সুভার গ্রামের নাম কী ? সুভা গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
সুভা গল্পের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।
সুভার গ্রামের নাম কী?
প্রশ্ন-১.সুভার গ্রামের নাম কী?
উত্তর: সুভার গ্রামের নাম চণ্ডীপুর।
লেখক-পরিচিতি
প্রশ্ন- ২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ।
প্রশ্ন-৩. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মসাল কত বঙ্গাব্দ ?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মসাল ১২৬৮ বঙ্গাব্দ ।
প্রশ্ন-৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
প্রশ্ন-৫. ‘গোরা’ কোন শ্রেণির রচনা?
উত্তর: ‘গোরা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি উপন্যাস
প্রশ্ন-৬. ‘শেষের কবিতা’ কী ধরনের গ্রন্থ?
উত্তর: ‘শেষের কবিতা’ একটি উপন্যাস
প্রশ্ন-৭. ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ কার লেখা?
উত্তর: ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ।
প্রশ্ন-৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত বঙ্গাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে মৃত্যুবরণ করেন ।
প্রশ্ন-৯.কত বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয়?
উত্তর: পনেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয় ।

মুলপাঠ
প্রশ্ন-১০সুভার ভালো নাম কি?
উত্তর- সুভার প্রকৃত নাম সুভাষিণী।
প্রশ্ন-১০.সুভাষিনী অর্থ কি
উত্তর: যার ভাষাণ অর্থাৎ কণ্ঠস্বর সুন্দর।
প্রশ্ন-১১. গোয়ালের গাভি দুটির নাম কী?
উত্তর: গোয়ালের গাভি দুটির নাম সর্বশী ও পাঙ্গুলি।
প্রশ্ন-১২. সুভা দিনের ভেতরে কয়বার গোয়ালঘরে যেত?
উত্তর: সুভা দিনের ভেতরে তিনবার গোয়ালঘরে যেত।
প্রশ্ন-১৩. উন্নত শ্রেণির জীবের মধ্যে সুভার যে সঙ্গী জুটেছিল তার নাম কী?
উত্তর: উন্নত শ্রেণির জীবের মধ্যে সুভার যে সঙ্গী জুটেছিল তার নাম প্রতাপ।
প্রশ্ন-১৪. প্রতাপ কে?
উত্তর: প্রতাপ গোঁসাইদের ছোটো ছেলে।
প্রশ্ন-১৫. গোসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম কী?
উত্তর: গোঁসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম প্রতাপ ।
প্রশ্ন-১৬. প্রতাপ কাদের ছোটো ছেলে?
উত্তর: প্রতাপ গোঁসাইদের ছোটো ছেলে ।
প্রশ্ন-১৭. ‘সুভা’ গল্পে কাকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে? (ম. বো, ২০)
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে গোসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে
প্রশ্ন-১৮. প্রতাপের প্রধান শখ কী? (ব. বো. ১৯)
উত্তর: প্রতাপের প্রধান শখ ছিপ ফেলে মাছ ধরা।
প্রশ্ন-১৯. ‘সুভা’ গল্পের একমাত্র কে সুভার মর্যাদা বুঝত? (য. বো. 20)
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পের একমাত্র প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।
প্রশ্ন-২০. প্রতাপ সুভাকে কী বলে ডাকত?
উত্তর: প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত।
প্রশ্ন-২১. প্রতাপ সুভার মর্যদা বুঝত কেন? ( ঢা. বো. ২০)
উত্তর: মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হওয়ায় প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।
প্রশ্ন-২২. প্রতাপের জন্য পান সাজিয়ে আনত কে?
উত্তর: প্রতাপের জন্য পান সাজিয়ে আনত সুভা ।
প্রশ্ন-২৩. কে মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।
উত্তর: সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।
প্রশ্ন-২৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে সুভার কয়টি বোন ছিল?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে সুভার দুটি বোন ছিল।
প্রশ্ন-২৫. ‘সুভা’ গল্পে কী কারণে বাণীকণ্ঠ তাঁর ছোটো মেয়েটির নাম সুভাষিণী রাখেন?
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে বড়ো দুটি বোনের নামের সাথে মিল রাখতে বাণীকণ্ঠ তাঁর ছোটো মেয়েটির নাম সুভাষিণী রাখেন।
প্রশ্ন-২৬. ‘সুভা’ গল্পে পিতামাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করছে কে?
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে পিতামাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করছে সুভা ।
প্রশ্ন-২৭. ‘সুভা’ গল্পে সুভার সাক্ষাতে সকলে তার সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করত?
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে সুভার সাক্ষাতে সকলে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করত।
প্রশ্ন-২৮.কার মনে সুভা সর্বদাই জাগরূক ছিল?
উত্তর: পিতামাতার মনে সুভা সর্বদাই জাগরুক ছিল।
প্রশ্ন-২৯.সুভা কী মনে করত?
উত্তর: সুভা মনে করত, আমাকে সবাই ভুললে বাঁচি ।
প্রশ্ন-৩০. কে সুভাকে নিজের একটা ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন?
উত্তর: সুভার মা সুভাকে নিজের একটা ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন।
প্রশ্ন-৩১. সুভার বাবার নাম কি?
উত্তর: সুভার বাবার নাম বাণীকণ্ঠ।
প্রশ্ন-৩১. সুভার মা সুভার প্রতি বিরক্ত ছিলেন কেন? (চ. বো. 20)
উত্তর: সুভাবে নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করে সুভার মা তার প্রতি বড়ো বিরক্ত ছিলেন।
প্রশ্ন-৩২. সুভার ওষ্ঠাধর ভাবের আভাসমাত্রে কেমন করে কেঁপে উঠত?
উত্তর: সুভার ওষ্ঠাধর ভাবের আভাসমাত্রে কচি কিশলয়ের মতো কেঁপে উঠত
প্রশ্ন-৩৩. সুভার চোখের ভাষা কেমন ছিল?
উত্তর: সুভার চোখের ভাষা অসীম, উদার এবং অতলস্পর্শ গভীর ছিল।
প্রশ্ন-৩৪. কে নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন ও সঙ্গীহীন ছিল?
উত্তর: সুভা নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন ও সঙ্গীহীন ছিল
প্রশ্ন-৩৫. সুভার গ্রামের নাম কী?
উত্তর: সুভাদের গ্রামের নাম চণ্ডীপুর
প্রশ্ন-৩৬.বাণীকন্ঠের ঘর কোথায়?
উত্তর: বাণীকণ্ঠের ঘর নদীর একেবারে উপরেই।
প্রশ্ন-৩৭. অবসর সময়ে সুভা কোথায় গিয়ে বসতো?
উত্তর: অবসর সময়ে সুভা নদীতীরে গিয়ে বসতো।
প্রশ্ন-৩৮. প্রকৃতি কার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়?
উত্তর: প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।
প্রশ্ন-৩৯. প্রকৃতি সুভার কীসের অভাব পূরণ করে দেয়?
উত্তর: প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।
প্রশ্ন-৪০, সুভা কার কাছে মুক্তির আনন্দ পায়? +রা. বো. ২০)
উত্তর: সুভা বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে মুক্তির আনন্দ পায়।
প্রশ্ন-৪১. প্রকৃতির বিবিধ শব্দ এবং বিচিত্র গতি কীসের ভাষা?
উত্তর: প্রকৃতির বিবিধ শব্দ এবং বিচিত্র গতি বোবার ভাষা।
প্রশ্ন-৪২. ‘কিশলয়’ অর্থ কী? / সি. বো. ২০)
উত্তর: ‘কিশলয়’ অর্থ গাছের নতুন পাতা।
প্রশ্ন-৪৩. ‘অনিমেষ’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘অনিমেষ’ শব্দের অর্থ অপলক।
প্রশ্ন-৪৪. ‘বাখারি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বাখারি’ শব্দের অর্থ হলো— কাঁধের দুদিকে দুপ্রান্তে ঝুলিয়ে বোঝা বহনের বাঁশের ফালি।
প্রশ্ন-৪৫. ‘বিজনমূর্তি’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বিজনমূর্তি’ শব্দের অর্থ—নির্জন অবস্থা ।
প্রশ্ন-৪৬. ‘মূক’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: মূক শব্দের অর্থ— বধির।
প্রশ্ন-৪৭. ‘নেত্রপল্লব’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: নেত্রপল্লব শব্দের অর্থ— চোখের পাতা।
প্রশ্ন-৪৮. ‘কপোল’ শব্দের অর্থ কী? (রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ।
উত্তর: ‘কপোল’ শব্দের অর্থ—গাল
প্রশ্ন-৪৯. ‘শুক্লাদ্বাদশী’ মানে কী?
উত্তর: ‘শুক্লাদ্বাদশী’ মানে শুক্লপক্ষের চাঁদের বারোতম দিন।
প্রশ্ন-৫০. সুভা কী ধরনের প্রতিবন্ধী?
উত্তর: সুভা বাক্প্রতিবন্ধী।
প্রশ্ন-৫১. প্রতাপকে সাহায্য করতে চাইত কে?
উত্তর: প্রতাপকে সাহায্য করতে চাইত সুভা।
প্রশ্ন-৫২. সুভা মনে মনে কী হতে চাইত?
উত্তর: সুভা মনে মনে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হতে চাইত।
প্রশ্ন-৫৩. সুভা দুই বাহুতে কাকে ধরে রাখতে চায়? (ব. বো. ২০)
উত্তর: সুভা দুই বাহুতে ধরণি ও মূক মানবতাকে ধরে রাখতে চায়।
প্রশ্ন-৫৪, সুভা অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করে কেন?
উত্তর: নিজের প্রতি প্রতাপকে আকর্ষণ করার জন্য সুভা অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করে।
প্রশ্ন-৫৫. ‘সুভা’ গল্পে সুভাকে ‘সুভি’ বলা হয়েছে কতবার?
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে সুভাকে ‘সুভি’ বলা হয়েছে একবার ।
প্রশ্ন-৫৬. সুভা জলকুমারী হলে কী করত? (ম. বো. ১৯)
উত্তর: সুভা জলকুমারী হলে জল থেকে সাপের মাথার মণি প্রতাপের জন্য ঘাটে রেখে দিত।
প্রশ্ন-৫৭. কোন তিথির প্রকৃতি সুভার মতো একাকিনী?
উত্তর: পূর্ণিমা তিথির প্রকৃতি সুভার মতো একাকিনী।
প্রশ্ন-৫৮. কন্যাভারগ্রস্ত পিতামাতা কারা?
উত্তর: সুভার পিতামাতা কন্যাভারগ্রস্ত ।
প্রশ্ন-৫৯. ‘সুভা’ গল্পে বাণীকন্ঠের অবস্থা কেমন?
উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে বাণীকণ্ঠের অবস্থা সচ্ছল ।
প্রশ্ন-৬০. বাণীকণ্ঠ ফিরে এসে কোথায় যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে বলল?
উত্তর: বাণীকণ্ঠ ফিরে এসে কলকাতায় যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে বলল ।
প্রশ্ন-৬১. কলকাতায় যাওয়ার প্রাক্কালে কোন তিথির রাত্রি ছিল?
উত্তর: কলকাতায় যাওয়ার প্রাক্কালে শুক্লাদ্বাদশীর রাত্রি ছিল।
প্রশ্ন-৬২. মর্মবিদ্ধ হরিণী কার দিকে তাকায়?
উত্তর: মর্মবিদ্ধ হরিণী ব্যাধের দিকে তাকায়।
রচনা লেখার নিয়ম | প্রবন্ধ রচনা লেখার সঠিক নিয়মাবলী
বিজয় দিবস রচনা: The Victory Day Essay In Bengali
সুভা গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
প্রশ্ন-১. সুভাষিণী নামটি সার্থক হয়নি কেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: সুভা জন্ম থেকেই বাকপ্রতিবন্ধী ছিল বলে সুভাষিণী নামটি সার্থক হয়নি।
সুভার বাবা-মা তার বড়ো দুই বোনের নামের সাথে মিল রেখে তার নাম সুভাষিণী রেখেছিল। কিন্তু সে জন্ম থেকেই ছিল বাক্প্রতিবন্ধী। তার মা তাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক বলে মনে করতেন। মূলত বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণেই সুভাষিণী নামটি সার্থক হয়নি
প্রশ্ন-২. সুভা নিজেকে সর্বদা গোপন রাখার চেষ্টা করত কেন?( আল-আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ, চাঁদপুর।)
উত্তর: বাক্শক্তিহীন সুভাকে সবাই সংসারের বোঝা বলে মনে করত এবং এ ঘটনাটি তার জানা ছিল বলেই নিজেকে সে সর্বদা গোপন রাখার চেষ্টা করত। সুভা বোবা ছিল বলে তার সম্পর্কে সবাই দুশ্চিন্তায় ছিল। কথা না বলতে পারলেও তার যে অনুভব শক্তি আছে এ কথাটি কেউ ভাবত না। শিশুকাল থেকেই সুভা বুঝে গিয়েছিল যে সংসারে সে কারো কাছেই সুদৃষ্টিপ্রাপ্ত নয়। এর ফলে তার ভেতরে এক ধরনের হীনম্মন্যতা তৈরি হয়েছিল। তাই সে নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করত।
প্রশ্ন-৩. ‘আমাকে সবাই ভুলিলে বাঁচি’- সুভার এমন মনোভাবের কারণ কী?
উত্তর: বাক্প্রতিবন্ধী ছিল বলে সুভা প্রশ্নোত্ত মনোভাব পোষণ করত । বাবা মায়ের ছোট মেয়ে সুভা জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না। নিজের এমন দুর্বলতায় সুভা তাকে অসহায় মনে করত। সে সাধারণের দৃষ্টিপথ হতে নিজেকে সর্বদা গোপন করে রাখত। বাকপ্রতিবন্ধী হওয়াটাকে সে অভিশাপ মনে করে ফলে তাকে সবাই ভুলে গেলেই সে যেন স্বস্তি পায়।
প্রশ্ন-৪. ‘কিন্তু, বেদনা কি কেহ কখনো ডোলে?’ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: বেদনা মানব হৃদয়ে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে যার ফলে বেদনা কখনো কেউ ভুলতে পারে না। ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। মেয়েরা যেহেতু মায়ের অংশবিশেষ সেহেতু সুভার ত্রুটিপূর্ণ জন্ম তার মাকে পীড়া দিত। সুভার মায়ের হৃদয়ে সদা জাগ্রত থাকত মেয়ের অপূর্ণতার দিকটি। সবসময় সুভার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ কল্পনা করে তার হৃদয় বেদনায় নিমজ্জিত থাকত। যতই বেদনা ভুলে থাকতে চাইত ততই মনে পড়ত। বেদনার ধর্মও তাই । এই জন্য বেদনা কেউ ভুলতে পারে না ।
প্রশ্ন-৫. ‘কিন্তু, তাহার সুদীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট বড়ো বড়ো দুটি কালো চোখ ছিল’— কথাটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: সুভার সৌন্দর্য বর্ণনায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে।
সুভা স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে পৃথিবীর আলোয় আলোকিত হয়নি। স্রষ্টা তাকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করলেও তার কণ্ঠের কথা অপূর্ণ রেখে দেন। তবে সুভার বাক্ না থাকলেও তার সুদীর্ঘ পল্লববিশিষ্ট বড়ো বড়ো দুটি কালো চোখ ছিল। যার সৌন্দর্য লেখকের কাছে ছিল অপার বিস্ময়।
প্রশ্ন-৬. ‘কালো চোখকে কিছু তর্জমা করিতে হয় না।’- কেন বলা হয়েছে?
উত্তর: মানুষের মনের ভাবের খেলা চোখের মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবেই প্রকাশিত হয় বলে আলোচ্য কথাটি বলা হয়েছে।
কথা বলে আমরা যে ভাবের প্রকাশ করি তা অনেকটাই শব্দের মাধ্যমে অনুবাদ বা তর্জমা করতে হয়। কিন্তু চোখের মাধ্যমে আমরা যে ভাবের জগৎ অনুভব করি তা আর কোনো শব্দে অনুবাদ করতে হয় না। প্রাকৃতিকভাবেই তা ভাব প্রকাশক হয়ে ওঠে। ফলে শব্দ প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সীমাবদ্ধতা তৈরি হয়, তা আর থাকে না। তাই চোখকে কোনোকিছু অনুবাদ করতে হয় না ।
প্রশ্ন-৭. “দেখিস আমাদের ভুলিস নে।”- প্রতাপ কেন বলেছিল?
উত্তর: বিয়ে হয়ে গেলে সুভা যেন তাকে না ভুলে যায়- প্রতাপ ঠাট্টাচ্ছলে সে কথাটিই বলেছিল।
একদিন বিকেলে নদীর তীরে বসে মাছ ধরার সময় প্রতাপ সুভার উদ্দেশ্যে প্রশ্নে উল্লিখিত উক্তিটি করেছিল। সুভার বিয়ের খবর শুনে প্রতাপ হেসে হেসে সুভাকে বলেছিল বিয়ের পর সুভা যেন সবাইকে ভুলে না যায়। বস্তুত প্রতাপ এ উক্তির মধ্য দিয়ে সুভাকে বোঝাতে চেয়েছে, সে সুভার শুভাকাঙ্ক্ষী।
প্রশ্ন-৮. সুভা মর্মবিদ্য হরিণীর মতো তাকিয়েছিল কেন? বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: বিয়ের বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রশ্ন করলে সুভা প্রতাপের দিকে মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতো তাকিয়েছিল। সুভার বিয়ের বন্দোবস্তু হচ্ছে এই নিয়ে তার হৃদয়ে বেদনা ভর করেছিল। তাই অজানা জীবনে যাত্রার প্রাক্কালে তার মনে যে শঙ্কা জেগেছিল তা প্রবল। হয় প্রতাপের বিয়ে সম্পর্কিত প্রশ্নে। সুভার বিয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানতে চাইলে সুভা প্রতাপের দিকে মর্মবিদ্ধ হরিণীর মতো তাকিয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে সুভার মাঝে সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার বেদনা সঞ্চার হয়।
প্রশ্ন-৯. “আমি তোমার কাছে কী দোষ করিয়াছিলাম”- ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রিয় মানুষের কাছ থেকে বিদায়ের বেদনা বোঝাতে সুভার অব্যক্ত চাহনিতে উক্তিটি প্রকাশ পায়।
বাকপ্রতিবন্ধী সুভা নিজের মতো করে দুঃখ-বেদনা অনুভব করে। একদিন সে আপন পরিবেশ ছেড়ে কলকাতায় যাওয়ার জন্য তৈরি হয়। এ সময় মনে মনে ভালো লাগা প্রতাপ তাকে বিদায় জানাতে গেলে সুভার চাহনিতে যেন তীব্র অভিমান প্রকাশ পায়, সুভার সেই অভিমানের ভাষাই আলোচ্য উত্তির প্রকাশ পেয়েছে।
প্রশ্ন-১০. মেয়েকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বাণীকন্ঠের কপোলে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল কেন?
উত্তর: মেয়ের প্রতি অসীম ভালোবাসার জন্য তাকে সান্ত্বনা দিতে বাণীকন্ঠের কপোলে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল । বাকপ্রতিবন্ধী সুভাকে সমাজের কেউ ভালোবাসে না। এমনকি মা-ও তার ওপর এতটাই বিরক্ত যে তিনি সুভাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করেন। কিন্তু বাবা বাণীকণ্ঠ তাকে অন্য মেয়েদের তুলনায় বেশি স্নেহ করেন। তিনি বুঝতে পারেন নিজের বাড়ি ছেড়ে কলকাতায় যেতে সুভার অনেক কষ্ট হবে। মেয়ের বেদনায় নিজেও জর্জরিত হয়েছিলেন বলেই তাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বাণীকন্ঠের কপোল বেয়ে অশ্রু ঝরল ।
প্রশ্ন -১১.কলকাতা যাবার আগের দিন সুভা বাল্যসখীদের নিকট থেকে কীভাবে বিদায় নিয়েছিল? বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর: অশ্রুসজল চোখে সুতা কলকাতা যাবার আগে বাল্যসখীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিল ।
কলকাতা যাবার আগের দিন সুভা তার বাল্যসখী গাভি দুটির নিকট বিদায় নিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিল। সুভা গোয়ালঘরে গিয়ে তার বাল্যসখীদের কাছে বিদায় নিতে গিয়ে তাদেরকে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়। গলা ধরে একবার দুই চোখে যত পারে কথা ভরে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আর তখন বাধভাঙা ঝরনার মতো সুভার দুই চোখ থেকে টপটপ করে অশ্রু পড়তে থাকে।
প্রশ্ন -১২ . শুল্কাদ্বদশীর রাতে সুভা শয়নগৃহ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর : চির পরিচিত প্রকৃতিকে শেষবারের মতো আলিঙ্গন করার জন্য শুক্রাদ্বাদশীর রাতে সুভা শয়নগৃহ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল।
শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত মায়াময় চিরপরিচিত পরিবেশ ছেড়ে সুভ কিছুতেই অজানায় পাড়ি জমাতে চায় না। তাই শেষবারের মতো প্রিয় প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসতেই শুরুাদ্বাদশীর রাতে শয়নগৃহ থেকে বেরিয়ে সুভা লুটিয়ে পড়েছিল ঘাসের বুকে। যেন ধরণিকে, এই প্রকাণ্ড মূক | মানবতাকে দুই বাহুতে ধরে সুভা বলতে চেয়েছে, তাকে যেন ত্যাগ না করে। প্রকৃতির প্রতি অগাধ মমত্ববোধই শুল্কাদ্বাদশীর রাতে শয়ংগৃহ থেকে বের করে এনেছিল।
প্রশ্ন-১৩. পূর্ণিমা প্রকৃতি কেন সুভার মতো একাকিনী?
উত্তর: পূর্ণিমা প্রকৃতি সুভার মতোই শব্দহীন হওয়ায় তা সুভার মতো একাকিনী । পূর্ণিমা সৌন্দর্যময়ী কিন্তু শব্দময়ী নয়। তাই গভীর পূর্ণিমা রাতে একেকদিন সুভা যখন শয্যাগৃহের বাইরে এসে দাঁড়ায় তখন পূর্ণিমা প্রকৃতিকেও তার মতো একাকিনী দেখে। যেন ঘুমন্ত জগতের ওপর জেগে বসে যৌবনের রহস্যে পুলকে-বিষাদে অসীম নির্জনতার একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত, এমন কি তা অতিক্রম করেও থমথম করছে, একটি কথাও বলছে না। প্রকৃতির এই নিস্তব্ধ ব্যাকুলতা যেন সুভার মতোই নিঃসঙ্গ।
প্রশ্ন-১৪. সুভাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলো কেন?
উত্তর: গ্রামের মানুষের নিন্দা ও একঘরে হওয়ার ভয়ে বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সুভাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সুভার বয়স ক্রমেই বেড়ে চলছিল। তৎকালীন সমাজে তার বয়সের মেয়েদের বিয়ে না হলে তা নিয়ে নিন্দা করা হতো। সুভা বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে বিয়ে করতে রাজি হয় না কেউ। ফলে তার পরিবারকে নিয়ে সমালোচনা বাড়তে থাকে। উপরন্তু সুভার বাবা সচ্ছল গৃহস্থ হওয়ায়ও তার কিছু শত্রুও ছিল। তাদের প্ররোচনায় পরিবারটিকে একঘরে করা হবে বলেও গুজব ছড়ায়। এ কারণেই সুভাকে বিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গৃহীত হয়।
প্রশ্ন-১৫.বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে সুভার মনের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: বিদেশে যাওয়ার প্রাক্কালে অজানা আশঙ্কায় সুভার মন আচ্ছন্ন ছিল। বিদেশ যাওয়ার সময় কুয়াশা-ঢাকা প্রভাতের মতো সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে যায়। একটা অনির্দিষ্ট আশঙ্কায় সে কিছুদিন থেকেই ক্রমাগত নির্বাক জন্তুর মতো তার বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গেই থাকত। ডাগর চক্ষু মেলে তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করত। কিন্তু তারা তাকে কিছুই বুঝিয়ে বলত না। ফলে একটা ধোঁয়াশাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে সুভার মন সর্বদা ঘুরপাক খেত ।
প্রশ্ন-২০. “সে ভাষাবিশিষ্ট জীব”— কোন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত কথাটি প্রতাপ সম্পর্কে, তার কথা বলার যোগ্যতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
‘সুভা’ গল্পে বাক্প্রতিবন্ধী সুভা কল্পনায় অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পশু, পাখি তথা অবলা প্রাণীদের সাথেই তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এর বাইরে শুধু প্রতাপের সাথে তার ভালোলাগার সম্পর্ক আছে। কিন্তু প্রতাপ সুভার অন্য সঙ্গীদের চেয়ে আলাদা। কেননা, সে কথা বলতে পারে। প্রতাপের এই বিশেষ দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।
প্রশ্ন-২১. অকর্মণ্য লোকেরা কীভাবে নিঃসম্পর্ক মানুষের প্রিয়পাত্র হয়? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: অকর্মণ্য লোকেরা নিঃস্বার্থভাবে নিঃসম্পর্ক মানুষদের নানা উপকারে আসে বলে তারা প্রায়ই মানুষের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে। অকর্মণ্য লোকেরা কোনো কাজে আসে না বলে আত্মীয়রা তাদের ওপর বিরক্ত থাকে। কিন্তু অনেক সময় নিঃসম্পর্ক মানুষের কাছে এই অকর্মণ্য লোকেরা প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে। কারণ, তারা কোনো কাজ না করায় সবসময় তাদের হাতে অনেক সময় থাকে। ফলে কাজে-কর্মে, আমোদে অবসরে যেখানে একটা লোক কম পড়ে সেখানেই তাদের হাতের কাছে পাওয়া যায় ।
প্রশ্ন-২২. প্রতাপ কেমন প্রকৃতির মানুষ ছিল? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: প্রতাপ ছিল নিতান্তই ভবঘুরে ও উদাসীন প্রকৃতির মানুষ। প্রতাপ ছিল অকর্মণ্য একজন লোক। মা-বাবা বহু চেষ্টা করেও প্রতাপের মাধ্যমে সংসারের উন্নয়নমূলক কোনো কাজ করাতে পারেনি। ফলে বাবা-মা প্রতাপের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। এই সব লোকেরা যেমন অনেকেরই বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে তেমনি প্রয়োজনের সময় হয়ে ওঠে প্রিয়পাত্র। প্রতাপও সবার কাছে এমন ছিল।
প্রশ্ন-২৩.পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার’- কথাটি দ্বারা লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর :সুভা’ গল্পে বাক্প্রতিবন্ধী কন্যা সুভার বিয়ে না হওয়ায় সে তার পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার, অর্থাৎ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সুভার বড়ো দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও তার বিয়ে হচ্ছে না। কারণ সুভা বাক্প্রতিবন্ধী। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতা তাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। প্রতিবন্ধী মেয়েকে কেমন করে বিয়ে দেবেন এই দুর্ভাবনা তাঁদের হৃদয়ে পাথরের মতো চেপে বসে ।
উত্তরের সারবস্তু: সুভার বিয়ে না হওয়ায় সে তার পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার, অর্থাৎ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
প্রশ্ন-২৪.সুভা’ গল্পে উল্লিখিত নদীটিকে ‘গৃহস্থঘরের মেয়েটির মতো’ বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : অপ্রসারমানতা ও দুই তীরের সাথে ঘনিষ্ঠতার জন্য ‘সুভা’ গল্পে উল্লিখিত নদীটিকে ‘গৃহস্থঘরের মেয়েটির মতো’ বলা হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে সুভাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীটির কথা বর্ণিত হয়েছে। নদীটি খুব বেশিদূর পর্যন্ত বিস্তৃত নয়। তবে নদীর দুই তীরের মানুষ ও প্রকৃতির সাথে এর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। নদীটি এ সম্পর্ক রক্ষা করেই প্রতিনিয়ত বয়ে চলছে। এ কারণেই লেখক নদীটিকে গৃহস্থঘরের মেয়ের সাথে তুলনা করেছেন। কেননা, গৃহস্থঘরের মেয়েদের গণ্ডিবদ্ধ জীবন ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের সাথে থাকা আত্মিক সম্পর্কের সাথে নদীটির অবস্থা তুলনীয়।
প্রশ্ন-২৫.বাক্যহীন মনুষ্যের মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতো একটা বিজন মহত্ত্ব আছে।”— ‘সুভা’ গল্পের লেখকের এই উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক ভাষাহীন মানুষের মনোজগতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। নির্জন প্রকৃতির মধ্যেও যেমন ভাষা থাকে, বাকপ্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও তাই। কথা বলতে না পারলেও আকারে-ইঙ্গিতে নানাভাবে তারা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। শুধু তা-ই নয়, বাইরের জগতের সাথে তেমনভাবে মিশতে পারে না বলে আপন মনেই ভাবনাগুলোকে তারা নিজের মতো করে সাজায়। এভাবে চিন্তালোকে তারা গড়ে তোলে ভিন্ন এক জগৎ। প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে এ বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে।
প্রশ্ন-২৬.মা সুভাষিণীকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন কেন?
উত্তর :সুভা বাক্প্রতিবন্ধী বলে মা সুভাষিণীকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন ।
মায়েরা পুত্র অপেক্ষা কন্যাকে নিজের অংশরূপে দেখেন । তাই কন্যার কোনো অপূর্ণতা দেখলে সেটাকে বিশেষরূপে নিজের কলঙ্ক বলে মনে করেন তারা। ‘সুভা’ গল্পের সুভার মা-ও প্রতিবন্ধী কন্যাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক হিসেবে জ্ঞান করেন । তাই সুভা যেন তার মায়ের ত্রুটিরই স্বাক্ষর।
উত্তরের সারবস্তু: কন্যাসন্তানকে বিশেষভাবে নিজের অংশ মনে করায় তার অপূর্ণতাকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন সুভার মা।
প্রশ্ন-২৭সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত কেন?ব্যাখ্যা করো।
উত্তর :প্রতাপকে অভিভূত করার জন্য সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত। সুভা মনে মনে প্রতাপকে ভালোবাসত। তাই প্রতাপ যখন নদীর তীরে বসে মাছ ধরত, তখন সুভা তার পাশে বসে ভাবত সে যদি প্রতাপের কোনো কাজে বা সাহায্যে আসতে পারত। কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না। তাই সে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত— যেন হঠাৎ মন্ত্রবলে সে এমন একটা আশ্চর্য কাণ্ড ঘটিয়ে দিতে পারে, যা দেখে প্রতাপ অভিভূত হয়। বস্তুত প্রতাপের মন জয় করার জন্যই সুভা অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।
উত্তরের সারবস্তু: প্রতাপকে অভিভূত করে তার মন জয় করার বাসনা থেকেই সুভা বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।
প্রশ্ন-২৮.সুভা’ পরে ‘গ্রামলক্ষ্মী স্রোতঃস্বিনী’ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর :সুভা’ গল্পে ‘গ্রামলক্ষ্মী স্রোতঃস্বিনী’ বলতে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীটির মাহাত্ম্য বোঝানো হয়েছে। আলোচ্য গল্পে বর্ণিত গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোটো একটি নদী। আপন খেয়ালে অবিরলভাবে বয়ে চলেছে সে। চলার পথে দুধারে সৃষ্টি করেছে শ্যামলিমা ও সমৃদ্ধি। গ্রামটি যেন এ নদীর আশীর্বাদপুষ্ট। নদীটিকে তাই সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীর সাথে তুলনা করেছে।
উত্তরের সারবস্তু: আলোচ্য কথাটির মধ্য দিয়ে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কল্যাণময়ী নদীটিকে নির্দেশ করা হয়েছে।
প্রশ্ন- ৩০.সুভা পিতামাতার মনে সর্বদাই আগরুক ছিল কেন? বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর : সুভা বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তার ভবিষ্যতের পরিণতি চিন্তায় পিতামাতার মনে সে সর্বদা জাগরূক ছিল । বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় সুভা নিজেকে বিধাতার অভিশাপ বলে মনে করত। সুভার ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার বাবা-মা যেমন শঙ্কিত থাকতেন, তেমনি প্রতিবেশীদেরও তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। মা সুভাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। সুভার এই প্রতিবন্ধকতার কারণে সর্বদাই সে তার পিতামাতার মনে অস্বস্তি হিসেবে জাগরুক ছিল।
উত্তরের সারবস্তু: বাকপ্রতিবন্ধী সুভার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনার সূত্রেই সে সর্বদা তার পিতামাতার মনে জাগরুক ছিল।
প্রশ্ন-৩১.প্রতাপকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক কেন বলা হয়েছে?
উত্তর :প্রতাপ কাজকর্ম করে সংসারের উন্নতির কোনো চেষ্টা করছে না বলে তাকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে। ‘সুভা’ গল্পে গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ। সংসারের জন্য কাজে তার মন নেই। অকর্মণ্য লোক বলে অনাত্মীয়রা তাকে নিয়ে নানা ধরনের কাজ করিয়ে নেয় । অলস সময়ে সে ছিপ ফেলে মাছ ধরে। কাজকর্ম করে সংসারের উন্নতির চেষ্টা করে না বলে প্রতাপকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে।
উত্তরের সারবস্তু: সংসারের কোনো কাজকর্মে প্রতাপের অংশগ্রহণ ছিল না বলে তাকে নিতান্ত অকর্মণ্য বলা হয়েছে:
প্রশ্ন-৩২.তুমি আমাকে যাইতে দিয়ো না, মা’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর :প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা লেখক নির্বাক সুভার অসহায়ত্ব এবং প্রকৃতির কাছে তার নির্ভরতা ও আশ্রয় লাভের বাসনার স্বরূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। বাকপ্রতিবন্ধী সুভার আশ্রয়ের অন্যতম জগৎ প্রকৃতি। নিস্তব্ধ প্রকৃতির কাছে সে পায় মুক্তির আনন্দ। তাই যখন কলকাতায় যাওয়ার দিন স্থির হয় তখন অজানা ভয়ে শঙ্কিত সুভা চিরপরিচিত নদীতটে লুটিয়ে পড়ে প্রকৃতি মায়ের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। মূলত সে যেমন প্রকৃতিকে ভালোবাসে, সেই ভালোবাসার অধিকারে প্রকৃতির কাছে সেও আশ্রয়প্রার্থী— প্রশ্নোক্ত উত্তিতে এ বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে।
উত্তরের সারবস্তু: গ্রাম ছেড়ে যেতে অনাগ্রহী সুভার প্রকৃতির কোলে ঠাঁই পাওয়ার তীব্র বাসনাই ফুটে উঠেছে আলোচ্য উক্তিতে।
প্রশ্ন-৩৩ সুভার পিতামাতার মনে সর্বদাই জাগরুক ছিল কেন? বুঝিয়ে দাও ।
উত্তর :সুভা বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তার ভবিষ্যতের পরিণতি চিন্তায় পিতামাতার মনে সে সর্বদা জাগরূক ছিল । বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় সুভা নিজেকে বিধাতার অভিশাপ বলে মনে করত। সুভার ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার বাবা-মা যেমন শঙ্কিত থাকতেন, তেমনি প্রতিবেশীদেরও তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। মা সুভাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। সুভার এই প্রতিবন্ধকতার কারণে সর্বদাই সে তার পিতামাতার মনে অস্বস্তি হিসেবে জাগরুক ছিল।
উত্তরের সারবস্তু: বাকপ্রতিবন্ধী সুভার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনার সূত্রেই সে সর্বদা তার পিতামাতার মনে জাগরুক ছিল।
আরও জানুন –