মাটি কাকে বলে ? মাটি কত প্রকার ও কী কী
মাটি কি বা মাটি কাকে বলে, মাটি কত প্রকার ও কী কী, মাটির উপাদান কি কি, মাটির বৈশিষ্ট্য এবং এর ব্যবহার এর বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলটিতে লিখা হয়েছে। আপনি যদি “মাটি কী” এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন।

মাটিতে গাছপালা জন্মায়। আর গাছপালা থেকেই আমরা খাদ্যশস্য পাই। আমাদের শ্বাস প্রশ্বাসের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অক্সিজেন গ্যাসও আমরা পাই গাছপালা থেকেই।
মাটি না থাকলে গাছপালা জন্মাতে পারত না, আমরা খাদ্যশস্য ও অক্সিজেন পেতাম না। মাটিতেই আমরা ঘরবাড়ি, অফিস, রাস্তাঘাট তৈরি করে থাকি।
এছাড়া মাটির নিচ থেকে জীবনধারণের দরকারি পানির বড় একটি অংশ আসে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অতি প্রয়োজনীয় জ্বালানির (যেমন, তেল, গ্যাস, কয়লা) সিংহভাগ আমরা আহরণ করি মাটির নিচ থেকে। একইভাবে সোনা, রুপা, লোহাসহ নানারকম খনিজ পদার্থ মাটিরই অবদান।
এখন আমরা অতি প্রয়োজনীয় এই মাটির গঠন সম্পর্কে জেনে নিই।
মাটি কাকে বলে ?
মাটি হলো নানারকম জৈব ও অজৈব রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণ। এলাকাভেদে মাটির গঠন ভিন্ন হয়।
সাধারণত মাটিতে বিদ্যমান পদার্থসমূহকে চার ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এরা হলো খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, বায়বীয় পদার্থ ও পানি।
তবে এসব পদার্থ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একে অপরের সাথে মিশে একধরনের জটিল মিশ্রণ তৈরি করে এবং একটিকে আরেকটি থেকে সহজে পৃথক করা যায় না।
মাটিতে বিদ্যমান খনিজ পদার্থসমূহ অজৈব যৌগ হয়।
মাটিতে বিদ্যমান প্রধান প্রধান খনিজ পদার্থ বা অজৈব পদার্থসমূহ হলো,
- ক্যালসিয়াম (Ca)
- অ্যালুমিনিয়াম (Al)
- ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
- লোহা (Fe)
- সিলিকন (Si)
- পটাসিয়াম (K)
- সোডিয়াম (Na)
- অল্প পরিমাণে ম্যাংগানিজ (Mn)
- কপার (Cu)
- জিংক (Zn)
- কোবাল্ট (Co)
- বোরন (B)
- আয়োডিন (I)
- ফ্লোরিন (F)
এছাড়া মাটিতে কার্বোনেট, সালফেট, ক্লোরাইড, নাইট্রেট এবং ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), পটাশিয়াম (K), সোডিয়াম (Na)
ধাতুর জৈব লবণও পাওয়া যায়। মাটিতে বিদ্যমান জৈব পদার্থ হিউমাস (Humus) নামে পরিচিত।
হিউমাস আসলে অ্যামিনো এসিড, প্রোটিন, চিনি, অ্যালকোহল, চর্বি, তেল, লিগনিন, ট্যানিন ও অন্যান্য অ্যারোমেটিক যৌগের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ জটিল পদার্থ। এটি দেখতে অনেকটা কালচে রঙের হয়। হিউমাস তৈরি হয় মৃত গাছপালা ও প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে।
মাটি কি ? (What Is Soil In Bengali)
মাটিতে বিদ্যমান পানির ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে গাছপালার জন্য।
মাটিতে পানি থাকে মাটির কণার মাঝে থাকা ফাঁকা স্থানে। এই রন্ধ্রের আকার আকৃতির উপর নির্ভর করে মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা।
বালি ও কাদামাটির কোনটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা বেশি? নিঃসন্দেহে কাদা মাটির।
এর কারণ হলো কাদামাটির ক্ষেত্রে মাটির কণাগুলোর ফাকে বিদ্যমান রন্ধ্র খুব সূক্ষ্ম, যা পানি ধরে রাখে। অন্যদিকে বালি মাটির বেলায় রন্ধ্রগুলো বড় বড়, যে কারণে পানি আটকে থাকে না বা ধরে রাখতে পারে না।
ফাকা স্থান বা রন্ধ্র ছাড়াও মাটির কণায় শোষিত অবস্থায়ও পানি থাকতে পারে। মাটিতে থাকা হিউমাস পানি শোষণ করে রাখতে পারে। হিউমাসে শোষিত পানি সহজে গাছপালায় স্থানান্তরিত হয় না। মাটিতে পানি না থাকলে কী সমস্যা হয়?
মাটিতে পানি না থাকলে কী সমস্যা হয় তার বড় প্রমাণ হলো মরুভূমি যেখানে দু একটি বিশেষ প্রজাতির গাছ ছাড়া জন্মায় না। অর্থাৎ মাটিতে পানি না থাকলে গাছপালা জন্মাতে পারে না এবং বেড়ে উঠতে পারে না।
তাহলে মাটি কাকে বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
You may also like: ভিনেগার কাকে বলে
মাটি কত প্রকার ও কি কি ? মাটির প্রকারভেদ

মাটির গঠন, বর্ণ, পানি ধারণক্ষমতা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে মাটিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এরা হলো বালু মাটি, পলি মাটি, কাদামাটি এবং দো আঁশ মাটি।
এবার আমরা বিভিন্ন প্রকার মাটির বৈশিষ্ট্য জেনে নিই।
বালু মাটি কী এবং বালু মাটির বৈশিষ্ট্য
বালু মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এদের পানি ধারণ ক্ষমতা খুবই কম। কারণ বালু মাটির পানি ধরে রাখার ক্ষমতা নেই বলে পানি যোগ করলেও বালু মাটি তা শোষণ করতে পারে না।
যদি পারত তাহলে পানি মাটির কণার গায়ে লেগে থাকত আর তোমরা খুব সহজেই বলের মতো মাটির গুটি বানাতে পারতে।
বালু মাটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, এতে বিদ্যমান মাটির কণার আকার সবচেয়ে বড় থাকে, ফলে কণাগুলোর মাঝে ফাকা জায়গা বেশি থাকে, যার ফলে বায়বায়ন অনেক বেশি হয়।
বালু মাটি দানাযুক্ত হয়। বালু মাটিতে অতি ক্ষুদ্র শিলা ও খনিজ পদার্থ থাকে। বালু মাটিতে হিউমাস থাকলে এটি চাষাবাদের জন্য সহজসাধ্য, তবে যেহেতু এই মাটির পানি ধারণক্ষমতা কম, তাই পানি দিলে তা দ্রুত নিষ্কাষিত হয় এবং গ্রীষ্মকালে বিশেষ করে উদ্ভিদে স্বল্পতা দেখা যায়।
তাই যে সকল ফসলাদিতে অনেক বেশি পানি লাগে সেগুলো বালু মাটিতে ভালো হয় না। তবে যখন প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় যা জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, সে সকল ক্ষেত্রে বালু মাটি চাষাবাদের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে পারে।
কারণ, বালু মাটিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় না যার ফলে গাছের শিকড় পঁচে না। জলাবদ্ধতা হলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গাছের শিকড়ে পঁচন ধরে যার ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
পলি মাটি কি এবং পলি মাটির বৈশিষ্ট্য
পলি মাটির পানি ধারণক্ষমতা বালু মাটির চেয়ে বেশি। পলি মাটি চেনার উপায় কী? সামান্য পানিযুক্ত মাটি নিয়ে আঙুল দিয়ে ঘষলে যদি মসৃণ অনুভূত হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটি পলি মাটি। পলি মাটি হাতের সাথে লেগে থাকবে। এতে উপস্থিত পানির জন্য যা বালু মাটির বেলায় ঘটে না।
পলি মাটি খুবই উর্বর হয় আর মাটির কণাগুলো বালু মাটির কণার তুলনায় আকারেও ছোট হয়।
পলি মাটির কণাগুলো ছোট হওয়ায় এরা পানিতে ভাসমান আকারে থাকে এবং একপর্যায়ে পানির নিচে থাকা জমিতে পলির আকারে জমা পড়ে। পলি মাটিতে জৈব পদার্থ ও খনিজ পদার্থ যেমন, কোয়ার্টজ থাকে।
বালু মাটির মতো পলি মাটির কণাগুলোও দানাদার হয় এবং এতে উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেশি থাকে।
কাদা মাটি কি এবং এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
এই মাটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এরা প্রচুর পানি ধারণ করতে পারে। এরা অনেকটা আঠালো ধরনের হয় এবং হাত দিয়ে ধরলে হাতে লেগে থাকে। এই মাটিতে মাটির কণাগুলো খুব সূক্ষ্ম হয়, ফলে কণাগুলোর মধ্যকার রন্ধ্র খুব ছোট ও সরু হয়।
কাদা মাটি থেকে সহজে পানি নিষ্কাশিত হয় না। এই জাতীয় মাটিতে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় যা ফসলাদি বা উদ্ভিদের মূলে পঁচন সৃষ্টি করে। কাদা মাটিতে ফসল চাষের জন্য জৈব সার প্রয়োগ অত্যাবশ্যকীয় হয়ে থাকে। এই মাটিতে খনিজ পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। এই মাটি দিয়ে ঘর সাজানোর তৈজসপত্র, এমনকি গহনাও তৈরী করা হয়।
দো আঁশ মাটি কাকে বলে এবং দো-আঁশ মাটির বৈশিষ্ট্য
এই মাটি বালু, পলি ও কাদা মাটির সমন্বয়েই তৈরি হয়। দো আঁশ মাটিতে থাকা বালু, পলি ও কাদা মাটির অনুপাতের উপর নির্ভর করে দো আঁশ মাটির ধরন কেমন হবে।
দো আঁশ মাটির একদিকে যেমন পানি ধারণ ক্ষমতা ভাল আবার প্রয়োজনের সময় পানি দ্রুত নিষ্কাশনও হতে পারে। তাই ফসল চাষাবাদের জন্য দো আঁশ মাটি খুবই উপযোগী।
উপরে উল্লেখিত চার প্রকার ছাড়াও আরো দু প্রকারের মাটি পাওয়া যায়। এরা হলো পিটি মাটি ও খড়িমাটি।
পিটি মাটি তৈরি হয় মূলত জৈব পদার্থ থেকে আর সেকারণে এতে অন্য সব মাটি থেকে জৈব পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। সাধারণত ডোবা ও আর্দ্র এলাকায় এই মাটি পাওয়া যায়। এই মাটিতে পুষ্টিকর উপাদান কম থাকে। তাই ফসল উৎপাদনের জন্য তেমন উপযোগী নয়।
অন্যদিকে খড়িমাটি ক্ষারীয় হয় এবং এতে অনেক পাথর থাকে। এই মাটি সাধারণত দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং সেকারণে ফসল উৎপাদনের জন্য খুব একটা উপযুক্ত নয়, বিশেষ করে গ্রীস্মকালে। এছাড়াও খড়িমাটি থেকে গাছপালার জন্য অত্যাবশ্যকীয় আয়রন ও ম্যাগনেমিয়াম পাওয়া যায়।
সর্বশেষ
আশা করি মাটি কাকে বলে, মাটি কত প্রকার ও কি কি এবং মাটির উপাদান কি কি এ বিষয়ে এই আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে।
মাটি সম্পর্কে এই আর্টিকেলটি বিজ্ঞান বইয়ের সহায়তা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই মাটি কি এ বিষয়ে আশা করি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি ভালো লেগে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।