DNA কি ? ডিএনএ অণুর গঠন এবং কাজ (ডিএনএ টেস্ট)

ডিএনএ কি ? DNA কি ?

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠনে দেখা যায় এর মধ্যে রয়েছে নিউক্লিক এসিড, প্রোটিন ও অন্যান্য উপাদান।

নিউক্লিক এসিড

নিউক্লিক এসিড দুধরনের হয়। যথা:

(১) ডিঅক্সি রাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) এবং (২) রাইবোনিউক্লিক এসিড (আরএনএ)।

DNA কি ? (What is DNA in Bengali)

DNA কি
DNA কাকে বলে ?

ডিএনএ (DNA) এর পূর্ণ নাম ডি অক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড।

ডিএনএ সকল জীবের আদি বস্তু যার অবস্থান সর্বপ্রকার জীবকোষের নিউক্লিয়াসের ক্রোমোজোমে।

এ তথ্যটি উদ্ঘাটিত হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা সচেষ্ট হলেন ডিএনএর গাঠনিক উপাদান জানার কাজে।

১৯৫৩ সালে জেমস ওয়াটসন ও ফ্রানসিস ক্রিক বিজ্ঞানীদ্বয় আবিষ্কার করলেন ডিএনএ অণুর গঠন।

এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য এরা নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯৬২ সালে।

একটি ডিএনএ অণু দ্বিসূত্র বিশিষ্ট লম্বা শৃংখলের পলিনিউক্লিওটাইড। অনেকগুলো নিউক্লিওটাইড নিয়ে গঠিত, তাই একে পলিনিউক্লিওটাইড বলে। প্রতিটি একককে নিউক্লিওটাইড বলে।

DNA অণুর আকার

ডিএনএ (DNA) অণুর আকৃতি অনেকটা প্যাচানো সিড়ির মতো।

প্যাচানো সিড়ির দুপার্শ্বের মূল কাঠামো গঠিত হয় পাঁচ কার্বন যুক্ত শর্করা ও ফসফেট দ্বারা।

দুপাশের শর্করার সাথে চার ধরনের নাইট্রোজেন ক্ষারকের মধ্যে দুটি করে ক্ষারক জোড় বেধে তৈরি করে সিড়ির ধাপ গুলো।

ডিএনএ অনুর চার ধরনের ক্ষারক এডিনিন, গুয়ানিন , সাইটোসিন ও থাইমিনের মধ্যে এডিনিন থাইমিনের সাথে সাইটোসিন গুয়ানিনের সাথে জোড় বাধে।

আরএনএ (RNA) কি ?

আরএনএ হলো রাইবোনিউক্লিক এসিড।

এটি একটিমাত্র পলিনিউক্লিওটাইড শেকলে ভাজ হয়ে থাকে।

আরএনএ পাঁচ কার্বন যুক্ত রাইবোজ শর্করা ও ফসফেট নির্মিত একটি মাত্র পার্শ্ব কাঠামো দ্বারা গঠিত, যার চার ধরনের নাইট্রোজেন ক্ষারক ডিএনএর মতোই।

শুধু পার্থক্য হচ্ছে ডিএনএতে পাইরিমিডিন ক্ষারক থাইমিন আছে। কিন্তু আরএনএ তে থাইমিনের পরিবর্তে থাকে ইউরাসিল (U)।

জীবকোষে আরএনএ তিন রকমের যথা – (১) বার্তা বাহক আরএনএ (Messenger RNA বা m RNA), (২) রাইবোজোমাল আরএনএ (Ribosomal RNA বা r RNA) এবং (৩) ট্রান্সফার আরএনএ (Transfer RNA বা RNA)।

প্রোটিন

ক্রোমোজোমে দু ধরনের প্রোটিন থাকে। যথা- হিস্টোন ও নন হিস্টোন প্রোটিন।

ওপরে বর্ণিত রাসায়নিক পদার্থগুলো ছাড়া ক্রোমোজোমে লিপিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম আয়ন ও অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ অল্প পরিমাণে পাওয়া যায়।

জিন

মেন্ডেল বংশগতির ধারক এবং বংশগত বৈশিষ্ট্যের নির্ধারকের একককে ফ্যাক্টর নামে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন ফ্যাক্টরসমূহের মাধ্যমে পিতামাতার বৈশিষ্ট্যগুলো বংশ পরম্পরায় বাহিত হয়।

বর্তমানে বংশগতি বিদ্যার অগ্রগতির ফলে বংশগতির কৌশল সম্পন্ধে আরও জ্ঞান অর্জিত হয়েছে।

বেটসন ১৯০৮ সালে মেন্ডেলের ফ্যাক্টর এর নাম দিলেন জিন। মটরশুঁটি ছাড়াও অন্যান্য জীবের বংশানুগতির পদ্ধতি নিয়ে এর পর ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়।

১৯০৯ সালে জোহানসেন বংশপরম্পরায় কোনো বৈশিষ্ট্যের নির্ধারক একককে জিন আখ্যা দেন।

ক্রোমোজোমের গায়েই সন্নিবেশিত থাকে অসংখ্য জিন বা বংশগতির একক। জীবজগতের বৈচিত্র্যের নিয়ন্ত্রক হচ্ছে জিন।

এককোষী ব্যাকটেরিয়া, আমাশয়ে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু অ্যামিবা থেকে শুরু করে বিশাল আকৃতির বটবৃক্ষ, বিশাল আকৃতির হাতি, তিমি ইত্যাদি, বুদ্ধিমান জীব মানুষ পর্যন্ত সবারই আকৃতি প্রকৃতি নির্ধারিত হয় তার জিনের সংকেত দ্বারা।

তাছাড়া বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনে প্রতিটা জীব তার অনুরূপ জীবের জন্ম দেয়। এ সবই জিনের দ্বারা হয়।

এভেরি, ম্যাকলিওড এবং ম্যাককারটি ১৯৪৪ সালে মানুষের নিউমোনিয়া রোগ সৃষ্টিকারী নিউমোকক্কাস ব্যাক্টেরিয়ার রাসায়নিক গঠন যেমন – প্রোটিন, শর্করা, ফ্যাট এবং নিউক্লিক এসিডসমূহ পৃথক করলেন।

প্রত্যেকটি উপাদান দিয়ে পৃথকভাবে পরীক্ষা মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হলেন শুধু ডিএনএ বংশগত বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে ডিএনএ কীভাবে বংশগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে পরবর্তী বংশে সঞ্চালিত করে।

DNA কিভাবে বংশগতির ধারা বজায় রাখে ?

ডিএনএ শেকল লম্বালম্বিভাবে স্ববিভাজনের দ্বারা ভাগ হয়ে পরিপূরক দুটি পার্শ্ব কাঠামো গঠিত হয়।

এভাবে একটা ডিএনএ অণু ভেঙ্গে তৈরি হয় দুটি নতুন অণু। নতুনভাবে সৃষ্ট প্রতিটা অণুতে থাকে একটা পুরাতন ও একটা নতুন ডিএনএ পার্শ্ব কাঠামো, যার ফলে প্রতিটি নতুন ডিএনএ অণু হয় মূলটির হুবহু অণুলিপি।

এভাবে ডিএনএ অণুতে রক্ষিত জীবের বংশগত বৈশিষ্ট্যের সাংকেতিক নীলনকশা পরিবর্তন ছাড়াই সরক্ষিত হয় এবং পরবর্তী প্রজন্যে সঞ্চারিত হয়।

এ পর্যন্ত আমরা যা আলোচনা করলাম তা থেকে জানতে পারলাম বংশগত ধারা পরিবহনে ক্রোমোজোম, ডিএনএ ও আরএনএ এর গুরুত্ব অপরিসীম।

ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান ডিএনএ। ডিএনএ এর অংশ বিশেষ জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের প্রকৃত ধারক, যাকে জিন বলা হয়।

আরএনএ জীবের বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করতে ডিএনএ কে সাহায্যে করে। ক্রোমোজোম ডিএনএ ও আরএনকে ধারণ করে বাহক হিসাবে।

ক্রোমোজোম DNA ও RNA কে সরাসরি বহন করে পিতা মাতা থেকে তাদের পরবর্তী বংশধরে নিয়ে যায়। কোষ বিভাজনের মায়োটিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশগতির এ ধারা অব্যাহত থাকে।

এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌত ভিত্তি বলে আখ্যায়িত করা হয়।

ডিএনএ টেস্ট (DNA Test)

ডিএনএ টেস্ট কেন করা হয় ?

যখন কোনো সন্তানের পিতৃত্ব ও মাতৃত্ব নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। অথবা কেউ যদি কোনো সন্তানকে তার সন্তান হিসেবে দাবি করে, তখন ডিএনএ টেস্ট দ্বারা এ ধরনের বিবাদ বর্তমানে নিষ্পত্তি করা যায়।

ডিএনএ (DNA) টেস্ট করার সময় পিতা, মাতা ও সন্তানের মুখগহ্বর থেকে কটন বাড এর মতো বিশেষ এক ধরনের ব্যবস্থার দ্বারা মুখের ঝিল্লির (মিউকাস) পর্দা নেওয়া হয়।

গবেষণাগারে ঝিল্লির থেকে পিতা, মাতা ও সন্তানের ডিএনএ এর একটি চিত্র (প্রোফাইল) প্রস্তুত করা হয় নানা ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা।

এরপর সন্তানের DNA এর চিত্রের সাথে পিতামাতার DNA চিত্রের সাথে মিলানো হয় এবং যদি প্রত্যেকের সাথে প্রায় ৫০% মিল পাওয়া যায়, তাহলে সে সেই সন্তানের জৈব পিতামাতা (Biological parents) অর্থাৎ প্রকৃত পিতা মাতা হিসাবে গণ্য করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *