৭৪০ সালে
খ.১৭৮০ সালে
গ. ১৭৮৯ সালে
ঘ. ১৯১৭ সালে
২৪. বুর্জোয়ারা কোন শ্রেণির অন্তর্গত?
ক. প্রথম
খ.দ্বিতীয়
গ.তৃতীয়
ঘ.চতুর্থ
২৫. ফ্রান্সে যাজকদের পরেই যে সম্প্রদায়ের স্থান ছিল-
ক.শ্রমজীবী
খ. মধ্যবিত্ত
গ.কৃষক
ঘ. অভিজাত শ্রেণি
২৬. ফরাসি রাজতন্ত্রকে একটি স্বৈরতন্ত্রী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন কে?
ক.পঞ্চদশ
খ. ষোড়শ লুই
গ.নেপোলিয়ন
ঘ. চতুর্দশ লুই
২৭. ‘I am the state’ উক্তিটি কার?
ক. ত্রয়োদশ লুই
খ. চতুর্দশ লুই
গ. পঞ্চদশ লুই
ঘ. ষোড়শ লুই
২৮. অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে কোন ধরনের শাসন ব্যবস্থা চালু ছিল?
ক. স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র
খ. নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র
গ. একনায়কতন্ত্র
ঘ.সেচ্ছাতন্ত্র
২৯. অভিজাত শ্রেণি কৃষক শ্রেণির উপর নির্যাতন বাড়িয়ে দেয়
কেন?
ক. জমি দখলের জন্য
খ. তাদের শোষণের জন্য
গ. আয় বাড়ানোর জন্য
ঘ. বিলাসী জীবনযাপনের জন্য
৩০.ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র ছিল—
ক. গণতন্ত্র ও ভ্রাতৃত্ব
খ. সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা
গ. সাম্যবাদ ও সমাজতন্ত্র
ঘ. সহনশীলতা ও গণতন্ত্র
৩১. ফ্রান্সে ‘বাস্তিল দুর্গ’ কীসের প্রতীক ছিল?
ক. অভিজাততন্ত্রের
খ. রাজতন্ত্রের
গ. গণতন্ত্রের
ঘ. একনায়কতন্ত্রের
৩২. কোড নেপোলিয়নের ধারাগুলোর মধ্যে কোনটি ছিল?
ক. অভিজাত ও যাজকদের বিশেষ অধিকার বজায় রাখা
খ. পৈত্রিক সম্পত্তিতে সকল সন্তানের সমান অধিকার
গ. রাজবন্দীদের স্বতন্ত্র মর্যাদা না দেয়া
ঘ. বিবাহ বিচ্ছেদকে অবৈধ ঘোষণা করা
৩৩. ফরাসি বিপ্লবের তাৎপর্য কোনটি?
i. কৃষির আধুনিকীকরণ
ii. পুরানো সভ্যতাকে ভেঙে ফেলা
iii. নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
গ. i ও iii
খ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড়ে ৩৪ ও ৩৫ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
অষ্টাদশ শতকে পশ্চিম ইউরোপের একটি দেশের সমাজ তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। শ্রেণি বৈষম্য উক্ত দেশে বিপর সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছিল।প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিভুক্তরা সীমাহীন সুযোগ -সুবিধা ভোগ করতো।
৩৪.উদ্দিপকে যে সামাজিক শ্রেণির কথা বলা হয়েছে তার প্রথম শ্রেণিভুক্ত ছিল-
ক.অভিজাত
খ.যাজক
গ.আইনজীবী
ঘ.শিক্ষক
৩৫.উক্ত শ্রেণি যে সমস্ত সুযোগ -সুবিধা ভোগ করতো –
¡.নিষ্কর সম্পত্তি ভোগ করতো
¡¡.গির্জার আয়ের অধিকাংশ ভোগ করতো
¡¡¡.গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদগুলো লাভ করতো
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ¡¡
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও¡¡¡
উদ্দিপকটি পড় এবং ৩৬ ও ৩৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
প্রাচীন ভারতে বর্ণভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ছিল। প্রথম শ্রেণিভূক্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করত।
৩৬. উদ্দীপকে উল্লিখিত বর্ণনার সাথে ফরাসি বিপ্লব-পূর্ব কোন শ্রেণির সাদৃশ্য দেখা যায়?
ক. শ্রমিক
খ. যাজক
গ. বুর্জোয়া
ঘ. কৃষক
৩৭. উক্ত সুবিধাভোগী শ্রেণির উপার্জনের প্রধান মাধ্যম কোনটি?
ক.চর্মকর
খ. মৃত্যুকর
গ. নামকরণ কর
ঘ. খাজনামুক্ত ভূমি
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩৮ নম্বর প্রশ্নের উত্তর দাও:
সম্রাট “Y” ছিলেন একজন দিগ্বিজয়ী বীর, সুদক্ষ শাসক সংস্কারক।
৩৮. উদ্দীপকে সম্রাট ‘Y’-এর কর্মকাণ্ডের সাথে ফ্রান্সের কোন শাসকের কর্মকাণ্ডের সাদৃশ্য আছে?
ক. চতুর্দশ লুই
খ. পঞ্চদশ লুই
গ. ষোড়শ লুই
ঘ.নেপোলিয়ন
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং ৩৯ ও ৪০ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অনেক বুদ্ধিজীবী সরাসরি অংশগ্রহণ – করলেও তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন। দেশের জনগণের পাশাপাশি বিশ্বজনমত গঠনেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন রেখেছিলেন।
৩৯. উদ্দীপকের সাথে ফ্রান্সে সংঘটিত বিপ্লবে কাদের ভূমিকা মিল রয়েছে?
ক. বুর্জোয়াদের
খ. কৃষকদের
গ. রাজনীতিবিদদের
ঘ. দার্শনিকদের
৪০. উক্ত বিপ্লবে তারা ভূমিকা পালন করেছিলেন—
i. ব্যাপক জনমত সৃষ্টির মাধ্যমে
ii. রাজতন্ত্রের অযৌক্তিকতা প্রমাণের মাধ্যমে
iii. বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ¡¡
খ. i ও iii
গ. ii ও iii
ঘ. i, ii ও ইইই
উদ্দীপকটি পড় এবং ৪১ ও ৪২ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের লেখনীর মাধ্যমে তারা যেমন মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিলেন তেমনি বিশ্ব দরবারে আমাদের দাবির যৌক্তিকতা তুলে ধরেছিলেন।
৪১. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টির সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকে ফরাসি বিপ্লবের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য পাওয়া যায়?
ক. বিপ্লবীদের ভূমিকা
খ. দার্শনিকদের ভূমিকা
গ. প্রজাতন্ত্রীদের ভূমিকা
ঘ. রাজতন্ত্রীদের ভূমিকা
৪২. উক্ত ব্যক্তিদের ভূমিকার ফলে-
¡.মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছিল।
¡¡.বিপ্লবীরা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
iii. রাজতন্ত্র স্থায়িত্ব লাভ করেছিল।
নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i ও ii
খ. ¡¡ও iii
গ.¡ও¡¡¡
ঘ. i, ii ও iii
উদ্দীপকটি পড় এবং ৪৩ ও ৪৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
মি. ‘X” তার দেশের বিপ্লবের প্রধান নেতৃত্বদানকারী। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে দেশের মানুষের মধ্যে বিপ্লবের মূলমন্ত্র জাগ্রত করেন।
৪৩. উদ্দীপকের মি. ‘X’ এর সাথে ফরাসি বিপ্লবের কোন মনীষীর মিল রয়েছে?
ক. মন্তেস্কু
খ. রোবসপিয়ার
গ. টমাস ম্যুর
ঘ. রবার্ট ওয়েন
৪৪. উল্লিখিত মনীষীর কার্যক্রম-
ক. স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করে
খ. রাজতন্ত্রকে উৎসাহিত করে
গ. মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করে।
ঘ. শোষককে সহায়তা করে
উদ্দীপকটি পড় এবং ৪৫ ও ৪৬ নং প্রশ্নের উত্তর দাও: মি. টমাস একজন বিখ্যাত বীর। তিনি বলেছিলেন, “আমিই বিপ্লব”।
৪৫. মি. টমাসের সাথে নিচের কোন ব্যক্তির মিল আছে?
ক. আলেকজান্ডার
খ.কামাল পাশা
গ. চতুর্দশ লুই
ঘ.নেপোলিয়ন
৪৬. উক্ত ব্যক্তির দেশ –
ক. ইতালি
খ.জার্মানি
গ. রাশিয়া
ঘ.ফ্রান্স
উদ্দীপকটি পড় এবং ৪৭ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:
মি. রহমান তার কারখানার কর্মচারীদের জন্য ‘সেবা’ নামে পুরস্কার প্রবর্তন করেন। যারা অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালন করতেন, তারা এ পুরস্কারে ভূষিত হতেন
৪৭. উদ্দীপকের কর্মকাণ্ডের সাথে ফ্রান্সের কোন শাসকের মিল রয়েছে?
ক. চতুর্দশ লুই
খ. পঞ্চদশ লুই
গ. ষোড়শ লুই
ঘ. নেপোলিয়ন
৪৮. ফরাসি বিপ্লব কত সালে সংগঠিত হয়?
ক.১৭৮০
খ.১৭৮৮
গ.১৭৮৯
ঘ.১৭৯০
উত্তরমালা:
১.(ক) ২.(ক) ৩.(ক) ৪.(ক) ৫.(ক) ৬.(ক) ৭.(খ) ৮.(খ) ৯.(ক) ১০.(ক) ১১.(গ) ১২.(খ) ১৩.(ক) ১৪.(ঘ) ১৫.(ঘ) ১৬.(ঘ) ১৭.(ক) ১৮.(ঘ) ১৯.(ক) ২০.(ক ) ২১.(খ) ২২.(ঘ) ২৩.(গ) ২৪.(গ) ২৫.(ঘ) ২৬.(ঘ) ২৭.(খ) ২৮.(ক) ২৯.(গ) ৩০.(খ) ৩১.(খ) ৩২.(খ) ৩৩.(খ) ৩৪.(খ) ৩৫.(ক) ৩৬.(খ) ৩৭.(ঘ) ৩৮.(ঘ) ৩৯.(ঘ) ৪০.(ক) ৪১.(খ) ৪২.(ক) ৪৩.(ক) ৪৪.(গ) ৪৫.(ঘ) ৪৬.(ঘ) ৪৭.(ঘ) ৪৮.(গ)