মাথাপিছু আয় কি ? বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কত ?
মাথাপিছু আয় কি বা মাথাপিছু আয় কাকে বলে, মাথাপিছু আয়ের সূত্র কোনটি, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কত মার্কিন ডলার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায় এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।

মাথাপিছু আয় বলতে কি বোঝায় এ বিষয়ে জানার আগে আমাদের মোট দেশজ উৎপাদন (Gross Domestic Product) এবং মোট জাতীয় উৎপাদন (Gross National Product) এই দুইটি বিষয়ে জেনে নিতে হবে।
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)
একটি দেশের অভ্যন্তরে দেশি বা বিদেশি নাগরিকদের দ্বারা প্রতি বছর উৎপাাদিত সকল দ্রব্য ও সেবার মোট আর্থিক মূল্য হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন (GDP)।
জিডিপি হিসাব করা হয় মূলত একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির শক্তি বা সামর্থ্য বোঝার জন্য। তবে দেশের কোনো ব্যক্তি যদি বিদেশে কাজ করে অথবা কোনো কোম্পানি যদি বিদেশে ব্যবসা করে দেশে টাকা পাঠায় সেই আয় মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হিসাবে পরিগণিত হবে না অর্থাৎ জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হবে না।
মূলত জিডিপি হচ্ছে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের আর্থিক মূল্য।
মোট জাতীয় উৎপাদন (জিএনপি)
একটি দেশের নাগরিক নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছর) যে সকল দ্রব্য ও সেবা উৎপাদন করে তার মোট আর্থিক মূল্য হচ্ছে মোট জাতীয় উৎপাদন (GNP)।
অর্থাৎ একটি দেশের নাগরিক নিজ দেশসহ বিশ্বের যেখানেই চাকরি বা ব্যবসা করুক না কেন যখন তাদের অর্জিত আয় দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয় তখন তা মোট জাতীয় উৎপাদন হিসাবে বিবেচিত হবে।
জিএনপি হিসাব করা হয় একটি দেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিক অবদান বোঝার জন্য।
যেমন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিদেশে চাকরি বা ব্যবসা করে অর্জিত অর্থের যে পরিমাণ অর্থ বৈধপথে বাংলাদেশে পাঠায় তা বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের অংশ হবে।
আশা করি জিডিপি কি এবং জিএনপি কি এসবের বিষয়ে উপরে জানতে পেরেছেন। এখন চলুন জেনে নিই মাথাপিছু আয় কি অথবা মাথাপিছু আয় কাকে বলে ?
মাথাপিছু আয় কি ?
একটি দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের যোগফলকে সেই দেশের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়।
মাথাপিছু আয়ের মাধ্যমে একটি দেশের মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার মান নির্ধারণ করা হয়।
যে দেশের মাথাপিছু আয় যত বেশি সে দেশের জনগণের জীবনযাত্রার মান তত্ত উন্নত এবং অর্থনীতি তত বেশি সমৃদ্ধ।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, একটি দেশের মাথাপিছু আয়কে গড় আয় বলা যেতে পারে।
যেহেতু দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের যোগফলকে সেই দেশের মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়, তাই মাথাপিছু আয়কে আমরা সকল জনসংখ্যার গড় আয় বলতে পারি।
তাহলে আশা করি মাথাপিছু আয় কি বা মাথাপিছু আয় বলতে কি বোঝায় এ বিষয়ে ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
মাথাপিছু আয়ের সূত্র
মাথাপিছু আয় নির্ণয়ের সূত্র হলো:
মাথাপিছু আয় = কোনো নির্দিষ্ট বছরের মোট জাতীয় আয় / ঐ বছরের মোট জনসংখ্যা
যেমন, ২০১১ সালে একটি দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১০ কোটি এবং ঐ সময়ে মোট জাতীয় উৎপাদন বা আয় হলো ৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার।
সুতরাং মাথাপিছু আয় হলো:
৫০০০ কোটি মার্কিন ডলার / ১০ কোটি = ৫০০ মার্কিন ডলার
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কত মার্কিন ডলার ?
যে কোনো দেশের কৃষি, শিল্প, সেবাসহ যাবতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের আয় বৃদ্ধি করা। জনগণের আয় বৃদ্ধি পেলে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায় এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয়।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে ধীরে ধীরে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে।
একটি দেশ কতোটা উন্নত বা অনুন্নত তা বিচার করা হয় কতোগুলো সূচক বা মানদণ্ডের সাহায্যে। এই মানদন্ডগুলো হলো দেশটির মোট জাতীয় উৎপাদন, জনগণের মাথাপিছু আয়, জীবনযাত্রার মান প্রভৃতি।
এইসব দিক বিচারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক উন্নতি লাভ করেছে। আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রতি বছরই পূর্ববর্তী বছরগুলোকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যে যেমন আছে আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন তেমনি আছে প্রবাসে কর্মরত শ্রমিক ও অন্যান্য চাকরিজীবীদের অবদান।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৪-২০০৫ অর্থবছরে যেখানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (Gross Domestic Product: GDP) পরিমাণ ছিল ৩,৭০,৭০৭ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ২২,৩৮,৪৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। (উৎস: অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮)
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় কত ?
মাথাপিছু আয় কোন একজন ব্যক্তির আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরে মোট আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যে পরিমাণ আয় হয়, তাকে দেশের মোট জাতীয় আয় বলা হয়। সেই জাতীয় আয়কে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে মাথাপিছু আয় পাওয়া যায়।
২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৯১ মার্কিন ডলার। যার পরিমাণ বাংদেশি টাকায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৭৩৮ টাকা। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
যেখানে বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ২ হাজার ৩২৬ ডলার অথবা ১ লাখ ৯৭ হাজার ১৯৯ টাকা। এর মানে হলো, পরবর্তী এক অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ২৬৫ ডলার বেড়েছে।
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির উপায়
দেশের কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি।
দেশে উৎপাদন বাড়লে জনগণের জীবনযাত্রার উপর তার প্রভাব পড়বে। দারিদ্র্য হ্রাস পাবে, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে, বেকারত্ব হ্রাস পাবে।
এর সঙ্গে যদি আমাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তবে প্রবৃদ্ধির সূচকে আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
আমাদের শেষ কথা
মাথাপিছু আয় কি বা মাথাপিছু আয় মানে কি এর বিষয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা মাথাপিছু আয়ের বিষয়ে ধারণা পেয়েছেন।
যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
অবশ্যই পড়ুন –
- ২০২১ সালের নোবেল বিজয়ীদের নামের তালিকা
- তথ্য অধিকার আইন কি ?
- স্যাটেলাইট কি ?
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির গুরুত্ব