স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10

স্বাধীনতা দিবস (Independence Day) রচনা class 2- 10 পর্যন্ত  নিচে দেওয়া হলো।

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10
Bangladesh independence day 

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2,3 

স্বাধীনতা দিবস/২৬শে মার্চ

ভূমিকা : বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান স্বাধীনতা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনাবাহী দিন।আমরা যে দেশে বাস করছি সে দেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। সুতরাং এ দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।

পটভুমি : ১৯৪৭ সালে ইংরেজ শাসন থেকে ভারতবর্ষ মুক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্ত নি (বর্তমান বাংলাদেশ), পাকিস্তানের অন্তর্গত ছিল। পাকিস্তান নামক বাংলাদেশের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয় নি। বরং নতুন করে শোষণ বঞ্চনার শিকার হয়। তাই বাঙালিরা বার বার প্রতিবাদ করেছে, আন্দোলন করেছে কিন্তু শোষণের অবসান হয় নি, অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় নি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর শোষণ হতে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে স্বাধীনতা সংগ্রাে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার জনগণ।

স্বাধীনতার ইতিহাস : ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এদেশের হাজার হাজার অসহায় বাঙালি নিধনের জন্য ঝাপিয়ে পড়ে। ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়। বীর বাঙ্গালী শেখ মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ২৬শে মার্চ আমানের স্বাধীনতা দিবস। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করার পর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণে মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করি।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন : স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে প্রস্তুতি চলে। দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, দিবসটি উদযাপনের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সারাদেশে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।

উপসংহার : গৌরবোজ্জ্বল গত অধিকার। আমরা যে স্বাধীন দেশের পতাকা তলে, স্বাধীনতা দিবস আমাদের গর্ব, আমাদের অহঙ্কার। দুর্জয় শপথ ও দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে আমরা

যেন আমাদের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে পারি যুগ যুগ ধরে।

২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস ? 

স্বাধীনতা দিবস রচনা

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 4

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস / ২৬ মার্চ

ভূমিকা : বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান স্বাধীনতা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনাবাহী দিন।১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে যে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সূচনা  হয়েছিল এবং যার পরিণতিতে আজ আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অধিবাসী। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ তারিখকে আমাদের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

ইতিহাস : বাংলাদেশ ব্রিটিশের শাসন হতে ১৯৪৭ সালে মুক্ত হয়ে তৎকালীন পাঞ্জাবি স্বার্থবাদী শাসকদের হাতে ন্যস্ত হয়। বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য পাকিস্তান আমলের প্রথম হতেই একটা অসন্তোষ দানা বেঁধে ওঠে এবং বিভিন্ন সময়ে দমনমূলক কার্যকলাপের জন্য বিশেষত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বিক্ষুদ্ধ বাঙালিদের অস্তিত্বের অধিকার আদায়ের দাবিতে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান ঘটে। পরিণামে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আয়ুব খান ক্ষমতাচ্যূত হন। কিন্তু পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও দমননীতি অবলম্বন করেন। শেষ পর্যন্ত সকল আপোস্য প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ক্ষমতালোভী ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেন। ২৫ মার্চ মধ্যরাত্রি তথা ২৬ মার্চ হতে বাঙালি জাতি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রামে সমগ্র জাতি অবতীর্ণ হয়। দীর্ঘ নয় মাস মুক্তি সংগ্রামের পর দেশ শত্রু মুক্ত হয়।

তাৎপর্য : ২৫ মার্চের সেই নারকীয় রাত্রির অন্ধকারে আমরা আমাদের স্বাধীনতার অগ্নিতপস্যায় নিয়োজিত হয়েছিলাম। আমরা যে আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্যকে বাস্তবে পরিণত করতে পেরেছি, তা আমাদের পরম সার্থকতা। আমরা লাভ করেছি স্বাধীনতা এবং অর্জন করেছি স্বাধীনতা দিবস। তাই প্রতি বছর ২৬ মার্চের সোনালি প্রভাত সেই বিজয় বার্তাই বহন করে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। আমরা এদিনটিকে প্রতিবছর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো এবং আনন্দ উৎসব করব। রঙ-বেরঙে সাজাবো মঞ্চ, গাইবো দেশের গান। উড়াবো স্বাধীন ঘুড়ি।

উপসংহার : বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। এদিনটিকে প্রত্যেক নাগরিকের উচিত অন্তর থেকে স্মরণ করা।

স্বাধীনতা দিবস রচনা

স্বাধীনতা দিবস রচনা Class 5

স্বাধীনতা দিবস/ ২৬ এ মার্চ

ভূমিকা :  বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান স্বাধীনতা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনাবাহী দিন।স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনতা মানে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে নিজেকে মুক্ত করা। ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। এ দিন বাংলাদেশের মানুষের জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল।

স্বাধীনতা সংগ্রামের সংক্ষিপ্ত পরিচয় : ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। বাঙালিরা তা মেনে না নিয়ে শুরু করে ভাষা আন্দোলন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি জীবন দিয়ে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা দাবি নিয়ে দেশব্যাপী জনসচেতনতা গড়ে তোলেন এজন্য শাসকগোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাঁকে কারাগারে নিক্ষেপ করে গোপনে বিচার শুরু করে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনতা তা রোধ করে তাকে মুক্ত করে আনে। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নতুন ষড়যন্ত্রের জাল বোনে ইয়াহিয়া সরকার। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের বুকে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি ওয়্যারলেস বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা : আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের মূল তাৎপর্য হলো— এটি আমাদের ত্যাগ ও মুক্তিসংগ্রামের গৌরবময় একটি দিন। এদিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের বঞ্চিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষ মুক্তির নতুন দিশা অর্জন করেছিল। ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয়। ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং কর্নেল আতাউল গনি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয়। পুরো বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে শুরু হয় পূর্ণোদ্যমে প্রচণ্ড মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতার বিজয় অর্জিত হয়। তাই ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস হিসেবে পালিত হয় ।

স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন : প্রতিবছর ২৬শে মার্চ জাতীয় মর্যাদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। এটি সরকারি ছুটির দিন । এদিন ভোরে জাতীয় সংগীত গেয়ে পতাকা উত্তোলন এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিবসটি পালনের সূত্রপাত হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, সংগীতানুষ্ঠান ও আলোচনা সভার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র শ্রদ্ধার সাথে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয় ।

উপসংহার : স্বাধীনতা প্রতিটি জাতিরই ত্যাগের ফসল। স্বাধীন জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হলে আমাদের সবাইকে এ সংকল্প গ্রহণ করতে হবে যে, আমরা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলব এবং জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করব মাতৃভূমির মর্যাদা। তাহলেই আমাদের স্বাধীনতা অর্থবহ হবে।বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। এদিনটিকে প্রত্যেক নাগরিকের উচিত অন্তর থেকে স্মরণ করা।

স্বাধীনতা দিবস রচনা

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10
Bangladesh war 1971

স্বাধীনতা দিবস রচনা Class 7,8

ভূমিকা: স্বাধীনতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। স্বাধীনতা মানে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে নিজেকে মুক্ত করা।বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান স্বাধীনতা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনাবাহী দিন।বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমাদের জীবনে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নব প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণের দিন । ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাঙালি নিয়েছিল দৃপ্ত শপথ । পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এবং আপন পরিচয় খোঁজার লক্ষ্যে সেদিন বাঙালি গর্জে উঠেছিল। দীর্ঘদিনের শোষণ ও নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে সেদিন বাঙালি অর্জন করেছিল স্বাধীনতার সোনালি সূর্য।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস: বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা দিবস আত্মত্যাগ ও আত্ম-অহংকারের একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ এদেশের মানুষ পৃথিবীর বুকে নতুন একটি মানচিত্রের সৃষ্টি করে। বাঙালির মুক্তির সমস্ত আকাঙ্ক্ষা যেন সমন্বিত হয়েছিল সেদিন। সমস্ত জাতি যেন একই অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।

স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি: পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। পাকিস্তানিদের প্রকৃত চেহারা উপলব্ধি করে মানুষের মনে ধীরে ধীরে দানা বাঁধে স্বাধীনতার স্বপ্ন অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর চট্টগ্রামের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে ২৬ ও ২৭শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা।

স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযুদ্ধ: স্বাধীনতা অর্জনে এদেশের মানুষ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে— সম্ভ্রম হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ মা-বোন। আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা পাকিস্তানিদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তখন দেশীয় এই রাজকারদের তৎপরতায় বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে, সম্ভ্রম হারিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে। বহু মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছে এই রাজাকার বাহিনী। দেশের অভ্যন্তরে সকল শত্রুদের বিনাশ করে স্বাধীনতা অর্জন করতেই একটি সামরিক পরিকল্পনা করে তৎকালীন (১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে গঠিত হয় অস্থায়ী সরকার) অস্থায়ী সরকার। মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন কর্নেল এমএজি ওসমানী। অবশেষে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদেশ স্বাধীন হয়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ যুদ্ধের শেষের দিকে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয় ভারতীয় মিত্রবাহিনী ।

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য:  আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের মূল তাৎপর্য হলো— এটি আমাদের ত্যাগ ও মুক্তিসংগ্রামের গৌরবময় একটি দিন। এদিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশের বঞ্চিত নিপীড়িত সাধারণ মানুষ মুক্তির নতুন দিশা অর্জন করেছিল। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা এদেশের মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে যুগে যুগে প্রেরণা জোগাবে । তাই প্রতিবছর ২৬শে মার্চ এলেই বাঙালি নতুন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে উজ্জীবিত হয়।

স্বাধীনতার লক্ষ্য অর্জনের মূল্যায়ন: স্বাধীনতার মূল অর্থ হলো অধীনতা থেকে মুক্তি; আত্মোন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ লাভ। প্রতিটি স্বাধীনতা দিবস আমাদের জীবনে এনে দেয় নতুন সম্ভাবনা। আমরা নিজেদের ভেতরে স্বাধীনতার তাৎপর্যকে কতটা অনুভব করতে সমর্থ হচ্ছি তা মূল্যায়ন করি

স্বাধীনতার স্বপ্ন ও বর্তমান বাস্তবতা: স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রাষ্ট্র প্রবর্তন করা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবাইকে স্বনির্ভর করেছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই লক্ষ্য নিয়েই দেশ গঠন শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন একনায়ক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে।

সমাজ-প্রগতি ও স্বাধীনতা: সমাজের প্রগতিই হলো স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোয় দৃপ্ত শপথ গ্রহণ । দেশের সর্বস্তরের মানুষের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে হবে উন্নয়নের নতুন মাইলফলক । প্রগতির পথে সমাজকে পরিচালিত করতে স্বাধীনতার মূল স্তম্ভগুলোকে লালন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ পথে সাময়িক ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলেও তা ভবিষৎকালে স্বাধীনতার বৃহদার্থকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবে।

উপসংহার: স্বাধীনতা একটি দেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। স্বাধীনতা না।থাকলে কোনো জাতিই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। স্বাধীনতার মানে হলো দেশের সব মানুষের মুক্তির স্বাদ। সবাই সেই স্বাধীনতা ভোগ করবে। কিন্তু দুঃখের হলেও সত্য যে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পেলেও সত্যিকারের আকাঙ্ক্ষা এখনো বাস্তায়িত হয়নি। স্বাধীনতা দিবসে আমাদের সেই অঙ্গীকারই ব্যক্ত করতে হবে, যা দেশকে স্বাধীনতার চেতনায় পুনর্গঠিত করবে। যেদিন দেশের সব মানুষ শিক্ষা-দীক্ষায় উন্নত হয়ে গণতান্ত্রিক সব অধিকার ভোগ করবে, সেদিন দেশে বিরাজ করবে সুখ ও শান্তি। এভাবেই অর্থবহ হয়ে উঠবে মহান স্বাধীনতা দিবস।

স্বাধীনতা দিবস রচনা

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 9-10

স্বাধীনতা দিবস

ভূমিকা :  আমরা যে দেশে বাস করছি সে দেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ। সুতরাং এ দিনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি ঐতিহাসিক ও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমাদের জীবনে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।বাঙালির জাতীয় জীবনে মহান স্বাধীনতা দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনাবাহী দিন। শুধু ঐতিহাসিক তাৎপর্যই নয়, স্বাধীন ও সার্বভৌম নতুন দেশ গড়ার দৃপ্ত শপথে বলীয়ান হওয়ার দিন হিসেবেও এই দিবসটি খুবই গুরুত্ব বহন করে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ২৬ মার্চ অর্থাৎ ২৫ মার্চের মধ্যরাতে ঘোষিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এই ঘোষণায় সারা বাংলার জনতা একসঙ্গে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। পাকিস্তানি শাসন ও শোষণের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করা হয়েছিল এই দিনে । মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস পেরিয়ে আমরা পেয়েছি আমাদের বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। যেকোনো অন্যায় শাসন- শোষণের বিরুদ্ধে দৃপ্ত শপথে রুখে দাঁড়ানোর দিন হিসেবে প্রতিবছরই মহান স্বাধীনতা দিবস আমাদেরকে জাগিয়ে তোলার আহ্বান জানায়। বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস ও বাঙালি জাতীয় জীবনে এই দিনটি তাই একটি তাৎপর্যময় দিন।

স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি : ব্রিটিশদের প্রায় ২০০ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে আলাদা দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরও বাঙালির জীবনে মুক্তি আসেনি। বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকচক্রের বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে পাকিস্তান আমলের সূচনালগ্ন থেকেই জনমনে নানা অসন্তোষ দানা বাঁধে। উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তার চূড়ান্ত রূপ পরিলক্ষিত হয় ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে। ভাষাশহিদদের অবদানে মাতৃভাষা বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। এরপর ১৯৫৪’র নির্বাচন, ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯’র গণ-অভ্যুত্থান, প্রভৃতি আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি যে স্বপ্নকে বুকে নিয়ে অগ্রসর হয়েছিল সত্তরের নির্বাচন আর একাত্তরের রক্তাক্ত মার্চের অসহযোগ আন্দোলন পেরিয়ে ছাব্বিশে মার্চেই সেই স্বপ্ন পূর্ণরূপে প্রকাশ পেয়েছিল। স্বাধীনতা প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা ও তা বাস্তবায়নের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে অবতীর্ণ হওয়ার দৃপ্ত অঙ্গীকার ব্যক্ত হয় স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায়। ২৫ মার্চের কালরাতের নির্মম হত্যাযজ্ঞের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। এরপরই শুরু হয় রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ।

পাকিস্তানিদের শাসন-শোষণ : ১৯৪৭ সালে দেশভাগ হওয়ার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের উপর অর্থাৎ বাঙালি জনগোষ্ঠীর উপর পশ্চিম পাকিস্তানিরা আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদিত সমস্ত সম্পদ তারা দখল করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যেত। সব কল-কারখানায় তাদের কর্তৃত্ব ছিল। সরকারি চাকরিতে বাঙালিদের নিয়োগ করা হতো না। অর্থনৈতিকভাবে এ দেশের মানুষকে পঙ্গু করে রাখাই ছিল তাদের লক্ষ্য। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ভোগ করত না। বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষার উপর তাদের আক্রমণ ক্রমাগত বাড়তে থাকে। ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের যে প্রায় ঔপনিবেশিক শাসন, তার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সেই ক্ষোভের পরিণতি স্বরূপ আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য : বাঙালি প্রথম নিজেদের স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দেয় স্বাধীনতা দিবসে। পাকিস্তানি শাসনের অবসান চেয়ে পরাধীনতার গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পূর্ণমাত্রায় ব্যক্ত হয় এই দিনে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার পরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে থাকে এ দেশের তরুণ-যুবক-ছাত্ররা, কৃষক-শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনতা । বাঙালির আত্মপরিচয় খুঁজে নেওয়ার সংগ্রামময় ও গৌরবময় একটি দিন হলো স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি আমাদের কাছে প্রতিবছর নতুন দিকনির্দেশনা নিয়ে হাজির হয়। স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরে আজও নানা অসুবিধা বিদ্যমান। এসব অসুবিধাকে পরাস্ত করে আগামী দিনের সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে আমরা স্বাধীনতা দিবসে নতুনভাবে শপথ গ্রহণ করি। দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের অঙ্গীকার গ্রহণে স্বাধীনতা দিবস আমাদের কাছে খুবই তাৎপর্যময় একটি দিন ।

স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা : বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পেছনে মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল— পাকিস্তানি শোষকদের থেকে এ দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি, মানুষের মৌলিক অধিকার যেমন : অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থান, ইত্যাদি নিশ্চিতকরণ। কিন্তু প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসে আমাদেরকে এই হিসাব মিলিয়ে দেখতে হয় যে স্বাধীনতা প্রাপ্তির বহু বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষাগুলোর বাস্তবায়ন এখনো সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতা মানে হলো অন্যের অধীনতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের উন্নয়ন ঘটানো। একজন নাগরিক মাত্রই সেই স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। স্বাধীন বাংলাদেশে সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন এখনো সম্পন্ন হয়নি স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষার ছিল শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে উন্নত জাতি গড়া, গণতান্ত্রিক চেতনায় এবং সম্পদে সমৃদ্ধি অর্জন। সর্বোপরি একটি মানবিক সমাজ নির্মাণের স্বপ্নই ছিল স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষা।

বর্তমান বাস্তবতা : ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সরকারের অনেক পালাবদল ঘটেছে। স্বাধীনতার চেতনাকে এক এক সরকার এক একভাবে ব্যাখ্যা করেছে। কিন্তু স্বাধীনতার সত্যিকার আকাঙ্ক্ষা কতখানি বাস্তবায়িত হয়েছে, তা নিয়ে এখনো বিতর্ক আসতে পারে। স্বাধীন দেশের সংবিধানকে জোরপূর্বক সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সহায়তায় পরিবর্তন করা হয়। বারবার সংবিধানের উপরে সংশোধনীর কলমচালানো হয়েছে। এতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষা থেকে রাষ্ট্রের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যেখানে শোষণ কমিয়ে বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা ছিল, সেখানে আজ পুরো দেশে ধনী-গরিবের বৈষম্য পাহাড়সম । সমাজজীবনে দারিদ্র্য দূর হয়নি, অথচ কোটি টাকার মালিকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ধনকুবের গোষ্ঠীর মুনাফার স্বার্থে ঘুষ-দুর্নীতি, মাদক ব্যবসা, লুটপাট, চাঁদাবাজি ইত্যাদি বেড়েই চলেছে । বেকারত্ব সমস্যা যুবকদের হতাশ ও বিপথগামী করছে। ভোগবাদী অপসংস্কৃতির কবলে পড়ে দেশের তরুণসমাজ চরিত্রভ্রষ্ট হচ্ছে। টাকার অভাবে দরিদ্র জনগণ উন্নত চিকিৎসা পায় না। শিক্ষাব্যবস্থা এখন বাণিজ্যিকীকরণ ও বেসরকারীকরণের রোগে আক্রান্ত। সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার অধিকার দেশে আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শীতকালে বস্ত্রের অভাবে এখনো দেশে মানুষ মারা যায়। লাখ লাখ মানুষের ভিড় বাড়ছে শহরের বস্তিতে। তাদের ভিটেমাটি বলে কিছু নেই । ডাকাতি, খুন, গুম, ছিনতাই, শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, প্রভৃতি দেশকে এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ ধ্বংসের মুখে পড়ছে। ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভৃতি স্বাধীন বাংলাদেশকে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

বর্তমান অবস্থায় বাংলাদেশকে স্বাধীনতার মূল আকাঙ্ক্ষার কথা আবার স্মরণে আনতে হবে। সেই অনুযায়ী দেশ কেন এগোতে পারছে না তা উদ্ঘাটন করতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনমন কেন ঘটছে, তা নিয়ে অবশ্যই ভাবা দরকার।

আমাদের অর্জন : অনেক বাধাবিপত্তি ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও স্বাধীনতা- পরবর্তী এই দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ যে একেবারে কিছুই অর্জন করেনি। তা নয় । নিচে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অর্জনের দিক উল্লেখ করা হলো :

১. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান

২. বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ

৩. জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার

৪. বহুদলীয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি

৫ . . মাতৃভাষা বাংলার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

৬. মুক্তবাজার অর্থনীতি

৭. রপ্তানিভিত্তিক শিল্প

৮. উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো

৯. তথ্য আহরণে ও সম্প্রচারে বিপ্লবাত্মক অর্জন

১০. কৃষিতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার ইত্যাদি

বহু অর্জনের কথা বলা গেলেও প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশ এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। সেই মূল লক্ষ্য অর্জনের প্রতিই আমাদের বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ : বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই এ দেশের অবস্থা ছিল খুবই ভঙ্গুর। তাই পরদেশের সাহায্য- সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে এ দেশের নিজস্ব উৎপাদন শক্তি বৃদ্ধি এবং তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়নি। ক্রমাগত বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা গ্রহণের ফলে দেশের নিজস্ব অর্থনীতি শক্তিশালীরূপে গড়ে ওঠেনি। মুক্তিযুদ্ধের মূল আকাঙ্ক্ষাকে পাশ কাটিয়ে দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ায় দেশের আশানুরূপ অগ্রগতি সম্ভব হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অস্বীকার করা বা বিকৃত করার মানসিকতা থেকে দেশে দলীয়করণ চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। অন্যান্য দেশের বাণিজ্যিক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে অথচ জাতীয় স্বার্থের কথা না ভেবে ক্ষমতালোভীরা বিভিন্ন সময় গণবিরোধী চুক্তি সম্পন্ন করেছে। ফলে দেশ ক্রমাগত সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে।

দেশের এই সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য নতুন করে স্বাধীনতার স্বপ্নকে সংজ্ঞায়িত করে প্রচার করতে হবে। কেন এতগুলো বছর পরও | স্বাধীনতার সত্যিকারের স্বাদ এ দেশের মানুষ পাচ্ছে না, তা আমাদের ভাবতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে গড়তে হলে প্রথমত, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শোষণহীন-বৈষম্যহীন মানসিকতা ও মূল্যবোধের চর্চা বাড়াতে হবে। দেশে গণতান্ত্রিক চেতনার বিস্তার ঘটাতে হবে। তবেই দেশ ও দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে হাঁটতে শুরু করবে।

আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি : মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণায় আমাদের প্রত্যাশা ছিল একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, কিন্তু শোষণমুক্ত বাংলাদেশ এখনো পাইনি। কেননা স্বাধীন দেশের ধনিক ও লুটেরা শ্রেণি মুনাফার স্বার্থে সাধারণ জনগণের উপর চালাচ্ছে নির্মম শোষণ। স্বাধীনতার ঘোষণায় আমাদের আকাঙ্ক্ষা ছিল। অর্থনৈতিক মুক্তি। কিন্তু স্বাধীনতার এতগুলো বছর অতিক্রম করার পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি রয়ে গেছে বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তানির্ভর। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের সক্ষমতা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ অর্জন করতে পারেনি।দেশের সেবামূলক খাত যেমন : শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, যোগাযোগ প্রভৃতি দিন দিন চলে যাচ্ছে বেসরকারি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দখলে। সুস্থ সংস্কৃতির পরিবর্তে দেশে চলছে অপসংস্কৃতির জোয়ার। দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক মতামতের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করার অধিকার এখনো পায়নি। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনের অনিশ্চয়তা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। সংবিধানে সবার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। এই রকম বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা ছিল না। তাই বর্তমান প্রজন্মকেই স্বাধীনতার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে। যদিও তা সহজ নয়। কেননা প্রবাদ আছে- স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। 

স্বাধীনতা দিবস উদ্‌যাপন : প্রতিবছর ২৬শে মার্চ জাতীয় মর্যাদায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। এটি সরকারি ছুটির দিন । এদিন ভোরে জাতীয় সংগীত গেয়ে পতাকা উত্তোলন এবং শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিবসটি পালনের সূত্রপাত হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা, সংগীতানুষ্ঠান ও আলোচনা সভার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র শ্রদ্ধার সাথে স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয় ।

উপসংহার :মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীনতার অধিকারপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু বর্তমানে দেশে ও বিশ্বে পরাধীনতাই যেন সবাইকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে। আমাদের সমাজেও সুপ্তভাবে এই প্রক্রিয়াটি লক্ষ করা যায়। কিন্তু ভুললে চলবে না আমাদের স্বাধীনতা অনেক রক্তের দামে কেনা; শহিদদের এই পবিত্র রক্তের দায় জাতি হিসেবে আমাদের সবারই। সেই দায় শােধ হতে পারে কেবল স্বাধীনতাকে সবার জন্য ভােগ্য করে তােলার মাধ্যমে। এই প্রত্যয় নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে ভবিষ্যৎকালের পথে ।

স্বাধীনতা দিবস রচনা class 2- 10

আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা জেনে নিন:

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *