আসসালামু আলাইকুম। আজকে আমি বাংলাদেশের শিশু দিবস এর প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করব।
Table of Contents
বাংলাদেশের শিশু দিবস এর গুরুত্ব
কোনো জাতির ভবিষ্যত কতটা উজ্বল হবে সেটা নির্ভর করে সে জাতির শিশুদের উপর। তাদের বেড়ে ওঠায় যদি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় তাহলে সে জাতির ভবিষ্যত অনেকাংশে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হতে পারে। শিশুদের অধিকার আদায় এবং সংরক্ষণের জন্য বর্তমানে পালিত হয় বিশ্ব শিশু দিবস। এছাড়াও শিশুদের নিয়ে কাজ করছে এরকম অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেমনঃ ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইত্যাদি।
অবশ্য বাংলাদেশের শিশু দিবস এর প্রেক্ষাপট খুব একটা প্রাচীন নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতিবছর ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়। আবার শিশু দিবস এর দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দল গুলোর প্রভাব অনেকাংশে লক্ষ্য করা যায়।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে শিশু দিবস
বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে শিশু দিবস বছরে একবার পালন করা হয় আর্থাৎ এটি বার্ষিক দিবস। আবার এই দিবস আন্তর্জাতিক ভাবে পালন করা হলেও জাতীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে পালন করা হয়ে থাকে।১৯২৫ সালে সুইজারল্যান্ড এর রাজধানী জেনেভায় শিশুদের কল্যান নিয়ে বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।সেখানেই সর্বপ্রথম বিশ্ব শিশু দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এরপর বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ১জুন বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়েছিল, যা ১৯৫০ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল। বিশ্ব শিশু দিবস বা ওয়ার্ল্ড চিল্ড্রেনস ডে এর আরেক নাম ছিল ইউনিভার্সাল চিল্ড্রেনস ডে। জাতিসংঘ কর্তৃক বর্তমানে বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয় ২০ নভেম্বর। এর পেছনে অবশ্য একটি কারণ আছে।
১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অধিবেশনে শিশুদের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঐতিহাসিক সম্মেলন ২০নভেম্বর হওয়ায় জাতিসংঘ এর স্মৃতি রক্ষায় প্রতিবছর ২০ নভেম্বর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।শিশু দিবসের সাথে আর একটি দিবসের সম্পৃক্ততা আছে।সেটি হছে বিশ্ব কণ্যা শিশু দিবস।প্রতিবছর ১১ অক্টোবর সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক কণ্যা শিশু দিবস পালন করা হয়।
বাংলাদেশের শিশু দিবস প্রেক্ষাপট
বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশে ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয়। এর আগে বাংলাদেশের শিশু দিবস ছিল ১৯ জানুয়ারি। বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের কারণে এই দিবসটি পালনের দিনক্ষণও অনেকবার পরিবর্তন হয়েছে। নব্বই এর দশকের আগের দিকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হলেও ছিল না কোনো জাতীয় শিশু দিবস।
এরপর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং ঘোষণা দেয় যে বঙ্গন্ধুর ১৭ মার্চ-এ বাংলাদেশে জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হবে। তাদের এ ঘোষণার অবশ্য খুব বেশী দিন বহাল থাকেনি।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে হেরে যায় এবং বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি) সরকার গঠন করে।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ১৭ মার্চ বা জাতীয় শিশু দিবস-এ সরকারি ছুটি ছিল যা বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাতিল করে দেয়। এরপর ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বাংলাদেশে কোনো শিশু দিবস পালন হয়নি।মূলত আক্রমণাত্মক রাজনীতির কারণে এমনটা করা হয়েছিল।
এসময়ে বিএনপি জাতীয় শিশু দিবস পালন না করলেও তারা জাতীয় শিক্ষক দিবস পালন করেছিল।বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন কে সম্মান জানিয়ে প্রতিবছর ১৯ জানুয়ারি জাতীয় শিক্ষক দিবস পালন করা হতো।
এরপর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার জয়লাভ করে এবং পুনরায় ১৭ মার্চ-কে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।সেখান থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশ এ দিবসটি বড় উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে পালন করে আসছে।
১৭ মার্চ কে বাংলাদেশের শিশু দিবস করার কারণঃ
আন্তর্জাতিকভাবে সারা বিশ্বে এক দিনে তথা ২০ নভেম্বর-এ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হলেও জাতীয় শিশু দিবস বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিনে পালন করা ।কোনো দেশের জাতীয় শিশু দিবস পালন করা হয় সে দেশের উজ্জ্বল কোনো ব্যক্তিত্ব অনুসারে।
বাংলাদেশে শিশু দিবস পালন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মদিনে বা ১৭ মার্চ। ।এর কারণ হিসেবে জানা যায় বঙ্গবন্ধু শিশুদের অধিক স্নেহ ও মায়া করতেন এবং ভালবাসতেন।অনেকে মনে করেন বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ১৭ মার্চ-কে জাতীয় শিশু দিবস করতে বাধ্য হয়েছেন।কিন্তু এ কারণটি অনেকটাই অস্পষ্ট।
জাতীয় শিশু দিবসের গুরুত্বঃ
কোনো দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম অর্থাৎ শিশুরা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে ভবিষ্যত অনুজ্জ্বল হতে যাচ্ছে। আমাদের শিশুদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপদ জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে।
শিশুদের প্রতি সচেতন থাকার পাশাপাশি প্রতিবছর জাতীয় শিশু দিবস আবার আমাদের শিশুদের জন্য সচেতন হওয়ার বার্তা পাঠায়।
বিভিন্ন দেশের শিশু দিবসঃ
ভারতঃ
ভারতে প্রতিবছর ১৪ই নভেম্বর শিশু দিবস পালন করা হয়। ভারত সরকার তাদের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর প্রতি সম্মান জানিয়ে তাঁর জন্মদিন কে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। জহরলাল নেহেরু শিশুদের কাছে ‘চাচা নেহেরু’ নামে পরিচিত। উল্লেখ্য যে, ভারতে ১৯৫৬ সালে থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রঃ
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের শিশু দিবস পালন করা হয় জুনের দ্বিতীয় রবিবার। সর্বশেষ ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার জুনের দ্বিতীয় রবিবার এ দিবসটি পালনের ঘোষণা দেন। তবে তারা বহুদিন ধরে এ দিবসটি পালন করে আসছে।
এছাড়াও চীন সরকার ১১ জুন শিশু দিবস পালন করে থাকে। এবং জাপান সরকার ৫ মে শিশু দিবস পালন করে থাকে।
সর্বোপরি আমাদের শিশুদের প্রতি সচেতন হতে হবে। তাদের অধিকার আদায়, সঠিক শিক্ষা, সার্বিক নিরাপত্তা সহ সকল বিষয়ে আমাদের বিবেচনায় আনতে হবে।
কেননা শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ আমাদের এই পোস্টটি যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন । আজ এ পর্যন্ত।