ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম – (ফুল মার্কস এর জন্য)

ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম: জেনে নিন কিভাবে ভাবসম্প্রসারণ লিখলে পরীক্ষায় ফুল মার্কস পাওয়া যাবে।

ভাবসম্প্রসারণ কি বা কাকে বলে?

ভাবসম্প্রসারণ কোনো বাক্যে কিংবা কবিতাংশে অনেক সময় বিপুল ভাব নিহিত থাকে। কবি – সাহিত্যিকের রচনার কোনো অংশে কিংবা লোকমুখে প্রচলিত প্রবাদ – প্রবচনে লুকিয়ে থাকে গভীর জীবন – সত্য। এই সংহত ভাববস্তু বিস্তৃত করে লেখার নাম ভাবসম্প্রসারণ।

ভাবসম্প্রসারণের সময় যুক্তি , দৃষ্টান্ত ও প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিয়ে অন্তর্নিহিত মূলভাবটুকু বিশদ করা হয়ে থাকে ।

ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম

ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম
ভাবসম্প্রসারণ লেখার সঠিক

ভাবসম্প্রসারণ করার সময় নিচের কয়েকটি দিক লক্ষ রাখা দরকার:

  1. উদ্ধৃত অংশ বার বার মনোযোগ দিয়ে পড়ে তার ভেতরের ভাবটি বুঝতে চেষ্টা করা । মূলভাবের সংকেত উদ্ধৃতির কোন অংশে প্রচ্ছন্ন রয়েছে , তা খুঁজে বের করতে পারলে ভাববস্তু বোঝা সহজ হয় । উদ্ধৃত অংশে সাধারণত মূলভাব একটিই হয়ে থাকে । তাই সেই ভাবটি বুঝে নিয়ে সেটির সম্প্রসারণ করতে হবে ।
  2. ভাবসম্প্রসারণ অনুশীলন করার সময় অভিধান দেখে অপরিচিত শব্দের অর্থ জেনে নেওয়া উচিত ।
  3. ভাবসম্প্রসারণের দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই । তবে তা প্রবন্ধের মতো বড়ো কিংবা সারমর্মের মতো ছোটো হয় না । ভাবসম্প্রসারণের বাক্য সংখ্যা এ স্তরে ১০ টির কম ও ১৫ টির বেশি না হওয়াই ভালো ।
  4. মূল ভাবটিই সহজ সরল ভাষায় সম্প্রসারিত বা বিশদ করতে হবে । একই ধরনের কথা বার বার লিখবে না । অন্য কোনো নতুন ভাব ও অবান্তর কথা যেন এসে না যায় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে ।
  5. উদ্ধৃত অংশে কোনো উপমা বা রূপক থাকলে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে । ভাবসম্প্রসারণ লেখার সময় কোনো রকম শিরোনাম দেওয়ার দরকার পড়ে না । লেখকের বা কবির নামও উল্লেখ করতে হয় না । কিংবা ব্যাখ্যার মতো ‘ কবি বলেছেন ’ ধরনের বাক্যাংশ ব্যবহার করতে হয় না ।
  6. ভাবসম্প্রসারণের জন্যে দেওয়া কথাটিতে সাধারণত প্রকাশ্য বক্তব্যের আড়ালে গভীর ভাবসত্য লুকিয়ে থাকে । যেমন : ‘ সবুরে মেওয়া ফলে ‘ কথাটির আক্ষরিক অর্থ ‘ গাছের ফল পেতে হলে অপেক্ষা করতে হয়’ । কিন্তু এর গভীর ভাবসত্য হলো জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে চাই ধৈর্য , প্রচেষ্টা ও পরিশ্রম ।
  7. ভাবসম্প্রসারণ করার সময় প্রথমে প্রকাশ্য বা আক্ষরিক অর্থের দিকটি বলে পরে অন্তর্নিহিত ভাবটি বিশদ করতে হয় ।

ভাবসম্প্রসারণের নমুনা | ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম

অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে

তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে

ভাব – সম্প্রসারণ: যে অন্যায় করে এবং যে সেই অন্যায় সহ্য করে , তারা উভয়ে সমান অপরাধী – উভয়ে সমান ঘৃণার পাত্র । , আইনের দৃষ্টিতে অন্যায়কারীকে অপরাধী মনে করা হয় । তাই তার জন্য শাস্তির বিধান থাকে । আবার অনেক মানুষ আছে তারা সরাসরি অন্যায় করে না , কিন্তু পেছনে থেকে অন্যায়কারীকে সহায়তা করে বা অন্যায় করতে উৎসাহিত করে । আইনের আওতায় এরাও কখনো কখনো অপরাধী হিসেবে গণ্য হয় ।

আবার এমনও লোক থাকে – যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্যায় করে না , অন্যায় ঘটার সময়ে শুধু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে । আইনের চোখে তাদের অপরাধী বলা যায় না । আইনের চোখে অপরাধী না হলেও এই নীরব দর্শকেরাও এক অর্থে অন্যায় ঘটাতে সহযোগিতা করে । কেননা , অন্যায় সংঘটিত হওয়ার সময়ে ওইসব দর্শক যদি সরব প্রতিবাদীর ভূমিকা পালন করত , তাহলে অন্যায় ঘটত না । আইনের চোখে এরা হয়তো অপরাধী নয় , কিন্তু বিবেকের দায় থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া যায় না ।

সমাজ থেকে অন্যায়কে দূর করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিবেকের দায়সম্পন্ন সচেতন মানুষের উপস্থিতিও জরুরি , যারা অন্যায়ের প্রতিবাদে সব সময়ে সোচ্চার হবে , সরব হবে । অপরাধী যাতে অপরাধ করার সুযোগ না পায় , সবাইকে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে ।

মন্তব্য: অন্যায়কারীকে যথাযথভাবে শাস্তি দিলে অন্যায় প্রশ্রয় পায় না । আবার অন্যায় করতে না দিলে অন্যায়ের ঘটনা ঘটে না । তাতে সমাজ থেকে অন্যায় চিরতরে দূর হয় । তাই অন্যায়কারী এবং অন্যায় – সহ্যকারী উভয়ই সমাজে নিন্দনীয় ।

আশা করি আজকের এই আর্টিকেলে ভাবসম্প্রসারণ লেখার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা জানতে পেরেছেন ‌। যদি পড়াশোনা বিষয়ক আপনার কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন।

অবশ্যই পড়ুন-

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *