মাশরুম চাষ পদ্ধতি : জেনেনিন কিভাবে করবেন মাশরুম এর চাষ
মাশরুম কিভাবে চাষ করা যায়? মাশরুম চাষ পদ্ধতি কি? মাশরুম চাষ কেন লাভজনক কেন? এসব বিষয়ে যদি আপনি জেনে নিতে চাইছেন তাদের আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কিভাবে করবেন মাশরুম এর চাষ এ বিষয়ে জানবো।

বর্তমানে মাশরুমের চাষ অনেক লাভজনক। তাই আপনি যদি এই লাভজনক মাশরুমের চাষ করতে চাইছেন তাহলে আপনাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত ভাবে অবশ্যই জেনে নিতে হবে।
মাশরুম চাষের প্রয়ােজনীয়তা
আমরা জানি ছত্রাক ফসলের অনেক রােগের জন্য দায়ী । কিন্তু সব ছত্রাক রােগ সৃষ্টি করে না । অনেক ছত্রাক রয়েছে যারা আমাদের জন্য উপকারী । মাশরুম এমন এক ধরনের ছত্রাক যা সম্পূর্ণ খাওয়ার উপযােগী , পুষ্টিকর , সুস্বাদু ও ঔষধি গুণ সম্পন্ন । আসলে মাশরুম এক ধরনের মৃতজীবী ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ যা ভক্ষণযােগ্য ।
মাশরুম ও ব্যাঙের ছাতা এক জিনিস নয় । ব্যাঙের ছাতা প্রাকৃতিকভাবে যত্রতত্র গজিয়ে উঠা বিষাক্ত ছত্রাকের ফলন্ত অঙ্গ । আর মাশরুম টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে উৎপন্ন বীজ দ্বারা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে চাষ করা সবজি ।
আফিল উৎপাদন মাশরুম নিজে সুস্বাদু খাবার এবং অন্য খাবারের সাথে ব্যবহার করলে তার স্বাদও বাড়িয়ে দেয় । মারমণ স্বাদন মাংসের মতাে । মাশরুম দিয়ে চায়নিজ ও পাঁচতারা হােটেলে নানা রকম মুখরােচক খাবার তৈরি করা হয় ।
তবে দেশীয় পদ্ধতিতে মাশরুম সবজি , ফাই , সুপ , পােলাও , বিরিয়ানি । লভলস , চিংড়ি ও ছােট মাছের সাথে ব্যবহার করা যায় ।
মাশরুম তাজা , শুকনা বা গুঁড়া হিসেবে খাওয়া যায় । পুষ্টিমান বিচারে মাশরুম সবার সেরা ফসল ।
কারণ মাশরুমে অতি প্রয়ােজনীয় খাদ্যোপাদান , যেমন প্রােটিন , ভিটামিন ও মিনারেলস অতি উচ্চ মাত্রায় আছে ।
প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনা মাশরুমে ২৫-৩৫ গ্রাম আমিষ , ১০-১৫ গ্রাম সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেলস , ৪০-৫০ গ্রাম শর্করা ও আঁশ এবং ৪-৬ গ্রাম চর্বি আছে ।
মাশরুমের আমিষ অত্যন্ত উন্নত মানের । এ আমিষে মানবদেহের জন্য প্রয়ােজনীয় ৯ টি এমাইনাে এসিডই আছে ।
এ আমিষ গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ , হৃদরােগ ও মেদভুড়ি হওয়ার আশঙ্কা থাকে না ।
কারণ আমিষের সাথে ক্ষতিকর চর্বি থাকে না ।
পক্ষান্তরে মাশরুমের চর্বি হাড় ও দাঁত তৈরিতে এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে ।
মাশরুমের শর্করায় অনেক ধরনের রাসায়নিক উপাদান থাকে যা অনেক জটিল রােগ নিরাময়ে কাজ করে । ভিটামিন ও মিনারেল দেহের রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা তৈরি করে ।
আমাদের দেহের জন্য দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা রয়েছে ।
আমরা প্রতিদিন মাশরুম খাওয়ার মাধ্যমে প্রয়ােজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের চাহিদা মেটাতে পারি । মাশরুমে থায়ামিন ( বি ১ ) , রিবােফ্লাবিন । ( বি ২ ) , নায়াসিন ইত্যাদি ভিটামিন এবং ফসফরাস , লৌহ , ক্যালসিয়াম , কপার ইত্যাদি মিনারেল প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ।
পুষ্টিগুণের কারণে মাশরুম অনেক রােগের প্রতিরােধক ও নিরাময়কারী হিসেবে কাজ করে , যেমন- ডায়াবেটিস , হৃদরােগ , উচ্চ রক্তচাপ , রক্তশূন্যতা , আমাশয় , চুল পড়া , টিউমার ইত্যাদি ।
একজন সুস্থ লােকের প্রতিদিন ২০০-২৫০ গ্রাম সবজি খাওয়া প্রয়ােজন । আমরা প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ গ্রাম (আলু বাদে) সবজি খাই । যা চাহিদার তুলনায় খুবই কম ।
ফলে শরীরের জন্য প্রয়ােজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলের অভাবে বিভিন্ন রােগে ভুগে থাকি । বাংলাদেশে দ্রুত চাষযােগ্য জমি কমে যাচ্ছে । অধিকাংশ জমি ধান চাষে ব্যবহৃত হয় ।
সবজি চাষের আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ানাে কঠিন ।
এমতাবস্থায় মাশরুম হতে পারে আদর্শ ফসল ।
মাশরুম এমন একটি ফসল যা চাষ করার জন্য কোনাে উর্বর জমির প্রয়ােজন নেই । ঘরের মধ্যে তাকের উপর রেখেও চাষ করা যায় এবং অত্যন্ত অল্প সময়ে অর্থাৎ ৭-১০ দিনের মধ্যে ফলানাে যায়।
বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের অত্যন্ত উপযােগী ।
মাশরুম চাষের উপকরণ , যেমন – খড় , কাঠের গুড়া , আখের ছােবড়া , পচা পাতা ইত্যাদি সস্তা ও সহজলভ্য ।
মাশরুম চাষ ব্যবসায়িক দিক থেকে খুবই লাভজনক । কারণ মাশরুম চাষে কম পুঁজি , কম শ্রম দরকার হয় ।
অল্প দিনের মধ্যে বিনিয়ােগকৃত অর্থ তুলে আনা যায় । অন্যদিকে একক জায়গায় অধিক ফলন , লাভজনক বাজারমূল্য পাওয়া যায় । তাই মাশরুম চাষ করে বেকার যুবসমাজ সহজেই আত্ম – কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে ।
ঘরে ঘরে মাশরুম চাষ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা যেমন মেটানাে যাবে তেমনি বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে ।
এখন জেনে নিন মাশরুম চাষ এর পদ্ধতি সম্পর্কে।
মাশরুম চাষ পদ্ধতি : কিভাবে করবেন মাশরুম এর চাষ
বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে চাষ করা যায় মিল্কি , ঋষি ও স্ট্র মাশরুম এবং শীতকালে শীতাকে , বাটন , শিমাজি ও ইনােকি মাশরুম ।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয় বারােমাসি ওয়েস্টার মাশরুম ।
বিভিন্ন ধরনের মাশরুম চাষে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।
আমরা এ পাঠে ওয়েস্টার মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব ।
কিভাবে মাশরুমের বীজ বা স্পন তৈরি করবেন ?
মাশরুমের বীজ ল্যাবরেটরিতে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে উৎপাদন করা হয় । চাখি পর্যায়ে মাশরুম চাষের জন্য প্যাকেটজাত বীজ কিনতে পাওয়া যায় যাকে বাণিজ্যিক স্পন বলে । আবার খড় দিয়ে চাষিরা নিজেরাও স্পন তৈরি করে নিতে পারেন । সে ক্ষেত্রে চাষিদেরকে বাজার থেকে মাদার স্পন সংগ্রহ করে স্পন তৈরি করে নিতে হয় ।
বাণিজ্যিক স্পন চাষঘর তৈরি
মাশরুম চাষের ঘরটিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন প্রবেশের জন্য জানালা রাখতে হবে । ঘরটিতে আবছা আলাের ব্যবস্থা রাখতে হবে । ঘরের তাপমাত্রা ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার ব্যবস্থা করতে হবে । মাশরুম আর্দ্র অবস্থা পছন্দ করে । ঘরটিতে ৭০-৮০ % আপেক্ষিক আর্দ্রতার ব্যবস্থা করতে হবে । মাশরুম চাষ ঘরে অসংখ্য অনুজীবের শ্বাস – প্রশ্বাসের ফলে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয় । কার্বন ডাই অক্সাইড ভারী বলে নিচের দিকে জমা হয় । এজন্য বেড়ার নিচে খােলা রাখতে হয় ।
স্পন সংগ্রহ করার পদ্ধতি
চাষঘর তৈরির পর বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে পলি প্যাকেটে তৈরি স্পন সংগ্রহ করতে হবে । ভালাে স্পনের বৈশিষ্ট্য হলাে প্যাকেটটি সুষমভাবে মাইসিলিয়াম দ্বারা পূর্ণ ও সাদা হবে । স্পন সংগ্রহের পর তাড়াতাড়ি প্যাকেট কাটার ব্যবস্থা করতে হবে । কাটতে দেরি হলে বস্তা থেকে প্যাকেট বের করে আলাদা আলাদা জায়গায় ঘরের ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে ।
প্যাকেট কর্তন
চাষঘরে বসানাের আগে স্পন প্যাকেট সঠিক নিয়মে কেটে চেঁছে পানিতে চুবিয়ে নেওয়া প্রয়ােজন । স্পন প্যাকেটের কোনাযুক্ত দুই কাধ বরাবর প্রতি কাধে ২ ইঞ্চি লম্বা এবং ১ ইঞ্চি ব্যাস করে কাটতে হবে । উভয় পার্শ্বের এ কাটা জায়গার সাদা অংশ ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলতে হবে । এবার প্যাকেটটি ৫-১৫ মিনিট পানিতে উপুড় করে চুবিয়ে নিতে হবে । চুবানাের পর পানি ভালােভাবে ঝরিয়ে সরাসরি চাষঘরের মেঝেতে অথবা তাকে সারি করে সাজিয়ে চাষ করতে হবে ।
মাশরুমের পরিচর্যা করুন
চাষঘরের মেঝে বা তাকে দুই ইঞ্চি পর পর স্পন সাজাতে হবে । স্পন প্যাকেটের চারপাশের আর্দ্রতা ৭০-৮০ % রাখার জন্য প্রয়ােজন অনুযায়ী গরমে ৪-৫ বার , শীতে বা বর্ষায় ২-৩ বার পানি স্প্রে করতে হবে । প্ৰেয়ারের নজল প্যাকেটের এক ফুট উপরে রেখে স্প্রে করতে হবে । আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পন প্যাকেটের উপর কখনাে খবরের কাগজ ভিজিয়ে , কখনাে বস্তা ভিজিয়ে একটু উঁচু করে রাখতে হবে ।
মাশরুমের অন্যান্য পরিচর্যা সমূহ
পরিচর্যা ঠিকমতাে হলে ২-৩ দিনের মধ্যে মাশরুমের অঙ্কুর পিনের মতাে বের হবে । প্রতি পার্শ্বে ৮-১২টি বড় অঙ্কুর রেখে ছােটগুলাে কেটে ফেলতে হবে । ৫-৭ দিনের মধ্যে মাশরুম তােলার উপযােগী হবে । প্রথমবার মাশরুম তােলার পর একদিন বিশ্রাম অবস্থায় রাখতে হবে । পরের দিন আগের কাটা অংশে পুনরায় ব্লেড দিয়ে চেঁছে ফেলে পানি প্রে করতে হবে । একটি প্যাকেট থেকে ৮-১০ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায় । এতে একটি প্যাকেট থেকে ২০০-২৫০ গ্রাম মাশরুম পাওয়া যাবে ।
মাশরুম সগ্রহ ও সংরক্ষণ করার পদ্ধতি
মাশরুম যথেষ্ট বড় হয়েছে কিন্তু শিরাগুলাে ঢিলা হয়নি এমন অবস্থায় হাত দিয়ে আলতাে করে টেনে তুলতে হবে । পরে গােড়া কেটে বাছাই করে পলি ব্যাগে ভরে মুখ বন্ধ করে বাজারজাত করতে হবে । এগুলাে ঠাণ্ডা জায়গায় ২-৩ দিন রেখে খাওয়া যায় । ফ্রিজে রাখলে ৭-৮ দিন ভালাে থাকে ।
সর্বশেষ
আজকের আর্টিকেলে মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আশা করি মাশরুম চাষ কেন লাভজনক, মাশরুম চাষের প্রয়োজনীয়তা কি এবং কিভাবে মাশরুম এর চাষ করবেন এ বিষয়ে ধারণা পেয়ে গেছেন।
অবশ্যই পড়ুন-
- অ্যাপ তৈরি করে কিভাবে আয় করা যায়
- ভিনেগার কাকে বলে
- চোখ ভালো রাখার উপায় গুলো কি কি
- অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক ও ফলাফল