২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস ?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কত তারিখ, ২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস, ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা করা হয় কখন এবং স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা এসব বিষয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা হয়েছে।

স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস একটি ঐতিহাসিক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমাদের জীবনে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি নর প্রত্যয় ও শপথ গ্রহণের দিন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাঙালি নিয়েছিল মৃগ্ধ শপদ। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য এবং আপন পরিচয় খোঁজার লক্ষ্যে সেদিন বাঙালি গড়ে উঠেছিল। দীর্ঘদিনের শোষণ ও নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে সেদিন বাঙালি অর্জন করেছিল স্বাধীনতার সোনালি সূর্য।
তাহলে চলুন জেনে নিই ২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস?
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে (Bangladesh Independence Day)
বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা দিবস আত্মত্যাগ ও আত্ম অহংকারের একটি দিন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ এদেশের মানুষ পৃথিবীর বুঝে নতুন একটি মানচিত্রের সৃষ্টি করে।
বাঙালির মুক্তির সমস্ত আকাঙ্ক্ষা যেন সমন্বিত হয়েছিল সেদিন। সমস্ত জাতি যেন একই অঙ্গীকারে শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে।
স্বাধীনতা দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি: বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। পাকিস্তানিদের প্রকৃত চেহারা উপলব্ধি করে মানুষের মনে ধীরে ধীরে দানা বাঁধে স্বাধীনতার স্বপ্ন।
অবশেষে ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি। হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
গ্রেফতারের পূর্বেই, অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
তার ঘোষণাটি ছিল এরকম,
এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহবান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকেন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উতখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত রাখুন।
এরপর চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা।
স্বাধীনতা অর্জনে মুক্তিযুদ্ধ
স্বাধীনতা অর্জনে এদেশের মানুষ সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে এদেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে সম্ভ্রম হারিয়েছেন কয়েক লক্ষ মা বোন।
আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা পাকিস্তানিদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। এদেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে, তখন দেশীয় এই রাজকারদের তৎপরতায় বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে, সম্ভ্রম হারিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে।
বহু মুক্তিযোদ্ধাকে পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছে এই রাজাকার বাহিনী। দেশের অভ্যন্তরে সকল শত্রুদের বিনাশ করে স্বাধীনতা অর্জন করতেই একটি সামরিক পরিকল্পনা করে তৎকালীন (১৯৭১ সালের ১০ ই এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে গঠিত হয় অস্থায়ী সরকার) অস্থায়ী সরকার।
মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন কর্নেল এমএজি ওসমানী। অবশেষে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এদেশ স্বাধীন হয়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ যুদ্ধের শেষের দিকে বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয় ভারতীয় মিত্রবাহিনী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য
আমাদের জন্য স্বাধীনতা দিবসের মূল তাৎপর্য হলো এটি আমাদের ত্যাগ ও তসংগ্রামের গৌরবময় একটি দিন। এদিন আমাদের আত্মপরিচয়ের গৌরবে উজ্জ্বল। এই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ পর বঞ্চিত নির্গীষ্ঠিত সাধারণ মানুষ মুক্তির নতুন দিশা অর্জন করেছিল।
স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে ইতিহাস রচিত হয়েছে তা এদেশের মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে যুগে যুগে প্রেরণা জোগাবে। তাই প্রতিবছর ২৬ শে মার্চ এলেই বাঙালি নতুন শপথ গ্রহণের মাধ্যমে উজ্জীবিত হয়।
স্বাধীনতার মূল অর্থ হলো অধীনতা থেকে মুক্তি, আত্মোন্নয়নের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ লাভ। প্রতিটি স্বাধীনতা দিবস আমাদের জীবনে এনে দেয় নতুন সম্ভাবনা।
আমরা নিজেদের ভেতরে স্বাধীনতার তাৎপর্যকে কতটা অনুভব করতে সমর্থ হচ্ছি তা মূল্যায়ন করি।
২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস
উপরের আলোচনার মাধ্যমে ২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস এ বিষয়ে আশা করি জানতে পেরেছেন।
স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল একটি শোষণমুক্ত ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার রাষ্ট্র প্রবর্তন করা। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সবাইকে স্বনির্ভর করেছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই লক্ষ্য নিয়েই দেশ গঠন শুরু করেছিলেন।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট সামরিক বাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যের হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন একনায়ক সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছে।
সমাজের প্রগতিই হলো স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য। তার জন্য প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোয় দৃপ্ত শপথ গ্রহণ। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মেধা ও পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে হবে উন্নয়নের নতুন মাইলফলক।
প্রগতির পথে সমাজকে পরিচালিত করতে স্বাধীনতার মূল স্তম্ভগুলোকে লালন করতে হবে এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এ পথে সাময়িক ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হলেও তা ভবিষৎকালে স্বাধীনতার বৃহদার্থকে সমাজের সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবে।
২৬ শে মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা করা হয় কবে
২৬ শে মার্চ কি দিবস এটি এখন আমরা সকলেই জানি। কিন্তু ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস ঘোষনা করা হয় কখন এ বিষয়ে এখন আমরা জানবো।
আমাদের দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২ সালের ২২ শে জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিশেষ প্রজ্ঞাপনে ২৬ শে মার্চকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করার ঘোষণা দেয়া হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
সর্বশেষ
তাহলে আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে, ২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস, স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এসব বিষয়ে আশা করি জেনে নিতে পেরেছেন।
যদি আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আর আর্টিকেলের সাথে জড়িত কোন প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।