রসায়ন কি বা কাকে বলে ? রসায়নের জনক কে ও কেন ?

রসায়ন কি বা রসায়ন কাকে বলে এবং রসায়নের জনক কে? এইসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানবো।

বিজ্ঞানের একটি প্রাচীন শাখার নাম হলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞান (Natural Science)৷

যুক্তি দিয়ে, পর্যবেক্ষণ করে অথবা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাকৃতিক কোন বিষয় সম্পর্কে বোঝা বা তার ব্যাখ্যা দেওয়া বা সে সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করাই হলো প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের কাজ৷

রসায়ন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা। এখানে পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্রতন নিয়ে আলোচনা করা হয়৷

যেমন, কয়লা একটি পদার্থ, কয়লার ভেতরে রয়েছে কার্বন৷ এখানে কয়লার ভেতরে কার্বন পরমাণুগুলো কিভাবে থাকে আবার কয়লা পোড়ালে কয়লা বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কীভাবে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং তাপ উৎপাদন করে এ ধরনের আলোচনাগুলো রসায়নে করা হয়৷

পদার্থ তা জীব হোক বা জড় হোক তার সবই রসায়নের আলোচনার বিষয়৷

প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পদার্থবিজ্ঞান (Physics), রসায়ন (Chemistry), জোতির্বিজ্ঞান (Astronomy), উদ্ভিদবিদ্যা (Botany), প্রাণীবিদ্যা (Zoology), অনুজীববিদ্যা (Microbiology), মৃত্তিকাবিজ্ঞান (Soil Science) ইত্যাদি শাখা রয়েছে৷

তুমি যে খাবার খাচ্ছ তার মধ্যে কী কী পদার্থ আছে বা তা কিভাবে আছে (পদার্থের গঠন) সেটি রসায়নের বিষয়৷ আবার, তোমার অনেক সাধের সাইকেলটিও যেটা কেনার সময় অনেক সুন্দর ছিলো, কিন্তু পরে সাইকেলের যেসব অংশ লোহার তৈরি ছিলো তার কোথাও কোথাও কেন মরিচা পরে গেছে এগুলোও রসায়নের বিষয়৷

এ বিশ্ব যখন শুরু হয়েছিলো তখন থেকেই রসায়নের যাত্রা শুরু৷

তবে সম্ভমত প্রথম যেদিন মানুষ দুটি পাথরকে ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখলো সে সময় থেকেই এই রসায়নের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ শুরু হয়েছে৷ এ

প্রাগৈতিহাসিক যুক থকেই ধাতু নিষ্কাশন, মাটি পুড়িয়ে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি, বিভিন্ন গাছের নির্যাস থেকে ওষুধ আর সুগন্ধিজাতীয় দ্রব্য তৈরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে মানুষ রসায়নের ব্যবহার করে আসছে৷

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রথম ব্যবহ্রত ধাতু হলো সোনা৷ এছাড়া সেই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ তামা বা কপার, রুপা, টিন এসব ধাতু ব্যবহার করছে৷

রসায়ন কি বা কাকে বলে
রসায়ন কি ? (What is Chemistry)

রসায়ন কি ? (What is Chemistry)

খ্রিষ্টপূর্ব 3500 অব্দের দিকে কপার ও টিন ধাতুকে গলিয়ে তরলে পরিণত করে এবং এ দুটি তরলকে একত্রে মিশিয়ে অতপর মিশ্রণকে ঠান্ডা করে কঠিন সংকর ধাতুতে পরিণত করে৷ এ সংকর ধাতুর নাম ব্রোঞ্জ৷ এ ব্রোঞ্জ দিয়ে ভালোমানের অস্ত্র তৈরি করা হত৷

তখনকার মানুষ পশু স্বীকার, ফষল ফলানো জালানি হিসেবে কাঠ সংগ্রহ সহ প্রোয়োজনীয় অনেক কাজে এ অস্ত্র ব্যবহার করত৷ এ ব্রোঞ্জ তখনকার মানবজাতীর জন্য এক অতি প্রোয়োজনীয় পদার্থে পরিণত হয়৷ ব্রোঞ্জ এর আবিষ্কার সভ্যতাকে অনেকদুর এগিয়ে নিয়ে যায়৷

প্রাচীনকালে দার্শনিকেরা পদার্থের গঠন নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করেন৷

খ্রিষ্টপূর্ব 380 অব্দের দিকে গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস ঘোষণা করেন যে, প্রত্যক পদার্থকে ভাংতে থাকলে শেষ পর্যায়ে এমন একটি ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাবে যাকে আর ক্ষুদ্র করা যাবে না৷

তিনি এ কণার নাম, দেন এটম (Atom অর্থ indivisible বা অবিভাজ্য)৷

প্রায় একই সময়ে ভারতীয় কোন দার্শনিক ডেমোক্রিটাসের মত প্রায় একই ধারণা প্রকাশ করেছিলেন৷ কিন্তু এ ধারণাগূলোর কোন পরীক্ষামূলক ভিত্তি ছিলোনা৷

তখন আরিস্টটলসহ অন্যান্য দার্শনিকেরা মনে করতেন সকল পদার্থ মাটি, আগুন, পানি ও বাতাস মিলে তৈরি হয়৷ ফলে আটমের ধারণা অনেকদিন পর্যন্ত মানুষ গ্রহণ করেনি৷

মধ্যযুগে আরবের মুসলিম দার্শনিকরা কপার, টিন, সিসা এসব সল্পমূল্যের ধাতু থেকে সোনা তৈরি করতে চেয়েছিলেন৷ তাদের আর একটি চেষ্টা ছিলো এমন একটি মহৌষধ তৈরি করা যা খেলে মানুষের আয়ু অনেক বেড়ে যাবে৷

তারা অবশ্য এগুলোতে সফল হয়নি৷ তবে তারা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিলেন৷ ফলে সোনা বানাতে না পারলেও বিভিন্ন পদার্থ মিশিয়ে সোনার মত দেখতে এমন অনেক পদার্থ তৈরি করেছিলেন এবং তাদের এ পরীক্ষা নিরীক্ষাগুলো লিখে রেখেছিলেন৷

মূলত এগূলোই ছিলো রসায়নের ইতিহাসে প্রথম পদ্ধতিগত ভাবে রসায়নের চর্চা বা রসায়নের গবেষণা৷

মধ্যযুগীয় আরবের রসায়ন চর্চাকে আলকেমি বলা হত৷ আর গবেষকদের বলা হতো আলকেমিষ্ট (Alkemist)৷

আলকেমি শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ আলকিমিয়া থেকে৷ আলকিমিয়া শব্দটি আবার এসেছে কিমি শব্দ থেকে৷

এই Chemi শব্দ থেকেই Chemistry শব্দের উৎপত্তি যার বাংলা প্রতিশব্দ হলো রসায়ন৷

তাহলে উপরের আলোচনার মাধ্যমে আপনারা রসায়ন কি এ বিষয়ে আশা করি জানতে পেরেছেন। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক রসায়নের সংজ্ঞা কি?

রসায়ন কাকে বলে?

বিজ্ঞানের যে শাখায় পদার্থের গঠন, পদার্থের ধর্ম এবং পদার্থের পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হয় তাকে রসায়ন বলা হয়৷

রসায়নের জনক কে এবং কেন ?

আলকেমিষ্ট জাবির ইবনে হাইয়ান সর্বপ্রথম গবেষণাগারে রসায়নের গবেষণা করেন৷ তাই তাকে কখনো কখনো রসায়নের জনক বলা হয়ে থাকে৷

জাবির ইবনে হাইয়ান বিশ্বাস করতেন সকল পদার্থ আগুন পানি মাটি আর বাতাস দিয়ে তৈরি৷

তাই তিনি গবেষণা করলেও রসায়নের প্রকৃত রহস্য গুলো তার কাছে পরিষ্কার ছিলোনা৷ তবে রসায়নের প্রকৃত রহস্য উদ্ভাবন করে রসায়ন চর্চা প্রথম শুরু করেন আন্টনি ল্যাভয়সিয়ে, রবার্ট বয়েল, স্যার ফ্রান্সিস বেকন এবং জন ডাল্টন সহ অন্যান্য বিজ্ঞানি৷

আধুনিক রসায়নের জনক কে ?

অ্যান্টনি ল্যাভয়সিয়েকে আধুনিক রসায়নের জনক বলা হয়৷

2 Comments

    1. জি ভাই, বলুন আপনি কি বলতে চান। কমেন্ট করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *