সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর – (গুরুত্বপূর্ণ ১৫টি)

আপনি কি সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন? তাহলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। কারণ আজকের আর্টিকেলে সুভা গল্পের গুরুত্বপূর্ণ ১৫ টি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর উল্লেখ করা হবে।

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
সুভা গল্পের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর।

সুভা গল্পটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি ছোটগল্প

তাহলে চলুন নবম-দশম শ্রেণির সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ নিচে জেনে নেওয়া যাক। সেই সাথে আর্টিকেলের শেষে সুভা গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্নসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।

Table of Contents

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর – (গুরুত্বপূর্ণ ১৫ টি প্রশ্ন)

সৃজনশীল প্রশ্ন ১| দুই পুত্র সন্তানের পর কন্যাসন্তান পলাশ বাবুর পরিবারে আনন্দের বন্যা নিয়ে এল। নাম রাখা হলো “কল্যাণী”। সকলের চোখের মণি কল্যাণী বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে পলাশ বাবু বুঝতে পারলেন, বয়সের তুলনায় কল্যাণীর মানসিক বিকাশ ঘটেনি। কিছু বললে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। কল্যাণীর বিয়ের কথাবার্তা চলছে। পলাশ বাবু কল্যাণীর সবই বরপক্ষকে খুলে ভললেন। সব শুনে বরের বাবা সুবোধ বাবু বললেন, “পলাশ বাবু কল্যাণীর মতো আমার ছেলেও তো হতে পারত, কাজেই কল্যাণীমাকে ঘরে নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”

ক. সুভার গ্রামের নাম কী?

খ. পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার’- কথাটি দ্বারা লেখক কী বোঝাতে চেয়েছেন?

গ. উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্যে কল্যাণী ও সুভার যে বিশেষ দিকটির সঙ্গতি দেখানো হয়েছে- তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. কল্যাণী ও সুভা একই পরিস্থিতির শিকার হলেও উভয়ের প্রেক্ষাপট ও পরিণতি ভিন্ন।”- বিশ্লেষণ কর।

১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক)সুভার গ্রামের নাম চণ্ডীপুর।

খ)’সুভা’ গল্পে বাক্‌প্রতিবন্ধী কন্যা সুভার বিয়ে না হওয়ায় সে তার পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার, অর্থাৎ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় সুভার বড়ো দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেলেও তার বিয়ে হচ্ছে না। কারণ সুভা বাক্‌প্রতিবন্ধী। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতা তাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। প্রতিবন্ধী মেয়েকে কেমন করে বিয়ে দেবেন এই দুর্ভাবনা তাঁদের হৃদয়ে পাথরের মতো চেপে বসে ।

উত্তরের সারবস্তু: সুভার বিয়ে না হওয়ায় সে তার পিতা-মাতার নীরব হৃদয়ভার, অর্থাৎ দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

গ) উদ্দীপকের প্রথম অংশের বক্তব্যে কল্যাণী ও সুভার প্রতিবন্ধিতার দিকটির সংগতি দেখানো হয়েছে।

বাকপ্রতিবন্ধী একটি কিশোরীর প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে। স্বাভাবিকভাবে জন্মালেও নিয়তি সুভাকে একজন বাক্‌প্রতিবন্ধী মানুষরূপে গড়ে তোলে। ফলে বাবা তাকে ভালোবাসলেও মা তাকে তার নিয়তির দোষ মনে করেন। কেউ তার সঙ্গে মেশে না। সে বাবা-মার মনে নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করে।

উদ্দীপকের কল্যাণীও সুভার মতোই জন্মের সময় সংসারে বয়ে নিয়ে এসেছিল আনন্দের বার্তা। কিন্তু বড়ো হতে থাকলেও বয়সের সাথে তার মানসিক বিকাশ পরিপূর্ণভাবে ঘটে না। অর্থাৎ কল্যাণী বড়ো হয় বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হিসেবে। আলোচ্য গল্পের সুভাও বাকপ্রতিবন্ধী হয়ে সকলের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে তাকে অনেক কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। অর্থাৎ প্রতিবন্ধিতা উদ্দীপকের কল্যাণী ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেছে ।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধিতাই উদ্দীপকের কল্যাণী ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেছে।

 

ঘ) কল্যাণী ও সুভা একই পরিস্থিতির শিকার হলেও গল্পের সুভার দুঃখজনক জীবন বাস্তবতার বিপরীতে উদ্দীপকের কল্যাণীর বাস্তবতাটি ইতিবাচক।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের সুভা জন্ম থেকে বাকপ্রতিবন্ধী। বাকপ্রতিবন্ধী হলেও তার অনুভূতিপ্রবণ হৃদয়ে ভালোবাসার অভাব ছিল না। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সুভাকে কেউ বিয়ে করতে রাজি হয়নি । লোকনিন্দার ভয়ে তাই সুভার পরিবার গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

উদ্দীপকের কল্যাণী একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। কিন্তু তার প্রতিবন্ধিতা নিয়ে তাকে কিংবা তার পরিবারকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি। এমনকি তার বিয়ের সময় বরপক্ষ সবকিছু জেনেশুনে তাকে ঘরে নিতেও আপত্তি করেনি। পারিবারিক ও সামাজিক কোনো ক্ষেত্রেই তাকে প্রতিবন্ধকতা সহ্য করতে হয়নি।

উদ্দীপকের কল্যাণী ও গল্পের সুভার প্রেক্ষাপট ও পরিণতি এক নয় । দুজনের প্রতিবন্ধকতা দু ধরনের। জীবনের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে সুভাকে কেউ সহানুভূতির চোখে না দেখলেও কল্যাণীর প্রতি সদয় আচরণ করেছেন সুবোধ বাবু। কল্যাণীকে নিজের ছেলের বউ করে নিতে আপত্তি করেননি তিনি। কল্যাণীর প্রতি তার হবু শ্বশুরের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই সুভার সাথে কল্যাণীর পার্থক্য রচনা করেছে। কল্যাণীর প্রতি মানবিক আচরণ করা হলেও সুভা ও তার পরিবারকে বরণ করতে হয়েছে বেদনাদায়ক পরিণতি। অর্থাৎ উভয়েই প্রতিবন্ধিতার শিকার হলেও তাদের প্রেক্ষাপট ও পরিণতিতে ভিন্নতা লক্ষ করা যায়।

উত্তরের সারবস্তু: কল্যাণীর প্রতি তার হবু শ্বশুরের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই সুভার সঙ্গে কল্যাণীর পার্থক্য রচনা করেছে। কল্যাণীর প্রতি মানবিক আচরণ করা হলেও সুভা ও তার পরিবারকে বরণ করতে হয়েছে বেদনাদায়ক পরিণতি।

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-২

সৃজনশীল প্রশ্ন-২| কাজগুলিকে সে আপনার করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকাল না। মায়ের সঙ্গে মৃদুস্বরে দু’একটি দরকারি কথা বলা ছাড়া দুটা। থেকে বেলা সাড়ে দশটা অবধি একবার কাশির শব্দ পর্যন্ত করল না। সে যেন ছায়াময়ী মানবী, ছায়ার মতোই ম্লানিমার ঐশ্বর্যে মহীয়সী ধরাছোঁয়ার অতীত শব্দহীন অনুভূতিহীন নির্বিকার। (মমতাদি :মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়)

ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের প্রতাপের প্রধান শখ কী?

খ. ‘সুভা’ গল্পে উল্লিখিত নদীটিকে ‘গৃহস্থঘরের মেয়েটির মতো’ বলা হয়েছে কেন?

গ) উদ্দীপকে ‘সুভা’ গল্পের কোন দিকটির ছায়াপাত ঘটেছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ) উদ্দীপকটি সুভার সামগ্রিক সত্তার পরিচয় বহন করে না” – ‘সুভা’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

২।ক)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের প্রতাপের প্রধান শখ ছিপ ফেলে মাছ ধরা। 

) অপ্রসারমানতা ও দুই তীরের সাথে ঘনিষ্ঠতার জন্য ‘সুভা’ গল্পে উল্লিখিত নদীটিকে ‘গৃহস্থঘরের মেয়েটির মতো’ বলা হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে সুভাদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীটির কথা বর্ণিত হয়েছে। নদীটি খুব বেশিদূর পর্যন্ত বিস্তৃত নয়। তবে নদীর দুই তীরের মানুষ ও প্রকৃতির সাথে এর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। নদীটি এ সম্পর্ক রক্ষা করেই প্রতিনিয়ত বয়ে চলছে। এ কারণেই লেখক নদীটিকে গৃহস্থঘরের মেয়ের সাথে তুলনা করেছেন। কেননা, গৃহস্থঘরের মেয়েদের গণ্ডিবদ্ধ জীবন ও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের সাথে থাকা আত্মিক সম্পর্কের সাথে নদীটির অবস্থা তুলনীয়।

উত্তরের সারবস্তু: নদীটির প্রসার অল্প হওয়া এবং দুই তীরের মানুষের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়টি গৃহস্থঘরের মেয়ের সাথে তুলনা করে লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

 

গ) বোবা প্রকৃতির সান্নিধ্যে বাকপ্রতিবন্দী সুভার শব্দহীন ও সঙ্গীধীন অবস্থার দিকটি উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা বাক্‌প্রতিবন্ধী এক কিশোরী। কণ্ঠে তার কথা বা ভাষা না থাকায় আশপাশের সকলেই তাকে অবজ্ঞা-অবহেলা করে। ফলে সে প্রকৃতির কোলে আশ্রয় খুঁজে নেয়। বিশেষত অবসরে সে প্রকৃতির মুখোমুখি হয়। বোবা প্রকৃতির সাথে তার মৌন ভাববিনিময় চলে। উভয়েই নির্বাক হওয়ায় তা বিশেষত্ব লাভ করে।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত “মমতাদি’ গল্প থেকে নেওয়া উদ্দীপক অংশে মমতাদি নিঃশব্দে আপনমনে তার ওপর অর্পিত কাজ করে যায়। কথকের বন্ধনামতে সে যেন ছায়াময়ী মানবী, ছায়ার মতোই ম্লানিমার ঐশ্বর্যে মহীয়সী কিন্তু ধরাছোঁয়ার অতীত শব্দহীন অনুভূতিহীন নির্বিকার। কালো পথে প্রকৃতির মুখোমুখি বসা সুভার অবস্থাও প্রায় একই রকম। সুভা প্রকৃতির সাথে কী বলছে যা প্রকৃতির কাছ থেকে কী নিচ্ছে তা অন্য কারো পক্ষে বোঝা অসম্ভব।

উত্তরের সারবস্তু: শব্দহীন ও সঙ্গীহীন অবস্থায় বাকপ্রতিবন্ধী সুতা নির্বিকার বসে থাকত, উদ্দীপকের বর্ণনার সাথে যা সাদৃশ্যপূর্ণ।

 

ঘ) উদ্দীপকে বাকপ্রতিবন্ধী সুভার শব্দহীন ও সঙ্গীহীন অবস্থায় প্রকৃতির সংস্পর্শে আসার দিকটি ছাড়া অন্যান্য দিক অনুপস্থিত থাকায় আলোচ্য মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে বাকপ্রতিবন্ধী সুভার বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। প্রতিবন্ধী হওয়ায় সকলেই তাকে উপেক্ষা-অবহেলা করে। ফলে তার বন্ধুত্ব হয় অবলা জীব ও নির্বাক প্রকৃতির সাথে। বাক্যবিশিষ্ট প্রাণী অর্থাৎ মানুষের মধ্যে প্রতাপের সাথেও অসংজ্ঞায়িত একটি সম্পর্ক গড়ে ওঠে। লোকনিন্দার ভয়ে বাবা-মা সুভাকে কলকাতায় নিয়ে যেতে চাইলে প্রকৃতি মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আশ্রয় প্রার্থনার মাধ্যমে সুভা তার গভীর অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছে ।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘মমতাদি’ গল্পের অংশবিশেষ নিয়ে তৈরি উদ্দীপকে মমতাদির নিঃশব্দে সকল কাজ করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বের প্রতি সে এতটাই নিবিষ্ট যে আশপাশের মানুষের দিকে তাকানোর অবকাশও তার হয় না। কথকের ভাষায়, সে যেন ছায়াময়ী মানবী । উদ্দীপকের এ দিকটি ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রের মাঝে দেখা যায়; কিন্তু সুভা চরিত্রে কেবল এই একটিমাত্র দিক উপস্থিত নয়, আরও নানান দিক রয়েছে ।

‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রে উদ্দীপকের মতো শব্দহীন-নির্বিকার মনোভাবের স্বরূপ দেখা গেলেও তার চরিত্র আরও একাধিক বৈশিষ্ট্য সমন্বিত । গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ চরিত্রটির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী মানুষদের মর্মবেদনার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। সকলের কাছ থেকে সুভার উপেক্ষিত হয়ে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া, বোবা প্রাণীর সাথে সম্পর্ক তৈরি, প্রতাপের সাথে গড়ে উঠতে যাওয়া সম্পর্ক এবং সর্বোপরি চিরচেনা প্রতিবেশ ছেড়ে না যেতে চাওয়ার আকুতি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকটি সুভার সামগ্রিক সত্তার পরিচয় বহন করে না ।

উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকে শুধু শব্দহীন নির্বিকার মনোবৃত্তির বৈশিষ্ট্যটি এসেছে, যা সুভা চরিত্রের একমাত্র দিক নয়; তাই আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ।

সুভা গল্পের বোর্ড ও শীর্ষস্থানীয় স্কুলের প্রশ্নত্তর

সৃজনশীল প্রশ্ন ৩|প্রমিতা ভালো গান করে সকল পর্যায়ে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তাকে নিয়ে তার পরিবারের অনেক গর্ব। হঠাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় বাকশক্তি হারিয়ে ফেলে সে। গান গাওয়া বন্ধ হয়ে যায় প্রমিতার একসময় যারা তার বন্ধু ছিল তারা একে একে কেটে পড়ে। আজ তার পাশে কেউ নেই । সেও ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নেয়, সবার থেকে চোখের আড়াল হয়ে একাকিত্বকে সঙ্গী করে দিন কাটে তার ।(ঢাকা ২০২০)

ক) প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত কেন?

খ) সুভাকে সুভার মা বিধাতার অভিশাপ মনে করে কেন? ব্যাখ্যা করো।

গ)উদ্দীপকের প্রমিতার নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে সুভার মানসিকতার কোন দিক প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ) প্রমিতা ও সুভার প্রতি পরিজনদের আচরণ কীরূপ হলে তাদের জীবনের পরিণতি ভিন্ন হতে পারত? যৌক্তিক মতামত দাও ।

 ৩|নম্বর প্রশ্নের উত্তর

৩|ক) মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হওয়ায় প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।

খ)যে প্রশ্নটি ত্রুটিপূর্ণ।

[যে কথা কয় না সে যে অনুভব করে ইহা সকলের মনে হয় না, এইজন্য তাহার সাক্ষাতেই সকলে তাহার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করিত। সে যে বিধাতার অভিশাপস্বরূপে তাহার পিতৃগৃহে আসিয়া জন্মগ্রহণ করিয়াছে এ কথা সে শিশুকাল হইতে বুঝিয়া লইয়াছিল ।]

[বিশেষত, তাহার মা তাহাকে নিজের একটা ত্রুটিস্বরূপ দেখিতেন।কেননা, মাতা পুত্র অপেক্ষা কন্যাকে নিজের অংশরূপে দেখেন— কন্যার কোনো অসম্পূর্ণতা দেখিলে সেটা যেন বিশেষরূপে নিজের লজ্জার কারণ বলিয়া মনে করেন।]

 

গ) উদ্দীপকের প্রমিতার নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘সুভা’ গল্পের প্রতিবন্ধিতার কারণে সুভার বিষণ্ণতা ও একাকিত্বের দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা। জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না সে। কেউ তার সাথে মিশত না, বলে প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে নিয়েছিল সুভা। নিজের বোবা হওয়াটাকে সে ভাগ্যবিড়ম্বনা বলে মনে করত। এ কারণে নিজেকে সে সাধারণের দৃষ্টি থেকে সবসময় আড়াল করে রাখত।

উদ্দীপকের প্রমিতা সড়ক দুর্ঘটনায় বাকশক্তি হারায়। একসময় সুন্দর কণ্ঠে গান গেয়ে সবাইকে মুগ্ধ করত সে। কিন্তু বাকশক্তি হারানোর পর কাছের বন্ধুরাও তাকে পরিত্যাগ করে। ফলে নিজেকে অসহায় মনে করে বিষণ্ণতায় ভোগেন। সে এবং অন্যদের থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখে। প্রমিতার এই বিষণ্ণতা ও একাকিত্ব যেন ‘সুভা’ গল্পের সুভার অনুভূতি ও মানসিকতাকে ধারণ করে আছে। বোবা সুভা নিজেকে পরিবার ও সমাজের বোঝা মনে করত। উদ্দীপকের প্রমিতার মতোই নিজেকে সবার কাছ থেকে গোপন করে রাখত সে।

উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের প্রমিতার নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ‘সুভা’ গল্পের প্রতিবন্ধিতার কারণে সুভার বিষণ্ণতা ও একাকিত্বের দিকটি

 

ঘ) পরিজনদের সহানুভূতি ও সহযোগিতা পেলে উদ্দীপকের প্রমিতা ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার পরিণতি অন্যরকম হতে পারত।

আলোচ্য পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভা চরিত্রের মধ্য দিয়ে একজন প্রতিবন্ধীর নানা প্রতিবন্ধকতার দিক তুলে ধরেছেন। এখানে সুডা সমাজ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। পরিবারেও সে ছিল অবহেলিত। তার বাবা তাকে অন্য মেয়েদের চেয়ে বেশি ভালোবাসলেও তার মা তাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। সে কথা বলতে না পারলেও তার যে অনুভব শক্তি আছে তা কেউ মনে করত না। একারণে সকলে সুভার সামনেই তার ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করত। ফলে সুভা শিশুকাল থেকেই মনে করত যে সে বিধাতার অভিশাপরূপে জন্মগ্রহণ করেছে।

উদ্দীপকে দেখা যায়, সংগীতশিল্পী হিসেবে সুনাম অর্জনকারী প্রমিতার আকস্মিক দুর্ঘটনায় বাকশক্তি হারিয়ে যায়। এ কারণে একসময় যারা তার ভালো বন্ধু ছিল তারা দূরে সরে যায়। প্রমিতা সকলের কাছেই অবহেলার পাত্র হয়ে ওঠে। যে সময় সবাইকে তার কাছে পাওয়ার প্রয়োজন ছিল সেসময় সবাই তাকে দূরে সরিয়ে দেয়। পাশে কাউকে না পেয়ে নিজেকে সে গুটিয়ে নেয়। সবার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করে একাকিত্বকে সঙ্গী করে দিন কাটে তার। আলোচ্য গল্পের সুভাও স্বজনদের কাছ থেকে এমন অবহেলাই পেয়েছিল ।

প্রতিবন্ধীদেরও মানসিক অনুভূতি থাকে। সঠিক যত্ন পেলে তারা নিজেদের বিকশিত করতে পারে। আমাদের উচিত প্রতিবন্ধীদের পাশে থেকে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সুভা ও প্রমিতা যদি সমাজ ও পরিবার থেকে সহমর্মিতা ও সহযোগিতা পেতো তাহলে তারাও পরিবার তথা সমাজে বিভিন্নভাবে অবদান রাখতে পারত। সুভার পরিবার তার প্রতি সহানুভূতিপ্রবণ আচরণ করলে তাকে নিজ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র যেতে হতো না। আবার উদ্দীপকের প্রমিতাও গান গেয়ে যেভাবে সুনাম কুড়িয়েছিল, পরিবার ও বন্ধুরা পাশে থাকলে সে হয়তো অন্য কোনো বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠতে পারত । দুঃসহ একাকিত্ব নয়, তখন তার বেঁচে থাকার অবলম্বন হতো এগিয়ে যাওয়ার আশাবাদ তাই এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, পরিজনদের সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সহযোগিতা পেলে ‘সুভা’ গল্পের সুভা ও উদ্দীপকের প্রমিতার পরিণতি অন্যরকম হতে পারত।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধীদের প্রতি বিরূপ আচরণ না করে তাদের সমাজের অংশ করে নিতে হবে । উদ্দীপকের প্রমিতা ও গল্পের সুভার প্রতি তাদের পরিজনদের এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করাই সমীচীন ছিল।

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রশ্ন-৪

সৃজনশীল প্রশ্ন-৪|সুদীপ্ত ও তনয়ার একমাত্র সন্তান মৌনতা। নিটোল চোখের শান্ত মৌনতা কথা বলতে পারে না। তার প্রতি মাঝে মাঝে মায়ের বিরূপ আচরণ মনে খুব দুঃখ দেয়, কিন্তু বাবার আদর ও ভালোবাসায় সে সব দুঃখ ভুলে যায়। সুদীপ্ত কখনোই মেয়েকে বোঝা মনে করেন না বরং তার কাছে মৌনতা সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ উপহারস্বরূপ। তাই মৌনতার সব না বলা ভাষার চাহনি তার কাছে এক গল্পগাথা। (ম.বো২০২০)

ক) ‘সুভা’ গল্পে কাকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে?

খ) বাক্যহীন মনুষ্যের মধ্যে বৃহৎ প্রকৃতির মতো একটা বিজন মহত্ত্ব আছে।”— ‘সুভা’ গল্পের লেখকের এই উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

গ)উদ্দীপকের সুদীপ্ত চরিত্রটি ‘সুভা’ গল্পের কোন চরিত্রকে প্রতিফলিত করে? ব্যাখ্যা করো।

ঘ)উদ্দীপকের মৌনতার বাবা ‘সুভা’ গল্পের সুভার বাবারই প্রতিচ্ছবি । — মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) ‘সুভা’ গল্পে গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে ।

খ) প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে লেখক ভাষাহীন মানুষের মনোজগতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। নির্জন প্রকৃতির মধ্যেও যেমন ভাষা থাকে, বাকপ্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রেও তাই। কথা বলতে না পারলেও আকারে-ইঙ্গিতে নানাভাবে তারা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। শুধু তা-ই নয়, বাইরের জগতের সাথে তেমনভাবে মিশতে পারে না বলে আপন মনেই ভাবনাগুলোকে তারা নিজের মতো করে সাজায়। এভাবে চিন্তালোকে তারা গড়ে তোলে ভিন্ন এক জগৎ। প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে এ বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে।

উত্তরের সারবস্তু: বাকশক্তিহীন মানুষের মনোজগতের ভিন্নধর্মী বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে উত্তিটি করা হয়ে।

 

গ) অপত্যস্নেহের দিক থেকে উদ্দীপকের সুদীপ্ত ‘সুভা’ গল্পের বাণীকণ্ঠ চরিত্রকে প্রতিফলিত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের অন্যতম চরিত্র বাণীকণ্ঠ একজন স্নেহশীল পিতা। কথা বলতে না পারায় আর সকলের কাছে সুভা অবহেলিত হলেও বাণীকণ্ঠ তাকে আগলে রেখেছেন। কন্যাদের মধ্যে সুভা ছিল বাণীকন্ঠের সর্বাপেক্ষা প্রিয়।

উদ্দীপকের সুদীপ্তর মধ্যে একজন স্নেহশীল পিতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। তাঁর কন্যা মৌনতা কথা বলতে পারে না। এজন্য মায়ের বিরূপ আচরণ তাকে সহ্য করতে হয়। কিন্তু পিতা সুদীপ্তর স্নেহাদরে মৌনতা সব কষ্ট ভুলে যায়। শুধু তা-ই নয়, সুদীপ্ত মৌনতাকে স্রষ্টার উপহার বলে মনে করে । একইভাবে আলোচ্য গল্পের বাণীকণ্ঠও বাকশক্তিহীন কন্যা সুভাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। অর্থাৎ গল্পের বাণীকণ্ঠ এবং উদ্দীপকের সুদীপ্ত উভয়েই তাঁদের প্রতিবন্ধী কন্যার প্রতি স্নেহশীল ও সদয় ছিলেন। এদিক থেকে উদ্দীপকের সুদীপ্ত ‘সুভা’ গল্পের বাণীকণ্ঠ চরিত্রকে প্রতিফলিত করে।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধী কন্যার প্রতি মমতা প্রদর্শনের দিক থেকে উদ্দীপকের সুদীপ্ত ‘সুভা’ গল্পের বাণীকণ্ঠ চরিত্রের প্রতিনিধি।

 

ঘ) প্রতিবন্ধী সন্তানের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের বিবেচনায় উদ্দীপকের মৌনতার বাবা ‘সুভা’ গল্পের সুভার বাবারই প্রতিচ্ছবি ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ গল্পে বাক্‌প্রতিবন্ধী এক কন্যার প্রতি পিতার অগাধ মমত্ববোধের পরিচয় ফুটে উঠেছে। এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা প্রতিবন্ধির কারণে অন্যদের কাছে অবজ্ঞার পাত্র হলেও বাবা তাকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন । তিনি নিজের অন্য দুই মেয়ের তুলনায় সুভাকেই বেশি ভালোবাসতেন।

উদ্দীপকের সুদীপ্ত ও তনয়ার একমাত্র সন্তান মৌনতা। মৌনতা কথা বলতে পারে না। এজন্য মাঝে মাঝে মা তনয়া তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে যা তাকে অত্যন্ত কষ্ট দেয়। কিন্তু বাবা সুদীপ্তর অগাধ স্নেহে সব দুঃখ ভুলে যায় সে। বস্তুত, কন্যার প্রতিবন্ধিতাকে তিনি বড়ো করে দেখেন সন্তানের প্রতি অকৃত্রিম স্নেহ-বাৎসল্যই এর কারণ। ‘সুভা’ গল্পের বাণীকণ্ঠও এমনই একজন স্নেহশীল ও আদর্শ পিতা।

‘সুভা’ গল্পের সুভা একজন বাক্‌প্রতিবন্ধী কিশোরী। এজন্য সে ছিল সকলের অবহেলার পাত্র। তার মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক বলে মনে করেন। খেলার সাথিরা তাকে অবজ্ঞা করত। এসবকিছুর মাঝে বাবা বাণীকণ্ঠ ছিল তার পরম আশ্রয়। তিনি তাকে পরম মমতায় আগলে রাখে।

একইভাবে উদ্দীপকের সুদীপ্তও কন্যা মৌনতাকে আগলে রেখেছেন। তার ভাষাহীন জগতে তিনিই হয়েছেন একমাত্র সঙ্গী। অর্থাৎ আলোচ্য গল্পের বাণীকণ্ঠ এবং উদ্দীপকের সুদীপ্ত উভয়ের মাঝেই আমরা স্নেহশীল পিতৃহৃদয়ের পরিচয় পাই। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধী কন্যার প্রতি সহানুভূতি ও মমতা প্রদর্শনের বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।

সুভা গল্পের গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর: প্রশ্ন-৫

সৃজনশীল প্রশ্ন-৫|মেঘনার তীরবর্তী গ্রামে বেড়ে ওঠা দুরন্ত কিশোর জুনায়েদ দশম শ্রেণির ছাত্র। ক্লাসে সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও অসীম সবকিছুতে তার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। খেলাধুলা, বন্ধুদের সাথে দুষ্টুমি কোনো কিছুতে সে পিছিয়ে নেই। হঠাৎ একদিন সে একটি পা হারায়। এতে সে মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। পড়ালেখায় মন দিতে পারছে না। তার সর্বদা মনে হ পড়ালেখা করে কী লাভ হবে? কিন্তু তার সহপাঠীরা তাকে উৎসাহ ও সাহস দিয়ে আবার প্রাণচঞল করে তোলে। সে এসএস পেয়ে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয় । সকলে তার সফলতায় খুশি হয় । (রা.বো ২০২০)

ক)সুভা কার কাছে মুক্তির আনন্দ পায়?

খ)মা সুভাষিণীকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন কেন?

গ) উদ্দীপকের জুনায়েদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দিকটি ‘সুভা’ গল্পের সুভার সঙ্গে কীভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা করো।

ঘ)“উদ্দীপকের সহপাঠীদের মতো মানসিকতা থাকলে ‘সুভা’ গল্পের সুভার পরিবারকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না-মন্তব্যটির যথার্থতা বিশ্লেষণ করো ।

 

 ৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক)সুভা বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে মুক্তির আনন্দ পায়।

খ)সুভা বাক্‌প্রতিবন্ধী বলে মা সুভাষিণীকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন ।

মায়েরা পুত্র অপেক্ষা কন্যাকে নিজের অংশরূপে দেখেন । তাই কন্যার কোনো অপূর্ণতা দেখলে সেটাকে বিশেষরূপে নিজের কলঙ্ক বলে মনে করেন তারা। ‘সুভা’ গল্পের সুভার মা-ও প্রতিবন্ধী কন্যাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক হিসেবে জ্ঞান করেন । তাই সুভা যেন তার মায়ের ত্রুটিরই স্বাক্ষর।

উত্তরের সারবস্তু: কন্যাসন্তানকে বিশেষভাবে নিজের অংশ মনে করায় তার অপূর্ণতাকে নিজের ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন সুভার মা।

 

গ) উদ্দীপকের জুনায়েদের মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার দিকটি ‘সুভা’ গল্পের সুভার নিজেকে গোপন করে রাখার চেষ্টার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সুভা’ গল্পে সুভা বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী। সবাই তাকে অবজ্ঞা করত, প্রকাশ্যেই তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করত। সমবয়সিদের কেউ তার সঙ্গে খেলতে চাইত না। ফলে সুভা মানসিকভাবে হীনম্মন্যতায় ভুগত। সে নিজের ত্রুটির কথা ভেবে সর্বদা নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করত।

উদ্দীপকের দুরন্ত কিশোর জুনায়েদ সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারায়। এতে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। নিজের পঙ্গুত্বের বিষয়টি সে মেনে নিতে পারে না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকায় পড়ালেখায়ও মনোযোগ দিতে পারে না সে। প্রতিবন্ধিত্বের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের জুনায়েদ ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়ে মানসিক জড়তা অনুভবের দিক থেকে উদ্দীপকের জুনায়েদ ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 

ঘ)উদ্দীপকের সহপাঠীদের মাঝে সহানুভূতিশীল মানসিকতার প্রকাশ ঘটলেও ‘সুভা’ গল্পে সুভার নিকটজনদের মাঝে তা না থাকায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়ে উঠেছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে সুভার প্রতিবন্ধিত্বের বিষয়টি কেউ সহজে মেনে নিতে পারেনি। ফলে সুভার সামনেই স্বজনেরা সুভার বিষয়ে দৃশ্চিয়া প্রকাশ করা শুরু করেছিল। এর প্রভাবে সুভার মা-ও সুভাবে নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। এমনকি সুভার সাথে সমবয়সিরা খেলাধূলাও করতে চাইত না। সকলের এরূপ মনোভাবের কারণে সুভাও নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। সমাজে সকলের সহানুভূতিহীনতার কারণে সুভাকে নিয়ে সুভার পরিবারকেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল।

উদ্দীপকে আমরা দেখি, সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারিয়ে জুনায়েদ মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও তার পাশে দাঁড়িয়েছিল সবাই। সহপাঠীদের উৎসাহ ও সাহস জুনায়েদকে নতুন করে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। ফলে নিজের ত্রুটির বিষয়টিকে জুনায়েদের আর দুর্বলতা মনে হয়নি। তাই সে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠেছিল এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে পেরেছিল। এর বিপরীতে আপনজনদের অসহযোগিতা সুভার বেদনাভরা জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছিল।

উদ্দীপকের জুনায়েদের সহপাঠীরা সহানুভূতি নিয়ে তার পাশে দাঁড়ালেও ‘সুভা’ গল্পের সুভার ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম দেখা যায়। সুভার প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি সকলে মেনে না নিয়ে উলটো তার সমালোচনা করে। প্রতিবেশীদের হিংসাত্মক মনোভাবের কারণে তাকে সপরিবারে নিজ জন্মস্থান ছেড়ে কলকাতায় চলে যাওয়ার বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। উদ্দীপকের জুনায়েদ সহপাঠীদের উৎসাহে সাফল্য লাভে সক্ষম। আলোচ্য গল্পের সুভাকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সবার অসহযোগিতার কারণে। নিকটজন ও প্রতিবেশীদের সহানুভূতি ও সহযোগিতা পেলে সুভার জীবন এতটা কষ্টের হতো না । হীনম্মন্যতায় না ভুগে আত্মমর্যাদাপূর্ণ জীবন উপভোগ করতে পারত সে। তাই বলা যায়, “উদ্দীপকের সহপাঠীদের মতো মানসিকতা থাকলে ‘সুভা’ গল্পের সুভার পরিবারকে বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না”— প্রশ্নোক্ত এই মন্তব্যটি যথার্থ।

উত্তরের সারবস্তু: নিকটজন ও প্রতিবেশীদের বিরূপ মনোভাবের বদলে তাদের কাছ থেকে উদ্দীপকের জুনায়েদের সহপাঠীদের মতো সহযোগিতা পেলে সুভার পরিবারকে দুর্ভোগে পড়তে হতো না। সুভার জীবনটাও সুন্দর হতো।

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর – (চট্টগ্রাম বোর্ড ২০২০)

সৃজনশীল প্রশ্ন-৬| বাবা-মা হারা রেজা তার চাচা আমজাদ সাহেবের কাছে থাকে। রেজার একটি হাত ও একটি পা নেই। তবু সে থেমে থাকে না। ক্লাসে ভালো ফলাফল করায় শিক্ষকগণ তাকে স্নেহ করেন। সহপাঠীরা তাকে সহযোগিতা করে। তবে কেউ কেউ তাকে নিয়ে তামাশা করে। ফলে অনেক সময় মন খারাপ হয়। চাচা তাকে বলে, “মন খারাপ কোরো না, এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে তুমি সবাইকে দেখিয়ে দাও যে তুমিও পারো।”(.বো২০২০)

ক) সুভার মা সুভার প্রতি বিরক্ত ছিলেন কেন?

খ)সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত কেন?ব্যাখ্যা করো।

গ)উদ্দীপকের রেজার সাথে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।

ঘ) “সুভার বাবা-মায়ের মানসিকতা যদি রেজার চাচার মতো হতো তবে সুভার পরিণতির অন্যরকম হতে পারত”- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

 

৬ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক)সুভাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করে সুভার মা তার প্রতি বিরক্ত ছিলেন।

খ) প্রতাপকে অভিভূত করার জন্য সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত। সুভা মনে মনে প্রতাপকে ভালোবাসত। তাই প্রতাপ যখন নদীর তীরে বসে মাছ ধরত, তখন সুভা তার পাশে বসে ভাবত সে যদি প্রতাপের কোনো কাজে বা সাহায্যে আসতে পারত। কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না। তাই সে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত— যেন হঠাৎ মন্ত্রবলে সে এমন একটা আশ্চর্য কাণ্ড ঘটিয়ে দিতে পারে, যা দেখে প্রতাপ অভিভূত হয়। বস্তুত প্রতাপের মন জয় করার জন্যই সুভা অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতাপকে অভিভূত করে তার মন জয় করার বাসনা থেকেই সুভা বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।

 

গ) উদ্দীপকের রেজা এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভা দুজনই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, যা তাদের মধ্যে সাদৃশ্য তৈরি করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা বাক্প্রতিবন্দী। কথা বলতে না পারলেও তার অনুভূতিশক্তি প্রখর। কিন্তু প্রতিবন্দিত্বের কারণে প্রকাশ করতে পারে না। আপনজনদের অবজ্ঞা ও অবহেলার কারণে প্রকৃতির সাথে মিতালি পাতিয়ে সুভা নিজের মাঝে ভিন্ন একটা জগৎ গড়ে তোলে । নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করে সবার কাছ থেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা করে সে।

উদ্দীপকের পিতৃমাতৃহীন রেজা একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। চাচার কাছে প্রতিপালিত হয় সে। একটা হাত, একটা পা না থাকলেও তার আত্মবিশ্বাস প্রবল। এই আত্মবিশ্বাসের কারণেই সে ক্লাসে ভালো ফল করে। শিক্ষকগণও তাকে স্নেহ করেন। এক্ষেত্রে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কোনোরূপ বাধার সৃষ্টি করতে পারেনি। ‘সুভা’ গল্পেও বাকপ্রতিবন্ধী সুভার মনোগজতের পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। মূলত শারীরিক প্রতিবন্ধিতার বিষয়টিই উদ্দীপকের রেজা ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার মাঝে সাদৃশ্য নির্মাণ করেছে।

উত্তরের সারবস্তু: শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের রেজা ‘সুভা” গল্পের সুভার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

 

ঘ) সুভার বাবা-মায়ের মানসিকতা যদি রেজার চাচার মতো সহানুভূতিপ্রবণ হতো তবে সুভাকে করুণ পরিণতির মুখোমুখি হতে হতো না । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের নামচরিত্র সুভা বাক্‌প্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না বলে বাবা-মা ও স্বজনরা তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করেন। কিন্তু সুভা ছিল আর দশজন মানুষের মতোই অনুভূতিপ্রবণ। প্রকৃতির মাঝে সে মুক্তির আনন্দ খুঁজে নেয়। বাবা ছাড়া তার এ কষ্ট কেউ বুঝতে পারে না। গল্পের পরিণতিতে কন্যাদায়গ্রস্ত বাবা-মা লোকনিন্দার ভয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

উদ্দীপকের রেজা জন্মের পর থেকেই চাচার কাছে মানুষ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সে ক্লাসে ভালো ফল করে। ক্লাসের শিক্ষকবৃন্দ ও সহপাঠীরা তাকে সহযোগিতা করে। কেউ কেউ তাকে নিয়ে তামাশা করলে তার মন খারাপ হয়। কিন্তু চাচার অদম্য অনুপ্রেরণা এবং নিজের আত্মবিশ্বাসের কারণে সে সামনে এগিয়ে যেতে প্রত্যয়ী হয়। এক্ষেত্রে রেজার চাচার সমর্থন অনেক বড়ো ভূমিকা রাখে।

উদ্দীপকের রেজা এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভা উভয়ই শারীরিক প্রতিবন্দী। কিন্তু প্রতিবন্ধকতার কারণে রেজা তার চাচার কাছ থেকে যেরকম সাহায্য পেয়েছে গল্পের সুভা তা স্বজনদের কাছ থেকে পায়নি। সুভা সমাজের দৃষ্টিতে অবহেলার পাত্র। বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে মায়ের কাছে গর্ভের কলঙ্ক বলে বিবেচিত হয়। বাবা ব্যতীত অন্য আপনজনরা পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাকে অবজ্ঞা ও অসম্মান করে। এমন অবহেলার কারণে সুভা নিজেকে স্রষ্টার অভিশাপ বলে মনে করত। কিন্তু সুভার বাবা-মায়ের মানসিকতা যদি রেজার চাচার মতো সহানুভূতিপূর্ণ হতো, তাহলে নিজেকে তার দুর্বল মনে হতো না। আত্মবিশ্বাসী হয়ে সে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারত। যদি তার বাবা-মা তার মনের শক্তিকে প্রাধান্য নিয়ে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিত তাহলে সুভা নিজেকে আত্মমর্যাদাপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারত। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলতে পারি, ‘সুভার বাবা-মায়ের মানসিকতা যদি রেজার চাচার মতো হতো, তবে সুভার পরিণতি অন্যরকম হতে পারত’- প্রশ্নোত্ত এই উক্তিটি যথার্থ।

উত্তরের সারবস্তু: মানুষের জীবনে অভিভাবকের সমর্থন ও সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। উদ্দীপকের পিতৃ-মাতৃহীন রেজা চাচার কাছ থেকে তা পেলেও গল্পের সুভা বাবা-মার কাছ থেকে যথাযথ আচরণ পায়নি। উপযুক্ত মর্যাদা ও সমর্থন পেলে তার জীবনটা অনেক সুন্দর হতে পারত।

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-৭

সৃজনশীল প্রশ্ন_৭|জাবিদ, জহির ও খালিদ তিন বন্ধু একই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়ে এবং একসাথে স্কুলে যায়। জানিদের মাঝে মধ্যে হেঁটে বিদ্যালয়ে যেতে কষ্ট হয়। পা অবশ হয়ে আসে। পথ চলতে গিয়ে কখনো কখনো বসে পড়ে সে। জহির ও খালিদ তাকে সঙ্গ দেয়। এতে তাদের মাঝে মাঝে স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যায়। জাবিদের মায়ের কাছ থেকে জানা যায়, ছোটোবেলায় তার ভীষণ অসুখ হওয়ার পর থেকে তার এ সমস্যাটি দেখা দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে আমিল স্যার আবিদকে সহযোগিতার জন্য খালিদ ও জহিরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানা (সি. বো. 20)

ক) ‘কিশলয়’ অর্থ কি?

খ) তুমি আমাকে যাইতে দিয়ো না, মা’—উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।

গ)উদ্দীপকের জাবিদ আর ‘সুভা’ গল্পের সুভার মিল কোথায়? বর্ণনা দাও।

ঘ)উদ্দিপকের জামিল স্যার ও জাবিদের বন্ধুদের ভূমিকা ‘সুভা’ গল্পের লেখকের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন” -বিশ্লেষণ করো।

 ৭ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক)কিশালয় অর্থ গাছের নতুন পাতা।

খ)প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা লেখক নির্বাক সুভার অসহায়ত্ব এবং প্রকৃতির কাছে তার নির্ভরতা ও আশ্রয় লাভের বাসনার স্বরূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। বাকপ্রতিবন্ধী সুভার আশ্রয়ের অন্যতম জগৎ প্রকৃতি। নিস্তব্ধ প্রকৃতির কাছে সে পায় মুক্তির আনন্দ। তাই যখন কলকাতায় যাওয়ার দিন স্থির হয় তখন অজানা ভয়ে শঙ্কিত সুভা চিরপরিচিত নদীতটে লুটিয়ে পড়ে প্রকৃতি মায়ের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে। মূলত সে যেমন প্রকৃতিকে ভালোবাসে, সেই ভালোবাসার অধিকারে প্রকৃতির কাছে সেও আশ্রয়প্রার্থী— প্রশ্নোক্ত উত্তিতে এ বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে।

উত্তরের সারবস্তু: গ্রাম ছেড়ে যেতে অনাগ্রহী সুভার প্রকৃতির কোলে ঠাঁই পাওয়ার তীব্র বাসনাই ফুটে উঠেছে আলোচ্য উক্তিতে।

 

গ)শারীরিক প্রতিবন্ধকতার দিক থেকে ‘সুভা’ গল্পের সুভার সাথে উদ্দীপকের জাবিদের মিল রয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে এক বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরীর প্রতি লেখকের হৃদয় নিঙড়ানো ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। জন্ম থেকেই সুভা কথা বলতে পারে না। কেউ তার সঙ্গে মেশে না, খেলে না। সবাই তাকে বোঝা মনে করে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে। তাই সমাজের দৃষ্টিপথ থেকে নিজেকে আড়াল করে সুভা প্রকৃতির মাঝে গড়ে তোলে আপন জগৎ।

উদ্দীপকের জাবিদ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার। বিদ্যালয়ে হেঁটে যেতে তার কষ্ট হয়, পা অবশ হয়ে আসে। পথ চলতে গিয়ে কখনো কখনো বসে পড়ে সে। ছোটোবেলায় একবার ভীষণভাবে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে তার এ সমস্যাটি দেখা দেয়। আলোচ্য গল্পের সুভাও প্রতিবন্ধিতার শিকার। তাই বলা যায়, শারীরিক প্রতিবন্দী হওয়ার দিক থেকে সুভার সঙ্গে উদ্দীপকের জাবিদের মিল রয়েছে।

উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের জাবিদ ও গল্পের সুভা উভয়ই প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ।

 

ঘ)প্রতিবন্ধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় উদ্দীপকের জামিল স্যার ও জাবিদের বন্ধুরা ‘সুভা’ গল্পের লেখকের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।

‘সুভা’ গল্পে প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অপরিসীম ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে। পরম মমতায় গল্পে তিনি বাকপ্রতিবন্ধী এক কিশোরীর বেদনাঘন জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেছেন। আলোচ্য গল্পে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মূলত প্রতিবন্ধী মানুষের আশ্রয়ের জন্য একটি জগৎ তৈরি করেছেন এবং সেই সঙ্গে তাদের প্রতি আমাদের মমত্ববোধের উন্মেষ ঘটাতে চেয়েছেন।

উদ্দীপকের জাবিদ শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার। বিদ্যালয়ে হেঁটে যেতে তার কষ্ট হয়। তার বন্ধু জহির ও খালিদ তাকে পথ চলতে সহায়তা করে। এতে তাদের মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে পৌছাতে দেরি হয়ে যায়। এখানে বন্ধুর প্রতি জহির ও খালিদের সহানুভূতি ও ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। জাবিদকে সহযোগিতার জন্য বিদ্যালয়ের জামিল স্যার খালিদ ও জহিরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এর মধ্য দিয়ে জামিল স্যারের আচরণেও সহানুভূতিশীল মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় ।

“সুভা” গল্পে দেখা যায়, বাকপ্রতিবন্ধী সুভার সামনেই সকলে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা প্রকাশ করত। এমনকি বিয়ের বয়স অতিক্রান্ত হওয়ায় তার পিতামাতাকে লোকের নিন্দা সহ্য করতে হতো। মানুষের অবজ্ঞা ও নিন্দার শিকার সুভা আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিল প্রকৃতির মাঝে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক আচরণ এবং প্রতিবন্ধীদের মনোজগতের গভীর মর্মবেদনার চিত্র তুলে ধরে লেখক পরম মমতায় গড়ে তুলেছেন সুভা চরিত্রটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সুভা’ গল্পের মধ্যে দিয়ে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও মমত্ববোধ জাগ্রত করতে চেয়েছেন। উদ্দীপকে দেখা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী বন্ধু জাবিদকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে জহির ও খালিদ। আর বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিষয়টি জানতে পেরে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জহির ও খালিদকে। অর্থাৎ জামিল স্যার ও জাবিদের বন্ধুদের মানসিকতায় যে সহানুভূতি ও মমত্ববোধের প্রকাশ পেয়েছে তা ‘সুভা’ গল্পের লেখকের আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধীরা সমাজেরই অংশ। তাদের অবজ্ঞা না করে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এ আহ্বান উদ্দীপকে ধ্বনিত হয়েছে যার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ‘সুভা’ গল্পেও বিদ্যমান।

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন এবং উত্তর: প্রশ্ন-৮

সৃজনশীল প্রশ্ন-৮|অন্ধত্বকে জয় করেছে কুসুমপুরের কলি।নিজস্ব প্রতিবেদকঃ দৈনিক প্রতিভা জন্মান্ধ হলেও কুসুমপুরের কলি আজ সংগীত জগতে এক উজ্জ্বল তারকা। আর তা সম্ভব হয়েছে তার মায়ের কারণে। অন্ধত্বের বিষয়টি জানার পরও তিনি হতাশ হননি বরং অন্য যেকোনো সন্তানের চেয়ে কলি আরও বড়ো হবে এই প্রত্যয়ে তাকে লেখাপড়া ও গান শেখাতে শুরু করেন; তাঁর চেষ্টা আজ সফল হয়েছে। তিনি কলির জন্য আজ গর্বিত মা। (ব.বো.২০২০)

ক)’সুভা’ গল্পে একমাত্র কে সুভার মর্যাদা বুঝত?

খ) ‘সুভা’ পরে ‘গ্রামলক্ষ্মী স্রোতঃস্বিনী’ কথাটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?

গ) উদ্দীপকের বক্তব্যে ‘সুভা’ গল্পের যে বৈপরীত্য লক্ষণীয় তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ) “উপযুক্ত পরিবেশ ও পরিচর্যা পেলে সুভাও কলির মতো হয়ে উঠত”— বিশ্লেষণ করো।

৮নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) ‘সুভা’ গল্পে সুভার মর্যাদা একমাত্র প্রতাপ বুঝত।

খ)’সুভা’ গল্পে ‘গ্রামলক্ষ্মী স্রোতঃস্বিনী’ বলতে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা নদীটির মাহাত্ম্য বোঝানো হয়েছে। আলোচ্য গল্পে বর্ণিত গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোটো একটি নদী। আপন খেয়ালে অবিরলভাবে বয়ে চলেছে সে। চলার পথে দুধারে সৃষ্টি করেছে শ্যামলিমা ও সমৃদ্ধি। গ্রামটি যেন এ নদীর আশীর্বাদপুষ্ট। নদীটিকে তাই সৌভাগ্যের দেবী লক্ষ্মীর সাথে তুলনা করেছে।

উত্তরের সারবস্তু: আলোচ্য কথাটির মধ্য দিয়ে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কল্যাণময়ী নদীটিকে নির্দেশ করা হয়েছে।

 

গ) প্রতিবন্ধী সন্তানকে উপযুক্ত সহযোগিতা ও সমর্থন প্রদানের দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘সুভা’ গল্পের মধ্যে বৈপরীত্য লক্ষ করা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের মূল চরিত্র সুভা বাক্প্রতিবন্ধী কিশোরী। তার এ ত্রুটিকে তার মা নিজের অসম্পূর্ণতা হিসেবেই দেখেন। সুভাকে নিজের গর্ভের কলঙ্ক হিসেবে বিবেচনা করেন তিনি। কন্যার প্রতি সবক্ষেত্রেই তিনি সীমাহীন অবহেলা প্রদর্শন করেন । মায়ের এমন মনোভাব মাঝে তীব্র হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করে। ফলে সর্বদা লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকতে চায় সে।

উদ্দীপকে বর্ণিত কলি জন্মান্ধ হলেও তার মা তাকে অবহেলা করে দূরে সরিয়ে দেননি। বরং মেয়ের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছেন। কলির লেখাপড়ার বিষয়েও তিনি ছিলেন তৎপর। তাঁর অকুণ্ঠ সমর্থন পেয়েছে বলেই কলি নিজেকে সমাজে সফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। এর বিপরীতে ‘সুভা’ গল্পে আমরা প্রতিবন্ধী কন্যাকে সহযোগিতার পরিবর্তে তাকে অবজ্ঞা করতে দেখি। এখানেই আলোচ্য গল্প ও উদ্দীপকের মধ্যে অমিল লক্ষ করা যায়।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধী সন্তানকে পর্যাপ্ত সমর্থন ও ভালোবাসা প্রদানের প্রসঙ্গে উদ্দীপকের বক্তব্য ‘সুভা’ গল্পের বিপরীত।

 

ঘ)উপযুক্ত সহযোগিতা পেলে আলোচ্য গল্পের সুভাও সমাজের একজন হিসেবে নিজেকে বিকশিত করতে পারত। প্রতিবন্ধী মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপনের অন্যতম উদাহরণ ‘সুভা’ গল্পটি। এ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভার মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রতিবন্ধীদের মর্মবেদনার স্বরূপ তুলে ধরেছেন। বাক্প্রতিবন্ধী সুভাকে নিয়ে সবাই বিব্রত। তার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সকলেই চিন্তিত। কিন্তু তার এগিয়ে চলার পথকে মসৃণ করতে কেউই এগিয়ে আসে না।

উদ্দীপকে বর্ণিত কলি গল্পের সুভার তুলনায় সৌভাগ্যের অধিকারী। জন্মান্ধ হলেও তার মা তাকে অবহেলা করেননি। বরং তাকে আত্মনির্ভর করার জন্য সবরকম চেষ্টাই করেছেন। এরই ফলে কলি আজ নামকরা সংগীতশিল্পী। এমন সহযোগিতা পেলে আলোচ্য গল্পে সুভার জীবনও হয়তো অন্যরকম হতো।

প্রতিবন্ধীরা আমাদের সমাজেরই অংশ। সমাজ গঠনে তাদেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার ক্ষমতা। তাদের মাঝে যে সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে তা উদঘাটন করে সঠিক উপায়ে পরিচর্যা করলেই তারা সমাজের মূলধারায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। উদ্দীপকের কলির মা ঠিক এই কাজটিই করেছেন। এর ফলে জন্মান্ধ হলেও কলির জীবন রঙিন হয়েছে সাফল্যের আলোয়। অন্যদিকে, স্বজনদের অবহেলা গল্পের সুভার জীবনকে হতাশায় ভরিয়ে দিয়েছে। তার কচি মনের স্বপ্নগুলো ডানা মেলার আগে অঙ্কুরেই চাপা পড়েছে। যদি কলির মতো সুভাকেও উপায়ে সমর্থন প্রদান করা যেত তবে নিঃসন্দেহে সেও মর্যাদাসম্পন্ন জীবনের অধিকারী হতে পারত। সার্বিক বিচারে বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

উত্তরের সারবস্তু: অন্য দশজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের মতো সুভারও ছিল সুন্দর জীবন পাওয়ার অধিকার। উদ্দীপকের কলির মতো উপযুক্ত সমর্থন পেলে সেও নিজের জীবনকে সাজিয়ে নিতে পারত।

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-৯ (ব. বোর্ড ২০২০)

সৃজনশীল প্রশ্ন ৯| মেয়েটির নাম আঁখি। চোখে না দেখলেও বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। বন্ধুদের অন্যতম ‘তিতু’ জন্মদিনের উপহার

হিসেবে আঁখিকে একটি ঝুনঝুন বল উপহার দেয়। এই বলের সাহায্যে ক্রিকেট খেলায় ছক্কা মেরে আঁখি তার দলকে বিজয় এনে দেয়।(ব.বো ২০২০)

ক)সুতা দুই বাহুতে কাকে ধরে রাখতে চায়?

খ) সুতা পিতামাতার মনে সর্বদাই আগরুক ছিল কেন? বুঝিয়ে দাও ।

গ) উদ্দীপকে ‘সুভা’ গল্পের যে বিশেষ দিকের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ)“’সুভা’ গল্পের ‘প্রতাপ’ যদি উদ্দীপকের ‘তিতু’ হতো, তাহলে ‘সুভা’ গল্পের পরিণতি অন্যরকম হতে পারত। ” উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

 ৯ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক)সুভা দুই বাহুতে ধরণি ও মূক মানবতাকে ধরে রাখতে চায় ।

খ)সুভা বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তার ভবিষ্যতের পরিণতি চিন্তায় পিতামাতার মনে সে সর্বদা জাগরূক ছিল । বাক্‌প্রতিবন্ধী হওয়ায় সুভা নিজেকে বিধাতার অভিশাপ বলে মনে করত। সুভার ভবিষ্যতের কথা ভেবে তার বাবা-মা যেমন শঙ্কিত থাকতেন, তেমনি প্রতিবেশীদেরও তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। মা সুভাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। সুভার এই প্রতিবন্ধকতার কারণে সর্বদাই সে তার পিতামাতার মনে অস্বস্তি হিসেবে জাগরুক ছিল।

উত্তরের সারবস্তু: বাকপ্রতিবন্ধী সুভার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুর্ভাবনার সূত্রেই সে সর্বদা তার পিতামাতার মনে জাগরুক ছিল।

গ) উদ্দীপকে আঁখি চরিত্রটির মধ্য দিয়ে ‘সুভা’ গল্পের সুভার প্রতিবন্ধিতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পের সুভা একজন বাকপ্রতিবন্ধী। কথা বলতে পারে না বলে ব্যক্তিজীবনেও সে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ে। তার মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক বলে মনে করে। পাড়া-প্রতিবেশীরাও তাকে অবজ্ঞার চোখে দেখে। এ কারণে সুভাও নিজেকে বোঝা মনে করে হীনম্মন্যতায় ভোগে । গল্পের পুরোভাগ জুড়ে সুভার এই অন্তর্যাতনার কথা প্রকাশিত হয়েছে।

উদ্দীপকে আঁখি নামের এক মেয়ের কথা বলা হয়েছে। সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তবে চোখে দেখতে না পেলেও সে বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। বন্ধুবান্ধবও তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। অন্যদিকে গল্পের সুভার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এমন নয়। প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাকে নানামুখী প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। শুধু তা-ই নয়, এ কারণে তার তেমন বিশেষ বন্ধুবান্ধবও তৈরি হয়নি। তবে তারা উভয়য়েই প্রতিবন্ধী। আর আলোচ্য গল্পের সুভার এই প্রতিবন্ধিতার দিকটিই উদ্দীপকের আঁখি চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধিতার শিকার হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের আখি ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রের সাথে তুলনীয়। ‘সুভা’

ঘ) সুভা গল্পের প্রতাপ যদি উদ্দীপকের তিতুর মতো সহযোগিতার মানসিকতায় উজ্জীবিত হতো, তাহলে ‘সুভা’ গল্পের পরিণতি অন্যরকম হতে পারত। ‘সুভা’ গল্পের প্রতাপ সুভার সঙ্গ উপভোগ করলেও তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসেনি। প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রতিবেশীদের চাপে কন্যাদায়গ্রস্ত সুভার বাবা-মা তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবলে সুভার মন ভেঙে যায়। চিরপরিচিত প্রকৃতি ও ভালোবাসার মানুষ প্রতাপকে ছেড়ে যেতে ভীষণ কষ্ট হয় এ সময় প্রতাপ সুভার মনের কথা বুঝতে পারে না, বরং তাকে নিয়ে ঠাট্টা করে।

উদ্দীপকের তিতু তার বান্ধবীর কল্যাণকামী ও সহযোগী। সে ঝুনঝুন বল উপহার দেয় আঁখিকে। চোখে দেখতে না পেলেও শব্দ শুনে আঁখি সে বলের সাহায্যে ক্রিকেট খেলায় দক্ষতা অর্জন করে। একসময় আঁখি অন্ধত্বকে জয় করে তার দলকে জয়ী করতে সক্ষম হয়। সেটা সম্ভব হয়েছে তিতুর সহযোগিতার ফলেই আলোচ্য গল্পের সুভা এমন সহযোগিতা লাভের সৌভাগ্যের অধিকারী হয়নি।

‘সুভা’ গল্পে সুভা পরিবারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার বড়ো দুই বোন সুকেশিনী ও সুহাসিনীর বিয়ে হয়ে যায় মহা ধুমধামের সাথে। কিন্তু বাক্প্রতিবন্ধী হওয়ায় সুভার বয়স বাড়লেও তার বিয়ের বন্দোবস্ত করা সম্ভব হয় না। তাই পরিবার ও সমাজের চোখে সে যেন বোঝা হয়ে পড়ে। সে প্রতাপের মাছ ধরার উত্তম সঙ্গী হিসেবে বিবেচিত হলেও সুভার প্রতি প্রতাপ বেশি মনোযোগী নয় বাবা-মা মেয়ের বিয়ে দিতে না পারার অক্ষমতায় যখন সুভাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন তখন প্রতাপ তার পাশে দাঁড়াতে পারত। সে যদি সুভার মনের কথা বুঝে তাকে সাহায্য করত, তার প্রতি সুভার ভালোবাসাকে মর্যাদা দিত, তবে সুভাকে অচেনা পরিবেশে অজানা ভবিষ্যতের আশঙ্কায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে হতো না। যেমনটি উদ্দীপকের তিতুর সহযোগিতায় আঁখির ক্ষেত্রে ঘটেছে। তিতু আঁখিকে নতুন জীবনের রাস্তা দেখিয়েছে। তার প্রতিভা বিকাশে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। সুভা এদিক থেকে দুর্ভাগ্যের শিকার। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।

উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকে প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার দৃষ্টান্ত লক্ষণীয়। এমন সমর্থন আলোচ্য গল্পের সুভা পেলে তাকে হয়তো করুণ বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হতো না

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-১০

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর – (দিনাজপুর বোর্ড ২০২০)

সৃজনশীল প্রশ্ন -১০|রিয়ার বয়স সতেরো পেরিয়ে আঠারোয় পড়েছে। ওর সমবয়সি অনেকেই বিয়ে-থা করে রীতিমতো সংসারী। কিন্তু রিয়ার জন্ম থেকেই হাত দুটো অসাড় হওয়ায় অন্যদের মতো তার সংসার করা হয়নি। রিয়ার বিধবা মা সেলিনা বেগম এতে বিচলিত নন। ছোটো ছেলে পনেরো বছরের রাতুলের চেয়ে কোনো অংশে রিয়ার আদর-যত্ন তিনি কম করেন না। পাড়ার দু-একজন অবশ্য রিয়ার বিকাশের পথে জিন-ভূতের আছরকে দায়ী করে। কিন্তু ওসবকে পাত্তা দেন না সেলিনা বেগম।(দি.বো, ২০১৯)

ক) সুভা জলকুমারি হলে হলে কি করতো?

খ) প্রতাপকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক কেন বলা হয়েছে?

গ) উদ্দীপকের সেলিনা বেগম এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভার মায়ের বৈসাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো।

ঘ)উদ্দীপকের রিয়া কি ‘সুভা’ গল্পের সুভা? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

 ১০ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) সুভা জলকুমারী হলে জল থেকে সাপের মাথার মণি প্রতাপের জন্য ঘাটে রেখে দিত ।

খ) প্রতাপ কাজকর্ম করে সংসারের উন্নতির কোনো চেষ্টা করছে না বলে তাকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে। ‘সুভা’ গল্পে গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ। সংসারের জন্য কাজে তার মন নেই। অকর্মণ্য লোক বলে অনাত্মীয়রা তাকে নিয়ে নানা ধরনের কাজ করিয়ে নেয় । অলস সময়ে সে ছিপ ফেলে মাছ ধরে। কাজকর্ম করে সংসারের উন্নতির চেষ্টা করে না বলে প্রতাপকে নিতান্ত অকর্মণ্য লোক বলা হয়েছে।

উত্তরের সারবস্তু: সংসারের কোনো কাজকর্মে প্রতাপের অংশগ্রহণ ছিল না বলে তাকে নিতান্ত অকর্মণ্য বলা হয়েছে।

গ)প্রতিবন্ধী সন্তানের প্রতি মায়ের দৃষ্টিভঙ্গির দিকটিতে উদ্দীপকের সেলিনা বেগম এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভার মায়ের “সুভা” গল্পে আমরা দেখতে পাই সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। বাকপ্রতিবন্ধী কিশোরী সন্তানের প্রতি সুভার মা মনে মনে অসন্তুষ্ট। তিনি সুভাকে নিজের নিয়তির দোষ বলে মনে করেন। সুভাকে তিনি গর্ভের কলঙ্ক মনে করেন এবং কন্যার এ ত্রুটিকে নিজের লজ্জার কারণ হিসেবে ভাবেন। উদ্দীপকের আমরা ‘সুভা’ গল্পের সুভার মায়ের বিপরীত মানসিকতার দিকটি দেখতে পাই। উদ্দীপকের রিয়ার মা সেলিনা বেগম প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে মোটেই চিন্তিত নন। বরং অন্য সন্তানের মতোই রিয়ার যত্নআত্তি করেন।লোকদের নেতিবাচক কথায় তিনি কর্ণপাত করেন না। দৃষ্টিভঙ্গিগত এ পার্থক্যই উদ্দীপকের সেলিনা বেগম ও ‘সুভা’ গল্পের সুভার মায়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য তৈরি করেছে ।

উত্তরের সারবস্তু : প্রতিবন্ধী সন্তানের প্রতি সহানুভূতিশীলতায় উদ্দীপকের সেলিনা বেগম এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভার মা বিপরীতমুখী হওয়ায় তাদের মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ)শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় সাদৃশ্যপূর্ণ হলেও পরিবারে অবস্থানের ক্ষেত্রে বৈপরীত্য থাকায় উদ্দীপকের রিয়া ‘সুভা’ গল্পের সুভা নয় । ‘সুভা’ গল্পের সুভা বাক্প্রতিবন্ধী। সে পিতামাতার কাছে বোঝাস্বরূপ। মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক বিবেচনায় নিজের লজ্জার কারণ মনে করত বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

তাদের মধ্যে তার সাথে মিশতে চায় না। সুভাও নিজেকে সবার কাছ থেকে আড়াল করতে চায় । উদ্দীপকে আমরা ‘সুভা’ গল্পের বিপরীত দিকটি দেখতে পাই। এখানে রিয়া প্রতিবন্ধী হলেও তার মা তাকে নিয়ে বিচলিত নন। রিয়ার ভাইয়ের মতো রিয়াকেও তিনি সমান আদর-যত্ন করেন। পাড়ার লোকজনের বাজে কথায় কান না দিয়ে রিয়ার মা রিয়াকে সুন্দর পরিবেশে বেড়ে ওঠারতৈরি করে দিয়েছেন।

উদ্দীপকের রিয়া ও ‘সুভা’ গল্পের সুভা শারীরিক প্রতিবন্ধী। সমাজের লোকেরা তাদের দুজনকে নিয়েই নানা নেতিবাচক কথা বলে । তবে সুভার মায়ের মতো রিয়ার মা এসব কথায় কর্ণপাত করেন না। সুভার মা যেমন সুভাকে নিজের লজ্জার কারণ মনে করেন, রিয়ার মা তেমনটি মনে করেন না। বরং ছেলের মতো মেয়েকেও সমান যত্নে মানুষ করেন। মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি আর সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দিক থেকে উদ্দীপকের রিয়া ‘সুভা’ গল্পের সুভা হয়ে ওঠেনি।

উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের রিয়া এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভা উভয়েই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হলেও মর্যাদা প্রাপ্তিতে তারা সমধর্মী না হওয়ায় তারা একে অপরের পরিপূরক হতে পারেনি।

সুভা গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

  সৃজনশীল প্রশ্ন-১১|পারমিতা জন্মান্ধ। খেলার সাথি না জুটলেও সে নিঃসঙ্গ নয়। বিকেল বেলায় সে বাড়ির দিঘির শান বাঁধানো ঘাটে গিয়ে বসে। স্নিগ্ধ শীতল। জলের সঙ্গে তার দরদভরা আলাপ চলে। এ সবের মাঝে সে মুক্তির আনন্দ খুঁজে পায়। পরবর্তীতে পারমিতাকে পাত্রস্থ করার জন্য তার পিতামাতাকে বেশি ভাবতে হয়নি প্রতিবেশী আলম সাহেব পারমিতাকে তার পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করে নেন । ( ব. বো. ১৯)

ক) প্রতাপের প্রধান শখ কী?

খ) সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল কেন? বুঝিয়ে লেখো।

গ) উদ্দীপকের পারমিতার মুক্তির আনন্দের সাথে সুভা চরিত্রের যে দিকের মিল রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ) উদ্দীপকের পারমিতার জীবনের পরিণতির বিপরীত চিত্র সুভার জীবনে মর্মবেদনার কারণ” – মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

১১ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক) প্রতাপের প্রধান শখ ছিল ছিপ ফেলে মাছ ধরা।

খ) বিদেশযাত্রার উদ্যোগ শুরু হলে সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল।

সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে বাবা-মায়ের লুশ্চিন্তার শেষ নেই। মেয়ের বিয়ে নিয়ে বাবা শঙ্কিত। একদিন সপরিবারে তারা কলকাতা যাবার আয়োজন করে। বিদেশযাত্রার এ উদ্যোগ সুভার মনে অজানা আশঙ্কার সৃষ্টি করে। এ আশঙ্কা থেকেই তার হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গিয়েছিল।

উত্তরের সারবস্তু: বিদেশযাত্রার উদ্যোগে অজানা আশঙ্কার কারণে সুভার সমস্ত হৃদয় অশ্রুবাষ্পে ভরে গেল।

গ) উদ্দীপকের পারমিতা আর গল্পের সুভা দুজনেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে মুক্তি খুঁজে পায়, যা তাদের মধ্যে মিল তৈরি করেছে। ‘সুভা’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। সুভার মা তাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করেন। বাবা স্নেহ করলেও সুভার ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি শঙ্কিত। সমবয়সি ছেলেমেয়েরা সুভাকে ভয় করত। তার সাথে মিশত না। আর তাই সুভা প্রকৃতিতে আশ্রয় খুঁজে নেয়। গোয়ালের দুটি গাভি তার বন্ধু । এছাড়া প্রকৃতি যেন তার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।

উদ্দীপকের পারমিতা সুতার মতোই শারীরিক প্রতিবন্ধী। সে অন্য কারো সাথে না মিশে সুভার ন্যায় প্রকৃতির আশ্রয় নেয়। দিঘির শান বাঁধানো ঘাটে স্নিগ্ধ শীতল জলের সাথে সে কথা বলে। প্রকৃতির সান্নিধ্যে সে খুঁজে পায় মুক্তির আনন্দ। ‘সুভা’ গল্পের সুভা আর উদ্দীপকের পারমিতা প্রকৃতিকন্যা। তারা উভয়ই প্রকৃতির কাছে মুক্তির আনন্দ পায় আর এখানেই পারমিতার সাথে সুভা চরিত্রের মিল।

ঘ) পারমিতা এবং সুভা দুজনেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও পারমিতার মতো ইতিবাচক পরিণতির অভাবই সুভার জীবনে মর্মবেদনার উৎস হয়ে উঠেছে।

‘সুভা’ গল্পের সুভা হতভাগ্য কিশোরী। জন্ম থেকে বাকপ্রতিবন্ধী সুভাকে তার বাবা-মা বোঝা মনে করতেন। মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় থাকতেন। অন্যদের কথায় তাঁদের এ দুশ্চিন্তা আরও বেড়ে যায়। পরবর্তীতে বোঝামুক্ত হওয়ার জন্য সুভার বাবা-মা তাকে কলকাতা নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে তার নির্বিবাদ বিয়ে হয়েছে তা যেমন আমাদের জানা নেই তেমনি প্রতিবেশী প্রতাপের সঙ্গেও তার বিয়ে হলো না।

উদ্দীপকে আমরা দেখি পারমিতা জন্মান্ধ। একাকী শাস্ত্র দিঘির জলের পাশে বসে সে মুক্তির আনন্দ পায়। পারমিতা বড়ো হলে তার মাকে পারমিতার বিয়ের জন্য দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। প্রতিবেশী আলম সাহেব তাকে পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করে নেন ।

সুভা ও পারমিতার জীবন সমান্তরালে চলছিল। দুজনেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সমাজের দৃষ্টি দুজনের প্রতি দুরকম। জন্মান্য পারমিতা সুভার মতো সমাজের অবহেলার পাত্রী হয়নি। প্রতিবেশী আলম সাহেব পারমিতাকে পুত্রবধূ হিসেবে বরণ করেছেন। কিন্তু সুভার জীবনে পারমিতার মতো কোনো পাত্র জোটেনি। পাত্রের সন্ধানে তাকে চির পরিচিত গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে হয়েছে। আর এটাই সুভার জীবনে মর্মপীড়ার কারণ। ফলে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

উত্তরের সারবস্তু: ইতিবাচক পরিণতির অভাবে সুভার মনোবেদনার প্রেক্ষিতে প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়ে উঠেছে।

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর –

 সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-১২

সৃজনশীল প্রশ্ন-১২ |মানুষের তাকানোর শক্তি, তাকিয়ে থাকা মানুষের অভিব্যক্তি বোঝার শক্তি নিয়ে ভাবলে অবাক হতে হয়। কোনো কথা না বলেও কোনো শব্দ উচ্চারণ না করেও শুধু তাকিয়ে থাকার নানান ভঙ্গিতে প্রকাশিত হতে পারে অজস্র কথা। মানুষ যে প্রকৃতই শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তার জন্য চিৎকার করবার প্রয়োজন নেই। কোনো কোনো নির্বাক মানুষের বাক্শক্তি কোনো কোনো অন্ধ মানুষের দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক বাকশক্তি ও দৃষ্টিশক্তিকে হার মানায়। এই যেমন – মহাকবি হোমার চক্ষুহীন হয়েও রচনা করেছেন ‘ইলিয়াড’ ও ‘ওডেসির’ মতো কালজয়ী মহাকাব্য। (মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ,)

ক) ‘গোরা’ কোন শ্রেণির রচনা?

খ) মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। – বাক্যটির মানে কী?

গ) কিন্তু কালো চোখকে কিছুই তর্জমা করতে হয় না’ সুভা গল্পের এই উক্তির সঙ্গে অনুচ্ছেদের সম্পর্ক নির্ণয় করো।

ঘ)সব মানুষই শ্রেষ্ঠ। কথাটি সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়।” – মন্তব্যটি উদ্দীপক ও ‘সুভা’ গল্পের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

 ১২| নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক)’গোরা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি উপন্যাস।

খ)মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ’ বাক্যটির মাধ্যমে প্রাবন্ধিক মাছ ধরার সময় নীরব সঙ্গের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন । গোঁসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপ তেমন কোনো কাজ করত না। শখের বশে ছিপ দিয়ে মাছ ধরেই সময় কাটাত সে। এ উপলক্ষ্যে নদীর তীরে প্রায়ই সুভার সঙ্গে তার দেখা হতো। প্রতিদিন বিকেলে মাছ ধরার সময় সঙ্গী হিসেবে সুভাকে পাওয়াটা তার জন্য ছিল বিশেষ প্রাপ্তি। কেননা, সুভা নির্বাক হওয়ায় মাছ ধরার ক্ষেত্রে যেমন বিঘ্ন ঘটত না, পাশাপাশি সময়ও ভালো কাটত। প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।

উত্তরের সারবস্তু: মাছ ধরার সময় নীরবতার গুরুত্ব বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

 

গ)অভিব্যক্তি প্রকাশে ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা প্রকাশের সূত্রে ‘সুভা’ গল্পের প্রশ্নোক্ত উক্তিটির সঙ্গে আলোচ্য উদ্দীপকের মিল পরিলক্ষিত হয়। সুভা’ গল্পে সুভা চরিত্রের মধ্য দিয়ে গল্পকার এক বাক্প্রতিবন্ধীর ভাব প্রকাশের অসাধারণ ক্ষমতা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। এ গল্পে সুভা নির্বাক হওয়া সত্ত্বেও আকারে-প্রকারে-ভঙ্গিমায় সে তার মনের ভাব প্রকাশ করে। গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দেখলে তার সে মনোভাব সহজেই বোঝা যায়।

উদ্দীপকে মানুষের অভিব্যক্তি প্রকাশের ক্ষেত্রে চোখের ভাষার অসাধারণ ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে। লেখক লক্ষ করেছেন, মৌখিক ভাষা ব্যবহার না করেও কেবল চোখের ইশারায় অনেক কথাই সহজে বলে দেওয়া যায়। মুখের ভাষায় হয়তো সবকিছু প্রকাশ করা যায় না, কিন্তু ভাব-ভঙ্গিতে তা সহজেই প্রকাশিত হয়। আলোচ্য গল্পের সুভা একজন বাকপ্রতিবন্ধী। চোখের ইশারা বা অঙ্গভঙ্গিই তার ভাব প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম। কাছের মানুষরা সহজেই সে ভাষা বুঝতে পারে। অর্থাৎ আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘সুভা’ গল্পে প্রশ্নোক্ত উদ্ভিটিতে একইভাবে ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে ভাব প্রকাশের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। এদিক থেকে ‘সুভা’ গল্পের আলোচ্য উক্তিটির সঙ্গে উদ্দীপকটি সম্পর্কযুক্ত।

উত্তরের সারবস্তু: অভিব্যক্তি প্রকাশে ইন্দ্রিয়ের ভূমিকা বোঝাতে প্রশ্নোত্ত মন্তব্যটির সঙ্গে উদ্দীপকটি সম্পর্কিত।

 

ঘ)সুভার সম্পর্কে প্রতিবেশীদের মনোভাব বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থই বলা যায় । ‘সুভা’ গল্পে গল্পকার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সুভাকে কেন্দ্র করে বাক্প্রতিবন্ধীদের মনোযাতনাকে তুলে ধরেছেন। নির্বাক হওয়ায় সুভার বিয়ে হচ্ছিল না বলে তার বাবা-মাকে প্রতিবেশীদের নিন্দা সহ্য করতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এ অজুহাতে সুভার পরিবারকে তারা একঘরে করতে চেয়েছে। উদ্দীপকে মনোভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে ইন্দ্রিয় ক্ষমতার বিশেষ প্রয়োগ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে ইন্দ্রিয় ক্ষমতা, বিশেষ করে চোখের ভাষার অসাধারণ বোধগম্যতার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। পাশাপাশি সেখানে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দিকটিও উপস্থাপন করা হয়েছে। লেখক মনে করেন, স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি নয়, বরং মহাকবি হোমারের মতো গভীর অন্তর্দৃষ্টিই মানুষকে শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করে।

‘সুভা’ গল্পের মূল চরিত্র বাক্‌প্রতিবন্ধী সুভা। নির্বাক হওয়ার কারণে অনেকে তার সমব্যথী হলেও কিছু লোক তাকে অবহেলার দৃষ্টিতেই দেখত। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে বলে তারা সুভার বাবাকে সুভার বিয়ের জন্য চাপ দেয়। এমনকি তাদের গ্রামছাড়া করার পায়তারা করে মূলত তাদের এমন কর্মকাণ্ডের কারণেই সুভা বাবার সঙ্গে কলকাতায় পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে সুভা এবং তার পরিবারের অন্তর্ঘাতনাবে উপলব্ধি করলে তারা এমনটি করতে পারত না। একইভাবে, আলোচ্য উদ্দীপকেও গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও বিবেচনাবোধকেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের নির্ণায়ব হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যা আলোচ্য গল্পের সুভার পরিবারের সমালোচকদের মাঝে অনুপস্থিত। সে বিবেচনায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ অর্থবহ।

উত্তরের সারবস্তু: পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এবং সুভার প্রতিবেশীদের ভূমিকা বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-১৩

সৃজনশীল প্রশ্ন ১৩.লুনা একটি অটিস্টিক শিশু। তার মা-বাবা ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান পেয়ে যতটা প্রফুল্ল ছিলেন, মেয়ে বেড়ে উঠতেই ততটাই বেদনাহত হলেন। সন্তানের এমন অবস্থায় পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কত যে নাজেহাল হতে হয়েছে, তার লেখাজোখা নেই। প্রথমটায় তাঁরা খুব ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু অল্প ক’দিনেই এই কষ্ট সামলে নিয়ে লুনার মা তার প্রাণপ্রিয় সন্তানকে সর্বাত্মক সাহায্য করতে লাগলেন। লুনা যাতে স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপনে সক্ষম হয়ে ওঠে সেজন্য যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।(ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, ঢাকা)

ক) প্রতাপ কাদের ছোটো ছেলে?

খ)তাহার মর্ম তাহারা ভাষার অপেক্ষা সহজে বুঝিত’- ব্যাখ্যা করো।

গ) “উদ্দীপকের লুনা আর ‘সুভা’ গল্পের নাম চরিত্রটি একই সূত্রে গাঁথা”— আলোচনা করো।

ঘ)“সুভার মা লুনার মায়ের বিপরীত চরিত্র বলেই সুভার জীবন বেদনাময় হয়ে উঠেছে”- মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।

 

 ১৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক)প্রতাপ গোঁসাইদের ছোটো ছেলে।

খ)প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা গোয়ালের দুটি গাভির সঙ্গে সুভার ভাষাহীন যোগাযোগের দিকটি তুলে ধরা হয়েছে। সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল দুটি গাভি। এই গাভি দুটির জন্য দুটি নামও সে ঠিক করেছে। সর্বশী ও পাঙ্গুলি । গাভি দুটি সুভার পদশব্দ টের পেত এবং কথা না বললেও তার হৃদয়ের অনুভূতি সহজেই উপলব্ধ করত। সুভার কথাহীন সুর যেন বোবা প্রাণী দুটো নিজেদের ভাষাবোধসম্পন্ন প্রাণীদের পক্ষে সম্ভবপর হতো না।

উত্তরের সারবস্তু: গোয়ালের গাভি দুটির সঙ্গে সুভার ভাষাহীন যোগাযোগের গভীরতা বোঝাতে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলা হয়েছে।

 

গ) প্রতিবন্ধী হওয়ায় উদ্দীপকের লুনা আর ‘সুভা’ গল্পের নাম চরিত্র একই সূত্রে গাঁথা।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা প্রতিবন্ধী। তারা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। প্রতিবন্ধী বলে সমাজের মানুষের সহানুভূতি থেকে তারা বঞ্চিত । শুধু তা-ই নয়, পরিবারের যথার্থ মনোযোগ ও ভালোবাসাও তারা অনেক ক্ষেত্রে পায় না। আলোচ্য গল্পের সুভা চরিত্রটিও সমাজ থেকে কোনো সহানুভূতি পায়নি । তাই সে নিজের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

উদ্দীপকে আমরা দেখি লুনা একটি অটিস্টিক শিশু। লুনার জন্মের পর তার বাবা-মা যতটা খুশি হয়েছিলেন, মেয়ের অবস্থা দেখে পরবর্তীকালে ততটাই দুঃখ পেয়েছিলেন। অর্থাৎ তার বাবা-মা প্রিয় সন্তানের অবস্থা মেনে নিতে পারছিলেন না। অন্যদিকে ‘সুভা’ গল্পে আমরা দেখি সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। জন্মের পর আদর করে বাবা মেয়ের নাম রেখিছিলেন সুভাষিণী৷ কিন্তু মেয়ে বোবা হওয়ায় বাবা-মা মর্মাহত হলেন। সুভার মা তাকে রীতিমতো গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। এদিক থেকে উদ্দীপকের লুনা ও ‘সুভা’ গল্পের সুভা একই সূত্রে গাঁথা ।

উত্তরের সারবস্তু: প্রতিবন্ধী হওয়ায় উদ্দীপকের লুনা আর ‘সুভা’ গল্পের নাম চরিত্র একই সূত্রে গাঁথা।

 

ঘ) উদ্দীপকের লুনার মায়ের মতো আলোচ্য গল্পের সুভার মা মেয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল না হওয়ায় সুভার জীবন বেদনাময় হয়ে উঠেছে। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য তার পরিবারই সবচেয়ে বড়ো আশ্রয়। পরিবারের স্নেহছায়া ব্যতিরেকে তার পক্ষে জীবনধারণ প্রায় অসম্ভব। পরিবারের সহায়তায় একজন প্রতিবন্ধীও অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারে।

উদ্দীপকে আমরা দেখি, লুনা অটিস্টিক শিশু হওয়া সত্ত্বেও লুনার মা তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। প্রথম দিকে কষ্ট পেলেও পরবর্তীকালে লুনার মায়ের এই পদক্ষেপ তার জন্য অবশ্যই ইতিবাচক। এর ফলে তার জীবন অনেকটা স্বস্তিকর হবে। অন্যদিকে ‘সুভা’ গল্পে আমরা সুভার মায়ে বিপরীত মনোভাব প্রত্যক্ষ করি। সুভার মা সুভাকে গর্ভের কলঙ্ক মনে করতেন। তার প্রতি সবসময় অসহিষ্ণু আচরণ করতেন। বাবা-মায়ের বিরি ও অবহেলা উপলব্ধি করে সুভা আরও কষ্ট পেত। তার যন্ত্রণাময় জীবন আরও বেদনাময় হয়ে উঠত।

উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, লুনার মা মেয়েকে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সুভার মা তা করেননি। বরং বিপরীত কাজটাই করেছে তাঁর অবহেলা সুভার মনে হীনম্মন্যতার জন্ম দিয়েছে। ফলে আমরা বলতে পারি, সুভার মা লুনার মায়ের বিপরীত চরিত্র বলেই সুভার জী বেদনাময় হয়ে উঠেছে।

উত্তরের সারবস্তু: উদ্দীপকের লুনার মায়ের মতো আলোচ্য গল্পের সুভার মা মেয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল না হওয়ায় সুভার জীবন বেদনাময় হয়ে উঠেছে।

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-১৪

 সৃজনশীল প্রশ্ন ১৪: মা-মরা মেয়ে মিনু। বাবা জন্মের আগেই মারা গেছে। সে মানুষ হচ্ছে এক দূরসম্পর্কের পিসিমার বাড়িতে। বয়স মাত্র দশ, কিন্তু এই বয়সেই সবরকম কাজ করতে পারে সে। সবরকম কাজই করতে হয়। লােকে অবশ্য বলে যােগেন বসাক মহৎ লােক বলেই অনাথা বােবা মেয়েটাকে আশ্রয় দিয়েছেন। মহৎ হয়ে সুবিধাই হয়েছে যােগেন বসাকের। পেটতায় এমন সর্বগুণান্বিতা চব্বিশ ঘন্টার চাকরানী পাওয়া শক্ত হতাে তার পক্ষে।

ক. সুতা মনে মনে কী হতে চাইত?

খ. “কিন্তু তাহার পদশব্দ তাহারা চিনিত”- বাক্যটির প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের মিনু সুভা’ গল্পের কোন চরিত্রকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর। |

ঘ. “উদ্দীপকের মিনুর জীবন-জগৎ ও সুভা’ গল্পের সুভার জীবন-জগৎ পুরােপুরি এন নয়।” মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-১৫

সৃজনশীল প্রশ্ন ১৫: প্রতিবন্ধীরা জীবনের স্বতঃস্ফূর্ত ধারায় অন্যদের মতাে সমতালে পা মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু যথাযথ মনোেযােগ, সহযােগিতা। ও সুযােগ পেলে তারাও দুঃখের অন্ধকার ছেড়ে স্বনির্ভর এক আলােচিত জীবনের অধিকারী হতে পারে, এমনকি হয়ে উঠতে পারে বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। অন্ধত্বকে অস্বীকার করে যেমন পেয়েছেন ইলিয়াড ওডেসি রচয়িতা মহাকবি হােমার কিংবা বিটোফেন, যিনি নিজের বধিরতা সত্ত্বেও সৃষ্টি করেছেন অপূর্ব সব সুর।

ক. মানসী’ কাব্যগ্রম্বটি কার লেখা?

খ. বাণীকণ্ঠের বিদেশে যাওয়ার কারণ কী? বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের বিটোফেনের সঙ্গে ‘সুভা’ গল্পের কোন চরিত্রের মিল পাওয়া যায়? ব্যখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকটি গল্পের একটি চরিত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেও সমগ্র ভাব প্রকাশ করে না।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর:

সৃজনশীল প্রশ্ন ১৬: রিপের এই আড্ডাবাজ মনােভাব গ্রামের অলস বন্ধুরা মেনে নিলেও তার স্ত্রী কিন্তু মেনে নিল না। নিজের কোনাে দোষ খুঁজে পায় না রিপ। দোষের মধ্যে শুধু সে কখনাে বিশেষ কাজ করত না। পরিশ্রম বা অধ্যবসায়ের ভয়ে কিন্তু সে অমন করত না। কারণ প্রায়ই সে এক টুকরাে ভিজে পাথরের উপর বসে থাকত। হাতে থাকত ইয়া বড় এক লাঠি। শান্তশিষ্টভাবে বসে বসে সে মাছ ধরত। কিন্তু ভুলেও কোনাে মাছ তার বড়শিতে ধরা পড়ত না। সে একটা ফাঁদ কাঁধে করে উঁচু পাহাড় আর বনবাদাড়ে ঘুরে বেড়াত কাঠবিড়ালি আর বুনাে কবুতর ধরার জন্য। পাড়াপড়শির সবচেয়ে কঠিন কাজটাও সে করে দিত। পেঁকিতে ধান ভানতে অথবা পাথরের প্রাচীর গড়তেও সে তাদের সাহায্য করত। এককথায় রিপভ্যান উইংকল অন্যের উপকার করে দেওয়ার জন্য সবসময় রাজি থাকত।

ক. সুভাকে কে ‘সু’ বলে ডাকত?

খ. “মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ”- ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের রিপভ্যান উইংকল ‘সুভা’ গল্পের কোন চরিত্রকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ.“আংশিক মিল থাকলেও উদ্দীপকটি ‘সুভা’ গল্পের বিষয়বস্তুকে ধারণ করে না”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর?

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-১৭

সৃজনশীল প্রশ্ন ১৭.  ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ জাহেদী সাহেব প্রতিবন্ধীদের জন্য মুসা মিয়া প্রতিবন্ধী স্কুল ও তাদের কর্মসংস্থানের জন্য কিংশুক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলেন। সংগঠনটি প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জনমত গঠন করে। তিনি মনে করেন প্রতিবন্ধীরা সমাজের বােঝা নয় বরং সম্পদ।

ক. প্রকৃতি সুভার কিসের অভাব পূরণ করে দেয়?

খ. মা সুভাষিণীকে নিজের ত্রুটিম্বরূপ দেখতেন কেন?

গ. উদ্দীপকের জাহেদী সাহেব ‘সুভা’ গল্পের কোন দিকটি উন্মােচন করেছেন তা ব্যাখ্যা কর।

ঘ. ‘প্রতিবন্ধীরা সমাজের বােঝা নয় বরং সম্পদ’– উক্তিটি উদ্দীপক ও গল্পের আলােকে ব্যাখ্যা কর।

 

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর: প্রশ্ন-১৮

সৃজনশীল প্রশ্ন ১৮. : অতি সাধারণ এক কিশাের লখা। কথা বলতে পারে না সে। কিন্তু তাতে কীই-বা আসে যায়। লখা উঁচু ডালে উঠে লাল ফুল সংগ্রহ করে শহিদ মিনারে যায় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। কথা বলতে না পারলেও তার মুখ দিয়ে আঁ আঁ আঁ আঁ ধ্বনির মধ্য দিয়েই বেরিয়ে আসে বাঙালির গর্বের উচ্চারণ।

ক. সর্বশী ও পাগুলি কার নাম?

খ. প্রতাপের দ্বারা সংসারের উন্নতির আশা বাবা-মা ত্যাগ করেছিলেন কেন?

গ. উদ্দীপকের লখা ‘সুভা’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘সুভা’ গল্পের একটি চরিত্রকে প্রতীকায়িত করেছে মাত্র, গল্পের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করতে পারেনি।”- মূল্যায়ন কর।

উপরে সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর সমূহ উল্লেখ করা হয়েছে। আশা করি আপনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়েছেন। এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক সুভা গল্পের গুরুত্বপূর্ণ সকল জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর সমূহ।

সুভা গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন – সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন-উত্তর

লেখক-পরিচিতি

প্রশ্ন-১, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন ।

প্রশ্ন-২. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মসাল কত বঙ্গাব্দ ?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মসাল ১২৬৮ বঙ্গাব্দ ।

প্রশ্ন-৩. কত বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয়?

উত্তর: পনেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের ‘বনফুল’ কাব্য প্রকাশিত হয় ।

প্রশ্ন-৪. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

প্রশ্ন-৫. ‘গোরা’ কোন শ্রেণির রচনা?

উত্তর: ‘গোরা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি উপন্যাস ।

প্রশ্ন-৬. ‘শেষের কবিতা’ কী ধরনের গ্রন্থ?

উত্তর: ‘শেষের কবিতা’ একটি উপন্যাস

প্রশ্ন-৭. ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ কার লেখা?

উত্তর: ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ।

প্রশ্ন-৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত বঙ্গাব্দে মৃত্যুবরণ করেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে মৃত্যুবরণ করেন ।

মূলপাঠ

প্রশ্ন-৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে সুভার কয়টি বোন ছিল?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সুভা’ গল্পে সুভার দুটি বোন ছিল।

প্রশ্ন-১০. ‘সুভা’ গল্পে কী কারণে বাণীকণ্ঠ তাঁর ছোটো মেয়েটির নাম সুভাষিণী রাখেন?

উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে বড়ো দুটি বোনের নামের সাথে মিল রাখতে বাণীকণ্ঠ তাঁর ছোটো মেয়েটির নাম সুভাষিণী রাখেন।

প্রশ্ন-১১. ‘সুভা’ গল্পে পিতামাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করছে কে?

উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে পিতামাতার নীরব হৃদয়ভারের মতো বিরাজ করছে সুভা ।

প্রশ্ন-১২. ‘সুভা’ গল্পে সুভার সাক্ষাতে সকলে তার সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করত?

উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে সুভার সাক্ষাতে সকলে তার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করত।

প্রশ্ন-১৩, কার মনে সুভা সর্বদাই জাগরূক ছিল?

উত্তর: পিতামাতার মনে সুভা সর্বদাই জাগরুক ছিল।

প্রশ্ন-১৪, সুভা কী মনে করত?

উত্তর: সুভা মনে করত, আমাকে সবাই ভুললে বাঁচি ।

প্রশ্ন-১৫. কে সুভাকে নিজের একটা ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন?

উত্তর: সুভার মা সুভাকে নিজের একটা ত্রুটিস্বরূপ দেখতেন।

প্রশ্ন-১৬. সুভার বাবার নাম কি?

উত্তর: সুভার বাবার নাম বাণীকণ্ঠ।

প্রশ্ন-১৭. সুভার মা সুভার প্রতি বিরক্ত ছিলেন কেন? (চ. বো. 20)

উত্তর: সুভাবে নিজের গর্ভের কলঙ্ক মনে করে সুভার মা তার প্রতি বড়ো বিরক্ত ছিলেন।

প্রশ্ন-১৮. সুভার ওষ্ঠাধর ভাবের আভাসমাত্রে কেমন করে কেঁপে উঠত?

উত্তর: সুভার ওষ্ঠাধর ভাবের আভাসমাত্রে কচি কিশলয়ের মতো কেঁপে উঠত

প্রশ্ন-১৯, সুভার চোখের ভাষা কেমন ছিল?

উত্তর: সুভার চোখের ভাষা অসীম, উদার এবং অতলস্পর্শ গভীর ছিল।

প্রশ্ন-২০. কে নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন ও সঙ্গীহীন ছিল?

উত্তর: সুভা নির্জন দ্বিপ্রহরের মতো শব্দহীন ও সঙ্গীহীন ছিল

প্রশ্ন-২১. সুভাদের গ্রামের নাম কী?

উত্তর: সুভাদের গ্রামের নাম চণ্ডীপুর

প্রশ্ন-২২, বাণীকন্ঠের ঘর কোথায়?

উত্তর: বাণীকণ্ঠের ঘর নদীর একেবারে উপরেই।

প্রশ্ন-২৩. অবসর সময়ে সুভা কোথায় গিয়ে বসতো?

উত্তর: অবসর সময়ে সুভা নদীতীরে গিয়ে বসতো।

প্রশ্ন-২৪. প্রকৃতি কার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়?

উত্তর: প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।

প্রশ্ন-২৫. প্রকৃতি সুভার কীসের অভাব পূরণ করে দেয়?

উত্তর: প্রকৃতি সুভার ভাষার অভাব পূরণ করে দেয়।

প্রশ্ন-২৬, সুভা কার কাছে মুক্তির আনন্দ পায়? (রা. বো. ২০)

উত্তর: সুভা বিপুল নির্বাক প্রকৃতির কাছে মুক্তির আনন্দ পায়।

প্রশ্ন-২৭. প্রকৃতির বিবিধ শব্দ এবং বিচিত্র গতি কীসের ভাষা?

উত্তর: প্রকৃতির বিবিধ শব্দ এবং বিচিত্র গতি বোবার ভাষা।

প্রশ্ন-২৮. গোয়ালের গাভি দুটির নাম কী?

উত্তর: গোয়ালের গাভি দুটির নাম সর্বশী ও পাঙ্গুলি।

প্রশ্ন-২৯. সুভা দিনের ভেতরে কয়বার গোয়ালঘরে যেত?

উত্তর: সুভা দিনের ভেতরে তিনবার গোয়ালঘরে যেত।

প্রশ্ন-৩০. উন্নত শ্রেণির জীবের মধ্যে সুভার যে সঙ্গী জুটেছিল তার নাম কী?

উত্তর: উন্নত শ্রেণির জীবের মধ্যে সুভার যে সঙ্গী জুটেছিল তার নাম প্রতাপ।

প্রশ্ন-৩১. প্রতাপ কে?

উত্তর: প্রতাপ গোঁসাইদের ছোটো ছেলে।

প্রশ্ন-৩২. গোসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম কী?

উত্তর: গোঁসাইদের ছোটো ছেলেটির নাম প্রতাপ ।

প্রশ্ন-৩৩. প্রতাপ কাদের ছোটো ছেলে?

উত্তর: প্রতাপ গোঁসাইদের ছোটো ছেলে ।

প্রশ্ন-৩৪. ‘সুভা’ গল্পে কাকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে? (ম. বো, ২০)

উত্তর: ‘সুভা’ গল্পে গোসাইদের ছোটো ছেলে প্রতাপকে অকর্মণ্য বলা হয়েছে

প্রশ্ন-৩৫. প্রতাপের প্রধান শখ কী? (ব. বো. ১৯)

উত্তর: প্রতাপের প্রধান শখ ছিপ ফেলে মাছ ধরা।

প্রশ্ন-৩৬. ‘সুভা’ গল্পের একমাত্র কে সুভার মর্যাদা বুঝত? (য. বো. 20)

উত্তর: ‘সুভা’ গল্পের একমাত্র প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।

প্রশ্ন-৩৭. প্রতাপ সুভাকে কী বলে ডাকত?

উত্তর: প্রতাপ সুভাকে ‘সু’ বলে ডাকত।

প্রশ্ন-৩৮. প্রতাপ সুভার মর্যদা বুঝত কেন? ( ঢা. বো. ২০)

উত্তর: মাছ ধরার সময় বাক্যহীন সঙ্গীই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হওয়ায় প্রতাপ সুভার মর্যাদা বুঝত।

প্রশ্ন-৩৯. প্রতাপের জন্য পান সাজিয়ে আনত কে?

উত্তর: প্রতাপের জন্য পান সাজিয়ে আনত সুভা ।

প্রশ্ন-৪০. কে মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।

উত্তর: সুভা মনে মনে বিধাতার কাছে অলৌকিক ক্ষমতা প্রার্থনা করত।

তাহলে বন্ধুরা, সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অথবা গুরুত্বপূর্ণ ১৫ টি সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হলো।

আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানাবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *