বাজেট কি এবং কেন ? বাজেট কত প্রকার ও কি কি
অর্থনীতিতে বাজেট কি (What is Budget in Bengali), বাজেট কাকে বলে এবং কত প্রকার ও কি কি, সুষম বাজেট কি, অসম বাজেট কি, বাজেট কিভাবে প্রণয়ন করা হয়, বাংলাদেশের বাজেটের বৈশিষ্ট্য কী এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো।

বাজেট কি বা বাজেট কাকে বলে ? (What is Budget in Bengali)
একটি বাজেট হলো একটি দেশের সম্ভাব্য আয় এবং ব্যয়ের হিসাব।
সরকার দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন, ভৌত অবকাঠামো নির্মণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বিপুল অর্থ ব্যয় করে থাকে।
এছাড়া সরকারকে প্রশাসনিক, সামাজিক, জনকল্যাণমূলক এবং অন্যান্য সেবামূলক কর্মকাণ্ডেও ব্যয় করতে হয়। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট আর্থিক বছরে কোথায় এবং কত টাকা খরচ হবে সেই পরিকল্পনার নাম বাজেট।
এমনকি একজন ব্যক্তিকেও তার আয় এবং ব্যয়ের হিসাব করতে হয়। কিন্তু ব্যক্তির সঙ্গে রাষ্ট্রীয় বাজেটের মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
কোন ব্যক্তি প্রথমে তার কি পরিমণ আয় হবে তা নির্ধারণ করে থাকেন, তারপর ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্র ঠিক উল্টো কাজ করে থাকে।
রাষ্ট্র প্রথমে ব্যয়ের খাত নির্ধারণ করে। তারপর রাষ্ট্র কোথা থেকে আয় করবে তা নির্ধারণ করে থাকে।
তাই, সরকার সাধারণত কত খরচ হবে তা আগে বুঝে নেয় তারপর সে অনুযায়ী আয়ের খাত নির্ধারণ করে।
আর কোন ব্যক্তি প্রথমে আয় করেন এরপর ঠিক করেন কি পরিমাণে ব্যয় করবেন।
আয়ের সঙ্গে ব্যয় না মিললে রাষ্ট্র দেশ-বিদেশ থেকে টাকা ধার করতে পারে। ব্যক্তিও এটা করতে পারে, কিন্তু এর সীমা কম।
কারণ ধার করলে সেটি পরিশোধ করে দিতে হবে। রাষ্ট্রকেও দিতে হয়, কিন্তু রাষ্ট্র সাধারণত এর জন্য দেউলিয়া হয় না। রাষ্ট্র ঋণ বছরের পর বছর টেনে আনতে পারে। রাষ্ট্র এই সুযোগ কাজে লাগায়। তবে এর ফলে দায় বাড়তে থাকে।
তাহলে বাজেট কি এবং বাজেট কেন প্রণয়ন করা হয় এ বিষয়ে আশা করি আপনি জানতে পেরেছেন।
বাজেটের প্রকারভেদ: বাজেট কত প্রকার ও কি কি ?
আয় এবং ব্যয় সমান সমান কিনা তার উপর রাষ্ট্রের বাজেট দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন:
- সুষম বাজেট
- অসম বাজেট
সুষম বাজেট কি ?
সরকারের মোট রাজস্ব ও মোট ব্যয় সমান হলে তা একটি সুষম বাজেট। অন্য কথায়, সম্ভাব্য আয় বাজেট সরকারের মোট ব্যয় পরিকল্পনার সমান হয়।
আসম বাজেট কি ?
যেখানে আয় এবং ব্যয় সমান নয়, তাকে অসম বাজেট বলে। অসম বাজেট দুই ধরনের হতে পারে।
যেমন: উদ্বৃত্ত বাজেট এবং ঘাটতি বাজেট।
উদ্বৃত্ত বাজেট এবং ঘাটতি বাজেট কি ?
আয় ব্যয়ের চেয়ে বেশি হলে তা উদ্বৃত্ত বাজেট। ঘাটতি বাজেট ঠিক উল্টো। যদি ব্যায়ের চেয়ে আয় কম হয়, তাকে ঘাটতি বাজেট বলে।
এখন প্রশ্ন হলো, কোন বাজেট ভালো?
উন্নত দেশ গুলো সাধারণত সুষম বাজেট করে থাকে। তবে প্রত্যেক রাষ্টের পক্ষে প্রতিবছর সুষম বাজেট করা সম্ভব হয় না। উন্নত বা ধনী দেশগুলির বাণিজ্য চক্রের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুষম বাজেট করে থাকে।
অর্থাৎ অর্থনীতির উত্থান-পতনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হলে সুষম বাজেট, খারাপ হলে ঘাটতি বাজেট।
অনেক উন্নত দেশ একটি সুষম বাজেট তৈরির জন্য আইন প্রণয়ন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ রাজ্যে এই আইন রয়েছে। সুইজারল্যান্ড, ইতালি এবং অস্ট্রিয়া সহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশে সুষম বাজেটের আইন রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ধারাবাহিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট বা সুষম বাজেট তৈরি করা ভালো বিষয় নয়। বরং অর্থনৈতিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজেট করতে হবে।
কারণ, একটি সুষম বাজেট সুদের হার কমায়, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বাড়ায়। এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমায়। দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি এগিয়ে যায়।
সাধারণত, একটি সুষম বাজেট তৈরি করা হয় যখন অর্থনীতি ভালো অবস্থায় থাকে, যখন ঘাটতি বাজেট তৈরি করা হয় অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করার জন্য যখন এটি খারাপ থাকে। একটা সময় ছিল যখন ঘাটতি বাজেটকে ক্ষতিকর মনে করা হতো এবং সরকার ছিল দুর্বল। সেই পরিস্থিতি এখন পাল্টে গিয়েছে।
বরং বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের জন্য কিছুটা ঘাটতি থাকাই ভালো বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এটি অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার বাড়ায় এবং শূন্যস্থান পূরণের জন্য তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটি অর্থনীতিকে উদ্দীপিত করে। বাজেটে বেশি ঘাটতি থাকা ভালো নয়।
ঘাটতি সাধারণত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়।
বাজেটের ঘাটতি দুইভাবে মেটানো হয়। যেমন,
বিদেশী উৎস
এটি মূলত বৈদেশিক ঋণ। সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেয়। এই উৎস থেকে আরও ঋণ দিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে সক্ষম হওয়া অর্থনীতির পক্ষে আরও সহনীয়। কারণ, এতে সুদের হার কম এবং পরিশোধ করতে অনেক সময় থাকে। তবে শর্ত বেশি।
অভ্যন্তরীণ উৎস
সরকার দেশের ভেতর থেকে দুইভাবে ঋণ নেয়। যেমন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং নন-ব্যাংক ব্যবস্থা। নন-ব্যাংক ব্যবস্থা হলো সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এভাবে সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেয়।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নেওয়ার দুটি বিপদ রয়েছে। সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে কম টাকা থাকবে। ফলে বিনিয়োগ কমে যায়।
আর নন-ব্যাংক সিস্টেম থেকে ঋণ নিলে উচ্চ হারে সুদ দিতে হবে। সুদ দিতে সরকারকে আরও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। এতে আগামী অর্থবছরের বাজেট বাড়বে। সরকার আরও ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।
আয় ও ব্যয়ের ভিত্তিতে দুই ধরনের বাজেট রয়েছে। আর আছে উন্নয়ন বাজেট। যেমন,
রাজস্ব ব্যয়
রাজস্ব ব্যয় সরকার পরিচালনার ব্যয়। রাজস্ব ব্যয়কে অনুন্নয়ন বাজেটও বলা হয়। অনুন্নয়ন ব্যয় মোটা অঙ্কের তিনটি। যেমন জাতীয় প্রতিরক্ষা, আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের খরচ।
বাংলাদেশ কল্যাণ রাষ্ট্র নয়। তারপরও বাজেটকে মানবিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি। এজন্য বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। সরকার কৃষি ও জ্বালানি খাতেও ভর্তুকি দেয়।
এর মধ্যে রয়েছে সুদ পরিশোধ। তবে সবচেয়ে বড় খরচের খাত হলো বেতন-ভাতা।
রাজস্ব আয়
রাষ্ট্রের আয়ের উৎস কয়টি? এগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন: প্রত্যক্ষ কর, পরোক্ষ কর এবং অকরযোগ্য আয়।
প্রত্যক্ষ করের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তিগত আয়কর, ব্যবসা কর (কর্পোরেট ট্যাক্স), দান কর, উত্তরাধিকার কর, যানবাহন কর, ওষুধ কর, ভূমি রাজস্ব ইত্যাদি এবং পরোক্ষ কর হলো আমদানি কর, আবগারি শুল্ক, ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর, সম্পূরক শুল্ক ইত্যাদি।
ট্যাক্স ছাড়াও আরো আয় আছে। যেমন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মুনাফা, সুদ, সাধারণ প্রশাসন থেকে আয়, পোস্ট ওয়্যার টেলিফোন থেকে আয়, পরিবহন থেকে আয়, জরিমানা ও জরিমানা থেকে আয়, ভাড়া, ইজারা, টোল ও লেভি থেকে আয় ইত্যাদি।
উন্নয়ন বাজেট কি ?
সরকার বাকি আয় দিয়ে দেশ পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। উন্নয়ন বাজেটে এ জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ।
এ টাকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। সরকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, সেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে গ্রামীণ উন্নয়ন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, স্কুল, কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে থাকে।
উন্নয়ন বাজেট তৈরি হয় রাজস্ব উদ্বৃত্ত এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাইরে থেকে নেওয়া ঋণ দিয়ে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নামে একটি প্রকল্প খাত রয়েছে। এটি সেই খাত যেখানে সাধারণত উন্নয়ন বাজেট ব্যয় দেখানো হয়।
Conclusion
তাহলে বাজেট কি বা বাজেট কাকে বলে (What is Budget in Bengali), বাজেট কত প্রকার ও কি কি এসব বিষয়ে আশা করি এই আর্টিকেলে আপনারা ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
যদি আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তশলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন।
আর আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
অবশ্যই পড়ুন –