বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে ?

বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? 

উত্তর  : বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি  সৃষ্টিকর্তা অর্থে ব্যবহৃত করেছে।

received 715771273106032
নিরঞ্জন শব্দের অর্থ

* ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে?

উত্তর : i. স্বদেশপ্রেম, ii. ক্ষোভ।

* কোনটি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার শেষ পংক্তি?

উত্তর : “দেশি ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি”

 

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর  -১ :

মােদের গরব মােদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা।

‘ মাগাে তােমার কোলে, তােমার বােলে কতই শান্তি ভালােবাসা।

আ মরি বাংলা ভাষা।

কি জাদু বাংলা গনে, গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে,

গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা

বাজিয়ে রবি তােমার বীণে, আনল মালা জগৎ জিনে

তােমার চরণ তীর্থে মাগাে জগৎ করে যাওয়া আসা

আ মরি বাংলা ভাষা।

ক. বঙ্গবাণী’ কবিতায় নিরঞ্জন’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

খ. দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ’ বলতে কী বােঝানাে হয়েছে।

গ. উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার যে ডাবের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উক্ত ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের কবির চেয়ে আবদুল হাকিমের অবস্থান সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ।’- বঙ্গবাণী’ কবিতার আলােকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

প্রশ্নের উত্তর ক) বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

 

 প্রশ্নের উত্তর খ) ‘দেসি ভাষা বুঝিতে লোলাতে ভাগ’ বলতে কবি নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়াকে বুঝিয়েছে। বঙ্গবাণী কবিতায় কবি মানুষের অনুভূতি প্রকাশের প্রধান মাধ্যমে হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার কাছে মাতৃভাষাই শ্রেষ্ঠ। আরভি ফারসি ভাষায় তার কোনো বিদ্বেষ নেই। কিনতি আরভি ফারসি ভাষায় জ্ঞান চর্চা করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষত্রে নিজের মাতৃভাষায় যদি শিক্ষা ও মজ্ঞান লাভের সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে তাদের ভাগ্য সুপ্রস্নন্ন হবে বলে কবি বলেছেন। কইবি মনে করেন মানুষ তার শিকল আশা আবেগ মাতৃভাষা প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। প্রশ্ন উক্ত লাল দ্বারা এটাই বুঝিয়েছেন।

 

 প্রশ্নের উত্তর গ) উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার মাতৃভাষা বাংলার প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যায় । ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি আবদুল হাকিম মাতৃভাষার প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগের স্বরূপ প্রকাশ করেছেন। কবির মতে, যে ভাষা জনস বোধগম্য নয়, মাতৃভাষার তুলনায় সে ভাষাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। তিনি জানেন, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে আরবি প্রভৃতি ভাষাকে লোকে পবিত্র জ্ঞান করে। তাই এসব ভাষার প্রতি কবির কোনো খেদ নেই। কিন্তু এ ভাষাগুলোকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মা অবজ্ঞা করা সমীচীন বলে মনে করেন না তিনি ।

উদ্দীপকের কবিতাংশে মাতৃভাষা বাংলার বন্দনা করা হয়েছে। স্বদেশের ভাষাকে গৌরব ও আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল বলে মনে করেন কবি এ ভাষাতে কথা বলেই আমরা প্রশান্তি লাভ করি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আবেগ-অনুভূতির সুষ্ঠু প্রকাশের জন্য মাতৃভাষাই আমা আশ্রয়স্থল । এভাবে বাংলা ভাষার সাথে বাঙালির আত্মিক সম্পর্কের গভীর অনুভূতিই ফুটে উঠেছে উদ্দীপকটিতে। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায়ও স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধাশীলতা প্রকাশ পেয়েছে। এভাবে উদ্দীপকের কবিতাংশে মাতৃভাষার বন্দনার আলোচ্য কবিতায় প্রকাশিত কবির ভাষাপ্রীতির দিকটিই প্রতিফলিত হয়েছে।

 

উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের কবিতাংশের ভাবে বাংলা ভাষার সাথে বাঙালির সম্পর্কের দিকটি ফুটে উঠেছে। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায়ও একইভাবে স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি কবির গভীর মমত্ববোধ ও শ্রদ্ধাশীলতা প্রকাশ।

 

 

 প্রশ্নের উত্তর ঘ) মাতৃভাষার প্রতি উদ্দীপক ও আলোচ্য কবিতার কবির গভীর উপলব্ধি প্রকাশ পেলেও ভাষা বিদ্বেষীদের প্রতি তীব্র ক্ষোভ আলোচ্য কবিতার কবিকে বলিষ্ঠ করে তুলেছে।

আবদুল হাকিম রচিত ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি কবিহৃদয়ের প্রগাঢ় অনুভূতির স্বরূপ ফুটে উঠেছে। পুরুষানুক্রমে আমরা বাংলায় বসবাস করে আসছি বলে এ ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে আমরা আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ। এজন্য আমাদের কাছে এই ভাষার চেয়ে হিতকর আর কোনোকিছু হতে পারে বলে কবি বিশ্বাস করেন না। এ কারণে মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে যারা অন্য ভাষাকে অধিক গুরুত্ব দেয়— এমন হীন প্রবৃত্তির মানুষদের প্রতি তীব্র শ্লেষ প্রকাশ করেছেন তিনি ।

উদ্দীপকের কবিতাংশে সুললিত আবেগে কবি তাঁর মাতৃভাষাপ্রীতির দিকটি তুলে ধরেছেন। বাংলা ভাষার গুণমুগ্ধ কবি এ ভাষার অমিয় সুধায় প্রাণ ভরিয়েছেন । কবি লক্ষ করেছেন, দেশের মানুষের প্রাণে প্রশান্তি এনে দেয় বাংলা ভাষা। বস্তুত এ ভাষাকে কেন্দ্র করেই দেশের সকল শ্রেণির মানুষ অভিন্ন সাংস্কৃতিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আর তাই বাংলা ভাষাকে নিয়ে কবির গর্ব হয়।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতার মূলসুর হলো মাতৃভাষাপ্রীতি। এ ভাষার সঙ্গে নিজ জন্মস্থান ও নিজস্ব সংস্কৃতির রয়েছে নিবিড় যোগাযোগ। তাই যেকোনো ব্যক্তির কাছেই মাতৃভাষার চেয়ে হিতকর আর কিছু হতে পারে না। তবে এ কবিতায় কবি মাতৃভাষাকে নিয়ে শুধু তাঁর নিজস্ব উপলব্ধি প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং মাতৃভাষার অবমাননাকারীদের প্রতি কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করেছেন। এক্ষেত্রে স্বভাষার প্রতি যাদের অনুরাগ নেই তাদেরকে তিনি দেশত্যাগ করতে বলেছেন। মাতৃভাষাকে গভীরভাবে ভালোবাসেন বলেই কবির মনে এমন ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। এ ধরনের বলিষ্ঠ বক্তব্য উদ্দীপকের কবিতাংশে পাওয়া যায় না, যা প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটির যথার্থতা নির্দেশ করে।

উত্তরের সারবস্তু: ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি কবিহৃদয়ের প্রগাঢ় অনুভূতির স্বরূপ ফুটে উঠেছে। তবে এ কবিতায় কবি মাতৃভাষাকে নিয়ে শুধু তাঁর নিজস্ব উপলব্ধি প্রকাশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং মাতৃভাষা অবমাননাকারীদের প্রতি কঠোর মনোভাব প্রদর্শন করেছেন।

 জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর-কবি -পরিচিতি

প্রশ্ন-১. কবি আবদুল হাকিম কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: কবি আবদুল হাকিম আনুমানিক ১৬২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন-২. আবদুল হাকিমের গ্রামের নাম কী?

উত্তর: আবদুল হাকিমের গ্রামের নাম সুধারামপুর ।

প্রশ্ন-৩. আবদুল হাকিম কোন যুগের অন্যতম প্রধান কবি?

উত্তর: আবদুল হাকিম মধ্যযুগের অন্যতম প্রধান কবি।

প্রশ্ন-৪. ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থটি কে রচনা করেছেন?

উত্তর: ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থটি আবদুল হাকিম রচনা করেছেন ।

প্রশ্ন-৫. ‘লালমতি’ গ্রন্থটির লেখক কে? 

উত্তর: ‘লালমতি’ গ্রন্থটির লেখক আবদুল হাকিম।

প্রশ্ন-৬. আবদুল হাকিম কত সালে মৃত্যুবরণ করেন? 

উত্তর: আবদুল হাকিম ১৬৯০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

 

বঙ্গবাণী কবিতার মুলপাঠ:

প্রশ্ন-৭. কোন শাস্ত্রের প্রতি কবির রাগ নেই ? 

উত্তর: আরবি-ফারসি শাস্ত্রের প্রতি কবির রাগ নেই।

প্রশ্ন-৮. কোন ভাষার ব্যাপারে কবির দ্বিমত নেই?

উত্তর: আরবি, ফারসি, হিন্দি ভাষার ব্যাপারে কবির দ্বিমত নেই।

প্রশ্ন-৯. সর্ববাক্য বুঝতে পারেন কে?

উত্তর: সর্ববাক্য বুঝতে পারেন প্রভু।

প্রশ্ন-১০. কারা হিন্দুর অক্ষরকে হিংসা করে? (য. বো. ১৯)

উত্তর: মারফতভেদে যারা গমন করে না তারা হিন্দুর অক্ষরকে হিংসা করে।

প্রশ্ন-১১. ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলতে কোন ভাষাকে বোঝানো হয়েছে? 

উত্তর: ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলতে বাংলা ভাষাকে বোঝানো হয়েছে

প্রশ্ন-১২. কবি কাদের জন্মপরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন?(ঢা বো. ১৯)

উত্তর: মাতৃভাষা বাংলার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হীন প্রবৃত্তির লোকদের জন্মপরিচয় নিয়ে কবি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

প্রশ্ন-১৩. কবি কাদের জন্মপরিচয় নির্ণয় করতে পারেন না?

উত্তর: যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেও বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে কবি তাদের জন্মপরিচয় নির্ণয় করতে পারেন না। 

প্রশ্ন-১৪. কবি কাদের দেশ ত্যাগ করতে বলেছেন?

উত্তর: যাদের মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ নেই কবি তাদের দেশ ত্যা করতে বলেছেন।

প্রশ্ন-১৫, কবির কাছে কোন ভাষার উপদেশ অত্যন্ত হিতকর মনে হয়?

উত্তর: কবির কাছে দেশি ভাষার উপদেশ অত্যন্ত হিতকর মনে হয়।

শব্দার্থ

প্রশ্ন-১৬. ‘হাবিলাষ’ অর্থ কী? 

উত্তর: ‘হাবিলাষ’ অর্থ অভিলাষ বা প্রবল ইচ্ছা ।

প্রশ্ন-১৭. ‘ছিফত’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘ছিফত’ শব্দের অর্থ গুণ।

প্রশ্ন-১৮. কবি ‘নিরঞ্জন’ শব্দটি কোন অর্থে ব্যবহার করেছেন?  

উত্তর: কবি ‘নিরঞ্জন’ শব্দটি সৃষ্টিকর্তাকে বোঝাতে ব্যবহার করেছেন।

প্রশ্ন-১৯. ‘বঙ্গবাণী’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ শব্দের অর্থ বাংলা ভাষা।

প্রশ্ন-২০. ‘মারফত’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘মারফত’ শব্দের অর্থ মরমী সাধনা।

প্রশ্ন-২১. ‘জুয়ায়’ শব্দের অর্থ কী?(রা. বো. ১৯)

উত্তর: ‘জুয়ায়’ শব্দের অর্থ জোগায়।

প্রশ্ন-২২. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় ব্যবহৃত ‘ভাগ’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় ব্যবহৃত ‘ভাগ’ শব্দের অর্থ হলো ভাগ্য।

পাঠ-পরিচিতি

প্রশ্ন-২৩, ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কোন শতকে রচিত হয়?

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি সপ্তদশ শতকে রচিত হয়।

প্রশ্ন-২৪. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কবির কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে? (চ. বো. ২০) 

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন-২৫. কোন ভাষায় আল্লাহ ও মহানবীর স্তুতি বর্ণিত হয়েছে?

উত্তর: আরবি-ফারসি ভাষায় আল্লাহ ও মহানবির স্তুতি বর্ণিত হয়েছে।

প্রশ্ন-২৬, কবি কাদের অনুরোধে বাংলা কাব্য রচনা করেন? 

উত্তর: যারা কিতাব পড়তে জানে না তাদের অনুরোধে কবি বাংলা কাব্য রচনা করেন ।

প্রশ্ন-২৭. কবি কোন ভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন?

উত্তর: কবি মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন।

প্রশ্ন-২৮. কবির মতে, মানুষ কোন ভাষায় স্রষ্টাকে ডাকে?

উত্তর: কবির মতে, মানুষ নিজ ভাষায় স্রষ্টাকে ডাকে । প্রশ্ন-২৯. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কী প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে ।

প্রশ্ন-৩০.বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? 

উত্তর  : বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি  সৃষ্টিকর্তা অর্থে ব্যবহৃত করেছে।

প্রশ্ন-৩১.বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে

উত্তর  : বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি  সৃষ্টিকর্তা অর্থে ব্যবহৃত করেছে।

অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

প্রশ্ন-১. ‘কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: তৎকালীন সময়ে আরবি-ফারসি ভাষায় সাহিত্য রচিত বলে সাধারণ মানুষের মাঝে সাহিত্য পাঠের অভ্যাস গড়ে ওঠেনি।

কবির সময়কালে সাহিত্য রচিত হতো আরবি-ফারসি ভাষায় অথচ অধিকাংশ সাধারণ মানুষ একমাত্র বাংলা ভাষাই বুঝতে পারত। ফলে তারা সাহিত্য পাঠ করতে পারত না। এ কারণেই তাদের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি।

 

প্রশ্ন-২.আরবি-ফারসি সম্পর্কে কবির মতামত কী? ব্যাখ্যা করো

উত্তর: আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি কবির কোনো রাগ বা বিদ্বেষ নেই।

কবি আবদুল হাকিম সকল ভাষার ঊর্ধ্বে মাতৃভাষা বাংলাকেই স্থ দিয়েছেন। গ্রন্থ রচনার ভাষা হিসেবেও বাংলাকেই সর্বোচ্চ গুর দিয়েছেন তিনি মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি একই সাথে এটাও স্পষ্ট করেছেন যে আরবি-ফারসি ভাষা ব্যবহাে ব্যাপারে তাঁর কোনো দ্বিমত বা রাগ নেই। যেহেতু এ সকল ভাষায় আল্লাহ ও মহানবির স্তুতি বর্ণিত হয়েছে তাই এদের প্রতি কবি পরম শ্রদ্ধাশীল।

 

প্রশ্ন-৩. ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় বাংলা ভাষাকে “হিন্দুর অক্ষর’ বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় সংকীর্ণমনা মানুষের সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয় তুলে ধরতে বাংলা ভাষাকে হিন্দুর অক্ষর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

মধ্যযুগে কিতাব লেখার ক্ষেত্রে আরবি ও ফারসি ভাষাকে প্রাধান্য দেওয়া হতো। এ ভাষাগুলোকে ধর্মীয়ভাবে পবিত্র বিবেচনা করে একধরনের অন্ধভক্তি প্রকাশ করত এক শ্রেণির মানুষ। অন্য কোনো ভাষায় কিতাব রচনা করার কথা তারা ভাবতে পারত না। বাংলাকে হিন্দুর অক্ষর’ বলার মাধ্যমে তার একটি শ্রেণীকরণের চেষ্টা করত। মূলত এর মাধ্যমে বাংলা ভাষার প্রসারের বিপক্ষে কূপমণ্ডূকদের অবস্থানের দিকটিই ফুটে উঠেছে।

 

প্রশ্ন -৪. বাংলা ভাষাকে হিন্দুয়ানি ভাষা বলাটা কতটা যৌক্তিক?  

উত্তর: বাংলা ভাষাকে হিন্দুয়ানি ভাষা বলাটা যৌক্তিক নয়।

মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় সাহিত্যচর্চায় বাংলা ভাষার প্রতি মনোনিবেশ করার পাশাপাশি অন্যান্য ভাষার প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন। অনেকে মনে করেন বাংলা হিন্দুদের ভাষা। এ ভাষায় আল্লাহকে ডাকা যৌক্তিক নয়। কবি এমন ভ্রান্ত ধারণার বিরুদ্ধে বলেছেন- আল্লাহ সব ভাষাই বোঝেন। যেকোনো ভাষাতে আল্লাহর স্তুতি করলে তিনি সাড়া দেন । তাই বাংলা ভাষাকে হিন্দুয়ানি ভাষা বলাটা যৌক্তিক নয় ।

 

প্রশ্ন-৫. বক্তাদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী – বুঝিয়ে লেখো। 

উত্তর: ‘বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী’ বলতে বাংলা ভাষাসহ।

পৃথিবীর যেকোনো ভাষাকে বোঝানো হয়েছে । আরবি-ফারসি ভাষায় আল্লাহ ও মহানবির স্তুতি বর্ণিত হলেও সৃষ্টিকর্তা সকল ভাষা বুঝতে পারেন। যে ভাষাতেই তাঁর আরাধনা করা হোক না কেন তিনি সন্তুষ্ট হন। তাই বাংলা ভাষাও তাঁর বোধগম্য। মূলত বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী’ বলতে বাংলা ভাষাসহ পৃথিবীর যেকোনো ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।

 

প্রশ্ন-৬, বাংলা ভাষা বিদ্বেষীদের কবি কী উপদেশ দিয়েছেন?

উত্তর: কবি বাংলা ভাষা বিদ্বেষীদের দেশত্যাগ করার উপদেশ দিয়েছেন । অনেক মানুষই আছে, যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে অথচ বাংলা ভাষার প্রতি তাদের কোনো মমতা নেই। এদের বংশ ও জন্মপরিচয় সম্পর্কে কবির মনে সন্দেহ জাগে। এসব মাতৃভাষা-বিদ্বেষীদের প্রতি কবির প্রচণ্ড ক্ষোভ। তাই তিনি সখেদে বলেছেন, এসব মানুষের নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত।

 

প্রশ্ন-৭. কবির কাব্য রচনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: কবি সাধারণ মানুষকে সাহিত্য পাঠের সুযোগ করে দেওয়ার জন কাব্য রচনা করেছেন।

যে ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয়, সে ভাষায় সাহিত্য রচনা কর তারা বুঝতে পারে না। ফলে তারা সাহিত্য পাঠের আনন্দ থেকে বঞ্চি তৎকালীন সময়ে আরবি-ফারসি ভাষায় পুস্তক রচিত হতো বলে তা সাধ মানুষ বুঝতে পারত না। কবি এ সকল সাধারণ মানুষের জন্য মাতৃভ কাব্য রচনা করছেন যাতে তারাও সাহিত্য পাঠ করতে পারে।

 

আবদুল হাকিমের জীবনে সন-তারিখ

১৬২০— জন্ম: সন্দ্বীপের সুধারামপুর গ্রাম।

১৬৯০—মৃত্যুবরণ করেন।

সুভার গ্রামের নাম কী ? সুভা গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর – (গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি)

মমতাদি গল্পের MCQ (২০০+)

আবদুল হাকিমের সাহিত্যিক পরিচয়

*স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি মমত্ববোধ সাহিত্যের উপজীব্য বিষয়।

* বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ— নূরনামা ।

* উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ— ইউসুফ জোলেখা, লালমতি, সয়ফুলমুলক, শিহাবুদ্দিননামা, নসীহনামা, কারবালা ও শহরনামা ।

 

★’বঙ্গবাণী’ কবিতার পরিচিতি

 

*রচয়িতা- আবদুল হাকিম।

*উৎসগ্রন্থ— ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ। *নামকরণ— বিষয়বস্তু অবলম্বনে ।

*বিষয়বস্তু–মাতৃভাষার প্রতি গভীর উপলব্ধির

 

কবিতাটির বিষয়বস্তুর খুঁটিনাটি

*’বঙ্গবাণী’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে ভাষাপ্রেম, মাতৃভাষা

সম্পর্কিত কবির মনোভাব ।

*এ কবিতায় কবি ব্যক্ত করেছেন তাঁর গভীর উপলব্ধি ও বিশ্বাসের কথা ।

*কবি বাংলায় সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেছেন— মানুষের অনুরোধে।

*কৰি সবাইকে তোষণ করেন—নিজ পরিশ্রমের দ্বারা।

*তারাই বাংলা ভাষাকে হিন্দুর অক্ষর মনে করে—যাদের জ্ঞান নেই ।

*কবি দেশত্যাগ করতে বলেছেন— যারা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। *কবির মোটেও বিদ্বেষ নেই – আরবি বা ফারসি ভাষার প্রতি।

*আরবি-ফারসি ভাষায় বর্ণিত হয়েছে — আল্লাহ ও মহানবির স্তুতি। এ কারণে কবি শ্রদ্ধাশীল— এসকল ভাষার প্রতি ।

জনসাধারণের সাথে ভাব বিনিময়ের একমাত্র পন্থা— মাতৃভাষায় কথা বলা বা লেখা।

*কবি মনে করেন, মানুষমাত্রেই স্রষ্টাকে ডাকে— নিজ ভাষায়।

*স্রষ্টাও বুঝতে পারেন— মানুষের বক্তব্য ।

*কবির তীব্র ক্ষোভ তাদের প্রতি— যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে অথচ বাংলা ভাষার প্রতি মমত্ববোধ নেই

 

*কবি বংশ ও জন্মপরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি— যাদের স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি অনুরাগ নেই। কবির মতে,

তাদের উচিত- এদেশ ত্যাগ করা, অন্যত্র চলে যাওয়া ।

*মধ্যযুগীয় পরিবেশে মাতৃভাষার প্রতি আবদুল হাকিমের গভীর ভালোবাসার নিদর্শন ইতিহাসে বিরল। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যও তা- কালজয়ী আদর্শ ।

 

বঙ্গবাণী কবিতা পাঠ পরিচিতি

বঙ্গবাণী’ কবিতাটি কবি আবদুল হাকিমের নূরনামা কাব্য থেকে সংকলন করা হয়েছে। মধ্যযুগীয় পরিবেশে বঙ্গভাষী এবং বঙ্গভাষার প্রতি এমন বলিষ্ট বাণীবদ্ধ কবিতার নিদর্শন দুর্লভ।

কবি এই কবিতায় তাঁর গভীর উপলব্ধি ও বিশ্বাসের কথা নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন। আরবি ফারসি ভাষার প্রতি কবির মােটেই বিদ্বেষ নেই। এ সব ভাষায় আল্লাহ ও মহানবীর স্তুতি বর্ণিত হয়েছে।তাই এসব ভাষার প্রতি সবাই পরম শ্রদ্ধাশীল।

যে ভাষা জনসাধারণের বােধগম্য নয়, যে ভাষায় অন্যের সঙ্গে ভাব বিনিময় করা যায় না। সে সব ভাষাভাষী লোকের পক্ষে মাতৃভাষায় কথা বলা বা লেখাই একমাত্র পন্থা। এই কারণেই কবি মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনােনিবেশ করেছেন। 

কবির মতে, মানুষ মাত্রেই নিজ ভাষায় স্রষ্টাকে ডাকে আর স্রষ্টাও মানুষের বক্তব্য বুঝতে পারেন।

কবির চিত্তে তীব্র ক্ষোভ এজন্য যে, যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, অথচ বাংলা ভাষার প্রতি তাদের মমতা নেই, তাদের বংশ ও জন্মপরিচয় সম্পর্কে কবির মনে সন্দেহ জাগে।

কবি সখেদে বলেছেন, এসব লােক, যাদের মনে স্বদেশের ও স্বভাষার প্রতি কিছুমাত্র অনুরাগ নেই তারা কেন এদেশ পরিত্যাগ করে অন্যত্র চলে যায় না!

বংশানুক্রমে বাংলাদেশেই আমাদের বসতি, বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি এবং মাতৃভাষা বাংলায় বর্ণিত বক্তব্য আমাদের মর্ম স্পর্শ করে। এই ভাষার চেয়ে হিতকর আর কী হতে পারে।

কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি প্রেম ও অসাম্প্রদায়িক মনােভাবের পরিচয় ফুটে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *