বই পড়ার উপকারিতা, গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা গুলো

বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা বই পড়ার উপকারিতা, বই পড়ার গুরুত্ব এবং বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানব।

বই পড়ার উপকারিতা, গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা
Benefits of reading books daily.

আগেকার সময়ে অনেক মানুষ তাদের অবসর সময়ে বই পড়তে পছন্দ করতেন। তারা বই পড়ার মাধ্যমে তাদের অবসর সময়কে অতিবাহিত করতেন। কারণ তখন প্রায় সব মানুষেরই বইয়ের প্রতি খুব আকর্ষণ ছিলো এবং তারা বইকে নিজের আপন মনে করে পড়তে ভালোবাসতেন।

কিন্তু বর্তমান যুগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে এমন মানুষকে খুজে পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে যিনি অবসর সময়ে বই পড়তে ভালোবাসেন।

কারণ আজকাল প্রায় সকল মানুষেরই ইন্টারনেটের প্রতি খুব বড় এক আকর্ষণ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইটগুলোতে যেমন ফেসবুকে দৈনিক অনেক সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন।

এ কারণে আমি বলছি না যে, সোশ্যাল মিডিয়াগুলো ব্যবহার করা যাবে না। বন্ধু বান্ধবদের সাথে চ্যাটিং কিংবা নিজের প্রয়োজনীয় কাজে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া গুলো ব্যবহার করবেন। তবে এগুলো অতিরিক্ত ব্যবহার করা উচিত নয়।

জানুন অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক ।

এর পরিবর্তে আপনি যদি প্রতিদিন কিছু সময় বই পড়ার মাধ্যমে কাটান তাহলে এর উপকার অবশ্যই রয়েছে। কেননা যারা জীবনে সফল হতে পেরেছেন তাদের প্রত্যেকেরই বই পড়ার প্রতি তীব্র আকর্ষণ ছিল।

তাই আপনার উচিত নিজের প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে বই পড়ার কিছু সময়কে অন্তর্ভুক্ত করা। কেননা নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস আপনার জীবনে ভালো ফল বয়ে আনতে সহায়তা করবে।

বই হলো সকল জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎস। আমরা যত বই পড়ব তত নতুন নতুন বিষ্ময়ের সাথে আমরা পরিচিত হতে থাকব এবং আমাদের জ্ঞান দিন দিন বেড়ে যাবে।

তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমি বই পড়ার উপকারিতা এবং গুরুত্ব গুলো কি এ বিষয়ে ভালোভাবে কর‍তে চলেছি।

তাহলে চলুন নিয়মিত বই পড়া কেন গুরুত্বপূর্ণ এর বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিই।

বই পড়ার গুরুত্ব, উপকারিতা এবং প্রয়োজনীয়তা

যদি আপনি নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করতে পারেন তাহলে এক্ষেত্রে আপনার প্রচুর উপকারীতা বা লাভ রয়েছে।

চলুন নিচে বই পড়ার ৮ টি প্রয়োজনীয়তা, উপকারীতা বা লাভ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।

নিয়মিত বই পড়ার উপকারিতা গুলো – (সেরা ৮টি)

মানুষ নিজের ভাবকে ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে লিপিবদ্ধ করে রচনা করেছে বই। এরই মাধ্যমে অন্য সব প্রাণী থেকে মানুষের আলাদা অবস্থান হয়েছে।

বইয়ের মাধ্যমে মানুষ যুগ যুগান্তরের জ্ঞান আনন্দকে ভবিষ্যতের জন্য রেখে যেতে পারে। বিশ্বের মহামূল্যবান গ্রন্থগুলো মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্য সাধনার নির্বাক সাক্ষী।

১. বই মানুষের মনের কৌতূহল মেটায়

বৈচিত্র্যময় এ পৃথিবীর সব স্থানে লুকিয়ে আছে বিস্ময়। অজানা, অবারিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিতে পারে বই। বইয়ের মাধ্যমে মানুষ মুহূর্তে ছুটে যেতে পারে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

২. বই নিঃসঙ্গের সঙ্গী

নির্জন অরণ্যে কিংবা জনহীন দ্বীপে মানুষ থাকে নিঃসঙ্গ। কিন্তু যদি তার কাছে বই থাকে তাহলে তার মনের সমস্ত বেদনা দূর হয়ে যেতে পারে।

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিভূতিভূষণ, শেকসপিয়র, গ্যেটে, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলি, দস্তয়ভস্কি কিংবা গোর্কির লেখা বই যদি সাথে থাকে, তবে মানুষের হৃদয় মনের অনেক অভাব ঘুচে যায়।

৩. বই হলো অনাবিল আনন্দের উৎস

নানা ঘাত প্রতিঘাতে মানুষ কখনো কখনো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, ডুবে যায় হতাশায়। এ হতাশা ঘোচাতে পারে একটি ভালো বই। উৎকৃষ্ট বই মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। মানুষের উচ্চতর বৃত্তিগুলো চায় সত্য, জ্ঞান ও আনন্দের আলো জ্ঞান সাধনা ও শিল্প সাধনা মানুষকে প্রতিদিনের তুচ্ছতার সংসার থেকে তুলে নেয় এক উচ্চতর চিন্তার জগতে।

প্রতিদিনের ব্যস্ততা, হানাহানি ও সমস্যাক্লিস্ট জীবনের কর্কশতা ভুলিয়ে বই মনকে দেয় আনন্দ। সেইসাথে করে জ্ঞানের বিস্তার।

বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, সংসারের জ্বালা যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করা। তাঁর মতে, যে যত বেশি ভুবন তৈরি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার তত বেশি হয়। দুঃখ বেদনার মুহূর্তে, মানসিক অশান্তিতে ও দুর্বলতার সময়ে বই মানুষের মনে শাস্তি দেয় ও প্রেরণা জোগায়। বই মানুষকে দেয় নব নব প্রেরণা, উৎসাহ ও মানসিক প্রশান্তি।

৪. সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটায় বই

বই অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্যে সেতু রচনা করে। বইয়ের সাহচর্যেই মানুষ এগিয়ে যায় অগ্রযাত্রার পথে। আমাদের বৃহত্তর জীবনের যাত্রাপথের সবচেয়ে বড়ো সঙ্গী হলো বই। শিল্পকলা ও সাহিত্য মানুষের মনকে অনাবিল আনন্দ দেয়।

জ্ঞান বিজ্ঞান মানুষের প্রয়োজনের ফসল। আর জগৎ রহস্যের উৎস সন্ধানে আমরা পেয়েছি জীবনের নানা দর্শনকে। বই এসবের ধারক। যাদের মহৎ অবদানে এগুলো আমরা পেয়েছি তাঁরা আমাদের মধ্যে আজ নেই।

আজকের দিনে আমরা কোথায় পাব হোমার, ভার্জিল, দান্তে, গ্যেটে, শেক্সপিয়র, দস্তয়ভস্কি আর রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাত? কোথায় পাব মাদাম কুরি, মার্কনি, টমাস আলভা এডিসন, জগদীশচন্দ্র বসুকে?

একবিংশ শতাব্দীতে প্লেটো, অ্যারিস্টটল আর কার্ল মার্কসকে প্রত্যক্ষভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু যদি থাকে একটা গ্রন্থাগার, তাহলে তাদের বইয়ের মধ্য দিয়ে পাওয়া যাবে তাঁদের সান্নিধ্য। অনুভব করা যাবে তাঁদের নিঃশব্দ উপস্থিতি।

কেবল বইয়ের মাধ্যমেই বিখ্যাত সব মনীষীর চিন্তাধারার সাথে পরিচিত হয়ে জ্ঞান, আনন্দ ও পরিতৃপ্তি পাওয়া যেতে পারে। বই পড়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৫. মানুষকে উদার করে বই

মানুষের হৃদয়ের বিচিত্র অনুভূতি, আবেগ ও ভাবকে উপলব্ধি করা যায় বই পড়ার মাধ্যমে। ত্যাগের কাহিনি, বীরত্বের মহিমা, সত্যের জন্য আত্মদান, নানা দেশের ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বৃত্তান্ত, সামাজিক আচার আচরণ, বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার, দুঃসাহসিক অভিযান ও ভ্রমণবৃত্তান্ত মানুষকে কৌতূহলী, উদার, মানবিক এবং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ হতে শেখায়।

বই পড়ে মনের দিগন্ত হয় উন্মোচিত ও প্রসারিত। ভালো বই কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনকে শুদ্ধ করে, মানুষ খুঁজে পায় যথার্থ মানুষ হয়ে ওঠার ঠিকানা। মনের জানালা খুলে যায়, উঁকি দেয় মুক্তচিন্তা। বইয়ের মধ্যে এসে মেশে বিভিন্ন জাতির বিচিত্র জ্ঞান বিজ্ঞান, শিল্প সাহিত্যের বহুমুখী স্রোতধারা। আর সে ধারায় মিশে অর্জিত হয় মানুষের সুখ ও শান্তি।

৬. বই শব্দভান্ডার বাড়াতে সাহায্য করে

আমরা যখন প্রতিদিন কোন না বই পড়ি তখন আমরা প্রতিনিয়ত অনেক নতুন নতুন শব্দগুলোর সাথে পরিচিত হতে থাকি যেগুলো আমাদের অজানা।

ফলে আমরা বই পড়ার মাধ্যমে অজানা অনেক শব্দ জানতে পারি এবং সেগুলোর অর্থ বুঝতে পারি।

যখন আমাদের শব্দভান্ডার বেড়ে যায় অর্থাৎ আমরা প্রচুর ভালো ভালো শব্দগুলো জানতে পারি তাই আমরা যখন অন্য কোন একজন ভালো ব্যক্তির সাথে কথা বলে থাকি তখন সেই সকল শব্দগুলো প্রয়োগ করার মাধ্যমে আমাদের কথা বলার স্টাইলকে আরো সুন্দর করে তুলতে পারি।

বই পড়ার এই বিশেষ উপকারিতাটি আমাদের ভাষাগত ভাবে অনেক উন্নতি করে থাকে।

>>অবশ্যই পড়ুন বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ কিভাবে করবেন

৭. লক্ষ্য পূরণে আত্মবিশ্বাস বাড়ায় বই

আমাদের প্রত্যেকেরই ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার লক্ষ্য থাকে এবং সেই লক্ষ্য পূরণের জন্যই আমরা এগিয়ে যেতে থাকি।

এতে আমাদের প্রচুর আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজন হয়ে থাকে। কেননা যেকোন কাজে সফল হতে আত্মবিশ্বাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে থাকে।

তাই আমরা যখন এমন বই পড়ি যেখানে সফল ব্যক্তিদের জীবনী উল্লেখ করা থাকে তখন আমরা তাদের জীবন কাহিনী গুলো পড়ে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিই।

কেননা সফল ব্যক্তিরা সফলতা অর্জনের জন্য যেসকল কাজ করেন আমরাও যদি তাদের পথ অনুসরণ করে কাজ করতে থাকি তাহলে আমরাও একদিন সফলতার চূড়ায় পৌছাতে পারবো।

৮. মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে

আমরা যখন কোন বই পড়তে বসি তখন খুবই মনযোগের সাথে বইটি পড়ে থাকি। বইয়ে কি লেখা রয়েছে যেগুলো পড়ি এবং বোঝার চেষ্টা করে থাকি।

ফলে আমরা যে বিষয়টি বইয়ে পড়ে থাকি সেটি আমাদের মস্তিষ্কে দীর্ঘদিন মনে থাকে।

এভাবে প্রতিনিয়ত বই পড়লে আমাদের মস্তিষ্ক নতুন নতুন বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হয় এবং সেগুলো মস্তিষ্কে থেকে যায়।

তাই প্রতিদিন বই পড়ার অভ্যাস আমাদের মনে রাখার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।

 

Conclusion

বই মানুষের আনন্দের সঙ্গী। সত্য ও সুন্দরের মহিমা ধরে রেখেছে বই। কত শত সভ্যতার কাহিনি লিপিবদ্ধ হয়েছে বইয়ের পাতায়। মানুষ যখন নিঃসঙ্গ একাকী, তখন বই তার সেই একাকিত্বকে দূর করে।

শিক্ষিত মর্যাদাবান মানুষ মাত্রই বই ভালোবাসে। আজ মানুষ শুদ্ধ আনন্দ থেকে বঞ্চিত। তাই তো আজকের দিনের বাণী, বই হোক নিত্যসঙ্গী।

আশা করি বই পড়ার উপকারিতা, বই পড়ার গুরুত্ব এবং বই পড়ার প্রয়োজনীয়তা গুলো সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

যদি আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *