ব্যাপন কাকে বলে ?

ব্যাপন কাকে বলে?

কোনো  মাধ্যমে কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থ স্বতঃস্ফুর্ত ও সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে।

ব্যাপন (Diffusion) বলতে কী ‘বুঝায়? 

কোনো মাধ্যমে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় বস্তুর স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও সমভাবে পরিব্যাপ্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলে। যেমন: পানিতে KMnO, (পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট) এর দানা যোগ করলে হালকা বেগুনী রঙ সম্পূর্ণ পানিতে ছড়িয়ে পড়ে।

received 1310619623047256
ব্যাপন কাকে বলে?

 

ব্যাপন এর বৈশিষ্ট্য:

  1. ব্যাপ‌নের হার বস্তুর ভ‌রের উপর নির্ভরশীল । ভর যত বে‌শি হ‌বে বস্তুুর ব্যাপ‌নের হার তত কম হ‌বে। অর্থাৎ, ব্যাপন হার বস্তুর ভরের (মোলার ভর) ব্যস্তানুপাতিক। অন্যদিকে তাপমাত্রা বেশি থাকলে ব্যাপনের হার বেড়ে যায়, কারণ ব্যাপনে অংশগ্রহণকারী অণুগুলোর প্রবাহ ক্ষমতা বা গতিশক্তি বেড়ে যায়।
  2. ব্যাপনের ক্ষেত্রে কঠিন , তরল বা বায়বীয়ের মধ্যে হয়।
  3. তাপের প্রভাব বেশি হলে ব্যাপন হারও বৃদ্ধি পায়।ব্যাপন আণবিক ভরের উপর নির্ভর করে। যার আনবিক ভর বেশি তার ব্যাপন হার কম। আর জার আনবিক ভর কম তার ব্যাপন হার বেশি।
  4. বায়ুমণ্ডলের চাপ বাড়লে ব্যাপন হার কমবে, বায়ুমণ্ডলের চাপ কম হলে ব্যাপন হার বাড়বে।
  5. ব্যাপন পদার্থের ঘনত্বের উপর নির্ভর করে।যে মাধ্যমে ব্যাপন ঘটবে সে মাধ্যমের ঘনত্ব বেশি হলে ব্যাপন হার কম হবে।মাধ্যমের ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার বেশি হবে।
  6. যে পদার্থের ব্যাপন ঘটবে সে পদার্থের অণুর ঘনত্ব বেশি থাকলে ব্যাপন হার বেশি হবে, অণুর ঘনত্ব কম হলে ব্যাপন হার কম হবে।

আমার প্রতিদিনের পর্যবেক্ষণ থেকে ব্যাপনের দুটি ঘটনা নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

received 865003261589675
ব্যাপন
  • ঘরে সেন্ট বা আঁতর ছড়ালে বা ধুপ জ্বালালে সমস্ত ঘরে তার সুবাস ছড়িয়ে পড়ে। এটি ব্যাপনের কারণে ঘটে থাকে। ধূপের ধোঁয়া ও সেন্টের অণুগুলো অধিক ঘনত্ব সম্পন্ন হওয়ায় সম্পূর্ণ ঘরে কম ঘনত্ব সম্পন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সমস্ত ঘর সুবাসে ভরে যায়।
  • রুম ফ্রেশনারের স্প্রে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে যার মাধ্যমে আমরা গন্ধ অনুভব করতে পারি।
  • কাপরে  আমরা যে নীল ব্যবহার করার সময় প্রথমে যে আমারা নীল পানিতে মিশিয়ে নেই।সেটির ক্ষেত্রে ব্যাপন ঘটে।

 

ব্যাপন হার নির্ণয় :

 

১.ব্যাপন হার ঘনত্বের উপর  নির্ভর করে। যার ঘনত্বের হার বেশি তার ব্যাপন হার কম আর যার ঘনত্বের হার কম তার ব্যাপন হার বেশি।

২.ব্যাপন হার বস্তু/পদার্থের  ভররের উপর নির্ভরশীল।যে বস্তুর আনবিক ভর বেশি  ব্যাপন হার  কম।যার আনবিক ভর কম তার ব্যাপন হার বেশি।

৩. যেমন HCl এর আনবিক ভর =1+35.5=36.5 ।

NH3 এর আনবিক ভর = 14+1×3=17।

এখানে HCl  এর আনবিক ভর বেশি তাই এর ব্যাপন হার কম।  NH3  এর আনবিক ভর কম তাই ব্যাপন হারও বেশি।

প্রশ্ন-১.CO ও N2O এর মধ্যে কোনটির ব্যাপনের হার বেশি?

উত্তর: কোনো গ্যাসের ব্যাপন হার এর আণবিক ভরের উপর নির্ভর করে। যেসব গ্যাসের আণবিক ভর যত বেশি তাদের ব্যাপন হার তত কম। আর যেসব গ্যাসের আণবিক ভর যত কম তাদের ব্যাপন হার তত বেশি।

CO এর আণবিক ভর = 12+16=28

N2O এর আণবিক ভর = 14 x 2 + 16 = 44

যেহেতু CO গ্যাসের আণবিক ভর দুটি গ্যাসের মধ্যে কম সেহেতু CO ও N2Oএর মধ্যে CO গ্যাসের ব্যাপনের হার বেশি।

 

প্রশ্ন-২.NH.3 ও CO2 এর মধ্যে কোনটির ব্যাপন হার বেশি এবং কেন?

উত্তর: কোনো গ্যাসের ব্যাপন হার এর আণবিক ভর এর উপর নির্ভর ক যেসব গ্যাসের আণবিক ভর যত বেশি তাদের ব্যাপন হার তত কম। যেসব গ্যাসের আণবিক ভর যত কম তাদের ব্যাপন হার তত বেশি ।

CO2 এর আণবিক ভর 12+16×2= 44

NH3 এর আণবিক ভর 14+1×3=17

যেহেতু NH3 গ্যাসের আণবিক ভর 2টি গ্যাসের মধ্যে সবচেয়ে কম  সেহেতু COও NH3 এর মধ্যে NH3 গ্যাসের ব্যাপন হার বেশি এব দ্রুত ছড়িয়ে পড়বে।

 

প্রশ্ন-৩.H2S এবং SO2 এর মধ্যে কোনটির ব্যাপন হার সর্বাধিক এবং কেন?

উত্তর: কোন গ্যাসের ব্যাপন হার এর আণবিক ভরের উপর নির্ভর করে। যে গ্যাসের আণবিক ভর যত বেশি তার ব্যাপন হার তত কম। যে গ্যাসের আণবিক ভর যত কম তার ব্যাপন হার তত বেশি ।

H2S এর আণবিক ভর = 1 x 2 + 32= 34

SO2 এর আণবিক ভর =32+16×2=64

যেহেতু H2S এর আণবিক ভর SO2 এর আণবিক ভরের চেয়ে কম, তাই H2S এর ব্যাপন হার সর্বাধিক হবে।

 

প্রশ্ন-৪.গ্যাসের ব্যাপনের হার কী কী বিষয়ের উপর নির্ভর করে?

উত্তর: ব্যাপনের হার প্রধানত গ্যাসের আণবিক ভর ঘনত্ব ও আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের উপর নির্ভর করে। গ্যাসের আণবিক ভর বেশি হলে, ঘনত্ব বেশি হয়। ফলে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ বলের মান বেড়ে যায়। আকর্ষণ বলের মান বেড়ে গেলে গ্যাসের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে ব্যাপন হার কম হয়। সুতরাং গ্যাসের ভর বেশি হলে ব্যাপন হার কমে যায়।

 

তাপমাত্রা বাড়লে ব্যাপনের হার বাড়ে কেন?

তাপমাত্রা বাড়ালে অণু পরমানুর অভ্যন্তরিণ কম্পন বেড়ে যায় অর্থাৎ গতিশক্তি বেড়ে যায় যার ফলে অণু-পরমাণু আন্তঃআণবিক আকর্ষণ কমে যায়। ফলে অণুসমূহ দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পারে এবং ব্যপনের ক্ষেত্রে অণু সমূহ দ্রুত সকল স্থানে সমভাবে পরিব্যপ্ত হয়। এ কারণে তাপমাত্রা বাড়ালে ব্যপন হার বেড়ে যায়।

ব্যাপন ও অভিস্রবনের মধ্যে পার্থক্য:

দুইটি ভিন্ন ঘনত্ব বিশিষ্ঠ দ্রবণ যদি একটি অর্ধভেদ্য পর্দা দ্বারা আলাদা করা থাকে। অন্যদিকে তাহলে কম ঘনত্বের দ্রবণ থেকে অধিক ঘনত্বের দ্রবণের দিকে দ্রাবক অনুর স্থানান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে অভিস্রবণ বলে।

 

*ভিন্ন প্রকৃতির দ্রবণের মধ্যেও ব্যাপন ঘটতে পারে। অন্যদিকে কেবলমাত্র সমপ্রকৃতির দ্রবণের মধ্যে অভিস্রবণ ঘটে।

 *ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পদার্থের গতিশীল অনুকূলে বেশি ঘনত্বের স্থান থেকে কম ঘনত্বের দিকে যায়। অন্যদিকে অভিস্রবন প্রক্রিয়ায় দ্রাবক অনু কম ঘনত্ব যুক্ত স্থান থেকে বেশি ঘনত্বের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

* ব্যাপন প্রক্রিয়ায় কোন মাধ্যমের প্রয়োজন হয়না, এটি মুক্ত অবস্থায় ঘটে। অন্যদিকে অভিস্রবণ প্রক্রিয়া অর্ধভেদ্য বা প্রভেদক ভেদ্য পর্দার প্রয়োজন হয়।

*ব্যাপন একটি ভৌত প্রক্রিয়া। অন্যদিকে অভিস্রবণ একটি ভৌত প্রক্রিয়া হলেও রাসায়ানিক প্রভাব বিদ্যমান।

*রসায়ন কি বা কাকে বলে ? রসায়নের জনক কে ও কেন ?

পদার্থবিজ্ঞান কাকে বলে ? পদার্থবিজ্ঞানের জনক কে

সিটি স্ক্যান কি ? (What is CT Scan in Bengali)

ব্যাপনের গুরুত্ব :

১. উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষণের সময় বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

২. জীব কোষে শ্বসনের সময় গ্লুকোজ জারনের জন্য অক্সিজেন ব্যবহারিত হয়। আর জীব কোষে এই অক্সিজেন প্রবেশ করে ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।

৩. উদ্ভিদ দেহে শোষিত পানি বাষ্পাকারে প্রস্বেদনের মাধ্যমে দেহ থেকে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় বের করে দেয়।

৪. প্রাণীদের শ্বসনের সময় অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের আদান-প্রদান ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সংঘটিত হয়।

৫. প্রাণীদের রক্ত থেকে খাদ্য অক্সিজেন প্রভৃতির লসিকায় বহন ও লসিকা থেকে কোষে পরিবহন ব্যাপন দ্বারা সম্পন্ন হয়।

আইসোটোপ কাকে বলে ? উদাহরণসহ সংজ্ঞা (Isotope)

নবম দশম শ্রেণির পুরাতন পদার্থবিজ্ঞান বই PDF Download

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *