লবণের ব্যবহার এবং লবণের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা লবণের ব্যবহার এবং লবণের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে জানবো। সেই সাথে খাদ্য লবণের রাসায়নিক সংকেত কি সে সম্পর্কেও জেনে নেব।
তো চলুন জেনে নেওয়া যাক লবণের বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহার সমূহ সম্পর্কে।

জেনে নিন ক্ষার কি এবং ক্ষারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
লবণের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
এর আগে তােমরা জেনেছ যে লবণ হলাে এসিড ও ক্ষারকের বিক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থ। এখন তােমরা এর রাসায় বৈশিষ্ট্য জানবে।
কাজ: লবণের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা ।
প্রয়ােজনীয় উপকরণ: ১ টি পাত্র , খাবার লবণ , বিশুদ্ধ পানি , লাল ও নীল লিটমাস কাগজ , নাড়ানি ।
পদ্ধতি: পাত্রে ৫-১০ গ্রাম লবণ নিয়ে ৫০ মিলিলিটার বিশুদ্ধ পানি যােগ করাে । নাড়ানি দিয়ে ভালভাবে নাড়া দিয়ে লবণের দ্রবণ তৈরি কর । এবার একে একে লাল ও নীল লিটমাস কাগজ যােগ করে দেখ এদের রং পরিবর্তন বয় কি না । লিটমাস কাগজের রং কি পরিবর্তন হলাে ? না , হলাে না । এতে প্রমাণিত হলাে যে লবণ নিরপেক্ষ পদার্থ ।
তবে কিছু কিছু লবণের জলীয় দ্রবণ অস্ত্রীয় বা ক্ষারীয় হতে পারে । যেমন: বেকিং সােডা (NaHCO3) বা খাবার সােডা ।
এটিও একটি লবণ , কিন্তু এর জলীয় দ্রবণ এসিডিক এবং এটি নীল লিটমাসকে লাল করে । এর কারণ হলাে , যদিও এটি একটি লবণ কিন্তু পানিতে এটি হাইড্রোজেন আয়ন উৎপন্ন করে ।
NaHCO3 Na+ + H+ + CO3²-
আবার সােডিয়াম কার্বোনেটের (Na²CO3) এ জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয় এবং তা লাল লিটমাসকে লাল করে ।
এর কারণ হলাে , পানিতে সােডিয়াম কার্বোনেট , সােডিয়াম হাইড্রক্সাইড ও কার্বোনিক এসিড তৈরি করে । কিন্তু উৎপন্ন কার্বোনিক এসিড দুর্বল এসিড় হওয়ায় তা পুরােপুরি বিয়ােজিত হয় না , আংশিকভাবে বিয়ােজিত হয় । পক্ষান্তরে সােডিয়াম হাইড্রক্সাইড একটি শক্তিশালী ক্ষার বলে তা পুরােপুরি বিয়ােজিত হয় হাইড্রক্সাইড আয়ন তৈরি করে ।
ফলে দ্রবণে হাইড্রক্সাইজ অয়নের আধিক্য থাকে আর সে কারণেই দ্রবণ ক্ষারীয় হয় এবং লাল লিটমাসকে নীল করে , কার্বোনেট লবণসমূহ এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে অন্য একটি লবণ, কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস ও পানি তৈরি করে।
Na2CO3 + HCl – NaCl + H2O + CO2
CaCO3 + H2SO4 – CaSO4 + H2O + CO2
প্রায় সব লবণই কঠিন এবং উচ্চ গলনাংক ও স্ফুটনাংক বিশিষ্ট হয় ।
বেশির ভাগ লবণই পানিতে দ্রবণীয় , তবে কিছু কিছু লবণ আছে যারা পানিতে দ্রবীভূত হয় না । যেমন- ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (CaCO3) , সিলভার সালফেট (AgSO4) , সিলভার ক্লোরাইড (AgCl) ।
লবণের ব্যবহার
লবণ ছাড়া তরকারি রান্না করলে কেমন হবে ? খুবই বাজে স্বাদযুক্ত হবে এবং আমরা অনেকেই তা খেতে পারব না ।
যে লবণ আমাদের খাদ্যের স্বাদ বাড়িয়ে খাওয়ার উপযােগী করে তােলে , তা হলাে সােডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl), যা সাধারণ লবণ বা টেবিল লবণ নামেও পরিচিত ।
তরি – তরকারি ছাড়াও আরাে অনেক খাবার যেমন পাউরুটি , আচার , চানাচুর ইত্যাদিতে খাবার লবণ ব্যবহার করা হয় । খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য আরেকটি লবণ সােডিয়াম গ্লুটামেট ব্যবহার করা হয় , যা টেস্টিং সল্ট নামে পরিচিত ।
আমরা কাপড় কাচার যে সাবান ব্যবহার করি তা হলাে মূলত সােডিয়াম স্টিয়ারেট ( C17H35CONa) আর সেভিং ফোম বা জেলে থাকে পটাসিয়াম স্টিয়ারেট (C17H35COOK) । কাপড় কাচার সােডা হিসেবে আমরা যে সােডিয়াম কার্বোনেট ( Na2CO3.1OH2O ) ব্যবহার করি তাও একটি লবণ ।
আবার আমরা জীবাণুনাশক যে তুতে বা ফিটকিরি ব্যবহার করি , সেগুলােও লবণ ।
কৃষিতে লবণের ব্যবহার
তােমরা জান যে মাটির এসিডিটি নিষ্ক্রিয় করার জন্য আমরা যে চুনাপাথর ব্যবহার করি , এই চুনাপাথর একটি লবণ ।
আবার আমরা মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য যে সার ব্যবহার করে থাকি , তাদের বেশির ভাগই হলাে লবণ । যেমন- অ্যামােনিয়াম নাইট্রেট ( NH4NO3) , অ্যামােনিয়াম ফসফেট [(NH4)3PO4] , পটাসিয়াম নাইট্রেট (KNO3) ইত্যাদি ।
তুতে বা কপার সালফেট (CuSO4.5H20) কৃষিজমিতে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস প্রতিরােধে বহুল ব্যবহৃত একটি লবণ ।
এটি শৈবালের উৎপাদন বন্ধে খুব কার্যকরী ।
শিল্প কারখানায় লবণের ব্যবহার
শিল্প কারখানায় নানা কাজে খাবার লবণ অপরিহার্য । যেমন- চামড়াশিল্পে চামড়ার ট্যানিং করতে , মাখন ও পনিরের শিল্পোৎপাদন , কাপড় কাচার সােডা ও খাবার সােডা তৈরি করতে , সােডিয়াম হাইড্রক্সাইডের তড়িৎ বিশ্লেষণ ইত্যাদি কাজে খাবার লবণ ব্যবহৃত হয় ।
বেশ কিছু লবণ যেমন- তুতে , মারকিউরিক সালফেট (HgSO4) , সিলভার সালফেট ( AgSO4 ) শিল্প – কারখানায় প্রভাবক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
টেক্সটাইল ও রং তৈরির কারখানায় রং ফিক্স করার কাজে লবণ প্রয়ােজন হয় । ধাতুর বিশুদ্ধকরণে লবণ লাগে । রাবার প্রস্তুতিতে রাবারকে ল্যাটেক্স রবার গাছের নির্যাস থেকে আলাদা করা হয় লবণ ব্যবহার করে । ঔষধ কারখানায় স্যালাইন ও অন্যান্য ঔষধেও লবণ ব্যবহৃত হয় । ডিটারজেন্ট তৈরিতেও ফিলার হিসেবে লবণ অত্যাবশ্যক।
কাজেই দেখা যাচ্ছে যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ও শিল্প – কারখানায় লবণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
ধাতু ও এসিড হতে লবণ তৈরীর প্রক্রিয়া
কাজ: ধাতু ও এসিড হতে লবণ তৈরি ।
প্রয়ােজনীয় উপকরণ: একটি ধাতু ( যেমন- Mg ) , পাতলা হাইড্রোকোরিক এসিড , একটি বিকার , স্পেচুলা / চামচ , ফানেল , ১ টি পাত্র , ত্রিপদী স্ট্যান্ড , স্পিরিট ল্যাম্প বা বার্নার , অ্যাপ্রােন ।
পদ্ধতি: অ্যাপ্রােন পরে নাও । বিকারে ৫০ মিলিলিটার পাতলা হাইড্রোক্লোরিক এসিড নাও । এবার ৫-১০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম রিবন ( সরু তার ) বা গুঁড়া স্পেচুলা / চামচ দিয়ে বিকারে যােগ করে ।
কোনাে বুদবুদ উঠছে কি ? না উঠলে হালকা তাপ দাও । বুদবুদ উঠা শেষ হলে আরাে কিছু ম্যাগনেসিয়াম যােগ কর । বুদবুদ না উঠলে বুঝতে হবে এসিড পুরােপুরি বিক্রিয়া করে ফেলেছে এবং আর কোনাে এসিড বিকারে অবশিষ্ট নেই । এভাবে সমস্ত এসিড বিক্রিয়া না করা পর্যন্ত অল্প অল্প করে ম্যাগনেসিয়াম রিবন ( সরু তার ) বা গুঁড়া যােগ করতে থাক ।
এবার ফানেল ও ফিল্টার কাগজের সাহায্যে অতিরিক্ত ম্যাগনেসিয়াম মিশ্রণ থেকে আলাদা কর । প্রাপ্ত দ্রবণকে ত্রিপদী স্ট্যান্ডের উপর বসিয়ে স্পিরিট ল্যাম্প দিয়ে তাপ দিতে থাক , যতক্ষণ পর্যন্ত না পাত্রের গায়ে লবণের ছোট ছােট দানা দেখা যায় ।
অতঃপর তাপ দেওয়া বন্ধ করে পাত্রটিকে ঠান্ডা কর । পাত্রের তলায় বা গায়ে দানাদার বস্তু পেলে ? এটি হলাে ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড লবণ । এখানে ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে MgCl2 ও H2 গ্যাস উৎপন্ন করে । এই গ্যাসের কারণেই আমরা বিকার থেকে বুদবুদ উঠতে দেখি ।
সর্বশেষ
এই আর্টিকেলটি লবণের ব্যবহার এবং লবণের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য গুলো সম্পর্কে তৈরি করা হয়েছে। এই তথ্য গুলো বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আশা করি লবণ সম্পর্কে সবকিছু সঠিকভাবে জেনে নিতে পেরেছেন।
আপনি যদি জানতে চান যে খাদ্য লবণের রাসায়নিক সংকেত কি? তাহলে এর উত্তর হলো NaCl.
অবশ্যই পড়ুন-
- মাইক্রোফোন এবং স্পিকার কি ? এরা কিভাবে কিভাবে কাজ করে
- ক্ষার কি ? ক্ষারের বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার, ধর্ম এবং উদাহরণ সম্পর্কে জানুন
- শিক্ষা বিস্তারে গণমাধ্যমের ভূমিকা
- বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করার নিয়ম