রচনা লেখার নিয়ম | প্রবন্ধ রচনা লেখার সঠিক নিয়মাবলী
প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম:
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা প্রবন্ধ রচনা লেখার সঠিক নিয়মাবলী এবং রচনা প্রতিযোগিতায় রচনা লেখার নিয়ম এর বিষয়ে সবকিছু জানব।
প্রবন্ধ কি ?
প্রবন্ধ হচ্ছে প্রকৃষ্ট বন্ধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ গদ্য রচনা। তা হতে পারে কোনো কিছর বিবরণ বা বর্ণনা, হতে পারে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তামূলক আলোচনা।
এ দুটো দিক থেকে প্রবন্ধ হতে পারে দু রকম:
- লঘু প্রবন্ধ
- ভাবগম্ভীর প্রবন্ধ
লঘু প্রবন্ধ কি ধরনের হয় ?
লঘু প্রবন্ধ সাধারণত বর্ণনাধর্মী হয়ে থাকে। এ ধরনের রচনা যেকোনো পরিচিত বিষয় নিয়ে লেখা যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ধারণা, অভিজ্ঞতা, মতামত ইত্যাদি স্বচ্ছন্দে প্রকাশ করা চলে।
এ জাতীয় লেখার ধরন সাধারণত হালকা হয়, চাল হয় লঘু। গদ্য হওয়া উচিত সরল ও ঝরঝরে। এতে তা পড়তে ভালো লাগে। এ ধরনের রচনা গৎবাধা হলে চলে না। তাতে লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ স্বচ্ছন্দে প্রকাশ করা চলে।
এভাবে প্রত্যেকটি রচনা হয়ে ওঠে অন্য রচনা থেকে একেবারে আলাদা। এ ধরনের রচনায় কোনো কিছু বর্ণনা করার সময়ে এমনভাবে করতে হয় যেন সব কিছু ছবির মতো ফুটে ওঠে।
তাতে যেন বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ, ধ্বনি ইত্যাদিও অনুভব করা যায়। যেকোনো পরিচিত বিষয় নিয়ে এ ধরনের প্রবন্ধ লেখা চলে।
পরিচিত প্রকৃতি, পশুপাখি, গাছপালা, মানুষজন যা নিয়েই লেখা হোক না কেন তাদের সব বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করা উচিত।
ভাবগম্ভীর প্রবন্ধ কেমন হয় ?
এ ধরনের রচনা সাধারণত চিন্তামূলক হয়ে থাকে। তাতে থাকে নানা তত্ত্ব ও তথ্য।
মানব চরিত্রের নানা বৈশিষ্ট্য, নানারকম ভাব ধারণা, সমাজ ও সংস্কৃতির নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা এ ধরনের রচনার মধ্যে পড়ে।
এ ধরনের রচনায় লেখকের ব্যক্তিগত পছন্দ, অভিজ্ঞতা, স্মৃতি ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ তেমন থাকে না। তবে প্রবন্ধকারের চিন্তা ও অভিমত এতে কখনো কখনো থাকতে পারে।
প্রবন্ধ রচনা লেখার কৌশল
মালা গাঁথতে হলে যেমন নানারকম ফুল সংগ্রহ করতে হয়, প্রবন্ধ রচনা করতে হলেও তেমনি নানা চিন্তা ভাবনা ও তথ্য জোগাড় করতে হয়।
কোনো বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে হলে সে বিষয়ে যে সব চিন্তা ও তথ্য মাথায় আসে সেগুলো সংকেত সূত্র হিসেবে প্রথমে খসড়াভাবে টুকে রাখবে। ঐ বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কোনো বই, পত্র পত্রিকার সাহায্য নিয়ে বা শিক্ষক শিক্ষিকা, মা বাবা বা অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করে তথ্য সংগ্রহ করে তাও টুকে রাখবে।
এগুলো হলো প্রবন্ধ রচনার উপকরণ।
মালা গাঁথার সময় যেমন এক এক রঙের ফুলকে অন্য রঙের সঙ্গে মিলিয়ে সাজাতে হয় তেমনই প্রবন্ধ লেখার সময় প্রবন্ধের এক একটা দিককে গুরুত্ব অনুযায়ী সাজাতে হয়।
প্রবন্ধ লেখার আগে তাই তোমার এলোমেলো সংক্তেসূত্রগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজিয়ে নেবে।
প্রবন্ধ রচনার একটা সাধারণ কাঠামো রয়েছে।এর তিনটি অংশ। যেমন:
ভূমিকা, মূল অংশ ও উপসংহার।
প্রবন্ধ রচনার সময় এই কাঠামো অনুসরণ করা দরকার।
প্রবন্ধের কাঠামো: রচনা লেখার নিয়ম
প্রবন্ধের সাধারণত তিনটি প্রধান অংশ থাকে।
- ভূমিকা
- মূল অংশ
- উপসংহার
ভূমিকা কি: রচনায় ভূমিকা কিভাবে লিখতে হয় ?
প্রবন্ধের প্রথম অনুচ্ছেদটি হবে এর ভূমিকা বা সূচনা।
ভূমিকা হচ্ছে প্রবন্ধের সূচনা অংশ। অনেকটা বিষয়ে ঢোকার দরজার মতো ভূমিকা যত বিষয় অনুযায়ী, আকর্ষণীয় ও মনোরম হয় ততই ভালো।
লক্ষ রাখা দরকার, ভূমিকা অংশে যেন অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য ভিড় না করে আর তা যেন খুব দীর্ঘ না হয়।
একটি রচনার মূল অংশ
এটি প্রবন্ধের মধ্যভাগ। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য এখানে কয়েকটি অনুচ্ছেদে উপস্থাপন করা হয়।
এজন্যে প্রথমে মনে মনে ছক করে নেওয়া ভালো। কাগজে খসড়া করেও নেওয়া চলে।
প্রতিটি অনুচ্ছেদের শুরুতে প্রয়োজনে সংকেত বা পয়েন্ট লেখা যেতে পারে। সংকেতগুলো গুরুত্ব অনুযায়ী একের পর এক সাজাতে হয়।
উপসংহার কি: রচনায় উপসংহার কিভাবে লিখতে হয় ?
ভূমিকা থেকে শুরু করে রচনার মধ্যাংশে এসে রচনা যে ভাবব্যঞ্জনা পায় তা শেষ করতে হয় উপসংহারে। এদিক থেকে উপসংহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহারে অল্প কথায় সমাপ্তিসূচক ভাব প্রকাশ ভালো। তাতে রচনা হয় সার্থক। উপসংহারে কখনো কখনো ব্যক্তিগত অভিমত প্রকাশ করাও চলে।
প্রাসঙ্গিক সমস্যা উত্তরণে আশাবাদ বা প্রত্যাশাও ব্যক্ত করা যেতে পারে।
প্রবন্ধ রচনার দক্ষতা আসবে: রচনা প্রতিযোগিতায় রচনা লেখার নিয়ম
প্রবন্ধ রচনায় রাতারাতি কেউ দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। এজন্যে নিয়মিত অনুশীলনের প্রয়োজন হয়।
এক্ষেত্রে নিচের নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করা দরকার:
- নামকরা লেখকদের প্রব পড়া উচিত। লেখক কী বলেছেন, কীভাবে বলেছেন তা খুঁটিয়ে লক্ষ করা ভালো। পত্র পত্রিকায় কোনো বিষয়ে প্রবন্ধ চোখ পড়লে তা পড়া উচিত। এতে ধারণা বিকশিত হয় এবং শব্দভাণ্ডার বাড়ে।
- প্রবন্ধে কথার ফুলঝুরি কিংবা অপ্রয়োজনীয় বাড়তি কথা পরিহার করা উচিত। একই কথা যেন বার বার বলা না হয়।
- অল্প কথায় ভাব প্রকাশ করতে হবে। তাতে এই গুণ অর্জনের জন্যে সারাংশ ও সারমর্ম লেখার অভ্যাস।
- ভালো প্রবন্ধ লেখার জন্যে ভাষার ওপর সহজ দক্ষতা থাকতে হয়। সহজ, সরল ও ছোটো ছোটো বাক্যে প্রবন্ধ লেখার অভ্যাস করবে। তাতে দক্ষতা আসবে।
- মনে রাখবে, চিন্তামূলক প্রবন্ধের ভাষা হবে ভাবগম্ভীর আর লঘু প্রবন্ধের ভাষা হবে হালকা চালের।
- প্রবন্ধ রচনায় সবসময় প্রাসঙ্গিক বিষয়, চিন্তা ও তথ্যকেই গুরুত্ব দেবে। মূল বিষয় থেকে কখনো দূরে যাবে না।
- ভাষারীতির ক্ষেত্রে কখনো চলিত ও সাধু রীতি মিশিয়ে ফেলবে না।
- আধুনিক কালে চলিত রীতিই প্রাধান্য ও গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই চলিত রীতিতে প্রবন্ধ লেখাই ভালো।
- প্রবন্ধের উৎকর্ষ নির্ভর করে নির্ভুল বানান ও বাক্যের শুদ্ধ প্রয়োগের ওপর। এ বিষয়ে সব সময় সজাগ ও সতর্ক থাকা দরকার।
- অনেক সময় চিন্তামূলক প্রবন্ধ সংহত কথাকে ব্যাখ্যা – বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিশদ করতে হয়।
- ভাবসম্প্রসারণ প্রক্রিয়া আয়ত্ত করলে তা এক্ষেত্রে কাজে লাগে।
- প্রবন্ধে প্রাসঙ্গিক ও সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি এবং প্রবাদ প্রবচন ব্যবহার করা ভালো। অপ্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি কখনো ব্যবহার করা উচিত নয়।
- বেশি বেশি উদ্ধৃতি ব্যবহারও ভালো প্রবন্ধের লক্ষণ নয়। ৯. চিন্তামূলক রচনায় সংকেতসূত্র উল্লেখ করবে।
- বর্ণনামূলক রচনায় সংকেতসূত্র উল্লেখ করার দরকার নেই।
- যতটা সম্ভব নিজের ভাষায় সুন্দরভাবে গুছিয়ে নির্ভুলভাবে প্রবন্ধ লেখার অভ্যাস করতে হবে। এতেই দক্ষতা আসবে। কোনো ছক বাঁধা নিয়মে সার্থক রচনা লেখা যায় না।
You may also like: হাতের লেখা সুন্দর করার উপায় জেনে নিন
সর্বশেষ
আশা করি প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম এর বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। বাংলা রচনা লেখার সঠিক নিয়ম অনুসারে রচনা লিখলে সেখানে ভালো marks পাওয়া যাবে।
এমনকি ভালো মত রচনা লিখলে full marks পাওয়া যেতে পারে।
এ বিষয়ে যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করবেন।
Learn more: