স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অবদান
স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অবদান সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো।
স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অবদান
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবদান অপরিসীম। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবর্গ বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। নানা অত্যাচার-নিপীড়ন সহ্য করেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জীবন বাজি রেখে রাজনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে গেছেন।

স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব ও অবদান
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃত্ব দেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সারাজীবনের কর্মকাণ্ড, আন্দোলন-সংগ্রাম নির্দেশিত হয়েছে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে।
এই লক্ষ্য নিয়ে তিনি ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। ১৯৪৮ – ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন।তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের প্রথম কারাবন্দিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। কী সংসদ, কী রাজপথ, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির পক্ষে তাঁর কণ্ঠ ছিল সর্বদা সোচ্চার।
১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ সালের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতিদান, ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ‘আমাদের বাঁচার দাবি ৬ দফা’ কর্মসূচি পেশ ও ৬ দফাভিত্তিক আন্দোলন, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন বিজয়, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা ও স্বাধীনতা অর্জনে একচ্ছত্র ভূমিকা পালন করেন স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের শাসনের মধ্যে ১২ বছর বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। সংগ্রামের পথ ধরে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি স্বাধীনতার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছেন। ২৫শে মার্চ নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সশস্ত্র আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়লে ২৬শে মার্চ ১৯৭১ প্রথম প্রহরে তিনি সরাসরি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন ।
তাঁর নামেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি। তাঁর বলিষ্ঠ ও আপোসহীন নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনত পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহানায়ক ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি।
স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অবদান:

স্বাধীনতা অর্জনে সৈয়দ নজরুল ইসলামের অবদান
সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের চার নেতার একজন। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুজিবনগর সরকারের উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও সফল করার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। সৈয়দ নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক ও পরিচালক ছিলেন।

স্বাধীনতা অর্জনে তাজউদ্দীন আহমদের অবদান
মুক্তিযুদ্ধের সময় তাজউদ্দীন আহমদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশ্বস্ত ও ঘনিষ্ঠ সহচর। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত মুজিবনগর সরকারের (১০ই এপ্রিল ১৯৭১) প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এই মহান নেতা। ১৯৭১ সালের ১১ই এপ্রিল তিনি বেতার ভাষণে মুজিবনগর সরকার গঠনের কথা প্রচার করেন।
বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তিনি সফল নেতৃত্ব প্রদান করেন। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটির তিনি আহ্বায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সঙ্গে তার নাম গভীরভাবে যুক্ত। তিনিও জাতীয় চার নেতার একজন।

স্বাধীনতা অর্জনে ক্যপ্টেন এম. মনসুর আলীর অবদান
ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী জাতীয় চার নেতার একজন, যিনি বঙ্গবন্ধুর খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। সে সময়ে খাদ্য, বস্ত্র ও অর প্রশিক্ষণের জন্য অর্থের সংস্থান খুবই গুরুদায়িত্ব ছিল। তিনি সফলভাবে সে দায়িত্ব পালন করেন।

স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবদান
স্বাধীনতা অর্জনে এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামানের অবদান
এ.এইচ.এম. কামারুজ্জামান জাতীয় চার নেতার একজন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী ছিলেন। সে সময়ে তিনি ভারতে আশ্রয় নেওয়া লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর জন্য সাহ ও ত্রাণশিবিরে তা বিতরণ, পরবর্তী সময়ে শরণার্থীদের পুনর্বাসন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে তার অবদান অপরিসীম।

স্বাধীনতা অর্জনে অন্য নেতৃবৃন্দদের অবদান
অন্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা (১৯৬৮-১৯৬৯) থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির ব্যাপারে গড়ে ওঠা আন্দোলন ও ‘৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন দেশের প্রতি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন দান ও পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এছাড়া অধ্যাপক মোজাফ্ফার আহমেদ ন্যাপ-মোজাফ্ফার) ও কমিউনিস্ট পার্টির কমরেড মণি সিংও মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য গঠিত মুজিবনগর সরকারের ‘উপদেষ্টা কমিটি’তে এ তিন নেতা সদস্য ছিলেন। বাঙালি জাতি তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণে রাখবে।
স্বাধীনতা অর্জনে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের অবদান সম্পর্কে আশা করি আজকের আর্টিকেলে আপনারা ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।
অবশ্যই পড়ুন –
- ইতিহাস পাঠ করা প্রয়োজন কেন ?
- বঙ্গভঙ্গ রদ করেন কে ?
- মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কোথায় অবস্থিত এবং কি কি রয়েছে ?
- লীগ অব নেশনস কাকে বলে ? এর পটভূমি, গঠন, উদ্দেশ্য এবং বিলুপ্তির কারণ
- বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী রচনা (মুজিববর্ষ)
- দেশপ্রেম কাকে বলে ? দেশপ্রেম প্রয়োজন কেন