মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি ?

মোটা হওয়ার সহজ উপায়- মোটা হওয়ায় যেমন অস্বস্থি লাগে তেমনি চিকন হলে বেমানান দেখা যায়। বন্ধুরা আপনারা মোটা হওয়ার জন্য অনেক কিছু ট্রাই করেছেন কিন্তু কোনো ফল পাননি এবং দিন দিন বয়সের তুলনায় আপনার ওজন কমে যাচ্ছে?

মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি
কিভাবে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মোটা হওয়া যায় ?

কোনো সমস্যা থেকে সমাধান চাইলে ঐ সমস্যার কারণ গুলো আগে জানতে হবে। মোটা হওয়ার আগে জেনে নিন কেন আপনি চিকন।

  • টেনশন করা।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ না করা অথবা একই নিয়মে খাবার না খাওয়া।
  • ঘুম কম হওয়া।
  • পরিপাক তন্ত্রের কারনে ওজন কমে যায়।
  • কোন রোগ আছে কি না সেটি identify করা।
  • হরমোন জনিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন: অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, অ্যাডিসন রোগ ও প্যান হাইপোপিটুইটারিজম ইত্যাদিতে সাধারণত ওজন কমে যায়।
  • দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ, যেমন যক্ষ্মা বা টিবি রোগ, কালাজ্বর, লিভার অ্যাবসেস এবং এইচআইভি বা এইডস, আমাশয় ওজন কমার অন্যতম কারণ।
  • শরীরের নানা জায়গায় ক্যানসার হতে পারে, যেমন খাদ্যনালি, পাকস্থলী, কোলন, প্যানক্রিয়াস, লিভার, পিত্তথলি, পিত্তনালি, মস্তিষ্ক, নাক, কান, গলা, থাইরয়েড, ফুসফুস, কিডনি, মূত্রথলি, বোন, রক্ত, জরায়ু, ওভারি, সারভিক্স ইত্যাদির ক্যানসার।
  • খেতে বা গিলতে অসুবিধা থাকে, যেমন- স্ট্রোকের পর বা বয়স্ক ব্যক্তি, ডিমেনশিয়ার রোগী।
  • মানসিক সমস্যা, যেমন- গুরুতর হতাশা, অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা।
  • গ্যাস্টিক আলসারের কারণে।
  • বাত ব্যাথা হলে।

উপরে উল্লেখিত কারণ গুলো আপনাকে মোটা হওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে।

এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি?

মোটা হওয়ার সহজ উপায় কি কি ?

অতিরিক্ত মোটা আমাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। তাই আমাদের উচ্চতার উপর ভিত্তি করে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

তাহলে উচ্চতা অনুযায়ী আপনার আদর্শ ওজন কত হবে?

বডি ম্যাস ইনডেক্স বা বিএমআই হলো যেটি আদর্শ ওজন নির্ণয়ের গাণিতিক উপায়।

যেমন- আপনার উচ্চতা যত সেন্টিমিটার (cm) তা থেকে ১০০ বিয়োগ করলে আপনি পাবেন আপনার কিলোগ্রামে আপনার কাম্য ওজন।

এ ওজন থেকে মেয়েদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ছেলেদের জন্য ১০ শতাংশ বাদ দিলে পাবেন আপনার আদর্শ ওজন।

How to Become Fat From Thin Fast ?

চিকন থেকে মোটা হওয়ার জন্য আপনাকে যা যা করতে হবে অথবা মোটা হওয়ার জন্য আপনাকে যে যে খাবার গুলো গ্রহণ করতে হবে এসব বিষয়ে নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।

আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে মোটা হওয়ার সহজ উপায় গুলো জেনে রাখুন।

সকালের নাস্তায় রাখতে পারি

  • দুধ (হার মজবুত ও রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে)
  • ডিম( ত্বক, চোখের সমস্যা ও রোগ প্রতিরোধ করে)
  • কলা( রোগ প্রতিরোধ,হজম করে)
  • খেজুর(রোগ প্রতিরোধ এবং হাড় গঠনে সাহায্য করে)

ডাল

ঘন ডালে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন যা অন্যান্য প্রোটিন উৎস মাংসতে যে পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায় ঘন ডালেও সেই পরিমাণ প্রোটিন আছে।

ডালে আছে আয়রন, পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম আরও অনেক ধরনের পুষ্টি আছে।

ক্যালরি গ্রহণ

ওজন দ্রুত বৃদ্ধি করতে চাইলে দিনে ৬০০-৭০০ ক্যালোরি বেশি গ্রহণ করতে হবে।

বেশি বেশি উচ্চ ক্যালরি যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।

ঘি, মাখন, ডিম, পনির, কোমল পানীয়, গরু-খাসির মাংস, আলু ভাজা, মিষ্টি জাতীয় খাবার, চকলেট, কন্ডেনস্‌ড মিল্ক, ডিম, কিসমিস, খেজুর, দই, কলা, আঙুরের জুস, আনারস ইত্যাদি খাবারে প্রচুর ক্যালরি থাকে। তাই প্রতি বেলার খাদ্য তালিকায় এই খাবার গুলি রাখার চেষ্টা করুন।

প্রোটিন গ্রহণ

প্রোটিন সমৃদ্ধ কিছু সাধারণ খাবার হলো ডিম, দুধ, কুমড়োর বিজ, মাছ, চিনাবাদাম ইত্যাদি।প্রতিদিন ৩ বেলার খাদ্য তালিকায় প্রোটিন রাখতে হবে।

বারবার খাবার গ্রহণ

আমরা সাধারণত দিনে তিন বেলা খাবার খেয়ে থাকি। আসলে আমাদের উচিত মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিন ঘন্টা অন্তর অন্তর অল্প করে কিছু খাওয়া এবং এই খাওয়া গুলা অবশ্যই পুষ্টিকর হতে হবে।

টক দই ফল ছানা বা অন্যান্য যে ধরনের পুষ্টিকর খাবার আছে এগুলো আমরা অন্তর অন্তর খেতে পারি। এগুলো আমাদের এক্সট্রা পুষ্টি জোগাতে সহায়তা করবে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ

ওজন বাড়ানোর জন্য ক্যালরি যথেষ্ট না। মাত্রাতিরিক্ত ক্যালরি কখনোই কারো জন্য ভালো না।

প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। আপনি প্রতি খাবারের তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম, দুধ, ডাল অথবা অন্যান্য খাবার গুলো অবশ্যই রাখবেন।

দুধ এবং মধু

ঘুমোতে যাওয়ার আগে এমন কিছু খেতে পারেন যা বেশ পুষ্টিকর এবং ক্যালোরিযুক্ত।

প্রতিদিন ঘুমানোর আগে দুধ এবং মধু মিশিয়ে খান। এটি ওজন বৃদ্ধিতে পরীক্ষিত এবং মোটা হওয়ার সহজ উপায়।

কিসমিস

কিসমিসে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ আছে। আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা সহজে রোগমুক্তির কারণ। আর আছে প্রচুর আয়রন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফাইবার।

রাত্রে শোয়ার আগে এক গ্লাস জলে আধ কাপ কিসমিস ও বাদাম ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ফুলে উঠলে তা খান।

বাদাম

বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে চর্বি ও ক্যালারি রয়েছে। ওজন বারাতে চর্বিযুক্ত খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

খেজুর

খেজুরে পাওয়া যায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার অনেকগুলি রোগ নিরাময় করতে পারে। এটি খেলে ডায়াবেটিস, স্থূলত্ব এবং হৃদরোগ নিরাময় হয়।

একই সাথে এটি পেটের ক্যানসার এবং আলসারের মতো অবস্থার ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়তা করে। এটি ওজন বারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে।

ছোলা ও তার পানি খান

মোটা হওয়ার জন্য ছোলার বিকল্প নাই। ছোলা মলিবেডনাম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর চমৎকার উৎস।

ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ফলেট এবং খাদ্য আঁশ আছে সেই সাথে আছে আমিষ, ট্রিপট্যোফান, কপার, ফসফরাস এবং আয়রন।

তাই প্রতিদিন রাত্রে ১০ থেকে ১২ টি ছোলা ভিজেয়ে রাখুন। আর সকালে ওঠে ছোলা ও তার পানি খান।

গ্যাস হয় এমন খাবার না খাওয়া

যেসব খাবার খেলে গ্যাস সৃষ্টি হয় সেসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন- ভাজাপোড়া খাবার গ্রহণ করা যাবে না।

মোটা হবার জন্য পাস্তা ও নুডুলস খান

কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ পাস্তা ও নুডলস উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার।

ফ্যাটি খাবার

ওজন বৃদ্ধিতে বাহিরের খাবার যেমন আইসক্রিম, পেস্ট্রি, বার্গার ইত্যাদি খাবার খুবই কার্যকরী।

এতে ফ্যাট থাকে, বেশি খেলে শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর!আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে চকলেট এবং চিজ রাখতে পারেন। কিন্তু সঠিক পরিমাণে খেতে হবে।

ফ্যাটি খাবার স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। বাট এটি  তারাতাড়ি মোটাহতে সাহায্য করে।

নিয়মিত ব্যায়াম

ওজন কমাতে যেমন ব্যায়াম(exercise) প্রয়োজন তেমনি ওজন বাড়াতে এটি সাহায্য করে।

রেগুলার ব্যায়াম করুন দেখবেন আপনার হজম শক্তি বেড়ে যাবে এবং খিদা লাগবে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত ভাবে ব্যায়াম করুন।

টেনশন মুক্ত থাকুন

প্রত্যেকটি মানুষের কম বেশি টেনশন রয়েছে।

অতিরিক্ত টেনশন যেকোন সুস্থল মানুষকে দুর্বল করে ফেলে। তাই সর্বদা চেষ্টা করুন অতিরিক্ত টেনশন হতে দূরে।

নিয়মিত ঘুম

নিয়মিত ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খুবই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দৈনিক সর্বনিম্ন ৮ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। আপনি প্রয়োজনে একটি রুটিন অনুযায়ী আপনার লাইফ স্টাইল শুরু করতে পারেন।

নিয়মিত একমাস আপনি যদি চর্চা করে করেন তাহলে অবশ্যই আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ঘুম কখনোই ভালো না।

সর্বশেষ

মোটা হওয়ার সহজ উপায় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে। উপরে যে যে খাবার গুলো উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে গ্রহণ করলে আপনাকে মোটা হতে সাহায্য করবে।

কিভাবে মোটা হওয়া যায় এই বিষয়ে যদি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করবেন। আর এর বিষয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *