বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ?

আজকের আর্টিকেলে জানব বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ? কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয় ? বঙ্গভঙ্গ কাকে বলে বঙ্গভঙ্গ রদ কে ঘোষণা করেন  এবং বঙ্গভঙ্গ রদ  সম্পর্কে নানা তথ্য।

বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ?

বঙ্গভঙ্গ রদ কে করেন কে?

ক) লর্ড কার্জন

খ)লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন

গ)রাজা পঞ্চম জর্জ

ঘ) লর্ড ওয়াভেল

 

সঠিক উত্তর :খ) লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন

কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়?

ব্রিটিশ বিরোধী ফলে শঙ্কিত ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে।

 বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ?

ব্যাখ্যা: বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করেন রাজা পঞ্চম জর্জ। ১৯১১ সালে রাজা পঞ্চম জর্জ ভারত সফরে এসে বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য, ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর ভারতে লর্ড কার্জন সমগ্র বাংলাকে দুটি প্রদেশে ভাগ করে। একটিতে থাকে পূর্ব বাংলা ও আসাম এবং অন্যটিতে থাকে পশ্চিম বাংলা। বাংলার এ বিভক্তি বঙ্গভঙ্গ নামে পরিচিত।

 

বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কত সালে?

বঙ্গভঙ্গ রদ হয় কত তারিখে ?

ক)১২ ডিসেম্বর ১৯১১ সালে

খ)১০ডিসেম্বর ১৯১২ সালে

গ)৫ অক্টোবর ১৯০৮ সালে

ঘ)১০অক্টোবর ১৯০৯ সালে

সঠিক উত্তরঃ ক) ১২ ডিসেম্বর ১৯১১ সালে

 

বঙ্গভঙ্গ কাকে বলে?

শাসনকার্য পরিচালনার সুবিধার্থে বা সহজ করতে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলার বৃহৎ সীমানা বা অঞ্চলকে তৎকালীন ইংরেজ শাসকগণ কর্তৃক দুইভাগে ভাগ করাকে বঙ্গভঙ্গ বলা হয়।

বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা প্রদান করে কত সালে?

১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা প্রদান করা হয় এবং ১৫ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়।

chris lawton o0l M8W 7wA unsplash scaled
বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ?

বঙ্গভঙ্গ রদ

Annulment of the Partition of Bengal

কত খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়?

ব্রিটিশ বিরোধী ফলে শঙ্কিত ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করে।

 

বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ (Causes of the Annulment of the Partition of Bengal):

বঙ্গভঙ্গ রদের কারণ  (Causes of the Annulment of the Partition of Bengal) নিম্নলিখিত কারণে ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ করে।

 

১. গণআন্দোলন : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ হিন্দু মধ্যবিত্ত লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, চাকরিজীবী ও নেতাদেরকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা বঙ্গভঙ্গকে বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদের সমতুল্য’ বলে প্রচার করতে থাকেন। এটাকে তাঁরা ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র বলে অভিহিত করেন। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী, বিপিন চন্দ্র পাল, বালগঙ্গাধর তিলক, অরবিন্দ ঘোষ প্রমুখ হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতাদের নেতৃত্বে প্রথমে পশ্চিম বাংলায় এবং পরে সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী দুর্বার গণআন্দোলনের সৃষ্টি হয় ব্রিটিশ শাসন অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়। বাধ্য হয়ে ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গ রদ করার চিন্তাভাবনা শুরু করে।

 

২. সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ : ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের ফলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণির একাংশ মনে করে যে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করে ব্রিটিশ সরকারকে বঙ্গভঙ্গ রদে বাধ্য করা যাবে না। তারা গোপনে যুগান্তর, অনুশীলনী প্রভৃতি ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বা সংঘ গড়ে তোলে। বিভিন্ন স্থানে এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ কর্মকর্তা এবং ব্রিটিশ শাসকদের সমর্থক বা সহায়তাদানকারী ভারতীয় কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের চেষ্টা চালায়। ১৯১০ সালের ১৪ জানুয়ারি সন্ত্রাসীদের হাতে পুলিশের ডি. আই. জি. খানবাহাদুর সামসুল আলম গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ফলে ব্রিটিশ সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তাঁরা পুনরায় বিভক্ত বঙ্গপ্রদেশকে একত্রীকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর সম্রাট পঞ্চম জর্জের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত অভিষেক অনুষ্ঠানে রাজকীয় ঘোষণাবলে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় এবং পূর্ববঙ্গকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে পুনরায় একত্রিত করা হয়।

 

 

বঙ্গভঙ্গ রদের প্রতিক্রিয়া

Reaction of the Annulment of the Partition of Bengal

বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে হিন্দু ও মুসলমান জনগণের মধ্যে বিপরীতমূখী প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়। এ প্রতিক্রিয়া ছিন নিম্নরুপ:

 

হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া Reaction of Hindu Comunity

ব্রিটিশ সরকার ১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রতিক্রিয়া বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা করায় হিন্দু জনগণ উল্লসিত হয়ে ওঠে। কেননা বঙ্গভঙ্গ রদ হবার ফলে এবং পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গ একত্রিত হওয়ায় কলিকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু জনগণ তাদের হারানো প্রভাব প্রতিপত্তি ফিরে পায়। ব্যবসায়িগণ উল্লসিত হন এ কারণে যে, আবারো কলিকাতা সমগ্র বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হবে। আইনজীবিগণ ভাবলেন, তাঁদের পূর্ব বাংলার মক্কেলরা আবার কলকাতায় ছুটে আসবে। এক কথায় বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় কলিকাতাকেন্দ্রিক হিন্দু নেতা, ব্যবসায়ী ও বুদ্ধিজীবিগণ তাদের হারানো গৌরব ও প্রভাব প্রতিপত্তি ফিরে পান।

 

মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া Reaction of Musalman Comunity

১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার ঘোষণা শুনে মুসলমান অভিজাত ও মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় বিস্ময়-বিমূঢ় ও হতাশ হয়ে পড়ে। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামক নতুন প্রদেশ গঠিত হওয়ায় তাদের মধ্যে যে উৎসাহ, প্রাণচাঞ্চল্য ও জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণা তা স্তব্ধ করে দেয়। নবগঠিত প্রদেশকে ঘিরে তাদের রচিত সব সুখ স্বপ্ন ভেঙে যায়। এর ফলে পূর্ব বাংলার মুসলমান জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ সরকারের ওপর থেকে মুসলমান জনগণ বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কংগ্রেস এবং অন্যান্য সংগঠনের নেতাগণ যখন বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য আন্দোলন করছিলেন তখন লর্ড মিন্টো কমন্সসভায় ঘোষণা করেছিলেন যে, “আমরা মুসলমান জনগণকে বলেছিলাম বঙ্গভঙ্গ একটি মীমাংসিত ঘটনা (settled fact) এবং বার বার জোর দিয়েছি যে, এ সিদ্ধান্ত অপরিবর্তিত থাকবে।”

বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় হিন্দুদের স্বার্থে মুসলমান জনগণের প্রতি ব্রিটিশ সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা নগ্নরূপে ফুটে ওঠে। এর ফলে ব্রিটিশ সরকারের উপর মুসলমানদের আস্থা বিনষ্ট হয়। নবাব স্যার সলিমুল্লাহসহ অনেক মুসলমান নেতাই ব্রিটিশ সরকারের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেন। অপরদিকে পূর্ব-বাংলার মুসলমান জনগণ হিন্দু জনগণকেও অবিশ্বাস করতে শুরু করে ।

 

 

 বঙ্গভঙ্গ রদের ফলাফল

বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ায় ভারতীয় উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলার হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় ।

সাম্প্রদায়িকতা ও স্বাতন্ত্র্যবোধ প্রসার লাভ করে। ধর্মকেন্দ্রিক জাতীয়তার বীজ অঙ্কুরিত হয় ।

বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনের ফলে মুসলমানদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। মুসলমান জনগণ বুঝতে সক্ষম হয় যে, আপস নয় বরং সংগ্রামের পথেই তাদেরকে উন্নতি ও স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হতে হবে।

মুসলমান জনগণ তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থ সংরক্ষণে আরো তৎপর হয়ে উঠতে থাকে ।

বঙ্গভঙ্গ ১৯০৫ (Partition of Bengal, 1905)

 

ক. বঙ্গভঙ্গ : বঙ্গভঙ্গ অবিভক্ত বাংলায় তথা সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

১৯০৫ সালের পূর্বে ‘বাংলা প্রেসিডেন্সি’ ছিল ভারতের সর্ববৃহৎ প্রদেশ। ১৯০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর বঙ্গভঙ্গের ঘোষণা প্রদান করা হয় এবং ১৫ অক্টোবর থেকে তা কার্যকর হয়

ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং আসাম নিয়ে গঠিত হয় ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশ’। ঢাকায় এ নতুন প্রদেশের রাজধানী স্থাপিত হয়। পশ্চিম বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা নিয়ে গঠিত হয় ‘পশ্চিমবঙ্গ’ প্রদেশ। এর রাজধানী হয় কলিকাতা।

অভিজ্ঞ প্রশাসক স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার ও এনডু ফ্রেজার বঙ্গভঙ্গের জন্য ভারতের বড় লাট লর্ড কার্জনকে সর্বতোভাবে সাহায্য ও পরামর্শ প্রদান করেন।

এজন্যই বঙ্গভঙ্গের পর নবগঠিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার এবং ‘পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত হন এনডু ফ্রেজার। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগণকে সংগঠিত করেন।

 

খ. বঙ্গভঙ্গের কারণ (Causes of Partition of Bengal) : ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পেছনে প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ ছিল নিম্নরূপ:

 

(১) প্রশাসনিক কারণ : ১৯০৫ সালের পূর্বে ব্রিটিশ ভারতে অবিভক্ত বঙ্গ প্রদেশই ছিল আয়তনে এবং জনসংখ্যায় সর্বাপেক্ষা বড় প্রদেশ। এর আয়তন ছিল প্রায় দুই লক্ষ বর্গমাইল এবং লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ। একজন গভর্নরের পক্ষে এতবড় প্রদেশ শাসন করা ছিল খুবই কষ্টকর।

১৯০২ সালের এপ্রিল মাসে এজন্যই লর্ড কার্জন ভারত সচিনকে লিখেছিলেন যে, “একটি মাত্র কেন্দ্র থেকে এত বড় ও বিশাল জনবহুল এলাকা শাসন করা সম্ভব নয়।” লর্ড কার্জনের এ লিখিত রিপোর্টের আলোকেই ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ করে দুটি প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তাদের রিপোর্টে উল্লেখ করেন যে, বঙ্গভঙ্গ করে দুটি প্রদেশ সৃষ্টি করা হলে সুষ্ঠু প্রশাসন গড়ে উঠবে এবং জনগণের দাবি ও সমস্যা মোকাবিলা করা সহজ হবে।

 

(২) রাজনৈতিক কারণ : বঙ্গভঙ্গের পেছনে নিম্নলিখিত রাজনৈতিক কারণগুলো মুখ্য ছিল :

(ক) জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করা : ১৮৮৫ সালে ‘ভারতীয় জাতীয় কমান’ নামক একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়। কংগ্রেসের নেতৃত্বে সমগ্র ভারতে বিশেষ করে বাংলা প্রেসিডেন্সিতে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়। এ আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ছিল কলিকাতা শহর।

সুচতুর ইংরেজ সরকার এ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে নস্যাৎ এবং আন্দোলনকারীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য বঙ্গভঙ্গ করতে উদ্যোগী হন।

ব্রিটিশ সরকার ‘বিভেদ ও শাসন নীতি” (Divide and Rule Policy) অবলম্বন করে।

 

(খ) মুসলমানদের দাবি : স্যার সলিমুল্লাহ বঙ্গভঙ্গের পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি জনগণকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, নতুন প্রদেশ সৃষ্টি হলে পূর্ব-বাংলার মুসলমানরা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের সুযোগ পাবে।

হিন্দু সম্প্রদায় প্রভাবিত কলিকাতার উপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নির্ভরশীলতাও হ্রাস পাবে। মুসলমান জনগণ চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি করতে পারবে।

 

(৩) অর্থনৈতিক কারণ : (ক) ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পূর্বে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রায় সবকিছুই কলিকাতায় কেন্দ্রীভূত ছিল। ফলে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা সর্বক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়েছিল ।

পূর্ববাংলার মুসলমান জনগণ হিন্দুদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। অধিকাংশ মুসলমান জনগণ এ সময়ে ভাবতে শুরু করে যে, বঙ্গভঙ্গ হলে তারা অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জনের সুযোগ পাবে।

 

(খ) পূর্ববঙ্গের অধিকাংশ জমিদারই ছিলেন হিন্দু। জমিদারগণ কলিকাতায় বাস করতেন। জনগণের সাথে তাঁদের কোনো যোগাযোগ ছিল না। জনগণের কল্যাণ ও সুখ-দুঃখের বিষয় নিয়ে তারা খুব বেশি চিন্তাও করতেন না। ফলে পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগণ বঙ্গভঙ্গের প্রতি সমর্থন জানায় ।

 

(৪) সামাজিক কারণ : ব্রিটিশ শাসনামলে মুসলমান সম্প্রদায় নির্মমভাবে শোষিত বঞ্চিত হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকার হিন্দুদের প্রতি উদার নীতি এবং মুসলমানদের প্রতি বৈরী নীতি অনুসরণ করতে থাকে।

মুসলমানরা সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তিহীন একটি দরিদ্র, রিক্ত ও নিঃস্ব সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। সুতরাং লর্ড কার্জন কর্তৃক বঙ্গভঙ্গের চিন্তা-ভাবনা শুরু হলে পূর্ব-বাংলার মুসলমান সম্প্রদায় স্বভাবতই এর প্রতি সমর্থন জানায়।

বঙ্গ বিভাগের দ্বারা পূর্ব বঙ্গের মুসলমান জনগণ তাদের হারানো সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতে থাকে।

 

গ. হিন্দু ও মুসলমান জনগণের ওপর বঙ্গভঙ্গের প্রভাব (Impact of Partition of Bengal on Muslim and Hindu Community) :

ভারতীয় রাজনীতিতে বঙ্গভঙ্গের প্রভাব, প্রতিক্রিয়া ও ফলাফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী। বঙ্গভঙ্গের ফলে অবিভক্ত বাংলার হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দুই ধরনের বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায় :

 

(১) মুসলমানদের ওপর বঙ্গভঙ্গের প্রভাব (Impact of Partition of Bengal on Muslim Community) : ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের সরকারি সিদ্ধান্ত মুসলমান জনগণের মধ্যে আনন্দ-উল্লাসের সৃষ্টি করে। ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ নামক নতুন প্রদেশকে পূর্ব বাংলার মুসলমান সম্প্রদায় আশীর্বাদ বলে স্বাগত জানায় । কেননা, নতুন প্রদেশে তারাই ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ ।

উৎফুল্ল মুসলমান জনগণ এই স্বপ্ন দেখতে লাগলেন যে, নতুন প্রদেশে তাঁরা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন এবং নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে সক্ষম এবং চাকরি-বাকরি, শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা- বাণিজ্য সবক্ষেত্রেই তাঁরা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার মুসলমান জনগণ গর্ব ও মর্যাদাবোধ অনুভব করে । এর ফলে পূর্ব বাংলা তথা সমগ্র ভারতের মুসলমানদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার সৃষ্টি হয় ।

হিন্দুদের বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনকে মোকাবিলা করার জন্য মুসলমান বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাগণ ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ’ নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটতে থাকে।

 

() হিন্দুদের উপর বঙ্গভঙ্গের প্রভাব (Impact of Partition of Bengal on Hindu Community) : বঙ্গভঙ্গ বাংলার হিন্দু জনগণ বিশেষ করে বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তাঁরা প্রচার করেন যে, বঙ্গভঙ্গ ‘বঙ্গ মাতার অঙ্গচ্ছেদের সমতুল্য’।

জাতীয়তাবাদী চিন্তা-চেতনায় বিকশিত হিন্দু জনসমাজ মনে করেন যে, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছে।

হিন্দু লেখক-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতাগণ বঙ্গভঙ্গকে বাঙালি জাতির বিকাশমান ধারাকে নস্যাৎ করার গভীর ষড়যন্ত্র বলে প্রচার করেন । ব্রিটিশ সরকারের এ ‘বিভেদ ও শাসন’ নীতির বিরুদ্ধে তারা প্রচণ্ড গণআন্দোলন গড়ে তোলে।

এর ফলে ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের জন্য ‘স্বদেশি আন্দোলন’ ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন ? ইতিহাস পাঠের প্রয়োজনীয়তা

লীগ অব নেশনস কাকে বলে ? এর পটভূমি, গঠন, উদ্দেশ্য এবং বিলুপ্তির কারণ

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর – (গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি)

 বঙ্গভঙ্গের মূল্যায়ন /বঙ্গভঙ্গের ফলাফল

Evaluation of the Partition of Bengal/Effects of Partition of বেংাল

ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির ইতিহাসে বঙ্গভঙ্গ একটি অনন্য সাধারণ ঘটনা। বঙ্গভঙ্গের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।

 

১.ব্রিটিশদের ‘ভাগ কর ও শাসন কর’ নীতির বিজয় বঙ্গভঙ্গের ফলে ব্রিটিশ শাসকদের অনুসৃত ‘ভাগ কর ও শাসন কর নীতি'(Divide & Rule Policy)জয়যুক্ত হয়।

ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে হিন্দু ও মুসলমান জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়।ভারতের বৃহত্তম দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায় এর ফলে চিন্তা-চেতনার দিক থেকে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

 

. ভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎকরণ: বঙ্গভঙ্গের দ্বারা ব্রিটিশ শাসকগণ কৌশলে কলিকাতাকেন্দ্রিক সর্বভারতীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলন নস্যাৎ করার সুযোগ লাভ করে। কেননা কলিকাতা শহরের লেখক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী,অর্থনৈতিবীদ,রাজনৈতিবীদ পূর্ববাংলার উপর নির্ভরশীল ছিল। বঙ্গভঙ্গের ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি বঙ্গভঙ্গ হিন্দু-মুসলিম জনগণের মধ্যে সাম্প্রদায়িক চেতনার বিষবৃক্ষ রোপণ করে। এ সাম্প্রদায়িক চেতনাই পরবর্তীতে ভারত বিভাগকে অত্যাসন্ন করে তোলে।

 

৪. মুসলিম জাতীয়তাবাদের প্রসার : বঙ্গভঙ্গের ফলে মুসলিম জাতীয়তাবাদের বীজ রোপিত হয়। মুসলমান জনগণ নিজেদের পৃথক অস্তিত্ব ও স্বার্থ রক্ষার জন্য সংগঠিত হতে থাকে। তারা ১৯০৬ সালে ‘নিখিল ভারত মুসলিম লীগ’ নামক একটি পৃথক রাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে।

 

৫. মুসলিম লীগের জন্ম নতুন প্রদেশের অস্তিত্ব রক্ষা এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের লাক্ষা ১৯০৬ সালে ঢাকায় মুসলিম লীগ’ নামক রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম হয়।

 

৬. হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের অবনতি: বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ খুশি হলেও হিন্দু সম্প্রদায় খুশি হয়নি। এ জন্যই বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য হিন্দু জনগণ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয় ।

 

৭. স্বদেশি আন্দোলন ; বঙ্গভঙ্গ রদ করার জন্য হিন্দু জনগণ এবং কংগ্রেস স্বদেশি আন্দোলনের ডাক দেয়। মন্দোলনকারীরা বিলেতি দ্রব্য বর্জন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অফিস-আদালত বর্জনের ডাক দেয়। কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয় এবং জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়ে।

 

৮. সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র হিন্দুবাদীদের উত্থান একদল উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসকদের এদেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য গোপন প্রচেষ্টা চালায়। এর ফলে ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বাংলা, মহারাষ্ট্র ও প্রস্তাবে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় এবং রাজনীতিতে উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটে।

 

৯. পূর্ব বাংলার উন্নতি : বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ব বাংলার জনগণ একে স্বাগত জানায়। পূর্ব বাংলার উন্নতি ও অগ্রগতির পথ প্রশস্ত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, যোগাযোগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

 

১০. ঢাকার উন্নয়ন ও মর্যাদা বৃদ্ধিকরণ : দীর্ঘদিন পর ঢাকা আবার রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে । ঢাকার প্রাদেশিক রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে এখানে ভবন, সেক্রেটারিয়েট ভবন, আইনসভা ভবন নির্মাণ, পুরনো ভবন ও রাস্তাঘাট সংস্কার এবং নতুন নতুন প্রশাসনিক ভবন ও রাস্তাঘাট নির্মিত হতে থাকে। ফলে ঢাকার ক্ষমতা, মর্যাদা, প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায় ।

 

১১. আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি : ঢাকায় রাজধানী এবং চট্টগ্রামে নৌবন্দর স্থাপিত হওয়ায় পূর্ববঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে । রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলেও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার জনগণ উন্নতি করতে থাকে । তার ফলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি সাধিত হয়।

 

১২. শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন : বঙ্গভঙ্গের পর ‘পূর্ববঙ্গ ও আসাম’ প্রদেশের শিক্ষার উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে। উচ্চ শিক্ষার উন্নয়নে সিলেট মুরারি চাঁদ কলেজকে সরকারিকরণ, জগন্নাথ কলেজকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ, বেসরকারি কলেজগুলোতে অনুদান প্রদান, মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন এবং নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *